এ বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে যত বিস্ময়! প্রাণের বৈচিত্র্য নিয়ে টিকে আছে পৃথিবী। কিন্তু আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রহস্যে ভরা গ্রহের উপরের সৌন্দর্যটাই শুধু দেখি। ভুলে যাই এর বাইরেও কিছু আছে, যেটার বসবাস সাধারণ জীবনের অনেকটা দূরে। আর সে রকমই এক সৌন্দর্যের ভাণ্ডার রয়েছে ভূগর্ভে। যার আরেক নাম গুহা।
গুহায় যেন আছে পৃথিবীর গুপ্তধন। আর সেই গুপ্তধনই যেন পরম মমতায় সবার চোখ থেকে আড়াল করবার চেষ্টা করেছে প্রকৃতি। আর সেটা করতে গিয়েই বাড়িয়ে দিয়েছে এর সৌন্দর্যকে, কয়েকশ গুণ বেশি। আজ থাকছে তেমনি সব গুহার গল্প।
বাঁশির গুহাঃ
প্রায় ১,২০০ বছর আগে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেয় চীনের এই গুহাটি। এটি সব সময়ই ভরে থাকে নানা রকম আলোয়। এ এক অদ্ভুত ঘটনা বৈকি! এ আলোর উৎস আসলে ভেতরে জমে থাকা চুনাপাথরের স্তর। এই বিচিত্র আলোর গুহার রূপে মানুষের মুগ্ধ হওয়ার শুরু সেই ৭৯২ সালে। তখন চীনে চলছে থাং রাজত্ব। এখনও কেবল চীনবাসীই নয়, এর রূপে মুগ্ধ হয়ে আছে সমগ্র বিশ্ববাসী। কিন্তু প্রশ্ন হল, এর নাম আলোর গুহা না হয়ে কেন বাঁশির গুহা হল? খুব সোজা, কেবল আলোই না, এই গুহাটির আছে আরও একটা বিশেষ গুণ। এর ভেতরে জন্মে এক ধরনের নলখাগড়া। সেই নলখাগড়া দিয়ে ভীষণ সুন্দর আর মিষ্টি সুরের বাঁশি বানানো যায়। আর সে জন্যই এই ২৪০ মিটার দৈর্ঘ্যরে গুহাটির নাম হয়ে গেছে বাঁশির গুহা।
বরফের গুহাঃ
বরফের গুহা, তাও আবার হয় নাকি? ওই অতটুকু বরফের আইসক্রিমই যখন ফ্রিজ থেকে বের করার খানিক বাদেই গলে যায়, অত বড় গুহা সেখানে কী করে দাঁড়িয়ে থাকবে? এমনি গুহাও আছে। তবে সেটা আমাদের মতো নাতিশীতোষ্ণ দেশে নয়, একদম হিম ঠাণ্ডার দেশ আইসল্যান্ডে। নাম গ্লেসিয়ার গুহা। এই গ্লেসিয়ার মানে হিমবাহ। হিমবাহের ঠাণ্ডায় জমাট বাঁধা পানি থেকে এর উৎপত্তি বলেই এমনতর নাম। তবে এর উচ্চতা অবশ্য সব সময় এক রকম থাকে না। ১৯৮০ সালে এর উচ্চতা সর্বোচ্চ হয়েছিল। তখন এর উচ্চতা পৌঁছেছিল ২.৮ কিলোমিটার পর্যন্ত।
মেলিসসানি গুহাঃ
অদ্ভুত সুন্দর এই গুহাটি গড়ে উঠেছে মেলিসসানি হ্রদকে ঘিরে। গ্রিসের কেফালোনিয়া দ্বীপে এই হ্রদের অবস্থান। একপাশে পাহাড়, অন্যপাশে বন। আর তাই পাহাড় আর বনের সঙ্গে আকাশের নীলের মিশেলে এক অনবদ্য সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে এই গুহায়। আর এই বন পাহাড়ে মোড়া গুহাতে যাতে সবাই সহজে যেতে পারে, তাই এর এক পাশে বানানো হয়েছে রাস্তা। সঙ্গে গাড়ি রাখার জায়গাও আছে। আছে গুহার বুকে নৌকায় করে ভেসে বেড়ানোর ব্যবস্থাও।
পানির গুহাঃ
গুহাটি অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে। মিসৌরি উদ্যানে গেলেই গুহাটির দেখা পাওয়া যাবে। অপূর্ব সৌন্দর্যের এই গুহাটি তৈরি মূলত স্ট্যালেগমাইট দিয়ে। আর পানির উৎস জোয়ার ভাটা।
ফিঙ্গেলস গুহাঃ
পাশাপাশি দাঁড়ানো অনেক গুলো ছোট ছোট স্তম্ভ। একে অপরের গায়ে গা ঠেকিয়ে সোজা উঠে গেছে আকাশপানে। তারপর অনেক উঁচুতে গিয়ে গড়ে তুলেছে এক প্রাকৃতিক ছাদ। স্কটল্যান্ডের এই অদ্ভুতুড়ে গুহাটির নাম ফিঙ্গেলস গুহা। সাগরতীরের এই গুহাটির গুণপনার এখানেই শেষ নয়। এই গুহার ভেতরে গিয়ে দাঁড়ালে নাকি স্বর্গীয় অনুভূতি হয়। আর এই স্বর্গীয় অনুভতির কারণ, প্রতিধ্বনি। গুহার গঠন এমন যে, ভেতরে প্রতিধ্বনি হয়। আর সাগরের ঢেউ যখন এর ভেতর দিয়ে বয়ে যায়, তখন সৃষ্টি হয় অদ্ভুত সব প্রতিধ্বনি। ফলাফলঃ স্বর্গীয় অনুভূতি।
স্ফটিক বা ক্রিস্টালের গুহাঃ
মেক্সিকোর চিহুয়াহুয়া রাজ্যের নাইকা শহরে এই গুহাটির অবস্থান। গভীরতা ৩০০ মিটার। এই গুহাটি ভর্তি নানা রকমের নানা আকৃতির স্ফটিক দিয়ে। এর কোনো কোনোটা আকৃতিতে পৃথিবীর সবচাইতে বড় স্ফটিক হওয়ারও দাবীদার। গুহার ভেতরের সবচেয়ে বড় স্ফটিকের ওজন হবে অন্তত ৫৫ টন। সমস্যা হল, গুহাটির ভেতরে ভীষণ গরম। তাপমাত্রা মাঝেমাঝে ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। আর বাতাসের আর্দ্রতাও অনেক বেশি। সব মিলিয়ে, ঠিক মতো প্রস্তুতি ছাড়া নামলে ওই গুহায় কোনো মানুষ দশ মিনিটও টিকতে পারবে কিনা, সন্দেহ। আর সে কারণেই গুহাটি সম্পর্কে জানাশোনার পরিমাণও কম।
লেখকঃ সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন