ডাইনিদের কূপ


আচ্ছা কূপ বলতে আমরা কি বুঝি? ঐ যে দড়িতে বালতি ঝুলিয়ে গভীর কূপ দিয়ে পানি তোলার দৃশ্যটাই যেন স্বাভাবিক তাই না? আচ্ছা যদি বলি, এমন কূপও আছে যেটার বাইরেই দড়িতে বালতি ঝুলে থাকে, আর পানি উপচে পরে কূপ বেয়ে। আর এত বেশি পানি গড়িয়ে পরে যে কূপের চারিপাশে মোটামটি ছোট খাট একটা বন্যা হয়ে যায়। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? বিশ্বাস না হবারই কথা কিন্তু সত্যি সত্যি আছে এরকম এক কূপ আর এই কূপের নাম 'ডাইনিদের কূপ'।


আর অদ্ভুত ডাইনিদের এই কূপ আছে 'এস্তোনিয়া' এর উত্তর অঞ্চলের 'তুহালা' গ্রামে। প্রায় তিন হাজার বছর আগে স্থাপিত হয় এই কূপ। এই কূপের গভিরতা কিন্তু মোটেও খুব বেশি নয়, মাত্র ২.৫ মিটার। আর এই গভিরতায় বেড়িয়ে আসে এত পরিমান পানি। আসলেই অবিশ্বাস্য তাই না? এই পানি কিন্তু বছরের ১২ মাসই বের হয় না। মূলত শীতকাল আর বর্ষা কালেই পানি বের হয়। আর যখন পানি বের হয় তখন চারিপাশের কি অবস্থা হয় তা তো আগেই বলেছি।


এই এলাকার অধিবাসিদের মাঝে একটা প্রচলিত লোককথা আছে এই কূপ নিয়ে। প্রতি বছর নির্দিষ্ট এক সময়ে এই কূপের নিচে ডাইনিরা একত্র হয় গোছল করতে। আর এ সময়েই তারা নিজেদের মাঝে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয় আর সে সময়ে একজন আরেক জনের উপর আক্রমন চালায়। আর এই আক্রমনের কারনেই পানি এরকম ভাবে বের হয়ে আসে। আসলেই এই এলাকার মানুষেরা মনে হয় যাদুর রাজ্যে বসবাস করতে বেশি পছন্দ করে, আর সে কারনেই হয়ত আজও বেঁচে আছে এই সব লোককথা। আবার অনেকে বলে তারা রাতের বেলা এই কূপের উপর দিয়ে আগুনের গোলক উড়ে যেতে দেখেছে, আবার অনেকের ধারনা এটা সৃষ্টিকর্তার এক অলৌকিক নিদর্ষণ। যে যাই বলুক না কেন, এই কূপের সব ঘটনার কিন্তু বেশ শক্ত-পোক্ত বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা আছে।


মূল রহস্য লুকিয়ে আছে এই এলাকার ভৌগলিক গঠনে। এই অঞ্চলে ভূগর্ভে অনেক গুলি নদী রয়েছে। মূলত শীতকালে আর বর্ষাকালে এই ঘটনা ঘটার কারন হল; শীতকালে যখন বরফ গলে তখন ভূগর্ভস্থ নদী গুলি মধ্যে প্রবাহিত পানির পরিমান বহু গুনে বেড়ে যায়। আর এই কূপ খননের সময়ে কোন এক ভাবে এই নদীর কোন এক শাখার সাথে তা মিলে যায়। আর তখনই পানি উপচে পরে কূপ থেকে। একই ভাবে বর্ষাকালে একই ঘটনা ঘটে। এখন বুঝলেনতো এই কূপের পিছনে কোন যাদু নেই, আছে ভৌগলিক অবস্থানের রহস্য।


তবে একটা রহস্য কিন্তু থেকেই যায়। তৎকালীন সময়ে এতসুক্ষ ভাবে মাটির নিচে থাকা নদীর কোন এক প্রশাখার সাথে মিল রেখে মাটির উপর দিয়ে কি ভাবে এই কূপটি খনন করা হয়েছিল। নদী না দেখে এটা খনন করা কি ভাবে সম্ভব?

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info