ডিসেম্বর মাস মানে আমাদের বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সাল লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের এই স্বাধীনতা। এই সময় যেমন আর্মির বড় বড় অফিসার আমাদের দেশের জন্য তাদের জীবনকে বাজি ধরে যুদ্ধ করেছেন ঠিক তেমনি একজন দেশ প্রেমে নিমগ্ন একজন কৃষকও তার জীবনের বাজি রেখে তার মাতৃ ভূমিকে রক্ষা করেছেন। এরা সবাই আমাদের দেশের সব থেকে বড় সম্পদ। এছাড়াও আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমরা এমন কিছু বন্ধু পেয়েছিলাম যারা আমাদের পাশে দাড়িয়েছিল নির্সার্থ ভাবে। 'একাত্তরের ভিনদেশী বন্ধু' লেখাটির মধ্যে তুলে ধরা হয়েছিল এমন কিছু বন্ধুর পরিচয়।
এদের মধ্যে একজনের নাম বেশ উল্লেখ যোগ্য তিনি হলেন "রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরী"। অনেকেই ভাবছেন এনাকে কেন উল্লেখ্য যোগ্য বলছি। কারনটা বলছি, চলুন ফিরে যাই ১৯৭১ সালে। সে সময় কার বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্ব শোষিত করত দুটি পরাশক্তি। প্রথমত আমেরিকা অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র আর সোভিয়েত ইউনিয়ন বর্তমান রাশিয়া বলতে পারেন। যদিও বর্তমানে সোভিয়েত ইউনিয়ন নেই কিন্তু তৎকালীন সময়ে সভিয়ের ইউনিয়নের প্রতাপ আমারেকার থেকে কোন অংশে কম ছিল না। তৎকালীন সময়ে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ছিলেন রিপাবলিকান দলের "রিচার্ড নিক্সন"। আর আপনারা জানেন রিপাবলিকানরা যুদ্ধ করতে এবং বাধিয়ে বেশ মজা পায়। তার কোন অংশেই বীপরিত ছিলেন না রিচার্ড নিক্সন। ১৯৭১ সালে যখন হানাদার পাকিস্থানি বাহিনী আমাদের হত্যার নেশায় মেতে ছিল তখন রিচার্ড নিক্সন এক কথায় পাকিস্থানকে তার সাপোর্ট দেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীনতার বিরোধী। এমন কি তিনি একটি নৌবহর পর্যন্ত পাঠিয়ে দেন আমাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এমন সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন এগিয়ে আসে আমাদের সাহায্যার্থে। কেননা তারা এর পাল্টা জবাব হিসেবে পাঠিয়ে দেয় সাবমেরিন। যার ফল সরূপ তৎকালীন আমেরিকা খুব একটা সুবিধাজনক পরিস্থিতি না পেয়ে তাদের নৌবহর ফেরত নিতে বাধ্য হয়। একবার একটু চিন্তা করুন একবার যদি এই নৌবহর আমাদের সমুদ্র সীমায় চলে আসত তাহলে আমাদের জন্য স্বাধীনতা অর্জন করা কত টুকু কঠিন হয়ে যেত।


এদের মধ্যে একজনের নাম বেশ উল্লেখ যোগ্য তিনি হলেন "রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরী"। অনেকেই ভাবছেন এনাকে কেন উল্লেখ্য যোগ্য বলছি। কারনটা বলছি, চলুন ফিরে যাই ১৯৭১ সালে। সে সময় কার বিশ্ব প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্ব শোষিত করত দুটি পরাশক্তি। প্রথমত আমেরিকা অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র আর সোভিয়েত ইউনিয়ন বর্তমান রাশিয়া বলতে পারেন। যদিও বর্তমানে সোভিয়েত ইউনিয়ন নেই কিন্তু তৎকালীন সময়ে সভিয়ের ইউনিয়নের প্রতাপ আমারেকার থেকে কোন অংশে কম ছিল না। তৎকালীন সময়ে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ছিলেন রিপাবলিকান দলের "রিচার্ড নিক্সন"। আর আপনারা জানেন রিপাবলিকানরা যুদ্ধ করতে এবং বাধিয়ে বেশ মজা পায়। তার কোন অংশেই বীপরিত ছিলেন না রিচার্ড নিক্সন। ১৯৭১ সালে যখন হানাদার পাকিস্থানি বাহিনী আমাদের হত্যার নেশায় মেতে ছিল তখন রিচার্ড নিক্সন এক কথায় পাকিস্থানকে তার সাপোর্ট দেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীনতার বিরোধী। এমন কি তিনি একটি নৌবহর পর্যন্ত পাঠিয়ে দেন আমাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এমন সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন এগিয়ে আসে আমাদের সাহায্যার্থে। কেননা তারা এর পাল্টা জবাব হিসেবে পাঠিয়ে দেয় সাবমেরিন। যার ফল সরূপ তৎকালীন আমেরিকা খুব একটা সুবিধাজনক পরিস্থিতি না পেয়ে তাদের নৌবহর ফেরত নিতে বাধ্য হয়। একবার একটু চিন্তা করুন একবার যদি এই নৌবহর আমাদের সমুদ্র সীমায় চলে আসত তাহলে আমাদের জন্য স্বাধীনতা অর্জন করা কত টুকু কঠিন হয়ে যেত।
এখন নিক্সন তার পরিকল্পনা অনুসারে আমাদের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। মানে যাতে আমরা কোন ভাবে স্বাধীন দেশ হিসেবে পরিচিত না হই। এখন সময় এল পন্ডিত রবি সংকরের। তার অনুরোধে বব হ্যারিসন আমাদের স্বাধীনতার স্বপক্ষে আমেরিকার জনমত আদায়ের জন্য করে ফেললেন একটি কন্সার্ট। তিনি গাইলেন তার বিখ্যাত "বাংলাদেশ" গানটি। অনেকেই বলবেন একটি গান গেয়ে আমাদের কি ভাবে সাহায্য করল। আমেরিকা তখন বিশ্বের সব থেকে বড় শক্তি গুলার দুটির মধ্যে একটি আর এর জনগন কি জানবে আমাদের কথা। তাদের কাছে আমাদের যুদ্ধের সময়ের দুর্দশা আর হানাদার বাহীনির অত্যাচারের কথা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে পন্ডিত রবি সংকর আর বব হ্যারিসনের অবদান সব থেকে বেশী। এর পরে খোদ আমেরিকায় শুরু হল প্রেসিডেন্ট নিক্সনের বিরুদ্ধে জনসমাবেশ। যাতে তিনি অনেকটা বাধ্য হন পাকিস্তানিদের উপর থেকে আমেরিকার সাপোর্ট তুলে নিতে। ফলে পাকিস্থান যুদ্ধের সময় হারাল এক বিশাল বড় সংগী। কিন্তু আমাদের সংগী হয়ে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন আর এছাড়া ভারতের তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সারা বিশ্ব আমাদের স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান জানলেও অনেকেই সভিয়েত ইউনিয়নের অবদান জানেন না অন্য আরেক দিন এ নিয়ে বিস্তারিত বলব।
এই ছিল রবি শংকরের অবদান। তিনি যদি তখন বব হ্যারিসনকে নিয়ে বাংলাদেশের জন্য এই কন্সার্ট না করতেন তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা পাওয়া অনেকটাই কঠিন হয়ে পরত। কেননা আমাদের বিপক্ষে যে ছিল আমেরিকার মত পরাশক্তি আর পাকিস্থানিদের সাথে ছিল আমেরিকার মত পরম মিত্র।
এই ছিল রবি শংকরের অবদান। তিনি যদি তখন বব হ্যারিসনকে নিয়ে বাংলাদেশের জন্য এই কন্সার্ট না করতেন তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা পাওয়া অনেকটাই কঠিন হয়ে পরত। কেননা আমাদের বিপক্ষে যে ছিল আমেরিকার মত পরাশক্তি আর পাকিস্থানিদের সাথে ছিল আমেরিকার মত পরম মিত্র।
১১/১২/২০১২ বুধবার ভোর৷ হাজার হাজার মাইল দূরে মার্কিন মুলুকে তখন হঠাত্ স্তব্ধ সেতারের সুর৷ চলে গেলেন ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের যুগপুরুষ ও বাংলাদেশের এক পরম বন্ধু৷ আধুনিক বাংলা তথা ভারতবর্ষের অন্যতম বিশ্বপথিক৷ প্রবাদপ্রতিম সেতারশিল্পী পণ্ডিত রবিশঙ্কর প্রয়াত৷ বুধবার ভোরে আমেরিকার সান দিয়েগোর এক হাসপাতালে মৃত্যু হয় পণ্ডিত রবিশঙ্করের৷ বয়স হয়েছিল ৯২ বছর৷ দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন শ্বাসকষ্টজনিত রোগে৷গত বৃহস্পতিবার তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর অস্ত্রোপচার করা হলেও তা সফল হয়নি। বিশুদ্ধ মার্গসঙ্গীত থেকে প্রাচ্য পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন৷ অনন্য সৃজনীর পরশপাথরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মহিমা৷ জীবনের শেষ অনুষ্ঠানটি করেছিলেন গত ৪ নভেম্বর, মুখে অক্সিজেন মাস্ক নিয়েই৷ সঙ্গে ছিলেন মেয়ে অনুষ্কাও৷ শরীর ভেঙে পড়েছিল, তবু অসুস্থতা কেড়ে নিতে পারেনি তাঁর সৃষ্টিকে৷ কিন্তু, বুধবারের ভোর, এক লহমায় নিঃস্ব করে দিয়ে গেল এই মহান সংগীত কার। তার প্রতি রইল আমাদের অন্তর নিংড়ানো সন্মাননা।
আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন তিনি কিন্তু রেখে গেলেন তার জীবনের এক ঐতিহ্যপূর্ন ইতিহাস। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই মহান মানুষ্টির সম্পর্কে কিছু তথ্য।
পণ্ডিত রবি শংকর (জন্ম: ৭ই এপ্রিল, ১৯২০, বেনারস, উত্তর প্রদেশ, ভারত। মৃত্যু: ১১ই ডিসেম্বর, ২০১২, স্যান ডিয়াগো, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) একজন ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ যিনি সেতারবাদনে কিংবদন্তীতুল্য শ্রেষ্ঠত্বের জন্য বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মাইহার ঘরানার স্রষ্টা আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের শিষ্য রবি শংকর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঐতিহ্য এবং ভারতীয় সঙ্গীতকে ১৯৬০-এর দশকে পাশ্চাত্য বিশ্বের কাছে প্রথম তুলে ধরেন। তাঁর সাঙ্গীতিক কর্মজীবনের পরিব্যাপ্তি ছয় দশক জুড়ে; বর্তমানে রবি শংকর দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক কর্মজীবনের জন্য গিনেস রেকর্ডের অধিকারী। তাঁর পূর্ণ নাম রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরী।
আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন তিনি কিন্তু রেখে গেলেন তার জীবনের এক ঐতিহ্যপূর্ন ইতিহাস। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই মহান মানুষ্টির সম্পর্কে কিছু তথ্য।
পণ্ডিত রবি শংকর (জন্ম: ৭ই এপ্রিল, ১৯২০, বেনারস, উত্তর প্রদেশ, ভারত। মৃত্যু: ১১ই ডিসেম্বর, ২০১২, স্যান ডিয়াগো, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) একজন ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ যিনি সেতারবাদনে কিংবদন্তীতুল্য শ্রেষ্ঠত্বের জন্য বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মাইহার ঘরানার স্রষ্টা আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের শিষ্য রবি শংকর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঐতিহ্য এবং ভারতীয় সঙ্গীতকে ১৯৬০-এর দশকে পাশ্চাত্য বিশ্বের কাছে প্রথম তুলে ধরেন। তাঁর সাঙ্গীতিক কর্মজীবনের পরিব্যাপ্তি ছয় দশক জুড়ে; বর্তমানে রবি শংকর দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক কর্মজীবনের জন্য গিনেস রেকর্ডের অধিকারী। তাঁর পূর্ণ নাম রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরী।
ছেলেবেলাঃ
রবীন্দ্র শংকরের (ডাক নাম রবু) আদি পৈত্রিক বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলায়। তাঁর জন্ম হয় ভারতের উত্তরপ্রদেশের শহর বারাণসী শহরে। রবি শংকর ছিলেন চার ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তাঁর বাবা শ্যাম শংকর ছিলেন একজন প্রথিতযশা জ্ঞানী, রাজনীতিবিদ এবং আইনজ্ঞ। কিন্তু তাঁর প্রায় পুরোটা ছেলেবেলাটাই বাবার অনুপস্থিতিতে কেটে যায়। ফলে একরকম দারিদ্রতার মধ্যেই রবি শংকরের মা হেমাঙ্গিনী তাঁকে বড় করেন। বড় ভাই উদয় শংকর ছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী। ঐ সময়টায় তিনি ছিলেন প্যারিসে। রবি শংকর ১৯৩০-এ মায়ের সাথে প্যারিসে বড় ভাইয়ের কাছে যান এবং সেখানেই আট বছর স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করেন। বার বছর বয়স থেকেই রবি শংকর বড় ভাইয়ের নাঁচের দলের একক নৃত্যশিল্পী ও সেতার বাদক। ঐ বয়স থেকেই তিনি অনুষ্ঠান করে বেড়িয়েছেন ভারত ও ইউরোপের বিভিন্ন শহরে।
রবীন্দ্র শংকরের (ডাক নাম রবু) আদি পৈত্রিক বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলায়। তাঁর জন্ম হয় ভারতের উত্তরপ্রদেশের শহর বারাণসী শহরে। রবি শংকর ছিলেন চার ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তাঁর বাবা শ্যাম শংকর ছিলেন একজন প্রথিতযশা জ্ঞানী, রাজনীতিবিদ এবং আইনজ্ঞ। কিন্তু তাঁর প্রায় পুরোটা ছেলেবেলাটাই বাবার অনুপস্থিতিতে কেটে যায়। ফলে একরকম দারিদ্রতার মধ্যেই রবি শংকরের মা হেমাঙ্গিনী তাঁকে বড় করেন। বড় ভাই উদয় শংকর ছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী। ঐ সময়টায় তিনি ছিলেন প্যারিসে। রবি শংকর ১৯৩০-এ মায়ের সাথে প্যারিসে বড় ভাইয়ের কাছে যান এবং সেখানেই আট বছর স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করেন। বার বছর বয়স থেকেই রবি শংকর বড় ভাইয়ের নাঁচের দলের একক নৃত্যশিল্পী ও সেতার বাদক। ঐ বয়স থেকেই তিনি অনুষ্ঠান করে বেড়িয়েছেন ভারত ও ইউরোপের বিভিন্ন শহরে।
পারিবারিক জীবনঃ
একুশ বছর বয়েসে রবি শংকর তাঁর গুরু (যাঁকে তিনি বাবা বলে ডাকতেন) আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের মেয়ে অন্নপূর্ণা দেবীকে বিয়ে করেন। এই বিয়েতে তাঁদের একটি পুত্র সন্তান শুভেন্দ্র শংকরের জন্ম হয়। কিন্তু এই বিয়ে বিচ্ছেদে শেষ হয়।
পরবর্তীতে আমেরিকান কনসার্ট উদ্যোক্তা স্যূ জোন্স এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। এই সম্পর্ক একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। নোরা জোন্স রবি শংকরের এই মেয়ে একজন প্রথিতযশা জ্যাজ, পপ, আধ্যাত্মিক এবং পাশ্চাত্য লোক সঙ্গীতের শিল্পী ও সুরকার। নোরা জোন্স ২০০৩ ও ২০০৫ সালে দশটি গ্র্যামি এওয়ার্ড পেয়েছেন।
পরবর্তীতে রবি শংকর তার গুণগ্রাহী ও অনুরক্তা সুকন্যা কৈতানকে বিয়ে করেন। এই বিয়েতে তাঁর দ্বিতীয় কন্যা অনুশকা শংকরের জন্ম হয়। বাবার কাছে শিক্ষা নিয়ে অনুশকা এখন নিজেও সেতার বাজিয়ে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
একুশ বছর বয়েসে রবি শংকর তাঁর গুরু (যাঁকে তিনি বাবা বলে ডাকতেন) আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের মেয়ে অন্নপূর্ণা দেবীকে বিয়ে করেন। এই বিয়েতে তাঁদের একটি পুত্র সন্তান শুভেন্দ্র শংকরের জন্ম হয়। কিন্তু এই বিয়ে বিচ্ছেদে শেষ হয়।
পরবর্তীতে আমেরিকান কনসার্ট উদ্যোক্তা স্যূ জোন্স এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। এই সম্পর্ক একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। নোরা জোন্স রবি শংকরের এই মেয়ে একজন প্রথিতযশা জ্যাজ, পপ, আধ্যাত্মিক এবং পাশ্চাত্য লোক সঙ্গীতের শিল্পী ও সুরকার। নোরা জোন্স ২০০৩ ও ২০০৫ সালে দশটি গ্র্যামি এওয়ার্ড পেয়েছেন।
পরবর্তীতে রবি শংকর তার গুণগ্রাহী ও অনুরক্তা সুকন্যা কৈতানকে বিয়ে করেন। এই বিয়েতে তাঁর দ্বিতীয় কন্যা অনুশকা শংকরের জন্ম হয়। বাবার কাছে শিক্ষা নিয়ে অনুশকা এখন নিজেও সেতার বাজিয়ে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
সঙ্গীত জীবনঃ
১৯৩৮ সালে, আঠারো বছর বয়সে রবি শংকর বড় ভাই উদয় শংকরের নাচের দল ছেড়ে মাইহারে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অমর শিল্পী আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের কাছে সেতারের দীক্ষা নিতে শুরু করেন। দীক্ষা গ্রহণকালে তিনি আচার্যের পুত্র সরোদের অমর শিল্পী ওস্তাদ আলী আকবর খানের সংস্পর্শে আসেন। তাঁরা পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে সেতার সরোদের যুগলবন্দী বাজিয়েছেন। গুরুগৃহে রবি শংকর দীর্ঘ সাত বছর সেতারে সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করেন। এই শিক্ষাকাল পরিব্যাপ্ত ছিল ১৯৩৮ হতে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত।
১৯৩৯ সালে ভারতের আহমেদাবাদ শহরে রবি শংকরের সর্বপ্রথম সাধারণের জন্য উন্মুক্ত একক সেতার পরিবেশন অনুষ্ঠান হয়। সেই শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পণ্ডিত রবি শংকর নিজেকে তুলে ধরেছেন একজন বৈশ্বিক সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীত স্রষ্টা, পারফর্মার এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একজন মেধাবী দূত হিসেবে। ১৯৪৫ সালের মধ্যে রবি শংকর সেতার বাদক হিসেবে ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একজন শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যান।
এই সময়ে রবি শংকর তাঁর সাঙ্গীতিক সৃজনশীলতার অন্যান্য শাখায়ও পদচারণা শুরু করেন। তিনি সুর সৃষ্টি, ব্যালের জন্য সঙ্গীত রচনা এবং চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই সময়ের বিখ্যাত ধরত্রী কি লাল এবং নীচা নগর চলচ্চিত্র দুটির সঙ্গীত রচনা ও সুরারোপ করেন। তিনি কবি ইকবালের সারে জাঁহাসে আচ্ছা কবিতাকে অমর সুরে সুরারোপিত করে ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীতের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
১৯৪৯ সালে রবি শংকর দিল্লীতে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। একই সময়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বৈদ্য বৃন্দ চেম্বার অর্কেষ্ট্রা । ১৯৫০ হতে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত রবি শংকর অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সঙ্গীত সৃষ্টিতে ব্যাপৃত ছিলেন। এ সময়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হলো সত্যজিৎ রায়ের অপু ত্রয়ী (পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার) চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা। পরবর্তীতে তিনি চাপাকোয়া (১৯৬৬) চার্লি (১৯৬৮) ও গান্ধী (১৯৮২) সহ আরো চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন।
১৯৬২ সালে পণ্ডিত রবি শংকর কিন্নর স্কুল অব মিউজিক, বম্বে এবং ১৯৬৭ সালে কিন্নর স্কুল অব মিউজিক, লস এন্জেলেস স্থাপন করেন।
১৯৩৮ সালে, আঠারো বছর বয়সে রবি শংকর বড় ভাই উদয় শংকরের নাচের দল ছেড়ে মাইহারে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অমর শিল্পী আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের কাছে সেতারের দীক্ষা নিতে শুরু করেন। দীক্ষা গ্রহণকালে তিনি আচার্যের পুত্র সরোদের অমর শিল্পী ওস্তাদ আলী আকবর খানের সংস্পর্শে আসেন। তাঁরা পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে সেতার সরোদের যুগলবন্দী বাজিয়েছেন। গুরুগৃহে রবি শংকর দীর্ঘ সাত বছর সেতারে সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করেন। এই শিক্ষাকাল পরিব্যাপ্ত ছিল ১৯৩৮ হতে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত।
১৯৩৯ সালে ভারতের আহমেদাবাদ শহরে রবি শংকরের সর্বপ্রথম সাধারণের জন্য উন্মুক্ত একক সেতার পরিবেশন অনুষ্ঠান হয়। সেই শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পণ্ডিত রবি শংকর নিজেকে তুলে ধরেছেন একজন বৈশ্বিক সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীত স্রষ্টা, পারফর্মার এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একজন মেধাবী দূত হিসেবে। ১৯৪৫ সালের মধ্যে রবি শংকর সেতার বাদক হিসেবে ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একজন শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যান।
এই সময়ে রবি শংকর তাঁর সাঙ্গীতিক সৃজনশীলতার অন্যান্য শাখায়ও পদচারণা শুরু করেন। তিনি সুর সৃষ্টি, ব্যালের জন্য সঙ্গীত রচনা এবং চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই সময়ের বিখ্যাত ধরত্রী কি লাল এবং নীচা নগর চলচ্চিত্র দুটির সঙ্গীত রচনা ও সুরারোপ করেন। তিনি কবি ইকবালের সারে জাঁহাসে আচ্ছা কবিতাকে অমর সুরে সুরারোপিত করে ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীতের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় গান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
১৯৪৯ সালে রবি শংকর দিল্লীতে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। একই সময়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বৈদ্য বৃন্দ চেম্বার অর্কেষ্ট্রা । ১৯৫০ হতে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত রবি শংকর অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সঙ্গীত সৃষ্টিতে ব্যাপৃত ছিলেন। এ সময়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হলো সত্যজিৎ রায়ের অপু ত্রয়ী (পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার) চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা। পরবর্তীতে তিনি চাপাকোয়া (১৯৬৬) চার্লি (১৯৬৮) ও গান্ধী (১৯৮২) সহ আরো চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন।
১৯৬২ সালে পণ্ডিত রবি শংকর কিন্নর স্কুল অব মিউজিক, বম্বে এবং ১৯৬৭ সালে কিন্নর স্কুল অব মিউজিক, লস এন্জেলেস স্থাপন করেন।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেঃ
রবি শংকরের সঙ্গীত ব্যক্তিত্বের দুটি ভিন্ন দিক রয়েছে, উচ্চাঙ্গ সেতার শিল্পী হিসেবে তিনি সব সময়ই ঐতিহ্যমুখী ও শুদ্ধতাবাদী; কিন্তু সঙ্গীত রচয়িতা হিসেবে তিনি সব সময়ই নিজের সীমাকে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। ১৯৬৬ সালে বিটলস্-এর জর্জ হ্যারিসনের সাথে যোগাযোগের আগে থেকেই তিনি সঙ্গীতের বিভিন্ন ধারা ও তার প্রভাব নিয়ে কাজ করেছেন। এ সময় তিনি জ্যাজ সঙ্গীত, পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও লোকসঙ্গীত নিয়ে কাজ করেছেন।
১৯৫৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রবি শংকর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বাহক হিসেবে তাঁর সেতারবাদনকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রথম তুলে ধরেন। এরপর ১৯৫৬ সালে তিনি ইউরোপ ও আমেরিকায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এ সময় তিনি এডিনবার্গ ফেস্টিভালে এবং বিখ্যাত সঙ্গীত মঞ্চ রয়াল ফেস্টিভাল হলেও বাজিয়েছেন।
১৯৬৫ সালে বীটলস্-এর জর্জ হ্যারিসন সেতারের সুর নিয়ে গবেষণা শুরু করলে রবি শংকরের সাথে তাঁর যোগাযোগ তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে তা বন্ধুত্বে পরিণত হয়। এই বন্ধুত্ব রবি শংকরকে অতিদ্রুত আন্তর্জাতিক সঙ্গীত পরিমন্ডলে নিজস্ব অবস্থান সৃষ্টিতে সাহায্য করে। রবি শংকর পপ সঙ্গীতের গুরু জর্জ হ্যারিসনের "মেন্টর" হিসেবে পাশ্চাত্য সঙ্গীত জগতে গৃহীত হন। এর ফলে রবি শংকরকে এমন সব সঙ্গীত উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশনের আমন্ত্রণ জানানো হয় যা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশনের উপযোগী পরিবেশ নয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো "মন্টেরী পপ ফেস্টিভ্যাল", মন্টেরী, ক্যালিফোর্নিয়া; এ অনুষ্ঠানে ওস্তাদ আল্লারাখা তবলায় সঙ্গত করেছিলেন। ১৯৬৭ সালে তাঁর আমেরিকার অনুষ্ঠানমালা তাঁকে এক অভাবনীয় সফলতা এনে দিয়েছিল। অনুষ্ঠানের পর তাঁকে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এছাড়াও ১৯৬৯ সালে তিনি উডস্টক ফেস্টিভ্যালে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে প্রচার ও মানবিক সহায়তার জন্য জর্জ হ্যারিসনের উদ্যোগে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে আয়োজিত "কনসার্ট ফর বাংলাদেশ" অনুষ্ঠানে সেতার বাজিয়েছিলেন। পণ্ডিত রবি শংকরই মূলত এই অনুষ্ঠানের জন্য জর্জ হ্যারিসনকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে "কনসার্ট ফর বাংলাদেশ" একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা।
জর্জ হ্যারিসনের ১৯৭৪ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুষ্ঠানমালায় পণ্ডিত রবি শংকর ও তাঁর সঙ্গীরা উদ্বোধনী অংকে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন।
পণ্ডিত রবি শংকরের অমর কীর্তি হচ্ছে পাশ্চাত্য ও প্রতীচ্যের সঙ্গীতের মিলন। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের বিখ্যাত বেহালাবাদক ইহুদী মেনুহিনের সঙ্গে সেতার-বেহালার কম্পোজিশন তাঁর এক অমর সৃষ্টি যা তাঁকে আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের এক উচ্চ আসনে বসিয়েছে। তিনি আরো একটি বিখ্যাত সঙ্গীত কম্পোজিশন করেছেন বিখ্যাত বাঁশীবাদক জ্যঁ পিয়েরে রামপাল, জাপানী বাঁশীর সাকুহাচি গুরু হোসান ইয়ামামাটো এবং কোটো (ঐতিহ্যবাহী জাপানী তারযন্ত্র) গুরু মুসুমি মিয়াশিতার জন্য। ১৯৯০ সালে বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ফিলিপ গ্রাসের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনা প্যাসেজেস তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি। ২০০৪ সালে পণ্ডিত রবি শংকর ফিলিপ গ্রাসের ওরিয়ন প্রযোজনার সেতার অংশের সঙ্গীত রচনা করেন।
চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্রঃ
প্রকাশনাঃ
পুরস্কার ও সম্মাননাঃ
দেহাবসানঃ
২০১২ খ্রিস্টাব্দের ১১ই ডিসেম্বর মঙ্গলবার তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। কয়েক বৎসর যাবৎ তিনি বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। ক্রমশ: তিনি বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে কয়েকদিন আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং বৃহস্পতিবার তাঁর হৃৎপিণ্ডের ভাল্ব পরবির্তন করা হয়। শল্যচিকিৎসার এই ধাক্কা তার দুর্বল শরীর সহ্য করতে পারেনি। কয়েক সপ্তাহ আগে নভেম্বরের ৪ তারিখে তিনি ক্যালিফর্নিয়াতে শ্রোতাসাধারণের জন্য সর্বশেষ বাদন উপহার দেন।
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
রবি শংকরের সঙ্গীত ব্যক্তিত্বের দুটি ভিন্ন দিক রয়েছে, উচ্চাঙ্গ সেতার শিল্পী হিসেবে তিনি সব সময়ই ঐতিহ্যমুখী ও শুদ্ধতাবাদী; কিন্তু সঙ্গীত রচয়িতা হিসেবে তিনি সব সময়ই নিজের সীমাকে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। ১৯৬৬ সালে বিটলস্-এর জর্জ হ্যারিসনের সাথে যোগাযোগের আগে থেকেই তিনি সঙ্গীতের বিভিন্ন ধারা ও তার প্রভাব নিয়ে কাজ করেছেন। এ সময় তিনি জ্যাজ সঙ্গীত, পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও লোকসঙ্গীত নিয়ে কাজ করেছেন।
১৯৫৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রবি শংকর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বাহক হিসেবে তাঁর সেতারবাদনকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রথম তুলে ধরেন। এরপর ১৯৫৬ সালে তিনি ইউরোপ ও আমেরিকায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এ সময় তিনি এডিনবার্গ ফেস্টিভালে এবং বিখ্যাত সঙ্গীত মঞ্চ রয়াল ফেস্টিভাল হলেও বাজিয়েছেন।
১৯৬৫ সালে বীটলস্-এর জর্জ হ্যারিসন সেতারের সুর নিয়ে গবেষণা শুরু করলে রবি শংকরের সাথে তাঁর যোগাযোগ তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে তা বন্ধুত্বে পরিণত হয়। এই বন্ধুত্ব রবি শংকরকে অতিদ্রুত আন্তর্জাতিক সঙ্গীত পরিমন্ডলে নিজস্ব অবস্থান সৃষ্টিতে সাহায্য করে। রবি শংকর পপ সঙ্গীতের গুরু জর্জ হ্যারিসনের "মেন্টর" হিসেবে পাশ্চাত্য সঙ্গীত জগতে গৃহীত হন। এর ফলে রবি শংকরকে এমন সব সঙ্গীত উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশনের আমন্ত্রণ জানানো হয় যা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশনের উপযোগী পরিবেশ নয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো "মন্টেরী পপ ফেস্টিভ্যাল", মন্টেরী, ক্যালিফোর্নিয়া; এ অনুষ্ঠানে ওস্তাদ আল্লারাখা তবলায় সঙ্গত করেছিলেন। ১৯৬৭ সালে তাঁর আমেরিকার অনুষ্ঠানমালা তাঁকে এক অভাবনীয় সফলতা এনে দিয়েছিল। অনুষ্ঠানের পর তাঁকে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এছাড়াও ১৯৬৯ সালে তিনি উডস্টক ফেস্টিভ্যালে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপক্ষে প্রচার ও মানবিক সহায়তার জন্য জর্জ হ্যারিসনের উদ্যোগে নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে আয়োজিত "কনসার্ট ফর বাংলাদেশ" অনুষ্ঠানে সেতার বাজিয়েছিলেন। পণ্ডিত রবি শংকরই মূলত এই অনুষ্ঠানের জন্য জর্জ হ্যারিসনকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে "কনসার্ট ফর বাংলাদেশ" একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা।
জর্জ হ্যারিসনের ১৯৭৪ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুষ্ঠানমালায় পণ্ডিত রবি শংকর ও তাঁর সঙ্গীরা উদ্বোধনী অংকে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন।
পণ্ডিত রবি শংকরের অমর কীর্তি হচ্ছে পাশ্চাত্য ও প্রতীচ্যের সঙ্গীতের মিলন। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের বিখ্যাত বেহালাবাদক ইহুদী মেনুহিনের সঙ্গে সেতার-বেহালার কম্পোজিশন তাঁর এক অমর সৃষ্টি যা তাঁকে আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের এক উচ্চ আসনে বসিয়েছে। তিনি আরো একটি বিখ্যাত সঙ্গীত কম্পোজিশন করেছেন বিখ্যাত বাঁশীবাদক জ্যঁ পিয়েরে রামপাল, জাপানী বাঁশীর সাকুহাচি গুরু হোসান ইয়ামামাটো এবং কোটো (ঐতিহ্যবাহী জাপানী তারযন্ত্র) গুরু মুসুমি মিয়াশিতার জন্য। ১৯৯০ সালে বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ফিলিপ গ্রাসের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনা প্যাসেজেস তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি। ২০০৪ সালে পণ্ডিত রবি শংকর ফিলিপ গ্রাসের ওরিয়ন প্রযোজনার সেতার অংশের সঙ্গীত রচনা করেন।
চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্রঃ
- রাগা (১৯৭১) হাওয়ার্ড ওয়র্থ পরিচালিত।
- দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ (১৯৭২)।
- কনসার্ট ফর জর্জ (২০০৩)।
প্রকাশনাঃ
- ২০০৩ সাল পর্যন্ত ৬০ টি মিউজিক এলবাম।
- রাগ অনুরাগ (বাংলা)।
- রাগ মালা (১৯৬৭), (আত্মজীবনী, র্জজ হ্যারিসন সম্পাদিত) (ইংরেজি)।
- মিউজিক মেমরী (১৯৬৭) (ইংরেজি)।
- মাই মিউজিক, মাই লাইফ (১৯৬৮), (আত্মজীবনী) (ইংরেজি)।
- লার্নিং ইন্ডিয়ান মিউজিকঃ আ সিস্টেমেটিক এপ্রোচ (১৯৭৯) (ইংরেজি)।
পুরস্কার ও সম্মাননাঃ
- ১৯৬২ সালে ভারতীয় শিল্পের সর্বোচ্চ সম্মাননা পদক ভারতের রাষ্ট্রপতি পদক;
- ১৯৮১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সুশীল সমাজ পুরস্কার পদ্মভূষণ;
- ১৯৮৬ সালে ভারতের রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত হন;
- ১৯৯১ সালে ফুকোদা এশিয়ান কালচারাল প্রাইজেস-এর গ্র্যান্ড প্রাইজ;
- ১৯৯৮ সালে সুইডেনের পোলার মিউজিক প্রাইজ (রে চার্লস্ এর সাথে);
- ১৯৯৯ সালে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ভারতরত্ন;
- ২০০০ সালে ফরাসী সর্বোচ্চ সিভিলিয়ান এওয়ার্ড লিজিয়ন অব অনার;
- ২০০১ সালে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কর্তৃক প্রদত্ত অনারারী নাইটহুড;
- ২০০২ সালে ভারতীয় চেম্বার অব কমার্স-এর লাইফ টাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড এর উদ্বোধনী পুরস্কার;
- ২০০২ এ দুটি গ্র্যামি এওয়ার্ড;
- ২০০৩ সালে আই এস পি এ ডিস্টিংগুইশ্ড আর্টিস্ট এওয়ার্ড, লন্ডন;
- ২০০৬ সালে ফাউন্ডিং এম্বাসেডর ফর গ্লোবাল এমিটি এওয়ার্ড, স্যান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র;
- ১৪টি সম্মানসূচক ডক্টরেট;
- ম্যাগাসাসে এওয়ার্ড, ম্যানিলা, ফিলিপাইন;
- গ্লোবাল এম্বাসেডর উপাধি - ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম;
- ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত পদ্মবিভূষণ;
- বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত দেশিকোত্তম;
- পণ্ডিত রবি শংকর আমেরিকান একাডেমী অব আর্টস্ এন্ড লেটারস্-এর অনারারী মেম্বার এবং ইউনাইটেড নেশনস্ ইন্টারন্যাশনাল রোস্ট্রাম অফ কম্পোজারস-এর সদস্য।
দেহাবসানঃ
২০১২ খ্রিস্টাব্দের ১১ই ডিসেম্বর মঙ্গলবার তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। কয়েক বৎসর যাবৎ তিনি বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। ক্রমশ: তিনি বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে কয়েকদিন আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং বৃহস্পতিবার তাঁর হৃৎপিণ্ডের ভাল্ব পরবির্তন করা হয়। শল্যচিকিৎসার এই ধাক্কা তার দুর্বল শরীর সহ্য করতে পারেনি। কয়েক সপ্তাহ আগে নভেম্বরের ৪ তারিখে তিনি ক্যালিফর্নিয়াতে শ্রোতাসাধারণের জন্য সর্বশেষ বাদন উপহার দেন।
'অবসান ঘটল এক গৌরবময় জীবনের'
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
valo laglo
উত্তরমুছুনআপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম :)
মুছুন