স্বর্ন নিয়ে ৮টি তথ্য যা আপনাকে অবাক করে দিবে


'সোনা' এমন এক ধাতু যা ছাড়া বিশ্ব অচল। অনেকেই ভাববেন টাকা ছাড়া বিশ্ব অচল কিন্তু এই টাকা বের হয় সোনার বিপরীতে। এই টাকা সংরক্ষিত সোনার চেক স্বরূপ আমরা ব্যাবহার করি। যা হোক আজ অর্থনীতি নয় বরং আলোচনা করব মূল্যবান ধাতু সোনা নিয়ে। এই সোনা নিয়ে আজ আপনাদের ৮টি বিস্ময়কর তথ্য জানাবো যা আপনাকে অবাক করতে বিন্দু মাত্র কার্পন্ন করবে না। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।


(০১) সোনা যখন ঔষধঃ
আসলে আমি ঔষধের দাম বা চিকিৎসা ব্যাবস্থার খরচের সাথে সোনার তুলনা করছি না। মহামূল্যবান এই ধাতুই ব্যাবহৃত হয় ঔষধ হিসেবে। যাদের 'গাট ফোলানো বাথ' (Rheumatoid Arthritis) আছে তাদের হাড়ের সংযুক্ত স্থলে সোনা মিশ্রিত একধরনের লবন সিরিঞ্জের মাধ্যমে দেওয়া হয় যা এই রোগের চিকিৎসায় বেশ উপকারী। এছাড়াও 'প্রস্টেট ক্যান্সার' এবং 'HIV' রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নতুন কিছু প্রযুক্তি আবিস্কৃত হয়েছে যেখানে সোনা ব্যাবহার করা হয় এবং তা বর্তমানে চালু প্রযুক্তির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। এছাড়াও বেশ সফলতার সাথেই ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসায় সোনার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কনা ব্যাবহার করা হচ্ছে। ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যাক্তির ক্যান্সার কোষ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এবং তা ধ্বংসের কাজেও বর্তমানে সোনার তেজস্ক্রিয় আইসোটোপও ব্যাবহার করা হচ্ছে। বিস্ময়কর ভাবে ৩য় শতাব্দিতে সোনা ব্যাবহার করা হত দাঁতের পরিপূরক হিসেবে বা ক্ষত স্থান ভরাট করার ক্ষেত্রে, অবশ্য এটি এখনও ব্যাবহৃত হয়, যারা একটু বিত্তশালী হন তারা সোনার দাঁত ব্যাবহার করে।


(০২) সোনার জন্ম পৃথিবীর বাইরেঃ
আমাদের পৃথিবীতে যত সোন পাওয়া যায় (আরো কিছু ধাতু) অনুসন্ধানে দেখা যায় তার সবটাই এসেছে পৃথিবীর বাইরের থেকে প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর আগে। এ পর্যন্ত আবিস্কৃত সোনার সর্বমোট পরিমান ২০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ টন মাত্র। ধারনা করা হয় পৃথিবী সৃষ্টিকালীন সময়ে বিশাল বড় বড় উল্কা পৃথিবীতে আঘাত হানে যা পরবর্তী কালেও ঘটে আর তখনই পৃথিবীতে আগমন ঘটে সোনার।


(০৩) জৈব সামঞ্জস্যপূর্ণঃ
আমাদের শরীরের মধ্যে যদি সোনা ধুঁকিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তা কোন ভাবেই আমাদের শরীরের সাথে তা সংমিশ্রিত হয় না। একটু ব্যাখ্যা করি, ধরেন কোন ব্যাক্তির কিডনি নষ্টো হয়ে গেলে তা যদি অন্যব্যাক্তির কিডনি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয় তাহলে ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে কিডনি পরিবর্তনকারি ব্যাক্তির শরীর ঐ নতুন কিডনিকে অচেনা এবং ক্ষতিকারক বস্তু হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তা প্রত্যাক্ষান করে; কিন্তু আপনি যদি শরীরের কোথাও সোনা রেখে দেন তাহলে শরীর তা কোন ভাবেই প্রত্যাক্ষান করবে না। এছাড়াও সোনা অন্য কোন ধাতুর সাথে কোন দিনই কোন বিক্রিয়া করে না; আর এই কারনেই সোনাকে প্রকৃতিতে বিশুদ্ধ রূপেই পাওয়া যায় আর এর কোন ক্ষয় নেই।


(০৪) সব থেকে বড় স্বর্ণের দলাঃ
এপর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সব থেকে বড় স্বর্নের দলার ওজন ৬৮ কেজি। স্বর্নের এই দলার নাম 'স্বাগতম দলা' (Welcome Nugget); স্বর্নের এই দলা আবিস্কৃত হয় অষ্ট্রেলিয়াতে আর যে দু'জন ব্যাক্তি এই স্বর্নের দলা খুঁজে পান তারা প্রথমবার এটিকে দেখে খুশিতে নিজেদের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন।


(০৫) সোনালী দক্ষিন আফ্রিকাঃ
পৃথিবীতে যত সোনার খনি আছে তার ২/৩ অংশ আছে দক্ষিন আফ্রিকায় এবং ৭৮% সোনাই ব্যাবহৃত হয় অলংকার হিসেবে। বাদবাকি ব্যাবহার করে ইলেক্ট্রনিক শিল্প যার পরিমান ৩২০ টন (এবং ৭,৫০০ টন রূপা ব্যাবহার করে)। ইলেক্ট্রনিক শিল্পে সোনার ব্যাবহার এত বেশি কেননা সোনা খুব ভাল তড়িৎ চালনা করতে পারে এবং তা উত্তপ্তও কম পরিমানে হয়। এছাড়া এটা খুব নরম হওয়ার কারনে এটিকে অন্য যে কোন ধাতুর তুলনায় খুব সহজেই খুব সুক্ষ আকার দেওয়া যায়।


(০৬) পৃথিবীতে যত সোনা আছে তার থেকেও বেশি সোনা আছে আপনার ফোনেঃ
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য! উপরেই আলোচনা করেছি যে ইলেক্ট্রনিক শিল্পে এই সোনার ব্যাবহার কেমন হয়। আর বর্তমানে আমাদের ফোন যত বেশি শক্তিশালী হচ্ছে তার জন্যই তৈরি হচ্ছে জটির সব সার্কিট; আর এর ব্যাবহার করা হচ্ছে সোনা। ১টন ওজনের ফোনের সার্কিটের মধ্যে আছে প্রায় ৩৪০ গ্রাম সোনা, এই তথ্যটি প্রকাশ করে UNEP ২০০৯ সালে। আরেকটা মজার তথ্য হচ্ছে ২৮ গ্রাম সোনা সংগ্রহের জন্য ৩০ টন ওজনের মাটি খোঁড়া লাগে। এই তথ্য জানার পরে নিশ্চয়ই পুরাতন মোবাইল গুলি ফেলতে আর ইচ্ছা করছে না, তাই না?


(০৭) খনন একমাত্র উপায় নাও হতে পারেঃ
উপরে আলোচনা করেছেই যে সোনার ব্যাবহার আমাদের ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীতে কি পরিমানে হয়। যা হোক বর্তমানে এই সোনা সংগ্রহের মূল উৎস হচ্ছে মাটি খনন। কিন্তু মাটি খননই একমাত্র উপায় না সোনা সংগ্রহের। আমরা ফেলে দেওয়া ইলেক্ট্রনিক জিনিষ থেকে খুব সহজেই সোনাকে পুনঃরায় সংগ্রহ করতে পাই। আর এর কাজের জন্য ব্যাবহার করা হয় 'সোডিয়াম সায়ানাইড', কি ভাবছেন আজই নেমে পরবেন? খবরদার এই কথা চিন্তাও করবেন না। কেননা সোডিয়াম সায়ানাইডের মধ্যে ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীকে নিমজ্জিত করার পরে সোনাকে আলাদ করা পরে যে অবশিষ্ট আবর্জনা থাকবে তা নিউক্লিয়ার তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের মতই ভয়ংকর। যা হোক আপাতত খননের মাধ্যমেই সোনা সংগ্রহ সব থেকে জনপ্রিয় মাধ্যম। তাই বলে ইলেক্ট্রনিক বৈর্জ্য থেকে যে সোনাকে সুরক্ষিত উপায়ে সোনা পুনরুদ্ধারের কাজ থেমে আছেন এটা মোটেও ভেবেন না। 'Northwestern University' এর বিজ্ঞানী 'Zhichang Liu' সম্ভবত একটি সুরক্ষিত উপায় খুঁজে পেয়েছেন সোনাকে পুনরুদ্ধারের। যদিও তিনি সম্পূর্ন পদ্ধতি এখনও জনসম্মুকে প্রকাশ করেন নাই তবে তিনি এই কাজে ব্যাবহার করেছেন এক বিশেষ ধরনের মাড়। তার এই পদ্ধতিতে ৯৭% সোনাকে বিশুদ্ধ রূপে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও VVT Technical Research Center এর বিজ্ঞানী 'ব্যাঙ্গের ছাতা' (Mushroom) ব্যাবহার করে ইলেক্ট্রনিক বৈর্জ থেকে সোনাকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। আসলে একদম ব্যাঙ্গের ছাতা নয় ক্ষেত্রে ব্যাবহার করেছেন 'মাইছিলিয়াম' (মycelium)। মাইছিলিয়ামের একটা স্তর দিয়ে তিনি সোনাকে আলাদা করেছেন। অন্যান্য সকল পদ্ধতির তুলনায় এই পদ্ধতি সব থেকে কার্যকর, সহজ এবং বিপদমুক্ত।


(০৮) এক আউন্স স্বর্নঃ
এক আউন্স স্বর্ন যার আকার আকৃতি অনেকটাই আপনার ফোনের ব্যাটারির মত; তাকে পিটিয়ে এতটাই পাতলা স্তরে রূপান্তরিত করা যায় যে তা দিয়ে ছোট খাট একটা রুমের ফ্লোরকে ঢেকে ফেলা সম্ভব। আর এই এক আউন্স সোনাকে যদি মানুষের চুলের ১/৩ সমান পাতলা করা সম্ভব হয় তাহলে এটি দিয়ে ৮০ কিঃমিঃ এলাকা ঢেকে ফেলা সম্ভব। সব থেকে মজার ব্যাপার এটা সম্ভব কোন কল্পনা না। এত পাতলা হয়েও সোনা নিজের আকৃতি ঠিকই ধরে রাখবে যা পৃথিবীর আর কোন ধাতুর কাছ থেকে আশা করা যায় না।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info