চোখের ঢাকনা ।। Eye Lid


আজকের দিনে যেদিকে তাকাই, সবখানেই সানগ্লাস চোখে পড়ে। খেলার মাঠে সানগ্লাস, রাস্তায় হাঁটছে মানুষ, চোখে সানগ্লাস। মোটরবাইক চালাবে? সানগ্লাস অবশ্যই লাগবে। এখন যেমন যেখানে সেখানে সানগ্লাস দেখা যায়, প্রাচীন পৃথিবীতে বিষয়টা কিন্তু সেরকম ছিলো না। লোকজন শুধু ধারণা করতো যে, কিছু রং চোখের জন্য ভালো। ব্যস, আর কিছু না।

ইতিহাসে দেখা যায়, রোমান সম্রাট নিরো সবুজ স্বচ্ছ এমারেল্ড পাথরের মধ্য দিয়ে গ্ল্যাডিয়েটরদের মরণপণ যুদ্ধ দেখতেন। সানগ্লাস বা চোখের ঢাকনির এটাই ইতিহাসে থাকা প্রথম উদাহরণ।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info

দ্বাদশ শতাব্দীতে চীনের বিচারকগণ বিচারকার্য চালাবার সময় চোখ কোয়ার্টজ এর কাঁচে ঢেকে রাখতেন। কাঁচগুলো ছিলো ঘোলাটে। এই খয়েরী বর্ণের ঘোলাটে কাঁচের উল্টোপাশে বিচারকেরা কী ভাবছেন, কী দেখছেন তা অন্য কেউ দেখতে বা বুঝতে পারতো না।

১৬০০ সালের দিকে রঙিন কাঁচ লাগানো চশমা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো। লেখক বা অন্যান্য লোকজন যারা দীর্ঘ সময় মোমবাতির আলোয় পড়াশোনা করতেন, তারা চোখে সবুজ কাঁচের চশমা পড়ে নিতেন। তাদের ধারণা ছিলো, সবুজ কাঁচ দিয়ে দেখলে চোখ সহজে ক্লান্ত হয় না।

১৮০০ সালে তৈরি হয় ‘গগলার্স’ এ জিনিসের কাজ ছিলো ভ্রমণকারীদের চোখকে বাতাস, ধুলো এবং প্রতিফলিত শক্ত আলোর হাত থেকে রক্ষা করা। গগলার্স ছিলো কাঁচ আকৃতির দুটো বস্তু পাশাপাশি একটা কালো ফ্রেমে আটকানো জিনিষ। কাপ আকৃতির তলা ছিলো খোলা এবং তাতে লাগানো থাকতো সাধারণ স্বচ্ছ বা রঙিন কাঁচ। এই গগলার্স এর ফ্রেম একটা রিবন দিয়ে মাথার সাথে আটকানো থাকতো।

১৯০০ সালের শুরুর দিকে বিমান আবিস্কার হয়। এ সময় মাটির অনেক উপরের উজ্জ্বল আলো বৈমানিকদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। ১৯২০ সালে আমেরিকান আর্মি এয়ার কর্পস, বাউস এন্ড লম্ব কোম্পানিকে এই সমস্যা সমাধানের জন্য ভাড়া করে। এই কোম্পানি কী সমাধান দিয়েছিলো জানেন? সবুজ রেব্যান এভিয়েটর সানগ্লাস।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগে আগে টিনটেড সানগ্লাসের বিচিত্র এক উন্মাদনা শুরু হয় গোটা ইউরোপ জুড়ে। আমেরিকার হলিউডে সিনেমার তারকারা হঠাৎ করেই এই টিনটেড সানগ্লাস পরা শুরু করেন। প্রথমে তারা সানগ্লাস পরতেন শুধু রোদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে। পরে তারা খেয়াল করলেন, সানগ্লাস পরলে চেহারায় বিচিত্র এক ধরনের রহস্য খেলা করে। এরপর সানগ্লাস পরাটা নতুন এক ফ্যাশনে পরিণত হতে সময় লাগেনি।

১৯৬৫ সালের দিকে ফটোক্রোমিক লেন্স আবিষ্কার হয়। এই লেন্স সূর্যের আলো বা গাঢ় আলোয় হয়ে যায় গাঢ় রঙের আর ঘরের মৃদু আলোয় থাকে স্বচ্ছ। এ সময়ে সানগ্লাসের অদ্ভুত আকার আর রং বিচিত্র হারে রূপ নেয়া শুরু করে। আকাশের তারা আকৃতি, বিশাল বিশাল হেডলাইটের আকৃতি আরও কত আকৃতির যে সানগ্লাস তখন পাওয়া যেত, তার ইয়াত্তা নেই। ১৯৮০ সালে নতুন আরও উন্নত লেন্স আবিস্কার হয়। এই লেন্স সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ও অন্যান্য ক্ষতিকর আলোক রশ্মি থেকে চোখকে আড়াল করে রাখে।


এরপর সানগ্লাসের আর কী কী বদলাতে পারে ধারণা করতে পারেন? অচিরেই হয়তো আমরা ব্যাটারি চালিত ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সানগ্লাস দেখতে পাবো। একটা সুইচ টিপলেই হয়তো হালকা ধরনের বৈদ্যুতিক প্রবাহ লেন্সের অতিরিক্ত বর্ণ মুহুর্তেই পরিবর্তন করে ফেলবে। আবার হয়তো আসবে লিকুইড সানগ্লাস! এই সানগ্লাসের একটা ফোঁটা চোখে পরলেই চোখ রক্ষা পাবে যাবতীয় সকল ক্ষতিকর বস্তুর হাত থেকে।

আপনারা নিশ্চয়ই মিশন ইম্পসিবল বা ম্যাট্রিক্সের মতো হলিউডি সিনেমাগুলো দেখেছেন, তাই না? ওতে সানগ্লাসের কী বিচিত্র সব ব্যবহার, খেয়াল করে দেখেছেন? ম্যাট্রিক্স সিনেমায়তো একেবারে আলাদা ডিজাইন করে সানগ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে সানগ্লাসের বিশাল বিশাল সব দোকান। সেদেশে সানগ্লাস কোম্পানিগুলো কার চেহারায় কী ধরনের সানগ্লাস মানাবে তা নিয়েও গবেষণা করে।

এই সানগ্লাসের ভবিষ্যত শেষ পর্যন্ত যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, কে জানে!

লেখকঃ রাতুল সায়রা।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।