বিশ্বের সব থেকে বড় এক্যুরিয়াম


বিশ্বের বৃহত্তম এক্যুরিয়ামটি গড়ে উঠেছে জর্জিয়ার আটলান্টাতে। এই এক্যুরিয়াম কেমন বিশাল তার ধারনা পাওয়া যায় এতে সংরক্ষিত ১২০,০০০ মাছের সংখ্যার বিচারে। শুধু মাছের সংখ্যাই নয় এখানে আছে প্রায় ৫০০ প্রজাতির মাছ, যাদের জন্য আবার ৬০ টি ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে, যাতে তারা নির্দিধায় প্রজনন কার্য চালাতে পারে। আর এই এক্যুরিয়ামে আছে ৮.৫ মিলিয়ন গ্যালন পানি। কি অবাক হচ্ছেন নাকি? হবারই কথা কেননা এটা বলা যায় আমাদের ধানমন্ডি লেকের পানির প্রায় সমপরিমান। তাহলে এবার একটু চিন্তা করে দেখুনতো এই এক্যুরিয়াম কেমন বড়। আর এই একুরিয়ামের এই বিশাল মাছের রাজ্য দেখার জন্য রয়েছে যে কাঁচের দেওয়াল রয়েছে তা ১২০০ স্কয়ার ফিট লম্বা। এত বড় হবেই বা না কেন বলুন, এত মাছ দেখতে গেলে যে অনেক বড় কাঁচের জানালা লাগবেই এটাই সাভাবিক।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info

এই এক্যুরিয়াম তৈরি করার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেন "বার্নাড মার্কাস" নামক একজন কর্পোরেট ব্যাবসায়ি। তার ভাষ্য মতে, "তিনি একটি লাইব্রেরি তৈরি করেছেন যেখানে প্রতিটি বই জীবিত এবং এই বই দেখে অনেকেই অনেক কিছু শিখতে এবং জানতে পারবে।" এই কর্পোরেট ব্যাবসায়ি এই এক্যুরিয়াম বানাতে এতটাই আগ্রহী ছিলেন যে তিনি এটি তৈরি করার জন্য ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করেন। অবশ্য তার এই অর্থে এটি পূর্নতা পায় নাই, আরো ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আসে বিভিন্ন কর্পোরেট ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান থেকে। এছাড়াও এই এক্যুরিয়াম তৈরি করার জন্য যে জমির প্রয়োজন হয়েছে তা দান করেছিল বিশ্ববিখ্যাত পানীয় নির্মাতা কোকাকোলা কম্পানি।


জর্জিয়ার এই এক্যুরিয়ামে গেলে আপনি বিশাল বড় বড় গ্যালারিতে বসে মাছদের দেখতে পারবেন। এরকম মোট পাঁচটি গ্যালারী রয়েছে এই এক্যুরিয়ামে। আর এই গ্যালারী গুলির নাম গুলিও বেশ সুন্দর। যেমনঃ জর্জিয়া, এক্সপ্লোরার, ট্রপিকাল ডাইভার, ওসান ভয়েজার, কোল্ড ওয়াটার কোয়েষ্ট আর রিভার স্কাউট। বসে পরুন গ্যালারিতে আর চোখেন সামনে দেখুন সাতার কেটে যাচ্ছে তিমি মাছ, হাঙ্গর মাছ, পেংগুইন, অক্টোপাস, পানির ঘোরা, কাকড়া আরো অনেক অনেক প্রকারের সামুদ্রিক জীব।

আরেকটা কথা বলতেই ভূলে গেছি, এই যে গ্যালারী গুলি আছে এগুলির নাম করন করার পিছনে একটি কারন আছে। আগেই বলেছি এই এক্যুরিয়ামে ৬০ টি ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে মাছদের জন্য। আর এই গ্যালারী গুলির নাম করন করা হয়েছে এই সকল পরিবেশের সাথে মিল রেখে।

"ওসান ভয়েজার" নামে যে গ্যালারিটি রয়েছে, এটির সামনে যে এক্যুরিয়াম আপনি দেখবেন, এটি হচ্ছে এখানকার সব থেকে বড় ট্যাক। বলতে পারেন প্রায় ৩/৪ ভাগ জুড়ে রয়েছে এটির অবস্থান। আর এই কারনেই এই গ্যালারিতে সব সময় এখানে ঘুরতে আসা সকলের ভ্রমনের তালিকায় থাকে। আর এখানে ভিড় একটু বেশিই হয়। আর এই ওসান ভয়েজার এর সব থেকে মূল আকর্ষন হচ্ছে "হাঙ্গর তিমি" মাছটি। এই মাছটি দেখাতে হাঙ্গরের মত হলেও বেশ নিরিহ টাইপের আর সব থেকে মজার বিষয় এর গায়ের রঙ আমাদের চিত্রা হরিণের সাথে অনেকটা মিলে যায়। আবার এই গ্যালারির কথায় ফিরে আসা যাক। আপনারা যারা "জুরাসিক পার্ক" সিনেমা দেখেছেন, তারা অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন যে, যখন জুরাসিক পার্কের দর্শনার্থিরা চেয়ারে যেয়ে বসে তখন সম্পুর্ন গ্যালারি ধরে ঘোরা শুরু করে আর তাদের সামনে তুলে ধরে জুরাসিক পার্কের বিভিন্ন উল্লেখ যোগ্য দিক গুলি। ঠিক তেমন ব্যাবস্থাই আছে এই পার্কে। এখানে সম্পূর্ন গ্যালারী না ঘুরে ১০০ ফিট দুরত্ত পর্যন্ত সম্পূর্ন গ্যলারিটি ভ্রমন করে। এর ফলে সবাই চেয়ারে বসেই এই বিসাল গ্যালারিটি দেখতে পারে। এই ওসান ভয়েজার গ্যালারী বাদে বাদবাকি যে গ্যলারি রয়েছে তাতেও এরকম আলাদা আলাদ কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমনঃ ছোট ছোট কিছু গ্যালারিতে দর্শনার্থিরা গ্লাসে হাত দিয়ে মাছের স্পর্শ করার অনুভূতি পেতে পারে আবার অনেক গ্যালারিতে মাথা একটু উচু করে গ্লাসের একটা বক্সের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে চলে যেতে পারে প্যাঙ্গুয়েনের দুনিয়ায়।


এরকম একটি বিশাল এক্যুরিয়াম পরিচর্যা করা কিন্তু খুব সহজ কাজ না। এই দেখাশুনা করার কাজটি করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শতাধিক কর্মিকে। যারা এই বিশাল আকৃতির ট্যাক গুলিকে পরিস্কার করা থেকে মাছদের সময় মত নিয়মিত খাওয়ানোর দায়িত্ব পালন করে থাকে। এছাড়াও রয়েছে কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ব্যাবস্থা যা ২৪ ঘন্টা এই সব এক্যুরিয়ামের তাপমাত্র আর পানি প্রবাহ ব্যাবস্থা নিয়ন্ত্রন করে। যা অত্যান্ত জরুরি একটা বিষয় কেননা এর উপর নির্ভর করে মাছদের বেঁচে থাকা।


এবার আপনাদের সামনে কিছু তথ্য তুলে ধরি যা আপনাদের একটা ধারনা পেতে সাহায্য করবে যে, এই বিশাল আকৃতির এক্যুরিয়ামে মাছ গুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে কতটুকু পরিশ্রম করতে হয়।
  • এই ট্যাক গুলিতে প্রতিদিন ৮ মিলিয়ন গ্যালন পানি চালনা করা হয়। যে পানি থাকে সাধারন কলের পানি। কিন্তু সামুদ্রিক মাছকে বাঁচিয়ে রাখতে এর সাথে ১.৫ মিলিয়ন পাউন্ড লবন মিশানো হয়।
  • আর এই পানি চলাচল সচল রাখে ২১৮ টি পানির পাম্প, ১৪১ টি বালি ফিল্টার এবং ৭০ টি প্রোটিন ফিল্টার এই সকল ট্যাংকের পানি পরিস্কার রাখে। যাতে করে মাছ গুলি সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকতে পারে।
  • আর এই সব পাম্প গুলি প্রতি মিনিটে ২৬১,০০০ গ্যালোন পানি পাম্প করে। আর এই হারে পাম্প গুলি ২ ঘন্টার মধ্যে সম্পূর্ন ৮ মিলিয়ন গ্যালন পানি পরিশোধন করতে পারে।
  • এই সব মাছদের যে খাবার দেওয়া হয় তা সংরক্ষিত থাকে একটি ফ্রিজারে। ৬০০০ পাউন্ড ওজনের এই ফ্রিজে ২০,০০০ পাউন্ড খাবার সংগ্রহ করা হয়। বলা যেতে পারে এটিও বিশ্বের মধ্যে সব থেকে বড় একটি ফ্রিজ।
  • আর আমাদের মত মাঝে মধ্যে মাছও অসুস্থ হয়ে পরে। আর এই সকল অসুস্থ মাছকে চিকিৎসা দেবার ব্যাবস্থাও রয়েছে এখানে। ৫৮০০ স্কয়ার ফুটের বিশাল এক মাছদের হাসপাতাল। যেখানে কর্মরত আছেন ১৫ জন মৎস চিকিৎসক। আর প্রতিটি মাছকে আলাদা আলাদা ভাবে চিকিৎসা দেবার জন্য আছে ২৬ টি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (হাসপাতালের বিছানার মত)। এই হাসপাতালে আছে মাছদের জন্য আছে অপারেশন রুম, এক্সরে রুম, এন্ডোস্কপির ব্যাবস্থা আর আল্ট্রা সাউন্ড এর মাধ্যমে রোগ নির্নয় ব্যাবস্থা।
কি অবাক হচ্ছেন নাকি? অবাক হবার মতই ব্যাবস্থা চালু করেছে। যদি কোন দিন সুযোগ পান তাহলে অবশ্যই ঘুরে আসবেন। সমুদ্রের নিচের এক অজানা জগতের সম্পুর্ন না হোক আংশিক স্বাদ পাওয়াটাইবা কম কিসে। তাহলে এবার চলুন দেখে নেই পৃথিবীর সব থেকে বড় এক্যুরিয়ামের কিছু ছবি।


লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।