ব্যাখ্যাহীন কিছু বিখ্যাত অভিশাপ

প্রায়ই আমরা শুনি একজনের কথায় "মুখ লেগে গিয়েছে" বা "অমুকে অমুকে মুখ লাগিয়েছে"! এটার মানে হলো খারাপ ভাগ্য বা দুর্ভাগ্য শুরু হওয়া। আবার অনেকে অভিশাপকে খুব ভয় পান। তবে বিজ্ঞানের প্রসারের কারণে বেশিরভাগ মানুষই অভিশাপ বা এ ধরণের ব্যাপারগুলোকে খুব একটা পাত্তা দিতে চান না। অভিশাপ বলে কিছু আছে কি নেই সেই বিতর্কে না গিয়ে আমরা আপাতত কিছু ঘটনার কথা তুলে ধরবো, যেটার সত্য-মিথ্যা কিংবা যৌক্তিকতা যাচাইয়ের ভার আপনাদের উপরেই রইলো।


hybridknowledge.info hybridknowledge.info

(০১) নেপালের রাজপরিবারঃ
সাল ২০০১, পুরো বিশ্ব হতবাক হয়ে যায় যখন নেপালের ক্রাউন প্রিন্স দীপেন্দ্র তার বাবা-মা ও রাজপরিবারের আরো ৭ জন সদস্যকে গুলি করে হত্যা করেন। এরপর তিনি নিজেও নিজের উপর গুলি চালান। বলা হয় যে, দীপেন্দ্রর বাবা দীপেন্দ্রের পছন্দ করা পাত্রীকে মেনে নেন নাই ও গুলি চালানোর সময় দীপেন্দ্র মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। দীপেন্দ্র তিন দিন কোমাতে ছিলেন, এর মাঝেই তাঁকে দেশটির পরবর্তী রাজা বলে ঘোষণা করা হয় ও তিনি মারা যান। তাঁর চাচা জ্ঞানেন্দ্র এর পর রাজা হন। কিন্তু পুরো দেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে ও ২০০৮ সালে নেপাল থেকে রাজতন্ত্রকে বিলুপ্ত করে দেয়া হয়। ফিরে যাওয়া যাক ২০০ বছর আগে। নেপালের প্রথম রাজা পৃথিবীনারায়ণ শাহের রাজত্বকাল তখন। তিনি গোরখনাথ নামে একজন সাধুকে দৈ খেতে দেন কিন্তু সে সাধু দৈ কিছুটা খেয়ে বমি করে দেন। তিনি সেটা রাজাকে ফেরত দিতে চাইলে রাজা সেটা নিতে রাজি হন নি। ফলে সাধু রাজার উপর ক্রোধান্বিত হয়ে বলেন যে, এই রাজবংশ ১০ম পুরুষে এসে শেষ হয়ে যাবে। দ্বীপেন্দ্র ছিলেন এ রাজবংশের দশম উত্তরাধিকারী ও জ্ঞানেন্দ্র ছিলেন নবম!


(০২) ব্রুস লিঃ
মার্শাল আর্ট কিংবদন্তী ব্রুস লি ও তাঁর ছেলে ব্র্যান্ডনের মৃত্যু নিয়ে রহস্য ও জল্পনা-কল্পনার যেন শেষ নেই। বলা হয়ে থাকে, চীনের কিছু অপরাধীচক্রের শত্রু হয়ে উঠেছিলেন তিনি যারা তাঁকে হত্যা করে। কিন্তু ঘটনার কিছু অদ্ভুত ব্যাখ্যাও আছে। আর সেটার সূত্রপাত ব্রুস লি’র বাবা লি হোয়ে চুয়েনকে দিয়ে। একদিন লি কিছু চীনা ব্যবসায়ীকে ক্ষুব্ধ করে তোলেন যারা অভিশাপ দেন যে, লি’র পরিবাররে জন্ম নেয়া সব পুরুষ সদস্য অকালে মারা যাবে। ব্রুস লি’র বড় ভাই জন্মের পর পরই মারা গেলে লি ও তার স্ত্রী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তারা ধরে নেন অশুভ আত্মারা এ কাজ ঘটিয়েছে। অশুভ আত্মাকে ফাঁকি দেয়ার জন্য তারা ব্রুস লি’কে সাই ফন নামে ডাকতেন, যেটা সাধারণত মেয়েদের নাম। যাই হোক, ব্রুস লি ও তাঁর ছেলে তরুণ বয়সেই প্রাণ হারান।


(০৩) হ্যাপসবার্গের অভিশাপঃ
হ্যাপসবার্গরা ছিল ইউরোপের সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবারগুলোর একটি। আর কোনো মানুষ নয়, পুরো পরিবারটি ধ্বংস হয়ে যায় পাখি, আরো বিশেষ করে বলতে গেলে কাকের অভিশাপে। ঘটনার শুরু তখনোই যখন হ্যাপসবার্গ পরিবারের পূর্ব পুরুষরা তাদের বাড়ির আশেপাশের সব কাক মেরে ফেলে। এরপর থেকে হাপসবার্গ পরিবারের প্রতিটি সদস্যর মৃত্যুর মূহুর্তে কিংবা আগে Turnfalken নামে রহস্যময়, অতিপ্রাকৃত কাকের দ্যাখা মিলে। এমনকি মেরি এন্টোনির হত্যাকান্ডের সময়ও। এছাড়া ক্যারলি নামের একজন কাউন্টেস অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সম্রাট ও হাপসবার্গ পরিবারের একজন ফ্রান্সিস জোসেপের পুরো পরিবারকে অভিশাপ দেন। তখন থেকে ফ্রান্সিসের পুরো রাজত্বকাল ছিল গোলযোগে পরিপূর্ণ, তাঁর ছেলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যর্থ অভ্যুত্থান ঘটায়, যেটাতে ফ্রান্সিস বেঁচে গেলেও রাণী মারা যান। পরে ছেলেও তার ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে আত্মহত্যা করে। শুধু তাই নয়, এই পরিবারের অন্য সব সদস্য আহত কিংবা নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ ফ্রান্সিসের ভাগ্নে আর্ক ডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্ডিনান্ডের হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের।


(০৪) জন এফ কেনেডিঃ
কেনেডি পরিবারের সাথে জড়িয়ে যাওয়া দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাগুলো যে কোনো পরিবারের সাথেই ঘটতে পারে। তবে ঘটনার ব্যপকতা ইঙ্গিত দেয় অস্বাভাবিকতারও। এ পরিবারের অনেক সদস্য মারা গিয়েছেন অনেক তরুণ বয়সে, অপঘাতে। জন এফ কেনেডি ও তাঁর ভাই রবার্ট এফ কেনেডি নিজেদের অফিসেই নিহত হন। এরপর জন এফ কেনেডি জুনিয়র ১৯৯৯ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। জন এফ কেনেডির বোন রোজমেরি মারা যান মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের সময়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জোসেফ কেনেডি মারা যান, মাইকেল কেনেডি মারা যান স্কি করতে গিয়ে। ১৮৪২ সালে জন এফ কেনেডির পরদাদা থমাস ফিটজজেরাল্ড একটি আইরিশ গ্রামে এক বাক্স স্বর্ন মুদ্রা পান, খুব সম্ভবত সেগুলো ছিল অভিশপ্ত। তিনি গ্রাম ত্যাগ করার সাথে সাথে পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়। বলা হয় অভিশাপের শুরু তখন থেকে।

লেখকঃ জুলকারনাইন মেহেদী।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।