পুরো নাম আমানউল্লাহ মোহাম্মদ আসাদ। ১৯৪২ সালে নরসিংদী জেলায় তাঁর জন্ম। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে মাষ্টার্স এর ছাত্র ছিলেন। একদিন হঠাৎ করে তাঁর একটি শার্ট পুরো বাংলাদেশের মানুষের কাছে পতাকা হয়ে গেলো। সবাই সেই পতাকা নিয়ে রুখে দাঁড়ালো অন্যায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু কিভাবে আসাদের শার্ট সবার কাছে হয়ে উঠলো পতাকা? চলেন শুনে আসি সেদিনের সেই ঘটনাটি।


বাংলাদেশ তখনও স্বাধীন রাষ্ট্র নয়। যেভাবে খুশি সেভাবে এর হাড় মাংস ছিবড়ে বানিয়ে খাচ্ছিলো পাকিস্তানি দানবরা। তাদের শোষণে এবং শাসনে মানুষ হয়ে গিয়েছিলো জর্জরিত। আমাদের দেশ থেকে সম্পদ নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানি শাসকরা ওদের দেশকে বানাচ্ছিলো উন্নত থেকে আরো উন্নত। আর আমরা রয়ে গিয়েছিলাম তলানীতে।
কিন্তু কতদিন আর চলতে পারে এই অন্যায় শাসন? তাই মানুষের মধ্যে দানা বাঁধছিলো ক্ষোভ। সবাই চাইছিলো কিছু একটা করতে। বাংলাদেশে তখন স্বৈরাচারী শাসন চালাচ্ছিলো আইয়ুব খান। আপনারা তো জানেনই স্বৈরাচারী শাসনে মানুষকে মত প্রকাশ করতে দেয়া হয় না। অর্থাৎ যে শাসন চালায় তার কথায় চলতে হবে সবকিছু। এইরকম শাসন চালিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে রাখা হতো সব কিছু থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয়নি এই অবস্থা। যে কারণে শুরু হয় বিক্ষোভ। তোলা হয় একের পর এক দাবী।
কিন্তু কতদিন আর চলতে পারে এই অন্যায় শাসন? তাই মানুষের মধ্যে দানা বাঁধছিলো ক্ষোভ। সবাই চাইছিলো কিছু একটা করতে। বাংলাদেশে তখন স্বৈরাচারী শাসন চালাচ্ছিলো আইয়ুব খান। আপনারা তো জানেনই স্বৈরাচারী শাসনে মানুষকে মত প্রকাশ করতে দেয়া হয় না। অর্থাৎ যে শাসন চালায় তার কথায় চলতে হবে সবকিছু। এইরকম শাসন চালিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে রাখা হতো সব কিছু থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেয়নি এই অবস্থা। যে কারণে শুরু হয় বিক্ষোভ। তোলা হয় একের পর এক দাবী।
আসাদ তখন ছাত্র, রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ইউনিয়ন এর ঢাকা হল শাখা প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। মানুষের অধিকার নিয়ে, ন্যায্য দাবী নিয়ে কথা বলতো ছাত্ররা। এ জন্য সে সময় কেন্দ্রীয় ছাত্র কমিটি থেকে পেশ করা হয় ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবী। এই ১১ দফা দাবী আদায়ের আন্দোলন চরম রূপ নেয় ১৯৬৯ সালে। এই বছর ১৭ ই জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা কেন্দ্রীয় ছাত্র কমিটি মিটিং করে। মিটিং থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১১ দফা দাবীতে ২০ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের সব স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকবে। সেই সঙ্গে পালিত হবে হরতাল। এই আন্দোলন বানচাল করতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গভর্নর মোনায়েম খান ২০ জানুয়ারি ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেন। ১৪৪ ধারা জারি হলে কোনো ধরনের মিটিং, মিছিল করা যায় না। শুধু তাই নয়, চার জনের বেশি লোক কোনো জায়গায় মিলিত পর্যন্ত হওয়া যায় না। পাকিস্তান পুলিশ থেকে বলা হয় শহরের কোথাও চার জনের বেশি লোক একসঙ্গে হলে তাদের গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু বাঙালী তো আর অন্যায় ১৪৪ ধারা চুপ করে মেনে নিতে পারে না। কারণ এই হরতাল ডাকা হয়েছিলো নিজেদের দাবী আদায়ের জন্যই। এজন্য ২০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী সহ প্রায় ১০ হাজার ছাত্র ছাত্রী জড়ো হয়। সবাই একসঙ্গে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ১১ দফা দাবীতে শহরে মিছিল বের করে।
এই মিছিল বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের সড়কে এসে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। কিন্তু তাই বলে তো আর সবাই পিছু হটার পাত্র নয়। শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশ কিন্তু সফল হয়। তারা মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এই সময় এগিয়ে আসেন আসাদ। তিনি প্রায় এক ঘণ্টা পর কিছু ছাত্রসহ আবার মিছিল সংগঠিত করে ঢাকা হলের পাশে দিয়ে এগোতে চেষ্টা করেন। তখন একজন পুলিস অফিসার তাঁকে বেয়নেট দিয়ে আহত করে রাস্তায় ফেলে দিয়ে খুব কাছে থেকে গুলি করে। এই গুলিতেই ঢাকা মেডিকেলের বর্তমান জরুরী বিভাগের সামনে অকুতোভয় আসাদ শহীদ হন।
ছাত্রনেতা আসাদের মৃতুর খবর সারা শহরে আগুনের মত ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার ছাত্র জনতা ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছুটে আসেন সঙ্গে সঙ্গে। শহীদ আসাদ হত্যার প্রতিবাদে বের হতে থাকে একের পর এক শোক মিছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয় এক বিশাল মিছিল। এই মিছিল ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করার সময় সাধারণ মানুষ যোগ দেয় এর সঙ্গে। দুই মাইল লম্বা সেই মিছিল ছিলো ইতিহাসের অন্যতম দীর্ঘ মিছিল। এই শোক মিছিল শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। আর এই মিছিলের অগ্রভাগে ছিলো আসাদের রক্তমাখা শার্টটি। মানুষের প্রাণের পতাকা হয়ে ওঠে এই শার্ট।
পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় ছাত্র কমিটি শহীদ আসাদের হত্যার প্রতিবাদে তিন দিন শোক পালন করে। ২৪ তারিখ দেয়া হয় আবারোও হরতাল। সেই দিন আবারও মিছিল লক্ষ করে পুলিশ গুলি করে। পুরো পরিস্থিতি গভর্নর মোনায়েম খানের বাইরে চলে যায়। অবশেষে তুমুল গণ আন্দোলনের মুখে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় ছাত্র কমিটি শহীদ আসাদের হত্যার প্রতিবাদে তিন দিন শোক পালন করে। ২৪ তারিখ দেয়া হয় আবারোও হরতাল। সেই দিন আবারও মিছিল লক্ষ করে পুলিশ গুলি করে। পুরো পরিস্থিতি গভর্নর মোনায়েম খানের বাইরে চলে যায়। অবশেষে তুমুল গণ আন্দোলনের মুখে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বিক্ষিপ্ত জনগণ বিভিন্ন স্থানে আইয়ুব খানের নামের স্থাপনা ভেঙে সেখানে শহীদ আসাদের নাম লাগিয়ে দেন। আজকে আপনারা যে আসাদ গেটটি দেখেন সেই গেটটির নাম আগে ছিলো আইয়ুব গেট। কিন্তু আসাদের প্রতি ভালোবাসায় আপামর জনসাধারণ এর নাম দেয় আসাদ গেট। আর তারপর থেকেই প্রতি বছর ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
নরসিংদী জেলার শিবপুরে শহীদ আসাদ শায়িত আছেন চিরনিদ্রায়। তাঁর আত্মত্যাগের কথা আজ সবাই শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে করে। যারা জানতে শহীদ আসাদের কথা তারা নতুন করেই শুনলেন আর যারা জানতেন না তারাও জেনে গেলে আজকে।
লেখকঃ এ এস।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
নরসিংদী জেলার শিবপুরে শহীদ আসাদ শায়িত আছেন চিরনিদ্রায়। তাঁর আত্মত্যাগের কথা আজ সবাই শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে করে। যারা জানতে শহীদ আসাদের কথা তারা নতুন করেই শুনলেন আর যারা জানতেন না তারাও জেনে গেলে আজকে।
লেখকঃ এ এস।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন