গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন


আজ আপনাদের নিয়ে যাবো অদ্ভূত এক দেশে। রুক্ষ পাথরে গড়া সে দেশে খালি পাহাড় আর পাহাড়। তাও সাধারণ পাহাড় নয়, বিচিত্র সব রঙের বিচিত্র সব পাহাড়। ভাবছেন, পাহাড় আবার হরেক রঙের হয় কিভাবে! সত্যিই কিন্তু তা-ই। সে দেশে আর আছে শুধু গিরিখাত। নিশ্চয়ই চিন্তায় পড়ে গেলে, এই গিরিখাত জিনিসটা আবার কি? দাঁড়ান, বুঝিয়ে বলছি। এক কথায় যদি জানতে চাও, তাহলে বলবো গিরিখাত হচ্ছে পাহাড়ের গায়ের ফাটল। তবে সাধারণ বা ছোটোখাটো ফাটল নয়, বিশাল বিশাল ফাটল। এতোই বিশাল যে, কিছু কিছু জায়গায় এসব ফাটল মাইলখানেক চওড়া পর্যন্ত হয়ে থাকে! আর এসব ফাটল কিন্তু একদিনে তৈরি হয়না। কোটি কোটি বছর ধরে আস্তে আস্তে তৈরি হয় এসব ফাটল বা গিরিখাত। এমনকি আজকে আমরা যে গিরিখাতটির গল্প শুনবো সেটিও প্রায় ১৭ মিলিয়ন অর্থাৎ কিনা ১ কোটি ৭০ লক্ষ বছর পার করেছে আজকের অবস্থায় আসতে। পাথুরে পাহাড় আর গিরিখাতের অসম্ভব সুন্দর এই রাজ্যটির নাম ‘দ্য গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’।

‘দ্য গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’! নামটা শুনেই এর বিশালত্ব সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়, তাইনা? এই গিরিখাতটা যে কতোটা বিশাল তা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন। এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন প্রায় ২৭৭ মাইল বা ৪৪৬ কিলোমিটার লম্বা। আর কিছু কিছু জায়গায় এই গিরিখাত প্রায় ১৮ মাইল বা ২৯ কিলোমিটার পর্যন্ত চওড়া। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের গভীরতা প্রায় ১ মাইল (৬০০০ ফিট বা ১৮০০ মিটার)! আপনি যদি এই গিরিখাতের একদম চূড়ায় থাকেন আর কেউ যদি খাদের একদম নীচে থাকে তাহলে আপনি হয়তো তাকে ভালোমতো দেখতেই পাবেন না! কী, খুব আশ্চর্য হচ্ছেন? আসলে প্রকৃতির সৃষ্টি কতো অদ্ভূতই না হতে পারে। আর সবচেয়ে মজার কথা হচ্ছে, বিশাল এই গিরিখাতের মধ্য দিয়ে একটা আস্ত নদীই বয়ে গেছে, নদীটার নাম কলোরাডো।


প্রকৃতির এই অসাধারণ সৃষ্টি দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে সুদূর আমেরিকায়। আমেরিকার অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত এটি। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের বেশিরভাগটাই ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক’ এর মধ্যে পড়েছে। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টের নাম শুনেছেন? তিনি কিন্তু এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন সংরক্ষণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি প্রায়ই এখানে প্রকৃতি দেখতে আসতেন। আর সেই সাথে মাঝে মধ্যে শিকারও করতেন। আসবেন না, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন যে পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক আশ্চর্য!

একটা মজার কথা কি জানেন? আপনি এখন যে পৃথিবীতে বাস করছেন, হাজার হাজার বছর আগে সে পৃথিবী কিন্তু দেখতে একদমই এরকম ছিলো না। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বছর ধরে পৃথিবীর ভৌগোলিক পরিবেশ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান রূপ নিয়েছে। একটু খেয়াল করলে কিন্তু আপনিও এই পরিবর্তনটা লক্ষ্য করতে পারবে। গ্রিন হাউজ এফেক্টের কারণে আমাদের পৃথিবীর চেহারাও ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে। শুনলে বিশ্বাস করবেন না যে, প্রায় ২০০ কোটি বছর ধরে এরকম ভাবে পৃথিবীর ভৌগোলিক পরিবর্তন ক্রমাগত চলছেই। আর পৃথিবীর এরকম ভৌগোলিক পরিবর্তনের কারণেই কিন্তু সৃষ্টি হয়েছে এই সুবিশাল গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। তবে এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন কিন্তু একদিনে তৈরি হয়নি। বহু বছর লেগেছে এটার বর্তমান অবস্থায় আসতে। তবে ঠিক কতো বছর আগে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তৈরি হতে শুরু করেছিলো, সে সম্পর্কে কিন্তু ভূগোলবিদরা এখনো তর্ক-বিতর্ক করেই যাচ্ছেন। তবে কিছু কিছু প্রমাণের ভিত্তিতে ধরা হয় যে আজ থেকে প্রায় ১৭ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৭০ লক্ষ বছর আগে তৈরি হয়েছিলো গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। আর তখন কিন্তু গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের চেহারাও এরকম ছিলো না। শুরুতে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের ঠিক মাঝ দিয়ে কলোরাডো নদী বয়ে যেতো। আর এই নদীর তখন অনেকগুলো শাখাপ্রশাখাও ছিলো। আস্তে আস্তে সেইসব নদীর পাড়ে পলি জমলো। সেই পলিমাটি ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে পরিণত হলো পাথরে। আর সেইসব পারথরগুলোই এক সময় নদীর গতিপথ পাল্টে দিলো। কেমন অদ্ভুত ব্যাপার, তাইনা? আবার এই নদীর স্রোতেই এসব পাথর ক্ষয় হয়ে নতুন নদীপথ তৈরি হচ্ছে। প্রকৃতির খেয়াল কতোই না বিচিত্র!


গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন পৃথিবীর গিরিখাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। কিন্তু মজার কথা কি জানেন? গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গিরিখাতও নয় কিংবা সবচেয়ে গভীর গিরিখাতও নয়। নেপালে অবস্থিত ‘কালি গন্দকি জর্জ’ নামক গিরিখাতটি আরও গভীর। আর অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত ‘ক্যাপারটি ভ্যালি’ গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের চেয়েও প্রায় ১ কিলোমিটার লম্বা এবং চওড়া। তাহলে এই গিরিখাত কেন এতো বিখ্যাত একটু ভেবে বলেন তো? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, এই গিরিখাতটি বিখ্যাত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এর বিশালত্ব, দুর্গম অঞ্চল আর বিচিত্ররঙা পাথরে গড়া পাহাড়ের সমাবেশই একে মানুষের আকর্ষণের বস্তু হিসেবে তুলে ধরেছে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে গেলে সেখানকার বহু বছরের পুরনো ইয়া বড়ো বড়ো পাথরগুলো এত্তো সুন্দরভাবে সাজানো, দেখে আপনি মুগ্ধ না হয়ে পারবে না!

আসলে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের পাথরগুলো স্তরে স্তরে সাজানো। আর এইসব এক একটা স্তরকে বলা হয় ‘প্লেট’। কলোরাডো নদী থেকে উৎপন্ন বলে এখানকার প্লেটগুলোকে বলা হয় কলোরাডো প্লেট। ভুল করে এগুলোকে আবার খাবার প্লেট ভেবে বসেন না যেনো। যাই হোক, এই প্লেটগুলো তৈরি হতেও কিন্তু লক্ষ লক্ষ বছর সময় লেগেছে। একটু আগেই বলেছি, বেশিরভাগ ভতত্ত্ববিদের মতে, এসব প্লেট প্রায় ১৭ মিলিয়ন বছরের পুরোনো। তবে অনেকে মনে করেন এগুলো তারও আগেরকার। তাদের মতে, প্রায় ৪০ মিলিয়ন বা ৪ কোটি বছর লেগেছে পাথরের এসব প্লেট তৈরি হতে।


এবার শোনেন কিভাবে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়ে তৈরি হলো এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয় গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সবচেয়ে নীচের স্তর। এই স্তর গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের শীর্ষ থেকে প্রায় ৫-১০ হাজার ফুট নিচে অবস্থিত। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে সবার প্রথমে কিন্তু এই স্তরটাই তৈরি হয়েছিলো। এরপর ধীরে ধীরে এই স্তর খাড়া উপরে উঠে যেতে থাকে। তৈরি করতে থাকে নতুন নতুন পাথরের স্তর। আবার কলোরাডো নদী আর এর শাখা-প্রশাখাগুলো ছিলো ভীষণ খরস্রোতা। তাই এদের স্রোতের কারণে পাথর ক্ষয় হয়ে হয়ে নদীর নতুন গতিপথ তৈরি হতে লাগলো, আর ক্ষয়ে যাওয়া সেইসব পাথর থেকে নতুন নতুন স্তর সৃষ্টি হতে লাগলো।


এরপর আসলো বরফের যুগ। বরফ যুগের পরে বরফ গলে গিয়ে নদীতে পানির পরিমাণ আরও বেড়ে গেলো। ফলে নদীর স্রোতও গেলো বেড়ে। এই স্রোতের কারণে পাথরের স্তর আরও দ্রুতগতিতে, আরও গভীর হয়ে ক্ষয়ে যেতে লাগলো। ও ভালো কথা, আপনারা বরফ যুগ কি তা জানেন তো? বরফ যুগ এমন একটা সময় যখন কিনা পুরো পৃথিবীই বরফে ঢাকা ছিলো। ‘আইস এজ’ সিনেমাটা নিশ্চয়ই দেখেছেন? অনেকটা সেই রকম আরকি!

এরপর, প্রায় ৫৩ লক্ষ বছর আগে তৈরি হয় কলোরাডো নদীর একেবারে নীচের স্তর। ভিত্তি তৈরি হয়ে যাওয়ার ফলে কলোরাডোর স্রোত এর চারপাশের পাথরগুলোকে আরও বেশি ক্ষয় করতে থাকে। এভাবে ক্ষয় হতে হতে এই নদী বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে কলোরাডো নদী দিয়ে ভ্রমণের সময় আপনি চারপাশের দেয়ালে পাথরের যে স্তরগুলো দেখতে পাবে সেগুলোও কিন্তু এরকম ক্ষয় হয়েই তৈরি হয়েছে। আর আজকের কলোরাডো নদীর যে গভীরতা, সেটিও হয়েছিলো প্রায় ১২ লক্ষ বছর আগে।


এরপর ৩০ থেকে ১ লক্ষ বছর আগের সময়ের মধ্যে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে ঘটলো আরও পরিবর্তন। সেই সময়ে পৃথিবীর আগ্নেয়গিরি গুলো মনে হয় খুব রেগে গিয়েছিলো, তাই খুব অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিলো। একদম ঘন ঘন অগ্ন্যুৎপাত হতো। ফলে আগ্নেয়গিরির লাভা আর ছাই এসে জমা হতো কলোরাডো নদীর তলদেশ আর পার্শ্ববর্তী এলাকায়। বছরের পর বছর এসব ছাই আর লাভা জমা হয়ে হয়ে সেগুলো ধীরে ধীরে জমে পরিণত হয় পাথরে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সবচেয়ে নতুন পাথরের স্তরগুলোই এসব লাভা আর ছাই দিয়ে তৈরি পাথরের স্তর।

কি, গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সৃষ্টির রহস্য শুনতে শুনতে কি মাথা ধরে গেছে? হতেই পারে এমনটা। আসলেই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। যাই হোক, গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের ইতিহাস নিয়ে আর মাথা না ঘামিয়ে এবার চলেন, এখনকার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন সম্পর্কে খুব করে জেনে আসি।

সমগ্র গ্র্যান্ড ক্যানিয়নকে মূলত ভাগ করা হয়েছে দুটি প্রধান অঞ্চলে। নর্থ রিম এবং সাউথ রিম। এই দুটি অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থার মধ্যে বেশ পার্থক্য থাকায় এদের মধ্যকার আবহাওয়া ও জলবায়ুও বেশ ভিন্ন। এই যেমন ধরো, নর্থ রিমের স্বাভাবিক তাপমাত্রা সাউথ রিমের চেয়ে কম। কেন? আরে, নর্থ রিমের পাহাড়গুলো সাউথ রিমের পাহারগুলোর চেয়ে প্রায় ১০০০ ফিট বেশি উঁচু। আর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নর্থ রিমের পাহাড়গুলোর উচ্চতা গড়ে প্রায় ৮০০০ ফিট। বুঝতেই পারছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশি উঁচু হওয়ার কারণেই নর্থ রিমে ঠাণ্ডা অপেক্ষাকৃত বেশি। আপনি নিজে যদি কখনো পাহাড়ে উঠেন, তাহলে দেখবেন যে সমতলের চেয়ে সেখানে ঠাণ্ডা তুলনামূলকভাবে বেশি। এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন, নর্থ রিমের পাহাড়গুলো সাউথ রিমের চেয়ে আবার উঁচু কেন হলো। এর কারণও আছে। আসলে কলোরাডো নদীটা উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে বয়ে গেছে। আর এটাতো নিশ্চয়ই জানেন যে, নদী তার উৎপত্তিস্থল থেকে যত দূরে যাবে এর স্রোতও ততো কমতে থাকবে। তার মানেটা কি দাঁড়ালো তাহলে? উত্তর দিকে কলোরাডো নদীর উৎপত্তিস্থল হওয়ায় সেখানে নদীর স্রোত বেশি। আর স্রোত বেশি হওয়ায় সেখানে নদী আরও বেশি পরিমাণে পাথর ক্ষয় করতে পারে। ফলে নদীতে পলি জমে আরও বেশি পরিমাণে। আর সে কারণেই নর্থ রিমের পাহাড়গুলো অপেক্ষাকৃত বেশি উঁচু।

তবে দুটি অঞ্চলেই কিন্তু গ্রীষ্মকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তবে অনেক বৃষ্টি হলেও গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে ঘুরতে গেলে গরমকালেই যাওয়া ভালো। কেননা শীতকালে সেখানে এতোই বরফ পড়ে যে নর্থ রিমে যাওয়ার রাস্তাটাই বন্ধ হয়ে যায়। আর নর্থ রিমে যদি যেতেই না পারেন, তাহলে আপনি গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের আসল সৌন্দর্যটাই যে দেখতে পারবেন না। ওটাই তো গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের আসল সৌন্দর্য্য!


আচ্ছা, একটা জিনিস একটু ভেবে বলেন তো, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন এতো বিশাল বড়ো একটা জায়গা, সেখানে কি কোনো মানুষ থাকে? এরকম পাথুরে জায়গায় কোন মানুষের পক্ষে কি থাকা সম্ভব? নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে, এখানে তো কোন মানুষের পক্ষে বাস করা একদমই সম্ভব না। শুনে অসম্ভব মনে হলেও সত্যি হলো, পাথরের এই দেশেও মানুষ বাস করে। এই যেমন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে এতো ঠাণ্ডা আর বরফ থাকা সত্তেও "এস্কিমোরা" বাস করে। আর এই গিরিখাতে বাস করে বিশেষ এক জাতি। তাদের নাম হচ্ছে ‘পুয়েব্লো’। এরাই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের প্রাচীন অধিবাসী। ইউরোপিয়ানরা আমেরিকায় পৌঁছানোর বহু আগে থেকেই তারা এ দুর্গম অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। এরাই প্রথম এ অঞ্চলের নাম দেয় ‘অংতুপকা’। এটা পুয়েব্লোদের নিজস্ব ভাষার নাম। আর তাদের এ ভাষার নাম হচ্ছে ‘হোপি’। হোপি ভাষায় ‘অংতুপকা’ নামের অর্থ হচ্ছে ‘বিশাল গিরিখাত’। ওটাই ইংরেজিতে হয়েছে ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’। এই পুয়েব্লোদের কাছে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন কিন্তু একটি পবিত্র জায়গা। এমনকি তারা এই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নকে তাদের তীর্থস্থান হিসেবেও গণ্য করে। মুসলমানদের কাছে যেমন তীর্থস্থান হলো মক্কা, খ্রিস্টানদের জেরুজালেম। পুয়েব্লো ছাড়াও গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে আরও বেশ কয়েকটি জাতি বাস করে। এই যেমন, ‘ইয়ুমান’, ‘হাভাসুপাই’, ‘ওয়ালাপাই’ ইত্যাদি জাতি। এদের সবাইকে প্রাচীন ‘কোহোনিনা’ জাতির বংশধর মনে করা হয়। কোহোনিনারা ৫০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ সময়ের মধ্যে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের পশ্চিম অংশে বাস করতো। এছাড়াও ৫০০- ১৪৫০ সালের মধ্যের সময়ে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে ‘সিনাগুয়া’ নামের একটি জাতিও বাস করতো, কিন্তু তারা এখন হারিয়েই গেছে। ওদের আর কোনো বংশধরই আর বেঁচে নেই।

আচ্ছা, আমেরিকা কে আবিষ্কার করেছিলো বলেন তো? হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন, ভাস্কো দ্য গামা। আর আবিষ্কারের সালটা মনে আছে? ১৪৯২ সাল। ভাস্কো দ্য গামা আমেরিকা আবিষ্কারের পর পরই সেখানে দলে দলে ইউরোপিয়ানরা এসে হাজির হতে থাকে। আর সর্বপ্রথম গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের কথা জানতে পারে গারসিয়া লোপেজ ডি কারডিনাস নামের এক স্প্যানিশ লোক। তিনি এটি দেখতে পান, বলা যায় আবিষ্কার করেন সেই ১৫৪০ সালে। এরপরই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে ইউরোপিয়ানদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। তারপর যা হওয়ার তাই হয়, বহিরাগতদের আগ্রাসনে ওখানকার আদি অধিবাসীরা আরো দুর্গম অঞ্চলে সরে যেতে থাকে। কেমন দুঃখের ব্যাপার বলেন তো? আপনাকে যদি কেউ আপনার দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়, তাহলে কি সেটা আপনার ভালো লাগবে বলেন?

তো, কেমন লাগলো গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের গল্প শুনতে? পাথর আর পাহাড়ের দেশ হলেও জায়গাটা কিন্তু একদম কাঠখোট্টা নয়। বরং এই বিশাল মরু অঞ্চলের মাঝেও এক ধরনের সৌন্দর্য্য খুঁজে পাওয়া যায়। আমার তো এখনই ইচ্ছে করছে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন থেকে একবার ঘুরে আসতে। নিশ্চয়ই আপনাদেরও ইচ্ছে হচ্ছে। তাহলে ঠিক করেন, কিভাবে সুযোগ তৈরি করা যায়, আর যাওয়া যায় হরেক রঙা পাথরের পাহাড়, আজব নদী আর পুয়েব্লোদের দেশ গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন থেকে।

লেখকঃ মেহেদী বাবু।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

২টি মন্তব্য:

  1. আমেরিকা আবিস্কার করেছিলেন কলম্বাস, ভাস্কো দা গামা নয়। দয়া করে ভুল খবর প্রকাশ করবেন না।

    উত্তরমুছুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info