হারাতে বসা বিচিত্র সব প্রাণী ।। Almost Extinct Exotic Animals

ডাইনোসরের গল্প শুনেছেন সবাই? একসময় কিন্তু পৃথিবীতে অনেক রকম ডাইনোসর ছিলো। কিন্তু এখন ওরা কেউ আর বেঁচে নেই। তেমনি কিছুদিন আগেও পৃথিবীতে অনেক অদ্ভূত অদ্ভূত সব প্রাণী ছিলো, যেগুলো এতোদিনে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখনো এমনিভাবে অনেক প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে। এখন তো প্রাণীদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া একেবারে সাধারণ একটা ঘটনায় দাঁড়িয়ে গেছে। কারণ? আর কী! মানুষ বন কাটছে, গাছ কাটছে, প্রাণীদের থাকার জায়গা কোথায়? খাবার কোথায়? ফলে পৃথিবীর জীবজগতের বৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। চলেন, তাহলে হারিয়ে যেতে বসা তেমনি আজব আর অদ্ভূত কিছু প্রাণীর গল্পই আজ শুনে আসি।


লিফি সি ড্রাগনঃ
প্রথমেই আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই লিফি সিড্রাগনের সাথে। কী? নাম শুনে আবার ভয় পেয়ে গেলেন নাকি? নিশ্চয়ই ভাবছেন, ওরে বাবা! ড্রাগন? এর মুখ দিয়ে কি আবার আগুন বের হয় নাকি? না বন্ধুরা, চিন্তার কোন কারণ নেই। নাম ড্রাগন হলেও এটি খুবই ছোট্ট আর নিরীহ প্রাণী। আকারে ২০-২৪ সেমি এর চেয়ে বড়ো হয় না। আসলে এটির নামকরণ করা হয়েছে চীনের পৌরাণিক কাহিনীতে বর্ণিত এক কাল্পনিক ড্রাগনের নামে। কেননা এটি দেখতে সত্যি সত্যিই সেই ড্রাগনেরই মতো। আর সমুদ্রে থাকে বলেই এর নাম সি ড্রাগন। সি ড্রাগনের পুরো গা থেকেই পাতার মতো কিছু অংশ বেরিয়ে থাকে। এজন্যই এটির নাম লিফি সি ড্রাগন। তবে এসব পাতার মতো অংশ কিন্তু এর শরীরেরই এক একটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। এগুলোর সাহায্যে এরা সমুদ্রের তলদেশ আঁকড়ে ধরে রাখে, চলাফেরা করে আর খাবার খায়। তবে অদ্ভুত অথচ মজার ব্যপারটা কি জানো? লিফি সি ড্রাগনের খাবার খাওয়ার পদ্ধতিটা কিন্তু একেবারেই সাধারণ নয়। কেননা মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণীদের মতো এদের দাঁত কি পাকস্থলী কোনটাই নেই। তাহলে ওরা খাবার খায় কিভাবে? আর খায়ই বা কী? আসলে এরা এক বিশেষ পদ্ধতিতে খাবার খায়। আর সে পদ্ধতিতে খেতে ওদের না লাগে মুখ, না লাগে পাকস্থলী। এদের খাদ্য হচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণীকণা আর বিশেষ এক ধরণের চিংড়ি।

আরেকটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, সমুদ্রে সি ড্রাগন খুঁজে পাওয়া কিন্তু খুবই কঠিন। কেননা এদের গায়ে থাকে সবুজ, কমলা, সোনালী আরো হরেক রঙের পাতার মতো সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। যে কারণে এদেরকে অনেকটা ছদ্মবেশী বলেই মনে হয়। কেমন অদ্ভুত কথা বলেন তো! দেখা গেলো, আপনি অনেক কষ্ট করে সমুদ্রের নিচে গেলেন লিফি সি ড্রাগন দেখতে। অথচ এদের খুঁজেই পেলেন না। তখন তো আপনার নিশ্চয়ই খুব মন খারাপ হবে, তাই না? তবে একদম মন খারাপ করার কিছু নেই। কেননা এরা যখন চলাফেরা করে অথবা খাবার খেতে বেরোয় তখন এদের অদ্ভুত দেহের কারণে খুব সহজেই চোখে পড়ে যায়। কল্পনা করেন, সমুদ্রের স্বচ্ছ পানিতে এরকম বাহারী রঙের অসংখ্য সি ড্রাগন ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখতে কতোই না সুন্দর লাগবে! তবে সমুদ্রের এ সৌন্দর্য আপনি কিন্তু সব জায়গায় দেখতে পাবেন না। এদের দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে সুদূর অস্ট্রেলিয়ায়। কারণ, শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ আর পশ্চিম উপকূলেই এদের দেখা মেলে। আর সবচাইতে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, এই লিফি সী ড্রাগনের জন্য প্রতি বছর দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় সরকারিভাবে এক উৎসবও পালিত হয়। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন, দেখতে কিম্ভূতকিমাকার হলেও এদের গুরুত্ব কিন্তু নেহায়েত কম নয়!


কমান্ডার ডগঃ
যে ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন, বলতে পারবেন এটি কিসের ছবি? এটি আসলে একটি কুকুর। অবাক হলেন? হওয়ারই কথা। কতো রকমের কুকুরই তো আপনারা দেখেছেন। কিন্তু এরকম অদ্ভূত শরীরের কুকুর কি আগে কখনো দেখেছেন? অদ্ভুতদর্শন এ কুকুরটির নামও কিন্তু অদ্ভূত "কমান্ডার ডগ"। আর এদের জন্ম হয়েছে হাঙ্গেরিতে। এদেরকে দেখে যতোটা বড়ো ভাবছেন আসলে কিন্তু ততোটা বড়ো নয়। কমান্ডার ডগের উচ্চতা বড়জোর আড়াই ফুট। কিন্তু এদের গায়ের ওই দড়ির মতো পশমের কারণেই এদের এতোটা বড়ো আর অদ্ভুত দেখায়। ভাবছেন, এ তো পশমই, কতোই আর বড়ো হবে! ওই তো ভুল করলেন! ওদের গায়ের এই লম্বা লম্বা আর আজব কিসিমের এই পশমগুলো লম্বায় ২০-২৭ সেমিঃ পর্যন্ত হয়! অর্থাৎ কিনা প্রায় এক ফুট। তাহলেই বোঝেন বেচারাদের অবস্থাটা। গা ভর্তি এরকম দড়ি নিয়ে হাটতে কি কারো ভালো লাগে? তবে ওদের নিশ্চয়ই অভ্যাস হয়ে গেছে। আবার এটা ভাববেন না যে এই গা ভর্তি পশমের কারণে ওরা হয়তো ঠিকমতো হাঁটতেই পারেনা। বরং অন্যান্য কুকুরের চেয়ে ওরা আরো বেশি দ্রুত আর ভয়ানক হয় এই কমান্ডার ডগ। তবে ভয় পাবার কোনও কারণ নেই। মানুষের জন্য এরা একদমই ভয়ংকর নয়। উল্টো ওরা প্রভূভক্ত কুকুর হিসেবেই বেশি বিখ্যাত। ঠিক আমাদের দেশের দেশি নেড়ী কুকুরগুলোর মতোই ওরাও ভীষণ প্রভূভক্ত। আর পাহারাদার হিসেবে এরা কিন্তু খুবই দক্ষ। আর এজন্যই এদেরকে বাড়িতে রাখা হয় গৃহপালিত পশু পাহারা দেবার জন্য। আর দেখতেই তো পাচ্ছেন এদের চেহারাটা। ভেড়ার পালের সাথে মিশে গেলে কারো সাধ্য আছে ওদেরকে আলাদা করে চেনার। অথচ নেকড়ে অথবা অন্য কোন হিংস্র প্রাণী হামলা চালালেই হলো, কমান্ডার ডগ একদম আর্মিদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়বে সেগুলোর উপর। ঠিক যেন সিনেমার নায়ক। আর বাগে পেলেও পুরু পশমের কারণে এদেরকে ঠিকমতো কামড়ও দিতে পারেনা নেকড়েরা। শুধু সিনেমার নায়করাই যে ভেড়াদের বাঁচায়, তাই না, সিনেমার নায়কদের মতো কমান্ডার ডগের ভাবসাবও খুব বেশি। ঘনঘন গোসল করাতে হয় এদের। নইলে আবার গায়ের রঙ ময়লা হয়ে যায়! আর একবার গোসল করালে দুই-তিন দিন তো ওদের গা-ই শুকোয় না! তাহলেই বোঝেন! তবে পশম বেশ পুরু হলেও শীতে বা গরমে এদের তেমন কোনো সমস্যাই হয়না। অবশ্য ভেজা আবহাওয়া আবার এরা খুব একটা পছন্দ করে না।


প্রবোসিস মানকিঃ
এবার আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি এক অদ্ভুতদর্শন বানরের সাথে। আর এ বানরের নাম হচ্ছে ‘প্রবোসিস মানকি’। ভাবছেন, এ বানর আবার অদ্ভুত কেন? আসলে দেখতে এটি অন্য সব বানরের মতোই। তবে পার্থক্যটা হচ্ছে প্রবোসিস বানরের অদ্ভুত আর লম্বা একটা নাক আছে। এমন নাক, দেখলেই হাসি পায়। এটি বেশ কয়েক ইঞ্চি লম্বা আর লালচে-বাদামী রঙের হয়। আর এ নাকগুলোর জন্যই বেচারা বানরগুলোকে দেখতে কিম্ভূতকিমাকার লাগে। তবে এ বিশাল নাক এদের কি কাজে লাগে তা এখনো জানা যায়নি। ধারণা করা হয় যে ছেলে আর মেয়ে বানর আলাদা করে চেনার জন্যই এ নাক কাজে লাগে। কেননা, শুধুমাত্র ছেলে প্রবোসিস বানরেরই এরকম লম্বা নাক থাকে। তবে নাক ছাড়াও এদের আর একটা অদ্ভুত অঙ্গ আছে। সেটি হচ্ছে এদের বিশাল পেট। নিশ্চয়ই ভাবছো, এতোবড়ো পেট যখন, তাহলে এরা নিশ্চয়ই বেশ পেটুক, খালি খায় আর খায়। অথচ ব্যাপারটা একদমই উল্টো! এই পেটের কারণেই বেচারা বানরগুলো পাকা ফলমূল একদমই খেতে পারে না। কেননা এদের বিশাল পেটের ভিতর হজম প্রক্রিয়াটা খুবই জটিল। আর এদের পেটে প্রচুর গ্যাস থাকে। যে কারণেই এদের এ দুরবস্থা। বেচারা বানরগুলোর কপালই মন্দ। অথচ পাকা ফলমূল বানরদের কতই না প্রিয়! চিড়িয়াখানায় গিয়ে নিশ্চয়ই দেখেছো যে বানরগুলো পাকা ফলমূল, বিশেষ করে পাকা কলা কতো মজা করে খাচ্ছে। তবে পাকা ফলমূল না খেতে পারলেও এরা কিন্তু ফল, বীজ আর গাছের পাতা বেশ মজা করেই খায়। শত হোক, এতোবড়ো একটা পেট! তাতে তো কিছু হলেও খাবার থাকা চাই। লম্বা নাক আর বিশাল পেট থাকলেও এরা কিন্তু গাছে চড়তে খুবই পটু। অন্যান্য বানরদের চেয়ে এরা বরং আরো দ্রুত গাছে চড়তে পারে। আর এদের আরেকটা বড়ো গুণ হচ্ছে, এরা খুব ভালো সাঁতারও কাটতে পারে। আজব এ বানর দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বোর্নিও দ্বীপে। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে দ্রুত এ প্রজাতির বানরগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে এদের সংখ্যা কমে গেছে প্রায় অর্ধেক। তাই বেশি দেরি করে গেলে এদের হয়তো আর দেখতেই পাবে না। কিন্তু এমনটা কী হওয়া উচিত বলেন?


অ্যাঙ্গোরা র‍্যাবিটঃ
চিড়িয়াখানায় বা টেলিভিশনে আপনারা তো নিশ্চয়ই খরগোশ দেখেছন। কী সুন্দর মিষ্টি একটা প্রাণী! এখন তোমাদের যে প্রাণীটির কথা বলবো সেটিও এক ধরনের খরগোশ। তবে হঠাৎ করে দেখলে বুঝতেই পারবেন না যে এটা একটা খরগোশ। কারণ ওদের সারা গায়ে এতই লম্বা আর ঘন লোম থাকে যে এদের মাথাটা ছাড়া আর কিছুই ভালোমতো দেখা যায় না। তবে এই লম্বা আর নরম লোমের কারণেই কিন্তু এরা বেশ আদুরে আর জনপ্রিয়। তাই ওরা যতো না বনে-বাদাড়ে থাকে, তারচেয়ে ঘরেই এদের বেশি পোষা হয়। শুধু তাই না, ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে অ্যাঙ্গোরা র‌্যাবিট ফ্রান্সের রাজপরিবারেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিলো। রাজপরিবারের সবাই এ ধরনের খরগোশ পুষতে শুরু করে দিয়েছিলো। তবেই বোঝেন, কেমন রাজকপাল এই খরগোশগুলোর! শখ করে ঘরে পোষা ছাড়াও অ্যাঙ্গোরা র‍্যাবিট কিন্তু অন্য আরও কারণেও পোষা হয়। এদের গায়ের যে লম্বা লম্বা লোমের কথা বললাম না, সেই লোম দিয়ে আবার তৈরি হয় পোশাকসহ আরও নানা জিনিস। এতো বড়ো লোম, সেটা আবার কোনো কাজে আসবে না, তাই কী হয়! এক একটা খরগোশের গা থেকে বছরে অন্তত ৩-৪ বার করে লোম ছাটাই করা হয়। আর এই লোমের লোভেও অনেকে ওদেরকে পোষে। দেখতে যেমন নাদুসনুদুস আর আদুরে ঠিক তেমনি অ্যাঙ্গোরা র‍্যাবিট কাজকর্মও বেশ মজাদার। অন্যান্য খরগোশের মতই এরা খেলতে আর লাফালাফি করতে খুবই ভালোবাসে। আর খেলনা পেলে, বিশেষ করে বল অথবা নরম কাঠের টুকরা পেলে তো কথাই নেই। সেটা নিয়েই সারাদিন মেতে থাকে। আর অ্যাঙ্গোরা র‍্যাবিট খুব প্রভুভক্তও হয়।


এম্পেরর টামারিনঃ
একটু আগেই তো শুনলেন প্রবোসিস বানরের কথা। এবার আপনাদের শোনাচ্ছি আজব ধরণের আরেকটি বানরের কথা। এর নাম হচ্ছে ‘এম্পেরর টামারিন’। অদ্ভুত নাম, তাই না? আর এই নামকরণের পেছনের ঘটনাটাও বেশ মজার। ‘এমপেরর’ মানে জানেন তো? হ্যাঁ, এম্পেরর মানে হচ্ছে সম্রাট। আর জার্মানের সম্রাট দ্বিতীয় উইলহেমের চেহারার সাথে অনেকটা মিল থাকার কারণেই এদের এই নামকরণ! আসলে সেই জার্মান সম্বরাটকে ব্যঙ্গ করে প্রথম প্রথম মজা করতেই বানরটিকে এ নামে ডাকা হতো। কিন্তু সবাই তাতে এতোই মজা পেয়ে গেলো, শেষ পর্যন্ত ওদের আসল নামটাই হারিয়ে গেলো। এখন ওদের নামই এম্পেরর টামারিন। নামে সম্রাট হলেও এম্পেরর টামারিন কিন্তু আকারে খুবই ছোট। মাত্র ৯-১১ ইঞ্চি। অর্থাৎ কিনা, ১ ফুটেরও কম। তবে এদের লেজটা দেখার মতো। প্রায় ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়! আর এদের ওজনও খুব কম। এই ৩০০ কি ৪০০ গ্রাম! চাইলে ওদের নিয়ে তোমার বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাচ ক্যাচও খেলতে পারবে! এদের গায়ের রঙ হয় ধূসর আর বুকে থাকে হলুদ রঙের ফোঁটা। তবে এম্পেরর টামারিনের সবচেয়ে দর্শনীয় জিনিসটি হচ্ছে এদের সুবিশাল গোঁফ। নাকের নিচ থেকে শুরু হয়ে এই গোঁফ কাঁধ পর্যন্ত নেমে গিয়েছে। আর এই গোঁফের কারণেই এরা দেখতে এতো অদ্ভুত। আর কী জানো, এই গোঁফের জন্যই কিন্তু ওদেরকে সম্রাট দ্বিতীয় উইলহেমের সাথে তুলনা করা হতো। তারও এরকম একটা খানদানি গোঁফ ছিলো কিনা! এম্পেরর টামারিনদের দেখা যায় আমাজনের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে। অর্থাৎ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পেরু, বলিভিয়া আর ব্রাজিলে। সাধারণত এরা গভীর জঙ্গলে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। আসলে এদের স্বভাবচরিত্র তো বানরের মতোই। এক গাছ থেকে লাফিয়ে আরেক গাছে যাওয়াটাই এদের সবচেয়ে পছন্দের কাজ। আর গভীর জঙ্গল না থাকলে কি আর লাফালাফি করে শান্তি পাওয়া যায়, বলেন?


আয়ে আয়েঃ
আয়ে আয়ে! নামটাই কেমন অদ্ভুত, তাই না? আসলে অদ্ভুত প্রাণীদের নাম তো অদ্ভুতই হওয়ার কথা। আর আমাদের আজকের বিষয়বস্তুই তো হচ্ছে অদ্ভুত আর বিচিত্র সব প্রাণী। যাই হোক, আয়ে-আয়ে দেখতে অনেকটা কাঠবিড়ালির মতো। তবে এদের দাঁতগুলো আবার ইঁদুরের মতো! আর হাতের মাঝখানের আঙ্গুলটা বেশ লম্বা আর চিকন। আর স্বভাব অনেকটা কাঠঠোকরা পাখির মতো। গাছের গা ঠুকরে ঠুকরে মাঝখানের লম্বা আঙ্গুলটা দিয়ে সেখান থেকে পোকা বের করে করে খায়। আর আয়ে আয়ে’র বিশেষত্ব হচ্ছে এরা সবচেয়ে বড়ো স্তন্যপায়ী নিশাচর প্রাণী। অর্থাৎ, মানুষের মতোই বাচ্চা দেয়, ডিম পাড়ার ধার ধারে না। কিন্তু আমরা যেমন দিনে কাজ করি আর রাতে ঘুমায়, আয়ে আয়ে এর উল্টো। ওরা রাতে কাজ করে আর দিনে ঘুমায়। তবে সবচেয়ে বড়ো নিশাচর প্রাণী হলে কি হবে, আকারে কিন্তু এরা খুব একটা বড়ো নয়। বড়োজোর একটা সাধারণ বিড়াল বা কাঠবিড়ালির সমান। আয়ে-আয়ে কিন্তু তার প্রজাতির সর্বশেষ প্রাণী। ওদের আর যতো জ্ঞাতিগোষ্ঠী প্রাণী ছিলো পৃথিবীতে, একে একে তারা সবাই-ই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সবশেষ যেই প্রাণীটা বিলুপ্ত হয়েছে, সেও প্রায় কয়েক শতাব্দী আগের কথা। আর এখন ওরা-ও বিলুপ্তির পথে। ১৯৩৩ সালে তো একবার এদের আর খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। সবাই ধরেই নিয়েছিল, অদ্ভূত চেহারার আয়ে-আয়ে বুঝি এবার বিলুপ্তই হয়ে গেলো। কিন্তু ১৯৫৭ সালে আবার এদের খুঁজে পাওয়া গেলো। এরপরই আয়ে-আয়ে’দের ভালোভাবে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেয়া হলো। আফ্রিকার দ্বীপদেশ মাদাগাস্কারে গেলে এখনো আপনি কিছু কিছু আয়ে আয়ে হয়তো দেখতে পাবেন।


আয়ে আয়ে’র প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার একটা বড়ো কারণ হলো এই প্রাণী সম্পর্কে মানুষের কুসংস্কার। মাদাগাস্কারের বাসিন্দারা মনে করে যে, আয়ে-আয়ে হচ্ছে মৃত্যুর দূত। এদেরকে যে দেখবে তারই মৃত্যু হবে। তাই এরা আয়ে-আয়ে দেখতে পাওয়া মাত্রই মেরে ফেলে। কেমন অদ্ভুত কথা বলেনতো! এরকম ছোট্ট একটা প্রাণীর পক্ষে কি সম্ভব একটা মানুষকে মেরে ফেলা? আর এমনিতেও এরা খুবই নিরীহ স্বভাবের প্রাণী। আর একরম মিষ্টি একটা প্রাণী কি আর মৃত্যুর দূত হতে পারে বলেন! কিন্তু সেটা তাদের কে বোঝাবে বলেন? তারাও তো তাদের ধর্মই মেনে চলছে। সবারই তো উচিত সবার ধর্ম মান্য করা, তাই না? তবে এখন কিন্তু আধুনিক শিক্ষা-দীক্ষা পেয়ে তারা বুঝতে শুরু করেছে, মৃত্যুর দূত আর যেই হোক, আয়ে আয়ে নয়।

বন্ধুরা, কেমন লাগলো পৃথিবীর বিচিত্র সব প্রাণীদের সাথে পরিচিত হয়ে? নিশ্চয়ই ভালো? আসলে পৃথিবীতে যে কতো বিচিত্র আর অদ্ভুত অদ্ভুত সব প্রাণী আছে! আর এসব মজার মজার প্রাণীদের কথা জানতে পেরে আপনাদের নিশ্চয়ই খুব ভালো লাগছে? কিন্তু ভয়ের কথা হচ্ছে, বিচিত্র এসব প্রাণীগুলো কিন্তু পৃথিবী থেকে দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আর এই বিলুপ্তির জন্য দোষী কারা জানেন? আমরা, মানে মানুষরা। মানুষদের বোকার মতো সব কাজ-কারবারের মূল্য দিচ্ছে এইসব মিষ্টি মিষ্টি সব প্রাণীরা। আমরা পরিবেশ দূষণ করছি, আর তাতে হারিয়ে যাচ্ছে এইসব বন্য প্রাণীরা। তাহলে ওদের বাঁচানোর দায়িত্ব কাদের নিতে হবে বলেন তো? আমাদেরকেই! আমাদের দোষে যখন ওরা কষ্ট পাচ্ছে, তখন আমাদেরই তো উচিত ওদের কষ্ট লাঘব করার, নাকি? তাহলে চলেন, আমরা আজকে থেকেই আমাদের চারপাশের পরিবেশ পরিস্কার রাখার কাজ শুরু করে দেই আর আরো বেশি বেশি করে গাছপালা লাগাতে থাকি। এমনি করে যখন আবার হারিয়ে যাওয়া বনগুলো তৈরি হবে, তখনই আর এইসব মিষ্টি প্রাণীরা হারিয়ে যাবে না।

লেখকঃ মেহেদী বাবু।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info