ইন্দোনেশিয়ার প্রেত সাধক ।। Indonesian Ghost Saint


ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রার রাজধানী মেদান। এখানকার একটি আদালত ভবন লোকে লোকারণ্য। আহমাদ সুরাদজিকে পর পর ৪২ জন নারীকে হত্যা করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন বিচারক। এর আগে অনেক সপ্তাহ ধরে চলা বিচার কাজের সময় উঠে আসে স্বাক্ষীদের বক্তব্য। তারা জানান, কিভাবে তাদের আত্মীয়রা হঠাৎ করেই হারিয়ে গিয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে। রায় ঘোষণার পর ছোট্ট আদালত কক্ষে উপস্থিত স্বজনেরা উল্লাসে ফেটে পড়েন, যেখানে সে সময় ১০০র বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাইরে অপেক্ষমাণ ছিলেন আরো বহু মানুষ।


এর আগে পুলিশ সুরাদজির বিরুদ্ধে ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুর মাধ্যমে নিজের শক্তি বৃদ্ধির জন্য ৪২ জন নারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে মামলা করে, যাদের সবার বয়স ছিল ১১ থেকে ৩০ বছরের মাঝে। ১৯৯৭ সালের এপ্রিলের ২৮ তারিখ (উইকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে মে মাসের ২ তারিখ) পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

আহমাদ সুরাদজি যার আরেক নাম নাসিব কেলেওয়াং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৫ বছরে ১৬ জন মেয়েকে হত্যা করার কথা শিকার করে। তার বাড়ি ও আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় আরো তদন্তে উদ্ধার হয় আরো ২৫ জন নারীর মৃতদেহ। এবার পুলিশ সুরাদজিকে চেপে ধরলো। সে শেষ পর্যন্ত জানায়, আসলে ৫ বছর নয়, টানা ১১ বছরে সে মোট ৪২ জন মেয়ে ও নারীকে হত্যা করেছে। আর এসব হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা ও লাশ গুম করার অভিযোগে সুরাদজির তিন স্ত্রী ও তার সব বোনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুরাদজি নিজেই স্বীকার করেন যে তিনি একজন প্রেত সাধক। স্থানীয়রা বিশ্বাস করতো, তার অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা আছে। তাই তারা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য তার কাছে আসতো।


অনেক নারী তার কাছে আসতেন যাতে তিনি জাদুমন্ত্রের মাধ্যমে তাদের ছেলেবন্ধু বা স্বামীকে তাদের বশীভূত করে রাখেন। এছাড়া অনেকে সম্পত্তিলাভ কিংবা পুরুষের চোখে যাতে নিজেকে আরো আকর্ষণীয় দেখায় সেজন্য আসতেন। আর তারা যে এই ব্যাপারে কোন জাদুকরের সাহায্য নিচ্ছিলেন সেটা তাদের পরিবারের সদস্যরা জানত না। তাই সুরাদজিকে কেউ সন্দেহই করে নাই।

সুরাদজি তাদের সবার কাছ থেকে অর্থ নিত, যার পরিমাণ ছিল ২০০ থেকে ৪০০ মার্কিন ডলার। নারীদেরকে নিয়ে যাওয়া হতো একটি আখের ক্ষেতে। এটা ছিল তার বাড়ির কাছেই। নিজের কালো জাদুর অংশ হিসেবে তাদেরকে মাটিতে কোমর পর্যন্ত পুঁতে রাখা হতো। এরপর সে প্রতিটি মেয়ের গলায় বৈদ্যুতিক তার পেঁচিয়ে তাদেরকে হত্যা করতো, তাদের মুখ থেকে বের হয়ে আসা লালা পান করতো। এরপর মৃতদেহ গুলোকে বিবস্ত্র করে তাদের মাথা সুরাদজির তার নিজের বাড়ির দিকে রেখে তাদেরকে মাটিচাপা দিত। সুরাদজির বিশ্বাস ছিল এর ফলে তার জাদু ক্ষমতা আরো শক্তিশালী হবে। পরে সে পুলিশকে জানায়, 'আমার বাবার আত্মা এসে এক রাতে আমাকে বলেন যে যদি আমি ৭০ জন নারীকে হত্যা করে তাদের মুখের লালা খেতে পারি তবে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হতে পারবো।' এ ঘটনার সময়কাল ১৯৮৮ সাল। সুরাদজির গ্রামের অধিবাসীরা তার বিভিন্ন জনহিতকর কাজের জন্য তাকে সম্মান করতো। কিন্তু এ ঘটনা প্রকাশ পাবার পর তারা হতবিহবল হয়ে পরে। পুলিশ স্থানীয় জনগণকে আর কেউ নিখোঁজ আছে কিনা জানাতে অনুরোধ করলো। প্রায় ৮০ টির মত পরিবার জানালো, তাদের পরিবারের কোন না কোন মেয়ে নিখোঁজ হয়ে আছে। পুলিশের আশঙ্কা লাশের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।


১১ জানুয়ারি, ১৯৯৭ সালে শুরু হওয়া এই বিচারকাজে তার বিরুদ্ধে ৩৬৩ পাতার অভিযোপত্র জমা দেয়া হয়। ১৯৯৮ সালের ২৭ এপ্রিল সুরাদজিকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। সুরাদজির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তার দাবি, ব্ল্যাক ম্যাজিক স্রষ্টার কাছ থেকে আসে ও সেটা এখন আর তার কাছে নেই। তিনি তার অপরাধের জন্য ক্ষমা চায় যা প্রত্যাখ্যাত হয়। ৪২ তম মৃতদেহ উদ্ধারের পর ফায়ারিং স্কোয়াডে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় (১০ জুলাই, ২০০৮) ইন্দোনেশিয়া একটি মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে জাদু-টোনা ও কালো জাদুর প্রভাব অনেক বেশি।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info