ভয়ংকর যতো হাঙ্গর

হাঙরের নাম শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভয়াবহ এক দৃশ্য ভেসে ওঠে। হিংস্র মাংসাশী এক জলজ প্রাণী, তার ভয়ানক দাঁতগুলো বের করে ছুটে আসছে। আর তারপর বিশাল এক কামড়ে ছিঁড়ে ফেলছে মানুষের একটা হাত, পা অথবা শরীরের অন্য কোনো অংশ। রক্তে লাল হয়ে গেছে সমুদ্রের পানি। উফ, কী ভয়াবহ! ভাবতেই তো গা শিউরে ওঠে, তাই না? আসলে সিনেমাগুলোতে এভাবেই তো হাঙরগুলোকে উপস্থাপন হয়। তাই হাঙরের কথা শুনলেই আমাদের মনে এরকম একটা চিত্র ভেসে ওঠে। আসলে হাঙরগুলোকে যতোটা ভয়ঙ্করভাবে দেখানো হয়, এরা আসলে ততোটা ভয়ংকর নয়। বরং এরাই আজকাল মানুষের ভয়ে সর্বদা অস্থির হয়ে থাকে। কখন কোনদিক থেকে যে মানুষের হাতে শিকার হয়ে যায় সারাক্ষণ এই ভয়েই থাকতে হয় বেচারাদের। বেশিরভাগ হাঙরই নিরীহ প্রজাতির। তবে ভয়ংকর হাঙর যে একদমই নেই তা নয়। এক হিসাব অনুযায়ী, গত ৪০০ বছরে মানুষের উপর হাঙরের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে মাত্র ১২০০ বা তারও কম। অথচ বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে এরচেয়েও কয়েক গুণ বেশি। তাহলেই বলো, ওরা মানুষকে আর এমন কী-ই বা আক্রমণ করে!

সব মিলিয়ে প্রায় ৩৭০ প্রজাতির হাঙর আছে সমুদ্রে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকারের হাঙরটির নাম ‘হোয়েল শার্ক’, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ ফুট। আর সবচেয়ে ছোট আকৃতির হলো ‘স্পাইন্ড পিগমি শার্ক’, যেগুলো লম্বায় মাত্র ৬ ইঞ্চি। এখন আপনিই বলেন, এই ৬ ইঞ্চি একটা হাঙরের পক্ষে কি একটা আস্ত মানুষকে কামড়ে খেয়ে ফেলা সম্ভব!

তবে সব প্রজাতির হাঙরই যে নিরীহ এমনটা কিন্তু আবার ভেবেন না। বেশ কয়েক প্রজাতির হাঙর আছে যারা কিনা খুবই ভয়ংকর! এদের থেকে সাবধান থাকাই ভালো। কেননা এরা সুযোগ পেলেই মানুষের উপর আক্রমণ করে বসে। আত্মরক্ষার জন্য অথবা খিদে মেটানোর জন্য অথবা কোন কারণ ছাড়াই শুধুমাত্র একবার চেখে দেখার জন্যও এরা মানুষের উপর আক্রমণ চালায়।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, এইসব মানুষখেকো হাঙরের কাছ থেকে অবশ্যই দূরে দূরে থাকতে হবে। আর সেজন্যই আপনাদের আজকে পরিচয় করিয়ে দেব কতোগুলো ভয়ানক প্রজাতির মানুষখেকো হাঙরের সাথে।


গ্রেট হোয়াইট শার্কঃ
হিংস্র প্রজাতির হাঙরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে ‘দ্য গ্রেট হোয়াইট শার্ক’। নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে এই হাঙরগুলো বেশ বড় হয় আর এদের গায়ের রঙ থাকে সাদা। লম্বায় গ্রেট হোয়াইট শার্ক প্রায় ২০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর একেকটা হাঙরের ওজন ২ হাজার ৫০০ কেজি পর্যন্ত হয়। আর এটাও জেনে রাখেন যে, গ্রেট হোয়াইট শার্ক পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহদাকৃতির হিংস্র প্রাণী। অর্থাৎ এর চেয়েও বড় প্রাণী যেমন হাতি কিংবা নীলতিমি ইত্যাদি থাকলেও ওরা কেউ-ই কিন্তু হিংস্র নয়।


গত ১০০ বছরে হাঙর আক্রমণের যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় অর্ধেকের জন্যই এই গ্রেট হোয়াইট শার্ক দায়ী। তবে মজার কথা কী জানেন? এই গ্রেট হোয়াইট শার্ক কিন্তু মানুষখেকো নয়। এমনকি মানুষের মাংসের স্বাদও এদের একদমই পছন্দ নয়। নিশ্চয়ই ভাবছেন, তাহলে এরা মানুষের উপর আক্রমণ চালায় কেন? আসলে গ্রেট হোয়াইট শার্ক খুবই কৌতূহলী হাঙর। তাই শুধুমাত্র শখের বশে কি একটু চেখে দেখার ইচ্ছে হলেই এরা মানুষের উপর আক্রমণ চালায়। কি ভয়ানক শখ রে বাবা! কামড়ে দেওয়ার পর যখনই দেখে খেতে খুব একটা ভালো লাগছে না তখনই এরা কামড়ানো ছেড়ে দেয়। আর এজন্যই গ্রেট হোয়াইট শার্কের আক্রমণগুলো খুব একটা মারাত্মক হয় না। কিন্তু তাই বলে আবার কখনও শখ করে এদের সামনে যাবেনা যেনো! কেননা গ্রেট হোয়াইট শার্কের ত্রিভুজাকৃতির প্রায় ৩০০ দাঁতওয়ালা একটা বিশাল চোয়াল আছে। আর এই চোয়াল দিয়ে যদি কৌতূহলের বশে শখ করে আলতো একটা কামড়ও আপনাকে দেয় তাহলেও দেখা যাবে যে আপনার শরীরের একটা অংশ আলাদা হয়ে গিয়েছে। সুতরাং সাবধান! কিন্তু এতো ভয়ানক হওয়া সত্ত্বেও এদের রক্ষা নেই। দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম এই হিংস্র প্রাণীটি। অতিরিক্ত মাছ শিকারের কারণেই পৃথিবীতে এদের সংখ্যা ক্রমশই কমে যাচ্ছে। মানুষ না খেলেও গ্রেট হোয়াইট শার্ক বেঁচে থাকার জন্য তো কিছু না কিছু খায়ই। আর এদের প্রিয় খাবারের মেন্যুতে রয়েছে সীলমাছ, সি লায়ন, ছোট ছোট আকারের তিমি মাছ, ক্যারিওন আর সামুদ্রিক কচ্ছপ।


টাইগার শার্কঃ
টাইগার শার্ক! নাম শুনেই বুঝতে পারছেন যে এই হাঙরের মধ্যে একটা বাঘ বাঘ ভাব আছে। আসলেও তাই! বাঘের গায়ে যেমন ডোরাকাটা দাগ থাকে তেমনি কমবয়সী টাইগার শার্কের গায়েও বাঘের মতই ডোরাকাটা দাগ থাকে। তবে পূর্ণবয়স্ক টাইগার শার্কের গায়ে এই ডোরাকাটা দাগ একদমই থাকে না। আর এদের নাকটা আবার একদমই ভোঁতা। মানুষ আক্রমণের দিক থেকে গ্রেট হোয়াইট শার্কের পরেই ধরা হয় টাইগার শার্ককে। তবে গ্রেট হোয়াইট শার্ক আর টাইগার শার্কের মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য রয়েছে। সেটা হচ্ছে গ্রেট হোয়াইট শার্ক মানুষখেকো না হলেও টাইগার শার্ক কিন্তু ভদ্র হাঙর না, ওরা কিন্তু ঠিকই মানুষ খায়। আর এরা মানুষ খেতে পছন্দ করে বলেই শুধুমাত্র কামড় দিয়েই ছেড়ে দেয় না। বরং কামড়ে কামড়ে আস্তে আস্তে গোটা মানুষটাকেই খেয়ে ফেলে। তবে টাইগার শার্ককে শুধু মানুষখেকো বললে ভুল হবে। কেননা এরা খায় না এমন কিছুই নেই। অনেকটা ঐ পাগলে কিনা বলে, টাইগার শার্কে কিনা খায়, আরকি! ওরা সামনে যা পায় তা-ই মজা করে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। এমনকি শক্ত খোলসওয়ালা সামুদ্রিক কচ্ছপ খেতেও এদের কোন সমস্যাই হয় না। কেন জানেন? আসলে এদের মাড়ি প্রচণ্ড শক্ত আর দাঁতগুলো খুবই ধারালো। এজন্যই এদের কোনো কিছু খেতে সমস্যা হয় না। মজার কথা কি জানেন? টাইগার শার্কের পেটের ভেতর যে কত্তো সব মজার মজার জিনিস পাওয়া গেছে! এই যেমন ধরেন, সামুদ্রিক সাপ, স্কুইড, পাখি এমনকি গাড়ির পুরনো টায়ার আর লাইসেন্স প্লেটও। তাহলেই বোঝেন, কেমন মহাখাদক এই টাইগার শার্ক! এদের এই খাদক স্বভাবের জন্যই এদেরকে ঝাড়ুদার হাঙরও বলা হয়। খাবারের সঙ্গে সঙ্গে সাগরের সব ময়লাও তো ওরা খেয়ে ফেলে, তাই ওদের এমনতরো নাম দেয়া হয়েছে। টাইগার শার্ক লম্বায় সর্বোচ্চ ২০-২৫ ফুট হয়ে থাকে আর এদের ওজন হয় প্রায় ১০০০ কেজি পর্যন্ত। টাইগার শার্কও বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। এদের চামড়া, ফিন (হাঙরের পাখনাকে ফিন বলে), মাংস আর কলিজা অনেক দামে বিক্রি করা যায় বলে মানুষ প্রচুর পরিমাণে টাইগার শার্ক শিকার করছে।


বুল শার্কঃ
‘বুল’ শব্দের মানে জানেন তো? হ্যাঁ, বুল এর অর্থ হচ্ছে ষাঁড়। এই হাঙরের নাম বুল শার্ক হওয়ার কারণ হচ্ছে এরা দেখতে অনেকটাই ষাঁড়ের মতোন। ষাঁড়ের মতই এদের একটা ছোট আর ভোঁতা নাক রয়েছে। এদের শরীর যদিও মাঝারি আকারের তবে বেশ মোটাসোটা আর হৃষ্টপুষ্ট। গায়ে শক্তিও অনেক। একেবারে ষাঁড়ের মতই। বুঝতেই পারছেন এবার, এদের ‘বুল শার্ক’ নামকরণ কেন হয়েছে! এমনকি এদের স্বভাব-চরিত্রও খানিকটা ষাঁড়ের মতোই। জানেনই তো, ষাঁড়ের মেজাজ সারাক্ষণই চড়া থাকে। মানুষ দেখলেই গুঁতো দিতে আসে। বুল শার্কের মেজাজটাও এরকম। খুবই আক্রমণাত্মক স্বভাবের হয়ে থাকে এরা। যদিও এরা ষাঁড়ের মতো গুঁতো দেয় না, তবে কামড়ে দেয়। সেটা তো নিশ্চয়ই আরও বেশি ভয়ংকর, তাই না? মানুষ কামড়াতে এরা খুবই পছন্দকরে। এজন্যই ভয়ংকর প্রজাতির হাঙরদের তালিকায় এরা হচ্ছে তিন নম্বর। গ্রেট হোয়াইট শার্ক আর টাইগার শার্কের পরে এদেরকেই সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক হাঙর হিসেবে ধরা হয়। আর এদের এরকম আক্রমণাত্মক স্বভাবের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে এরা পরিষ্কার পানিতে খুবই দ্রুত সাঁতার কাটতে পারে। তাই সমুদ্রের পানিতে তো বটেই মাঝে মাঝে এরা সাগর থেকে নদীতেও চলে আসে। কী ভয়ের কথা, তাই না? তার উপর এরা সাঁতার কাটতে পছন্দ করে অগভীর পানিতে। অর্থাৎ যেখানে মানুষ সাঁতার কাটতে পানিতে নামে। তাহলেই বোঝেন! এজন্যই এই বুল শার্কদের দ্বারা মানুষ আরও বেশি আক্রান্ত হয়। ক্ষিপ্রগতির বুল শার্ক টাইগার শার্কের মতোই সবকিছুই খায়। যেকোনো ধরণের মাছ, ডলফিন এমনকি সুযোগ পেলে অন্য হাঙরদেরও খেয়ে ফেলে এই রাক্ষুসে হাঙর! ‘বুল শার্ক’ বিপন্নপ্রায় প্রজাতির মধ্যে পড়ে না। এখনও হুমকির মুখে পড়েনি এরা। তবে এদের মাংস, চামড়া আর দামী তেলের কারণে প্রায়ই এদেরকে মানুষের শিকারে পরিণত হতে হয়। তাই যে কোনো সময় এরাও বিলুপ্তপ্রায় হাঙরদের তালিকায় পড়ে যেতে পারে।


স্যান্ড টাইগার শার্কঃ
এই প্রজাতির হাঙরকে গ্রে নার্স শার্কও বলা হয়ে থাকে। স্যান্ড টাইগার শার্ক দেখতে খুবই ভয়ানক। কারণ এটি অত্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। আর তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই হাঙরের ধারালো দাঁত বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দিকে বাঁকানো থাকে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, এই হাঙরের একটা কামড় খেলেই অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা। তবে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। কেননা স্যান্ড টাইগার শার্ক এমনিতে খুবই নিরীহ, সহজে কারো উপর আক্রমণ করে না। তবে কেউ যদি একে বিরক্ত করে তাহলে আর রক্ষে নেই। রেগে আগুন হয়ে যায় স্যান্ড টাইগার শার্ক, আর তখনই মানুষের উপর আক্রমণ করে বসে। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেবন, এদেরকে ভুলেও বিরক্ত করা যাবে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মানুষ না জেনে ভুলবশত প্রায়ই এদের বিরক্ত করে ফেলে। কেননা স্যান্ড টাইগার শার্কের একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা সাগরের তীর ঘেঁষে ঘুরতে খুবই পছন্দ করে। মাঝে মাঝে এরা তীরের এতোটাই কাছে চলে আসে যে মানুষেরা এদের সামনে পড়ে যায়। আর তখনই ঘটে বিপত্তি! বিরক্ত হয়ে স্যান্ড টাইগার শার্ক কামড় দিয়ে বসে মানুষকে। তবে স্যান্ড টাইগার শার্কের সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরাই একমাত্র হাঙর প্রজাতি যারা কিনা ডলফিনের মত পানি থেকে বাতাসে লাফ দিতে পারে। স্যান্ড টাইগার শার্কের নাকটা দেহের সাথে প্রায় সমান্তরাল এবং ত্রিকোণাকার। অনেকটা কোন আইসক্রিমের মত। এদের লেজটা আবার হয় অনেকটা চারকোণা আকৃতির। লেজের উপরিভাগ তুলনামূলকভাবে লম্বা থাকে। লম্বায় স্যান্ড টাইগার শার্ক সাধারণত ১০-১১ ফিট পর্যন্ত হতে পারে।


নার্স শার্কঃ
এই হাঙরের নাম ‘নার্স শার্ক’ কেন হল তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় এই নামটা এসেছে ইংরেজি ‘হার্স’ শব্দ থেকে, প্রাচীন ইংরেজি ভাষায় যার অর্থ হচ্ছে “সাগরের মেঝেতে বসবাসকারী হাঙর”। আসলে নার্স শার্ক বাস করে সমুদ্রের একেবারে তলদেশে। সাগরের মেঝের উপর শুয়ে থাকতে এরা খুবই পছন্দ করে। একারণেই এদেরকে এই নামে ডাকা হয়। আর এরা হাঙরদের মধ্যে অন্যতম প্রজাতি যারা খুবই আস্তে আস্তে পানিতে সাঁতার কাটে। নার্স শার্ক মানুষের জন্য খুব একটা ভয়ংকর নয়। কেননা এরা বিনাকারণে মানুষের উপর আক্রমণ করে না। তবে কেউ যদি ভুল করে না দেখে সমুদ্রের মেঝেতে শুয়ে থাকা কোন নার্স শার্কের উপর পা দিয়ে বসে তাহলেই ঝামেলা হয়ে যায়। রেগে গিয়ে কামড় দিয়ে বসতে পারে এই নিরীহ হাঙরটিও। নার্স শার্ক লম্বায় প্রায় ১৪ ফিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। খাদ্য হিসেবে এদের পছন্দ মাছ, চিংড়ি আর স্কুইড। তবে শক্ত যেকোনো খাবার এই যেমন কচ্ছপ বা কোরাল খেতেও এদের খুব একটা আপত্তি নেই। হাঙরদের মধ্যে এই নার্স শার্ক প্রজাতি এখন পর্যন্তও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তবে ধীরে ধীরে এরাও হুমকির মুখে পড়ছে।


হ্যামারহেড শার্কঃ
নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে এই হাঙরটি দেখতে কিরকম হবে। সত্যি সত্যিই হ্যামারহেড শার্কের মাথাটা দেখতে একদম হাতুড়ির মতো। ছবিটি দেখেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। এজন্যই এদেরকে এই নামকরণ করা হয়েছে। হ্যামারহেড শার্ক অত্যন্ত হিংস্র প্রজাতির হাঙর। আর এদেরকে আরও বেশি ভয়ানক লাগে এদের এই অদ্ভুতদর্শন মাথার জন্য। যদিও খুব বেশি ভয় পাওয়ার কারণ নেই। কেননা ছোট প্রজাতির হ্যামারহেড শার্ক সাধারণত মানুষকে কামড়ায় না। তবে বড় আকারের হ্যামারহেড শার্কগুলো প্রায়ই বিনাকারণেই মানুষের উপর আক্রমণ করে বসে। হ্যামারহেড শার্কের বেশিরভাগ প্রজাতিই আকারে ছোট হয়ে থাকে যারা কিনা মানুষের তেমন কোন ক্ষতি করে না। তবে কিছু কিছু প্রজাতির হ্যামারহেড শার্ক আকারে ২০ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে আর এদের ওজন হয়ে থাকে প্রায় ৫০০ কেজি পর্যন্ত। হ্যামারহেড শার্ককে এখনও পর্যন্ত বিপন্নপ্রায় হাঙরদের তালিকায় ধরা হয় না।


ব্লু শার্কঃ
‘ব্লু শার্ক’ এর নামটা কেনো ব্লু শার্ক হলো তার কারণটা কিন্তু খুবই সহজ। এদের গায়ের রঙ নীল। ব্লু শার্কের দেহটা যদিও খুব সরু তবে এরা লম্বায় সাড়ে ১২ ফিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে এদের সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি হচ্ছে ব্লু শার্ক হাঙরদের মধ্যে তো বটেই, এমনকি মাছেদের মধ্যেও সবচেয়ে দ্রুতগতিতে সাঁতার কাটতে পারে। ব্লু শার্কের দাঁতগুলো খুবই ধারালো আর চোখা হয়ে থাকে যার ফলে এদের পক্ষে খাবার শিকার করা খুবই সহজ। আর এদের পছন্দের খাবারের তালিকায় রয়েছে মাছ এবং স্কুইড। এরা মাঝে মাঝেই মানুষের উপর আক্রমণ করে বসে যে কারণে এদেরকে ভয়ংকর প্রজাতির হাঙরদের মধ্যে ধরা হয়। আর বেশিরভাগ হাঙর প্রজাতির মত ব্লু শার্কও বিপন্নপ্রায় প্রজাতির একটি হাঙর।

তাহলে, কোনগুলো ভয়ংকর হাঙর, সেগুলোকে তো ঠিক চিনে ফেললেন, তাই না? তাহলে, এখন থেকে যখন সাগর বা সাগরের কাছাকাছি কোনো নদীতে সাঁতার কাটতে নামবেন, তখন কিন্তু খুব সাবধান থাকবে। এই হাঙরগুলোর কোনোটা থাকলে তক্ষুণি চট করে পানি থেকে উঠে যাবে। আর অন্য কোনো হাঙর বেড়াতে এলে তাকে আপনি উল্টো গিয়ে একটু আদর করে দিতে পারেন। অন্য হাঙরগুলো তো আর আপনাকে কামড়াতে আসবে না!

লেখকঃ মেহেদী বাবু।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

২টি মন্তব্য:

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info