লেইসম্যান ও ডনোভান সাহেবের গল্প ।। Story About Leishman & Donovan

লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্যার উইলিয়াম বুগ লেইসম্যান
কালাজ্বর সাধারণত একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রাণনাশক জীবাণূঘটিত রোগ। লেইসম্যানিয়া ডনোভানী (Leishmania Donovani) নামক জীবাণুর সংক্রমণের মাধ্যমে কালাজ্বর হয়। এটি প্লীহা, অস্থিমজ্জা, যকৃত এবং লসিকানালীর মত আভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রতঙ্গে আক্রমণ করে। স্ত্রী ফ্লেবোটোমাস স্যান্ড ফ্লাই (Phlebotomus Sand Fly) মাছির কামড়ানোর মাধ্যমে মানুষের শরীরে কালা জ্বরের জীবাণু ছড়ায়। কালাজ্বরের জীবাণুবাহী মাছিগুলো সন্ধ্যায় এবং রাতেই বেশি কামড়ায়। যদিও দিনে প্রখর সূর্যের আলোতে খুব একটা কামড়ায় না তবে অনেক সময় ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কারের সময় দিনের বেলাতেও এরা কামড়ায়। কামড়ানোর দুই থেকে ছয় মাসের মধ্যে রোগের সংক্রমণ ঘটে।

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রোগটি আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা,দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে এটি ব্যাপকভাবে দেখা যায়। সমগ্র পৃথিবীর প্রতি দশটি কালাজ্বর রোগির মধ্যে নয়টিই বাংলাদেশ, ভারত, ব্রাজিল ও সুদান এই চারটি দেশে বিদ্যমান। বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের 'মানুষ' এই রোগের উৎস রূপে চিহ্নিত হলেও চীন ও ব্রাজিলে 'কুকুর' এই রোগের উৎস। বাংলাদেশের ৪৬ টি জেলায় কালাজ্বর দেখা যায়, এর মধ্যে ময়মনসিংহ, পাবনা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও জামালপুরঅঞ্চলে এই রোগটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা মাটির ঘরে বাস করে বা গোয়ালঘরের আশে পাশে থাকে তারাই বেশি এই রোগে আক্রান্ত হয়, কারণ বেলেমাছি বাস করে মাটির ফাটলে বা আবর্জনার নিচে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info

চার্লস ডনোভান
আমি আজ কালাজ্বর নিয়ে আপনাদের কেচ্ছা শুনাতে আসি নি। আমি আজ বলব দুই মহান চিকিৎসাবিজ্ঞানীর গল্প যারা এই কালাজ্বরের জন্য দায়ী পরজীবী/জীবাণু আবিষ্কার করেছিলেন।

প্রথমেই বলি লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্যার উইলিয়াম বুগ লেইসম্যানের কথা। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা এবং একজন প্যাথোলোজিসট।

স্কটিশ এই বিখ্যাত প্যাথোলোজিসট ১৯০০ সালে ব্লাড ফ্লিম পর্যবেক্ষণের জন্য তৎকালীন বহুল প্রচলিত রোমানোভস্কি stain এর বদলে হেমাটক্সিন ইওসিনের দ্বারা সহজ stain এর প্রচলন করেন যা পরে Leishman's stain নামে পরিচিত হয়।

১৯০১ সালে তিনি কালাজ্বরের সনাক্তকরণ চিহ্ন Leishman Donovan body আবিষ্কার করেন। ১৯০৩ সালে চার্লস ডনোভান এই একই Leishman Donovan body আবিষ্কার করেন পৃথকভাবে। তাদের নামানুসারে একে Leishman Donovan body বলে।

এরপ আসি চার্লস ডনোভানের কথায়। ১৮৬৩ সালে তিনি কলকাতাতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৩ বছর বয়সে তিনি আয়ারল্যান্ডে চলে যান। সেখানে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উপর পড়াশুনা করেন।

তিনি পরে Indian Medical Service এ যোগদান করেন। পরে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়য়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক হন।

১৯০৩ সালে তিনি কালাজ্বরের জীবাণু আবিষ্কার করেন। ১৯০৫ সালে তিনি Granuloma inguinale এর জীবাণু Klebsiella granulomatis আবিষ্কার করেন।

ক্লেবসেইলার এই প্রজাতিটিকে Donovania granulomatosis বলা হয় তার নামানুসারে।

লেখকঃ নিঃসঙ্গ গ্রহচারী।
সম্পাদকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।