চোখ ধাঁধানো জলপ্রপাত ।। Amazing Waterfall

এঁকেবেঁকে বয়ে চলছিল কোনো এক নদী। কিংবা ভীষণ বেগে দুদ্দাড় ছুটে চলছিল। হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল অনেক নিচে। তারপর আবার আগের মতো বয়ে চলতে লাগল। নদীর এমনি ঝাঁপিয়ে পড়ার নাম দেওয়া হয় "জলপ্রপাত"।

এই জলপ্রপাত এমনিতেই খুব সুন্দর হয়। তার মধ্যে কিছু জলপ্রপাত আছে, যেগুলো আরও বেশি সুন্দর, রীতিমতো চোখ ধাঁধানো। আজ থাকছে তেমনি পাঁচটি চোখধাঁধানো জলপ্রপাতের গল্প।


জলের তলে জলপ্রপাতঃ
অসাধারণ এই জলপ্রপাতটির ছবি দেখলেও যেন বিশ্বাস হতে চায় না, আসলেই কী এমন হতে পারে? জলের তলে জলপ্রপাত থাকতে পারে? না, সাধারণত হয় না। কিন্তু হয়েছে। ব্যাপারটা তাহলে খোলাসা করা যাক। আফ্রিকা মহাদেশের একটি দ্বীপদেশ মরিশাস। মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ২০০০ কিমি দূরে, ভারত মহাসাগরে এর অবস্থান। এই দ্বীপেই আছে এই অদ্ভুতুড়ে জলপ্রপাতটি। এটি আসলে জলপ্রপাত বলতে যা বোঝায়, ঠিক তা নয়। সমুদ্রের ঠিক ঐ জায়গাটিতে জমা হওয়া পলি আর বালির অপরূপ কারুকাজের কারণেই, দূর থেকে দেখলে মনে হয়, ওখানে একটা জলপ্রপাত আছে।


এঞ্জেল জলপ্রপাতঃ
নামের মধ্যে পরির উল্লেখ থাকলেও, এই জলপ্রপাতটি পরিদেরও নয়, পরিরা এখানে গোসলও করে না। তবে এর সৌন্দর্য রূপকথার পরিদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। বিখ্যাত এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত ভেনিজুয়েলায়। পেমন ভাষায় এই জলপ্রপাতটির দুটি জনপ্রিয় নাম আছে। একটি হল ‘কেরেপাকুপাই ভেনা’, ইংরেজিতে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘ওয়াটারফল অফ দ্য ডিপেস্ট প্লেস’। আরেকটি নাম ‘পারাকুপা ভেনা’, ইংরেজিতে ‘দ্য ফল ফ্রম দ্য হাইয়েস্ট পয়েন্ট’। বোঝাই যাচ্ছে, জলপ্রপাতটি ভীষণ উঁচু। কিছু কিছু স্থানে এর উচ্চতা ৯৭৯ মিটার পর্যন্ত। জলপ্রপাতটির নামকরণ করা হয়েছে বিমানচালক জিমি এঞ্জেলের নামে। দুঃসাহসী এই বৈমানিকই প্রথম বিমানে চড়ে পাড়ি দেন জলপ্রপাতটি। তিনি মারা গেলে তার দেহভস্মও ছড়িয়ে দেওয়া হয় এখানেই।


আথাবাস্কা জলপ্রপাতঃ
আথাবাস্কা জলপ্রপাতটি অবস্থিত আথাবাস্কা নদীর উপরেই, কানাডার জেসপার শহরে। জলপ্রপাতটির আয়তন প্রায় ৩০ কিলোমিটার আর উচ্চতা প্রায় ৮০ ফুট। তবে এর উচ্চতাই একে পরিচিত করে তুলেছে। এই জলপ্রপাতটির পানি নিচে যেখানে পড়ে, সেখানে প্রাকৃতিকভাবে জমে আছে চুনাপাথর। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হল, শীতকালে যখন নদীর পানি শুকিয়ে যায়, জেসপার জাতীয় উদ্যানের এই জলপ্রপাতটি তখনও থাকে পুরোপুরি জীবন্ত।


ইগুয়াজু জলপ্রপাতঃ
ইগুয়াজু জলপ্রপাতটি দুটি কারণে ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এটি ব্রাজিল আর্জেন্টিনার সীমানা নির্দেশ করে। এর এক পাশে ব্রাজিলের পারানা আর অন্য পাশে আর্জেন্টিনার মিজোনেস প্রদেশ। এমনকি ভীষণ সুন্দর এই জলপ্রপাতকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে দুই প্রতিবেশী দেশই। দ্বিতীয়ত, এই জলপ্রপাতের মাধ্যমেই ইগুয়াজু নদী দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। ‘ইগুয়াজু’ মানে পানির বড় ফোঁটা। এই জলপ্রপাতটিকে ঘিরে একটি লোককাহিনিও আছে। কাহিনিটি এরকম। অনেক অনেক আগে এক দেবতা এখানকার এক রূপসীকে ভালোবেসে ফেলেন। অথচ সেই মেয়ে কিনা তার কিছুদিন পরেই পালিয়ে যায় তার ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে। তখন সেই দেবতা তো ভীষণ ক্ষেপে যান। রেগে গিয়ে পুরো পাহাড়টিকেই দুই ভাগ করে ফেলেন। তখন তৈরি হয় জলপ্রপাতটি। তারপর মেয়েটির সেই ভালোবাসার মানুষটিকে ঢুকিয়ে দেন এর ভেতরে।


পনগোউর জলপ্রপাতঃ
পনগোউর জলপ্রপাতটি ভিয়েতনামের লাম দং প্রদেশের রাজধানী দালাতে অবস্থিত। শহরটিতে বেশ কিছু জলপ্রপাত আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত এটিই। জলপ্রপাতটি পনগোউরের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু নামে পরিচিত। জলপ্রপাতটির আর যে নামটি সবচেয়ে জনপ্রিয়, সেটি হল ‘থাক বে তাং’, মানে সাত তলা প্রপাত। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, জলপ্রপাতটির মোট সাতটি ধাপ রয়েছে। বন-জঙ্গলে আবৃত এই জলপ্রপাতটির উচ্চতা ৪০ কিলোমিটার। শুধু তাই না, এটি পৃথিবীর একমাত্র জলপ্রপাত, যেখানে প্রতি বছর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। প্রতি বছর ১৫ জানুয়ারি আসর বসে আয়োজনটির।

লেখকঃ সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

৬টি মন্তব্য:

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info