বিলুপ্ত মেগালোডন হাঙ্গর ।। Extinct Megalodon Shark


বিজ্ঞানের ভাষায়, বিশাল বিশাল দেহী ডাইনোসরের বিলুপ্ত হওয়ার পরেই সূচনা হয়েছে স্তন্নপায়ী প্রানিদের যুগ। বর্তমানে প্রাক ঐতিহাসিক যুগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই সকল ডাইনোসরের শুধু মাত্র হাড় খুঁজে পাওয়া যায় পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায়। সেই আমলে স্থল ভাগে যেমন বিলুপ্ত হয়েছিল বিভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসরের ঠিক তেমনি জলেও ১.৫ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত ঘটেছিল ৯৮ ফুট লম্বা মেগালোডন হাঙ্গরের।

কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে; আসলেই কি এই মেগালোডন হাঙ্গরের বিলুপ্তি ঘটেছিল নাকি আজ পর্যন্ত সে তার নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে? সে কথায় ফিরব কিন্তু তার আগে আপনাদের এই মেগালোডন হাঙ্গর সম্পর্কে কিছু ধারনা দিব। যা আপনাদের বুঝতে সহায়তা করবে যে আসলে এই হাঙ্গর কত বড় ছিল।

এই হাঙ্গর মাছের অস্তিত্ব আবিস্কার করা থেকে তাহলে শুরু করা যাক, যেহেতু এই হাঙ্গর মাছের অস্তিত্ব সম্পর্কে কারো কোন ধারনা ছিল না তাই কেউ এই হাঙ্গর নিয়ে কোন খোঁজ চালানো হয় নাই প্রথম দিকে। গবেষক দলেরা তাদের নিত্য দিনের মত যখন খুঁজে বেড়াচ্ছিল ডাইনোসরের কোন হাড় তখন তারা আবিস্কার করল বিশাল এক হাঙ্গরের দাঁতের মত হাড় বিশেষ। প্রথমে সকলেই ধারনা করেছিল এটি হয়ত কোন ড্রাগন বা বিশাল আকৃতির কোন সাপের দাঁত।


কিন্তু সকলের ধারনাকে পাল্টে দেন Nicolas Steno ১৬৬৭ সালে। যিনি প্রথম সবাইকে জানান দেন যে এটি আসলে বিশাল আকৃতির কোন এক হাঙ্গরের দাঁত। আর তিনি এই দাঁতকে কেন্দ্র করে বিশাল এক হাঙ্গরের চোয়াল আঁকেন যা এই হাঙ্গরের বিশালতার প্রমান দেয়। তিনি এই ছবিটি প্রকাশ করেন তার লেখা "The Head of a Shark Dissected" বইটিতে।


এরপর থেকেই পৃথিবী জানল বিশাল এক হাঙ্গরের অস্তিত্বের কথা। এরপরে প্রানি বিজ্ঞানি "Louis Agassiz" এই বিশাল আকৃতির হাঙ্গরের প্রাথমিক নামকরন করেন "Carcharodon Megalodon" নামে ১৮৩৫ সালে। যেহেতু এই হাঙ্গর মাছের দাঁত বর্তমানে "গ্রেট হোয়াইট হাঙ্গর" মাছের গঠনের মত তাই ধারনা করা হয় এই হাঙ্গর মাছও ছিল বর্তমান হাঙ্গর মাছের মত হিংস্র। আর এ কারনেই Louis Agassiz এই মেগালোডন হাঙ্গরের স্থান দেন প্রানি জগতের "Carcharodon" প্রজাতির মধ্যে আর এর নাম বৈজ্ঞানিক সক্ষিপ্ত নামকরন করা হয় "C. megalodon" নামে। অবশ্য অনেকেই একে "Megatooth Shark", "Giant White Shark" অথবা "Monster Shark" নামেও ডাকে।

এতক্ষন যে দাঁত নিয়ে কথা হল আসুন এবার সেই দাঁতের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নেই, দাঁত গুলি ত্রিকোন আকৃতির প্রচুর শক্ত এবং  এই দাঁতের গায়ে সুক্ষ লম্বা লম্বা খাঁজ থেকে। দাঁতের গোড়ার দিকটা "V" আকৃতির হয়। আর তা ৭ ইঞ্চি পরিমান লম্বা হতে পারে।

এবার চলুন দেখে নেই এই দাঁতের কয়েকটি ছবি যা আপনাদের এই দাঁতের আঁকার এবং আকৃতি সম্পর্কে আরো সুস্পষ্ট ধারনা দিবে।

১৯৯০ সালে Bashford Dean এর বানানো মেগালোডন এর চোয়াল
মেগালোডনের চোয়ালে দাঁতের অবস্থান
মেগালোডনের বানানো সম্পূর্ন কংকাল
তিমি মাছের মেরুদন্ডে মেগালোডনের দাঁতের কামড়ের চিহ্ন
মেগালোডনের আকৃতি সম্পর্কে ধারনা দিতে আঁকা ছবি
মেগালোডনের এপর্যন্ত প্রাপ্ত সকল দাঁতের ছবি
উপরের ছবি গুলি দেখে নিশ্চই এই মেগালোডন হাঙ্গরের আঁকার এবং আকৃতি সম্পর্কে আপনার ধারনা অনেক বেশি স্পষ্ট হয়েছে। এবার চলুন ফিরে যাই আগের সেই প্রশ্নে; আসলেই কি এই মেগালোডন হাঙ্গরের বিলুপ্তি ঘটেছিল নাকি আজ পর্যন্ত সে তার নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে?

পরবর্তি লেখাটুকু জুড়েই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।

আচ্ছা যে প্রানি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, সেই প্রানিকে কি জীবিত অবস্থায় দেখা বর্তমানে সম্ভব? এক কথায় উত্তর "না"। কিন্তু এই মেগালোডন হাঙ্গর মাছের বর্তমান সময়ে যে জীবিত রয়েছে তার অনেক ভিডিও চিত্র রয়েছে যা প্রমানে করে যে এই মেগালোডন হাঙ্গর এখনো বেঁচে আছে আর তা বিচরন করছে সমুদ্রে। কি বিশ্বাস হচ্ছে না তাই না? তাহলে চলুন দেখে নেই একে একে সব প্রমান আর এরপরে সিদ্ধান্ত আপনিই নিবেন।

তখন ২য় বিশ্ব যুদ্ধ চলছে বিশ্ব জুড়ে। সারা বিশ্ব জুড়ে চলছে জার্মানির হিটলার বাহিনীর আগ্রাসন। আর এ সময় ফ্রান্সের অনেক গুলি সমুদ্র বন্দর চলে যায় হিটলার অর্থাৎ জার্মানদের দখলে। এসময় এই জায়গাকে সুরক্ষিত রাখতে জার্মান বাহিনী নৌবহর বৃদ্ধি করে। এসময় তাদের সাথে দেখা হয় এই মেগালোডন হাঙ্গর মাছের সাথে। এর ছবি তুলে রেখেছিল তারা কিন্তু তা সে সময় প্রকাশ করা না হলেও সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে জার্মানিদের অনেক গোপন নথির মত এটিও উন্মুক্ত হয় সকলের সামনে। চলুন তাহলে দেখে নেই জার্মানিদের তোলা সেই ছবি আর কত বড় ছিল সেই হাঙ্গর মাছ।



কি বুঝলেন কত বড়? আর এর অস্তিত্ব্য কি আছে তাহলে? ভিডিওটিতে বলা হয়েছে একটা নৌকা ডুবির ঘটনা অনুসন্ধান করতে যেয়ে আরো একবার দেখা মেলে মেগালোডনার। এখন প্রশ্ন হল কি হয়েছিল সেই নৌকা ডুবিতে? 

৫ই এপ্রিল ২০১৩ সাল, আফ্রিকার কেপ টাউনের সমুদ্র এলাকায় বন্ধুরা মিলে সমুদ্রে মাছ ধরার আয়োজন করে। তাদের এই আয়োজনের সম্পূর্নটাই ভিডিও করার আয়োজন ছিল তাদের। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত প্রানী তাদের স্পিড বোটে আক্রমন করে বসে। আর এই দূর্ঘটনায় সকলেই নিখোঁজ হয়। কিন্তু অনুসন্ধানের সময় তাদের ধারন করা ভিডিও ক্যামেরাটি উদ্ধার করা সম্ভব হয় সমুদ্রতল থেকে। বলে রাখি তাদের ভিডিও ক্যামেরাটি ছিল পানি নিরোধক। চলুন এবার দেখে নেই তাদের ক্যামেরায় ধারন করা তাদের নিজেস্ব ভিডিও।



এই দূর্ঘটনার পরে সকলেই নিখোঁজ হয় কিন্তু সমুদ্রের পানির নিচে খুঁজে পাওয়া যায় তাদের বোটের ভাংগা অংশ। আর সেখানে স্পষ্ট দেখা যায় বোটের গায়ে রয়েছে বিশাল আকৃতির কামড়ের দাগ যা হুবাহু হাঙ্গরের কামড়ের মত কিন্তু আঁকার এবং আকৃতিতে বিশাল বড়। তাহলে এই কামড় কি মেগালোডনের?

আচ্ছা আপনার মনে কি এই প্রশ্ন উদয় হচ্ছে যে এই মেগালোডনের অস্তিত্ব্য নিয়ে কথাবার্তা কি শুধু মাত্র বর্তমান সময়েই হঠাত করে উঠে এসেছে নাকি অনেক আগের থেকেই এর প্রচলন রয়েছে? যদি মনে করে থাকেন হঠাত করে উঠে এসেছে তাহলে তা ভুল কেননা সমুদ্র পার্শ্ববর্তী অনেক অঞ্চল রয়েছে যেখানের রূপ কথাতেও রয়েছে বিশাল বড় বড় হাঙ্গর মাছের কথা। যেমনঃ পলিনেশিয়ার জেলেদের মধ্যে প্রচলিত আছে ১০০ ফুট লম্বা হাঙ্গর মাছের কথা, ইন্দোনেশিয়ার জেলেদের মধ্যে প্রচলিত আছে ৭৫ ফুট লম্বা হাঙ্গর মাছের কথা যারা সম্পূর্ন সমুদ্র জুড়ে রাজ করে আবার ম্যাক্সিকোতে প্রচলিত আছে ৬০ ফুট লম্বা হাঙ্গর মাছের কল্পকথা।

একবার চিন্তা করে দেখেন যে হাঙ্গর মাছের অস্তিত্ব্য নেই বলে দাবি, তাহলে সেই হাঙ্গর মাছের কথা কিভাবে এই সব এলাকার মানুষেরা জানে? আর তাদের যদি নূন্যতম কোন ধারনা না থাকে তাহলে কোন ভাবেই তা গল্পকথায় উঠে আসতে পারে না। তার মানে বহু বছর ধরে চলে আসা এই সকল গল্পকথার উতপত্তি নিশ্চয়ই হয়েছিল কোন এক সময় কেউ এই হাঙ্গরের সম্মূখীন হয়ে ছিল তাই। তাই নয় কি?



এবার তাহলে আরেকটি ঘটনায় আসা যাক। ২১ জানুয়ারি ২০০৯ সালে হাওয়াইয়ের সমুদ্রে বাবা ছেলে ঠিক করে এক সাথে সময় কাটাবার অন্য তারা সমুদ্রে মাছ ধরবে। এসময় মাছ ধরতে ধরতে তারা হঠাত করে দেখতে পায় সমুদ্র পাড়ে পরে রয়েছে এক বিশাল তিমির অর্ধেক মৃত দেহ। যার লেজের দিকের অংশ নেই বললেই চলে। পরবর্তি এই তিমি নিয়ে পশু বিশেষজ্ঞরা ময়না তদন্ত করে জানান যে তিমির পিছের এই অংশ টুকু কোন কিছু আক্রমন করে এবং এক কামড়েই অর্ধেক ছিড়ে ফেলে। আর আক্রমণকারীর দাঁত বেশ শক্ত আর চোয়াল বিশাল বড় কেননা এক তিমি মাছকে কামড়ে দু'টুকরা করে ফেলার মত খুব বেশি প্রজাতির প্রানির অস্তিত্ব্য নেই এই ধরণিতে। চলুন এবার দেখে নেই বাবা এবং ছেলের মাছ ধরার সময় তাদের ভিডিও করা সেই ভিডিওটি।



এবারের ঘটনাটি ঘটে দক্ষিন আফ্রিকায়। আপনারা সকলেই জানেন যে আফ্রিকাতে যত প্রজাতির প্রানির সন্ধান পাওয়া যায় তা আর কোন একক অঞ্চলে এত প্রানি পাওয়া যায় না। এর স্থল ভাগের মত এর সমুদ্র অঞ্চলেও জলজ প্রানিরও সংখ্যা কম না। আর এই জলজ জগতকে দেখার জন্য শুধু আফ্রিকাতে নয় বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গভীর সমুদ্র অঞ্চলে বসানো আছে ক্যামেরা। যা দিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রতিনিয়ত এই জলজ জগতকে দেখেন। আর এখানেই আবার ধরা পরে মেগালোডন। সমুদ্রের পরিবেশের তারতম্য বোঝার জন্য রবটের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছিল সমুদ্র তলের মাঠি বা বালি। আর এসময় যা ক্যামারায় ধরা পরে তা সকলকেই হতবাক করে দেয়। চলুন তাহলে দেখে নেই সে সময় কি ধরা পরেছিল ক্যামেরায়।



এখানে ক্যামেরায় ধরা পরা হাঙ্গরের পাখার আঁকার হিসাব করে যদি এই হাঙ্গরের আকৃতি বের করা হয় তা হয় ৬২ ফুট লম্বা হাঙ্গর। তাহলে এটাই কি ছিল মেগালোডন?

সর্বশেষ প্রমানে চলে এসেছি। আপনারাতো জানেনই কোষ্ট গার্ড কতটা কার্যকারি ভূমিকা রাখে ডুবন্ত বোট থেকে লোকদের উদ্ধার করতে। আর তারা এতটা ভালভাবে কাজ করতে পারে কারন তাদের থাকে অত্যাধুনিক সব ব্যাবস্থা। এরকম এক বোট ডুবির ঘটনায় তারা হেলিকপ্টার নিয়ে ছুটে যায় ব্রাজিলের কোষ্ট গার্ড। এসময় দড়ি দিয়ে ডুবন্ত বোট থেকে লোক উদ্ধারের সময় তাদের হেলিকপ্টারের ক্যামেরায় আরেকবার ধরা পরে মেগালোডন। চলুন এবার সেই ভিডিও দেখে আসি।



কি দেখলেন আর কি বুঝলেন এখন সেই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ন আপনার নিজের উপর নির্ভর করে। আপনি যদি বিশ্বাস করেন মেগালোদডনের অস্তিত্ব্য আজও আছে এই পৃথিবীতে তাহলে তা আছে আর যদি বিশ্বাস করেন নাই তাহলে নাই। কিন্তু যা বিশ্বাস করবেন তা বুঝে শুনে আর দেখে বিশ্বাস করবেন।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info
জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info