বিশ্বের সর্ব প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়


"নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয়" পৃথিবীর বুকে গড়ে ওঠা সর্বপ্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিহারে গড়ে ওঠা নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচীন সময়ের উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র। বিহারের এই প্রাচীন নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয় পাটনা থেকে ৮৮ কি.মি. দক্ষিন পূর্ব দিকে অবস্থিত। এটি বৈদ্ধ ধর্মালম্বিদের গড়ে তোলা একটি প্রতিষ্ঠান ছিল যা ৫ম থেকে ৬ষ্ট খ্রীষ্টিয় শতাব্দির মধ্যে তৈরি করা হয় আর এটি টিকে ছিল ১১৯৭ সাল পর্যন্ত। ইতিহাসের পাতায় এই বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্যতম জ্ঞান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় কাল নিয়ে কিছুটা দ্বিধা বিভক্ত মতামত পাওয়া যায়। অনেকের মতে এই প্রতিষ্টান গড়ে ওঠে "এক্রাদাত্তিয়া (Śakrāditya)" এর সময়ে (এই এক্রাদাত্তিয়া এর সময় কাল নিয়ে এখন পর্যন্ত সঠিক ধারনা পাওয়া যায় নাই, তবে ধারনা করা হউ "কুমার গুপ্ত ১ অথবা কুমার গুপ্ত ২ এর শাষন কাল) এবং টিকে ছিল ১১৯৭ সাল পর্যন্ত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন হিন্দু গুপ্ত রাজারা, এছাড়াও বুদ্ধিষ্ট সম্রাট হর্ষ এবং পাল সম্রাটরা


এই বিশ্ববিদ্যালয় ভবন তৈরি করা প্রায় ১৪ হেক্টর এলাকা নিয়ে আর বাড়ি গুলি তৈরি করা হয় লাল ইট দিয়ে। যখন এই বিশ্ববিদ্যালয় চালু ছিল তখন এখানে দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসত বিদ্যা অর্জন করতে, যেমন তিব্বত, চায়না, গ্রীস এবং পার্সিয়া থেকে।


নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ন বন্ধো এবং ধ্বংস করে দেন তূর্কি শাষক "বখতিয়ার খলজি" ১১৯৩ সালে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রন্থালয়ে এত পরিমান বই ছিল যে বলা হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের সময় এর গ্রন্থালয়ের বই টানা তিনমাস পুরেছিল অর্থাৎ একটা ধারনা পাওয়া যায় কি পরিমান বই ছিল কিন্তু সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব হয় নাই।


২০০৬ সালে সিংগাপুর, চায়না, জাপান এবং আরো কিছু দেশ একসাথে সিদ্ধান্ত নেন যে তারা এই প্রাচীন নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে পুনঃরায় উদ্ধার করবেন। মানে মাটির নিচে প্রায় হারিয়া যাওয়া এই বিশাল স্থাপনাকে আবার উদ্ধার করবেন এবং নতুন ভাবে চালু করবে আর এর জন্য তারা সব রকমের সাহায্য ভারত সরকারকে করতে রাজি হয়।


এই উদ্ধার কার্ক্রম সাফল্যের সাথে পরিচালনা করার পর, এই "নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয়" এর ব্যাপ্তি সকলকে হতবাক করেছে। এই প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০,০০০ এর বেশী ছাত্রদের থাকার আবাস ব্যাবস্থা ছিল এবং ২০০০ শিক্ষকদের থাকার ব্যাবস্থা ছিল।

এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্কিটেকচারের এক অনবদ্য নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি ঘেরা ছিল গর্ব করার মত উচু দেয়াল দিয়ে, আর ভিতরে ঢোকার গেট ছিল একটি মাত্র। এর মূল বিল্ডিং এ মোট আলাদা ভাবে ৮টি কম্পাউন্ড ছিল, আর ১০টি মন্দির ছিল, সাথে ছিল ধ্যান রুম আর ক্লাস রুম। আর বিল্ডিং এর সামনে ছিল পুকুর আর পার্কের মত জায়গা।

বৈদ্ধ শাষক হর্ষর শাষন কালে এই নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয় সম্রাটের কাছ থেকে প্রায় ২০০ গ্রাম অনুদান পেয়েছিল, যার পুরাটা এলাকা জুড়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা নির্ধারন করা হয়।

কি প্রচীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা জানতে জানতে কি খুব দেখবার ইচ্ছা জেগেছে মনে? আমি তো আপনাদের এখানে ঘুরাতে নিয়ে যেতে পারব না তবে এখানকার কিছু ছবি আপনাদের দেখাতে পারব। তাহলে আসুন এবার দেখে নেই এই প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছবি,


এবার আসুন দেখে নেই এই "নালান্দা বিশ্ববিদ্যালয়" এর উপর বানানো একটি ভিডিও প্রতিবেদন,



লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info