বুদ্ধিমান ডলফিন ।। Intelligent Dolphin


পানি থেকে এই শুন্যে উঠে আসে তারপর ভেসে থাকে কিছুক্ষন, তারপর ঝপ করে আবার পানিতে পড়ে যায়। কারা এই কাজ করে বলনতো? তাদের নাম ডলফিন।

বিজ্ঞানীরা চিড়িয়াখানার এ্যাকুরিয়ামে বাস করা ডলফিন নিয়ে গবেষনা করে দেখেছেন। ডলফিনরা তাদের বুদ্ধির জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত। তাদেরকে প্রায় সকল ধরনের খেলার কৌশল শেখানো যায়। তবে ডলফিনরা পানিতে বাস করে। তাদের আবাস হচ্ছে মহসাগর আর সাগরে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info

ডলফিনরার মাছ নয় স্তন্যপায়ী প্রানীঃ
যদিও ডলফিনদের দেখতে মাছ মনে হয়,তারা আসলে মাছ নয়। তারা মাছদের মতো পানিতে সাঁতার কাটে, তবে তারা মাছদের মতো ডিম পাড়ে না। মা ডলফিন একটা ছোট্ট বাবুর জন্ম দেয়। এই বাবুটি মায়ের দুধ খেয়ে বড় হয় । যারা এই রকম মায়ের দুধ খেযে বড় হয় তাদের বলা হয় স্তন্যপায়ী প্রাণী। স্তন্যপায়ীদের রক্ত অনেক উষ্ণ বা গরম থাকে। এর মানে হলো তাদের শরীরে যে তাপমাত্রা থাকে তা সব সময় প্রায় একই রকম থাকে। মাছেদের রক্ত ঠান্ডা রক্ত। পানির যে তাপমাত্রা থাকে মাছেদের রক্তের তাপমাত্রা সেই রকম হয়।

কি ভাবে ডলফিন শ্বাস নেয়?
সকল স্তন্যপায়ীর মতো ডলফিন ফুসফস দিয়ে শ্বাস নেয়। তার মাথায় একটা ফুটো আছে যার সাহায্যে সে নি:শ্বাস নেয়। সে গভীর শ্বাস নিয়ে পানির ভেতরে চলে যায়। অনেক ডলফিন পানিতে যে লাফ দেয় তাতে সে ২০০ ফুট পানির গভীরে চলে যেতে পারে।

নিঃশ্বাস নেবার জন্য ডলফিনকে এক থেকে দুই মিনিট পরপর পানি থেকে বের হয়ে আসতে হয়। নিশ্বাস নেওয়া ও তা বের করে দেওয়ার জন্য তাকে পানি থেকে বের হয়ে আসতে হয়। তার সেই ফুটো যাকে বলে ব্লোহোল। এই দিয়ে সে নি:শ্বাস বের করে দিয়ে আবার নি:শ্বাস নেয়। একবার নি:শ্বাস নিয়ে সে পানির ভেতরে চলে যায়।


ডলফিনের শরীরঃ
ডলফিনের শরীর এমনভাবে তৈরী যাতে সে পানির মধ্যে দ্রুত চলাফেরা করতে পারে। তাদের শরীরের সামনের দিকে দুটি ডানার মতো অংশ আছে। একে বলে ফ্লিপার। পানির মধ্যে চলাফেরা আর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য তারা এই ফ্লিপারকে ব্যবহার করে। বেশীর ভাগ ডলফিনের পেছনে একটা লম্বা পাখনা আছে। তার এই লম্বা লেজটিকে বলে ফ্লুকস। সে তার এই ফু্লকস দিয়ে পানিতে ঢেউ তুলে সাঁতার কাটে। পানির মধ্যে যতগুলো প্রাণী আছে তাদের মধ্যে সবেচেয়ে দ্রুতগামী প্রাণী এই ডলফিন। শরীর গরম রাখার জন্য ডলফিনের চামড়ার নীচে থাকে একটা চর্বির স্তর। এর নাম ব্লবার। এই চর্বির স্তর তার শরীরের তাপামাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এমনকি ঠান্ডা পানিতেও এই চর্বির কারনে তার শরীরে তাপ ঠিক থাকে।

আলাদা প্রজাতির ডলফিনঃ
সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪০ প্রজাতির ডলফিন রয়েছে। বেশীর ভাগ ডলফিনের গায়ের রঙ কালো, বাদামি অথবা ধুসর রং এর।


সবচেয়ে বড় ডলফিনের নাম হলো কিলার হোয়েল। এদের আবার ওরাকাস নামেই জানে অনেকে। একটি কিলার হোয়েল প্রায় ৩২ ফুট লম্বা হয় এবং তার ওজন হয় প্রায় ৫৪০০ কিলোগ্রাম। আর সবচেয়ে ছোট ডলফিনের নাম তাচুসি ডলফিন। এদের আকার প্রায় চার ফুট আর ওজন প্রায় ১১০ পাউন্ড হয়।

সাধারণ ডলফিন এবং বোটলনোজ বা বোতলের মতো ডলফিন এমন এক ধরনের ডলফিন যাদের চিড়িয়াখানা বা এ্যাকুরিয়ামে দেখা যায়। সমুদ্রে স্পিনার ডলফিন বলে এক ধরনের ডলফিন দেখা যায়, যারা সুমদ্রে বাতাসের উপর লাফিয়ে ডিগবাজী দেয়।

বেশীর ভাগ ডলফিন সমুদ্রে বাস করে এবং তাদের সারা পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যায়। বেশ কিছু ডলফিন আছে যারা নদীতে বাস করে । নদীর পানি লবনাক্ত নয়। তাই এখানে যারা বাস করে তাদের রিভার ডলফিন বলে।


ডলফিন কি খায়?
ডলফিন মাছ শিকার করে এবং ধরে ধরে খায়। তার সাথে সে খায় অক্টোপাস। যাকে আমরা কিলার হোয়েল বা খুনে তিমি বলছি সে পানিতে অন্য যে সব স্তন্যপায়ি প্রানী আছে তাদের খেয়ে ফেলে। তার সাথে সে খায় সমুদ্রের কচ্ছপ এবং পাখি। ডলফিন তাদের দাঁত দিয়ে তার শিকার ধরে ফেলে। অনেক ডলফিনের ২৫০ টার মতো ধারালো দাত রয়েছে। এই দাঁত দিয়ে সে তার শিকারের মাংস কাটাকাটি করে।

ডলফিন শব্দ তৈরী করতে পারে। একে বলে ক্লিক সাউন্ড। তার গভীর সমুদ্র , কাদায় ভরা নদীতে সে এই শব্দ তৈরী করে। তারপর তার প্রতিধ্বনির ফিরে আসার অপেক্ষা করে। তাতে তার লাভ? সে এই শব্দ ধরে বুঝতে পারে সামনে কোন বাধা আছে কিনা। আবার খাবার খোঁজার জন্যও তারা এই শব্দ ব্যবহার করে।

যখন তারা শিকারে বের হয় তখন তারা প্রায়শই একসাথে বের হয়। একঝাঁক মাছের আশে পাশে একদল ডলফিন ঘোরাফেরা করে। শিকারের সময় হলেই একযোগে সব ঝাপিয়ে পড়ে। তাতে লাভ কি জানেন? এর ফলে মাছেরা ডলফিনদের হাত থেকে পালাতে পারে না।

ডলফিনরা আসলে কতটা চালাক?
বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন ডলফিনরা কুকুরের মতোই বুদ্ধিমান। ডলফিনরা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ তৈরী করতে পারে। তারা যে ভাষায় কথা বলতে পারে তার নাম হুইসেল । আসলে তারা শীষের মতো জোরে এক তীক্ষ্ণ এবং ক্লিক ধরনের আওয়াজ তৈরী করতে পারে।


ডলফিনরা যখন সঙ্গীর সাহায্যের প্রয়োজন হয় তখন তারা একে অন্যের যত্ন নেয়। যখন কোন ডলফিন অসুস্থ বা আঘাত পায় তখন তার সঙ্গীরা তাকে পানিতে ভেসে থাকতে সাহায্য করে যাতে সে ডুবে না যায়।

সাধারন ডলফিনঃ
যে সমস্ত ডলফিন সারা পৃথিবীর গরম এলাকায় উষ্ণ পানির মধ্যে বাস করে এদের কমন বা সাধারন ডলফিন বলে। সাধরণত এক শত থেকে এক হাজারের মতো ডলফিন এক হয়ে একটা দল তৈরী করে এবং তারা এক সাথে ঘুরে বেড়ায়। এমন কি তারা একসাথে পানির উপর লাভ দেয়।

ব্লোহোলঃ
একটি ডলফিন তার মাথার কাছে একটা ফুটো দিয়ে নিশ্বাস নেয়। এই ফুটোটির নাম ব্লোহোল। তারা নি:শ্বাস নেবার জন্য পানির উপর ভেসে উঠে এবং নি:শ্বাস নেওয়া হয়ে গেলে আবার তারা পানিতে ডুব দেয়।

ডলফিনের দাঁতঃ
ডলফিনের চোয়ালে ধারালো দাঁত আছে। তারা শিকার ধরার জন্য এই দাঁতের ব্যবহার করে। তারা মাছ এবং অক্টোপাস শিকার করে এই দাঁত দিয়ে।

লেখকঃ বিজয় মজুমদার।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।