প্রানী জগতের "মা" ।। Mothers Of Animal Kingdom

মার কথা বলে কী আর শেষ করা যাবে? এবার সেইসব মা দের কথা, যারা মা কিন্তু তাদের আমরা গোণায় ধরি না। এই মায়েরা হচ্ছে বিভিন্ন পশু পাখির মা। পশু পাখি বলে তাদের বুদ্ধি মানুষের মতো অতো প্রখর নয়, তাই বলে মাতৃত্ববোধে তারাও কিন্তু কম পিছিয়ে নেই। চলেন তাহলে সেইসব মায়েদের কথা জেনে নেই।


ডলফিনঃ
বাচ্চা ডলফিনগুলো খুবই চঞ্চল হয়। সবসময় এদিক-সেদিক ঘুরঘুর করে। তাই তাদের মাকে হতে হয় আরো তৎপর, নয়তো বাচ্চা যাবে হারিয়ে কিংবা হিংস্র হাঙ্গর এসে তাদের ধরে নিয়ে যাবে। তাই বাচ্চারা যদি খুব বেশি চিল্লামিল্লা করে আর এদিক সেদিক দৌড় দেয়, তাহলে মা তাকে নিজের পাখনার নিচে ঝাপটে ধরে রাখে। তাও যদি সে শান্ত না হয়, তাহলে তাকে বেশ কিছুক্ষণ একদম পানির নিচে ঠেসে ধরে রাখে। মানে একটু শাসন করা আর কি। প্রায়ই সব মায়েরা একত্রে গোল হয়ে ঘোরে, যাতে তাদের মাঝখানে তাদের সন্তানেরা নিরাপদে খেলতে পারে।


ক্যাঙ্গারুঃ
ক্যাঙ্গারুর বাচ্চাদের কী আরাম, সেটা কি কখনো ভেবে দেখেছেন? হবে নাই বা কেন, সে তো জন্মের পর কয়েক মাস থাকে তার মায়ের পেটের থলিতে। মা ক্যাঙ্গারুর পেটের কাছে থাকে একটা থলে, সেখানেই সে তার বাচ্চাকে রাখে, সে যেখানে যায় তার বাচ্চাকেও বয়ে নিয়ে যায়। এতে যে তার খুব বেশি কষ্ট হয় তা কিন্তু নয় এবং সে এই কাজটা অনেক যত্নের সঙ্গেই এই কাজটা করে। আর এটা না করলে যে তার বাচ্চাটি মরেই যাবে। জন্মের পর পর বাচ্চাগুলো এতটাই রুগ্ন থাকে যে, বাইরের আবহাওয়ার জন্য সে মোটেই উপযোগী থাকে না। তার চোখ ফোটে না, গায়ে লোম থাকে না। বেচারা নড়াচড়াও করতে পারে না। সন্তানের প্রতি মায়ের দরদ তো তাই বেশি থাকবেই। তাই মা তাকে পেটের থলিতে নিয়ে পুরো ছয়মাস ঘুরে বেড়ায়। এরপর সে একটু একটু করে বাইরে যাওয়া শুরু করলেও আবার ফিরে আসে মায়ের থলেতে। এভাবে সব মিলিয়ে প্রায় এক বছর থাকার পরে সে পুরোপুরি বাইরের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। তারপর লেজে ভর দিয়ে টিরিং টিরিং করে লাফিয়ে বেড়ায় অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে, তার আগে অবশ্য সে বেঁচে থাকার কৌশল এবং শিকার করার সব কায়দা শিখে নেয় তার মায়ের কাছ থেকে।


টিয়াঃ
পাখি হিসেবে টিয়া এমনিতে খুবই সুন্দর। তবে তার ছানাগুলো অতটা সুন্দর নয়। তাই বলে কি মা তার সন্তানকে অনাদর করবে? মোটেই না। মা টিয়া সবসময় তার ছানাকে আদরে রাখে। একটি মা টিয়া সাধারণত একসঙ্গে চার থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। তবে শুধু ডিম পেড়েই কি সে শান্ত হয় ডিম পাড়ার আগে তো দরকার একটা ছিমছাম বাসা। সেটাও ওই মাকেই বানাতে হয়। এক্ষেত্রে বাবা অবশ্য মাকে বেশ সাহায্য করে। অনেকটা মুরগির ডিমের মত দেখতে ডিমগুলোকে মা টিয়া তিন সপ্তাহ তা দেয়, এরপর সেখান থেকে বের হয়ে আসে ছানা। এরপর মার ব্যস্ততা যায় বেড়ে। ছানাদের খাওয়াতে তো হবে! তবে অন্যান্য মা পাখির সঙ্গে মা টিয়ার পার্থক্য হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই ছানারা একটু বড় হয়ে উঠার পরে বাবা মা তাদের বাসা থেকে বের করে দেয়। কিন্তু মা টিয়া এমনটা করে না। বরং সে সারাজীবন তার সন্তানদের রাখতে পারে, এমনকি তাদের খাওয়াতেও পারে।


সিংহঃ
বনের রাজা সিংহ হলে কী হবে, বাবা সিংহ কিন্তু তার রাজপুত্র, মানে ছানা সিংহের প্রতি মোটেই দয়ামায়া দেখায় না। সে সুযোগ পেলেই তার বাচ্চাদের মেরে ফেলে। তাই বাচ্চা হবার পরেই মা সিংহীর টেনশন যায় বেড়ে। প্রথমদিকে বাচ্চাগুলো হাঁটতেই পারে না, মাত্র হামাগুড়ি দিতে শেখে। তাই মা তাদেরকে ঘাড়ে কামড়ে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যায়। কামড় দিলেই যে তারা ব্যথা পাবে, তা মোটেই না। মা তাদেরকে বেশ আস্তে করেই কামড় দেয়। চার পাঁচ সপ্তাহ পরেই মা তাদেরকে বাবার সামনে নিয়ে আসে। তবে তারা মার সঙ্গেই ঘুরঘুর করতে পছন্দ করে। বিড়ালের বাচ্চা যেমন কোন কিছু দেখলেই সেটার পিছনে ছোঁকছোঁক করে, সিংহের বাচ্চাগুলোও সেরকম। কোন কিছু নড়তে দেখলেই হলো, সবকয়টা সেটার পিছু দৌড় দেয়। তাই তখনও মাকে খেয়াল রাখতে হয়। তবে মা কিন্তু তাদেরকে ওরকম করতে মানা করে না। কারণ ওরকম করলেই তো তারা বড় হয়ে দক্ষ শিকারী হয়ে উঠবে।


নেকড়েঃ নেকড়ে প্রাণী হিসেবে বেশ শিকারী এবং ছটফটে। তবে তা হলে কি হবে, নিজের বাচ্চার ক্ষেত্রে সবসময়ই মা নেকড়ে থাকে সতর্ক। সে তার বাচ্চাগুলোকে খুবই আদর যত্ন করে। মা নেকড়ে একসঙ্গে বাচ্চা দেয় পাঁচ থেকে চৌদ্দটি, তবে বেশিরভাগ সময় টিকে থাকে গড়ে ছয়টা। মা সবকটাকে খাইয়ে দাইয়ে বেশ আরামে রাখে। তারা মনের সুখে সারাদিন খেলা করে, আর মা তাদের চারপাশে ঘুরঘুর করে, যদি তাদের কোন ক্ষতি হয়! মা শিকারে গেলেও বেশি দুরে যায় না, বাচ্চাদের কাছে কাছেই থাকে। তবে তাদের বয়স ছয় মাস হলেই মা তাদের ভর্তি করিয়ে দেয় স্কুলে। স্কুল মানে তার নিজেরই স্কুল। সেখানে সে তার বাচ্চাদের শিকার করা শেখায়।


কালো ভল্লুকঃ
কালো ভল্লুকের বাচ্চা হয় তীব্র শীতকালে। তবে ততক্ষণে মা তার বাচ্চার জন্য গুহার ভেতর পাতা আর ডাল দিয়ে তৈরি করে বেশ গরম গরম বাসা। মা ভাল্লুক বেশ দশাসাই চেহারার হলেও তার বাচ্চাগুলো হয় হালকা পাতলা, ওজন কখনও হয় এক পাউন্ডেরও কম। তাদের গা বেশ সুন্দর লোমে ঢাকা হলেও সেগুলো তাদেরকে শীতের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না। তাই মা তাদেরকে সবসময় নিজের শরীরের নিচে ঢেকে রাখে। সেখানেই মা তাদের খাওয়ায়। সেখানেই তারা বেড়ে ওঠে। শীত শেষ হয়ে বসন্ত আসতে আসতেই বাচ্চারা বেশ বড় হয়ে যায়। এতটাই বড় হয় যে তারা গাছে ওঠাও শিখে যায়। সেটা অবশ্য তাদের মা শেখায়।


পান্ডাঃ
পান্ডার যখন বাচ্চা হয়, তখন সেটা এতই ছোট থাকে যে, হিসেব করলে দেখা যায় মা তার সন্তানের থেকে ৯০০ গুণ বড়। বড় বেশি হলে কী হবে, মা তার বাচ্চাকে ভালবাসে ৯০০ গুণ বেশি। একে তো বাচ্চা ছোট, তার উপর আবার প্রথমদিকে চোখ ফোটেনা। পান্ডার সবচে বড় শত্রু হচ্ছে চিতাবাঘ এবং বুনো কুকুর। মা পান্ডা তাই সবসময় তার বাচ্চাদের খেয়ালে রাখে। বয়স যখন তার হয় সাত মাস, তখন তার মা তাকে বাসার বাইরে নিয়ে আসে। সেখানে সে মনের সুখে গাছে উঠে, কচি বাঁশ খায়। তবে আঠারো মাস বয়স হলেই সে তার মাকে ছেড়ে নিজের বাসা বানাতে বেরিয়ে যায়।


শিম্পাঞ্জিঃ এই প্রাণীরা বেশ বাচ্চা ভালবাসে। যখন কোন মা শিম্পাঞ্জির বাচ্চা হবার সময় হয়, তখন সবাই সেই মাকে বেশ সম্মান করে, পুরো জঙ্গলে শুরু হয় উৎসব। মা তখন নিজেকে নিয়ে বেশ গর্ব করলেও মজাটা টের পায় পরে, যখন তার বাচ্চাটা পৃথিবীর মুখ দেখে। সে একটু বড় হলেই শুরু করে দুনিয়ার দুষ্টুমি। মাকে সেসব সহ্য করতে হয়। না করেই বা কি করবে, তাদের যে বাচ্চা হয় পাঁচ ছয় বছর পরপর। তাই বাচ্চাটা যখন বেশি দুষ্টুমি করে, তখন সে হয়তো তোমার আম্মুর মতোই মনে মনে ভাবে, “থাক, পোলাপান! বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে।”


ঘোড়াঃ
ঘোড়ার বাচ্চাগুলোর পা হয় বেশ ল্যাকপ্যাকে। এর কারণ সেগুলো তার শরীরের তুলনায় বড়। তাই জন্মাবার পর সে ঠিকমতো দাঁড়াতে পারে না। তার মা তাকে ঠিকমতো দাঁড়ানো শেখায়, হাঁটতে শেখায়। এই শেখানোর গতি এতটাই বেশি যে, ছানাটি কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জোরেশোরে ছুটতে শুরু করে। দৌড় না শিখে বা কী করবে, কেননা দৌড় না দিলে বাঘ সিংহ এসে তাদের খেয়ে ফেলবে যে! তাই মা তাকে আগেভাগে দৌড় দেয়াটাই শেখায়।

পৃথিবীতে তো প্রাণী আছে বহুরকমের, সবারই মা থাকে। বেঁচে থাকার তাগিদে কোন কোন প্রাণী তার বাচ্চাকে অনাদরে রেখে চলে যায়। কেউ বা আবার পরিণত হয় নিজ সন্তানের খাদ্যে। পুরো প্রাণীজগতের মাদের খোঁজখবর দিতে হলে তো খবরই হয়ে যাবে। সেটা সম্ভব না, তাই আজকে আর বাড়ালাম না।

লেখকঃ রকিবুল হক।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info