আচ্ছা একটা ছোট প্রশ্ন করি, মানুষ হিসেবে আমদের কোন গুন অন্যান্য বন্য প্রানীদের থেকে আমাদের মহৎ করেছে? এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে বলতে হয় "মানবিকতা"। কিন্তু আমাদের মাঝে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের মধ্যে এই মানবিক গুনাবলীর বেশ ঘার্তি আছে। আর যখন এই ঘার্তি থাকে তখন যে কোন মানুষ হয়ে ওঠে অমানবিক বা হিংস্র কোন পশু। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় অনেক পুরুষ তাদের হীন কর্মের জন্য অখ্যাত এবং নিন্দিত। কিন্তু এই অখ্যাত এবং নিন্দিত এর সারিতে এমন অনেক নারী আছে যারা বেশ আলোচিত চরিত্র ইতিহাসের পাতায়। আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব এমন ১০ জন নারীর সাথে যারা ইতিহাসের পাতায় মানবি রূপী শয়তার হিসেবে পরিচিত। চলুন তাহলে শুরু করা যাক,
১০) আর্মে গ্রেসেঃ
আর্মে গ্রেসে (Irma Grese) এর পূর্ন নাম Irma Ida Ilse Grese, জন্ম ১৯২৩ সালের ৭ই অক্টোবর এবং মৃত্যুবরন করেন ১৩ই ডিসেম্বর ১৯৪৫ সালে। জার্মানিতে জন্ম দেওয়া আর্মে গ্রেসে চাকরি করতে রাবেন্সবার্গ এবং আসউইস এর নাৎসি বাহিনীর কন্সেনট্রেসন ক্যাম্পে। তিনি এই কন্সেনট্রেসন ক্যম্পের নারী বিভাগের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য Belsen Trial তাকে মৃত্যু দণ্ডদেন। তার বিরুদ্ধে অপরাধের মধ্যে অন্যতম ছিল, তিনি নারী কারাবন্ধিদের অত্যাচার করতে খুব ভালবাসতেন এবং তার এই অমানবিক অত্যাচারের কারনে শতাধিক নারী মৃত্যুবরণ করেন। আর্মে গ্রেসে সব সময় মাজায় একটি পিস্তল এবং ভারি বুট পরে ঘুরে বেরাতেন। অনেকের ধারনা ছিল, এটা তিনি নিজেকে অনেকটা হিংস্র রূপে আত্মপ্রকাশের জন্য করতেন। মাত্র ২২ বছর ৬৭ দিন বয়সে আর্মে গ্রেসের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ১৩ই ডিসেম্বর ১৯৮৫ সালে। যুদ্ধ অপরাধি বিচারে তিনিই সর্ব কনিষ্ঠ যার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার এই হিংস্রতার কারনে তাকে অনেকেই নানা ধরেনের উপাধি দিয়েছিলেন, যেমনঃ The Beast Of Belsen, The Beautiful Beast এবং Die Hyäne von Auschwitz।
০৯) মায়রা হিন্ডলিঃ
মায়রা হিন্ডলি (Myra Hindley) এর জন্ম ১৯৪২ সালে, আর তিনি ইংলিশ সিরিয়াল কিলার হিসেবে কুখ্যাত। তার পার্টনার ইয়ান ব্র্যাডি (Ian Brady) এর সাথে মিলে সে পাঁচ জন নাবালক শিশুদের ধর্ষন এবং খুন করেন। এই দু'জন নরপশু মিলে কিডনাপিং, ধর্ষন এবং শারীরিক ভাবে অত্যাচার করেন মোট পাঁচ জন শিশুকে যাদের মধ্যে তিন জনার বয়স ১২ বছরের কম এবং দুজনার বয়স ষোল থেকে সাঁতার এর মধ্যে। তার এই কর্মকান্ডের কথা জেনে হিন্ডলিকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেন তার ১৭ বছর বয়স্ক দেবর। আদালতে যদিও তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন কিন্তু তিনটি খুনের জন্য দোষি সাবস্ত্য হওয়ায় তার জাবতজীবন কারাদন্ডো হয়। আর কারাগারে থাকা অবস্থায় ২০০২ সালে মৃত্যুবরন করেন।
০৮) কাষ্টাইলের ইজাবেলঃ
ইজাবেল জন্ম গ্রহন করেন ১৪০১ সালে আর মৃত্যুবরন করেন ১৫০৪ সালে, জন্মসূত্রেই তিনি কাষ্টাইল (Castile) এবং লিয়নের (León) রানী ছিলেন। আর রাজা হিসেবে তার স্বামী ছিলেন ফারডিন্যান্ড (Ferdinand II of Aragon)। ইজাবেল এবং তার স্বামী ফারডিড্যান্ড বিখ্যাত ছিলেন স্পেইনকে এক রাষ্ট্রে পরিনত করার জন্য, এছাড়াও তৎকালীন স্পেইনের মুসলিম এবং ইহুদিদের ধর্মান্তর সহ দেশ থেকে বিতারিত করার জন্যও। আর এর জন্য তার নির্দেশে অসংখ্য মুসলিম এবং ইহুদিকে নির্যাতন সহ হত্যা করা হয়। আর তার কারনেই প্রচলিত হয় "এপ্রিল ফুল" নামক দিনটির। এ নিয়ে "পহেলা এপ্রিলঃ মুসলিম উম্মাহর শোকের দিন (এপ্রিল-ফুল)" লেখাটি পড়লে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এছাড়াও তিনি আরেকটি কারনে ইতিহাসে বেশ বিখ্যাত, আর তা হল ১৪৯২ সালে ক্রিষ্টফার কলাম্বাসের নতুন বিশ্ব খোজার জন্য আর্থিক সহায়তা দানের জন্য। ১৯৭৪ সালে ক্যাথলিক চার্চ তাকে "ঈশ্বরের সেবিকা" উপাধি দান করেন।
০৭) বেভারলি এলেটঃ
বেভারলি এলেট (Beverly Allitt) পেশায় একজন সেবিকা হলেও তার নাম দেওয়া হয় Angel Of Death। ইংরেজ সিরিয়াল কিলারদের মধ্যে তিনি অন্যতম একজন। তিনি ৪ জন বাচ্চা হত্যা, ৩জন বাচ্চাকে হত্যার চেষ্টা এবং ৬ জন বাচ্চাকে মারাত্মক ভাবে অত্যাচার করেন। ১৯৯১ সালের এপ্রিল মাস থেকে শুরু করে মাত্র ৫৯ দিনের মধ্যে তিনি এই অপরাধ গুলি সংগঠিত করেন। তার কর্ম ক্ষেত্র ছিল Grantham and Kesteven Hospital। আর এখানেই তিনি এই অপরাধ গুলি করেন। যেহেতু তিনি সেবিকা ছিলেন আর এই হাসপাতালে বাচ্চাদের বিভাগেই কর্মরত ছিলেন তাই তার পক্ষে এখানে অপরাধ ঘটানো বেশ সুবিধাই ছিল। ১৯৯৩ সালে Nottingham Crown Court তাকে দোষি সাবস্ত্য করেন। তার সকল অপরাধের প্রমান না পাওয়া গেলেও যে সকল অপরাধের প্রমান পাওয়া যায় তার ভিত্তিতে তাকে ১৩টি জীবন চক্র ধরে কারাদন্ড দেওয়া হয় মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড।
ইংল্যান্ডের রানী ম্যারি ০১:
ইংল্যান্ডের রানি ম্যারি ০১ (Queen Mary I of England) জন্মগ্রহন করে ১৮ই ফেব্রিয়ারি ১৫১৬ সালে আর মৃত্যবরন করেন ১৭ নভেম্বর ১৫৫৮ সালে। ১৫৫৩ সালে তিনি ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যন্ডের রানী নির্বাচিত হন এবং আমৃত্যু রানী থাকেন। রাজ্যে প্রজাদের অত্যাচারের জন্য তিনি বেশ বিখ্যাত ছিলেন, আর একারনেই তার নাম দেওয়া হয় "Bloody Mary"। তার এই অত্যাচারের বিরোধীকারিদের তিনি নানা ভাবে হত্যা এবং অত্যাচার করতেন। তার নির্দেশে শতাধিক লোককে হত্যা করা হয়। এসময় প্রায় ৮০০ এর মত পরিবার ইংল্যান্ড ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়, যারা তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে ঢুকতে পারে নাই।
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
খুব ভাল পেজ করেছেন
উত্তরমুছুন