১৩.৭ বিলিয়ন বছর পূর্বে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল (২য় পর্ব)

পূর্বের পর্বঃ১৩.৭ বিলিয়ন বছর পূর্বে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল (১ম পর্ব)

মহা বিস্ফোরণ থেকে মহাবিশ্বের বিবর্তনের ব্যাখ্যা (বায়ে)।
এই লেখচিত্রে, মহাবিশ্ব দুই মাত্রার মধ্যে চিহ্নিত করে এবং তৃতীয় মাত্রা হলো সময় যা ডানদিকে প্রসারিত

তিনটি পরিমাপের উপর ভিত্তি করে মহাবিশ্বের যে বয়স পাওয়া গেছে তা হল প্রায় ১৩.৭ ± ০.২ বিলিয়ন বছর। এই পরিমাপ তিনটি হচ্ছেঃ প্রথম ধরণের অতি নব তারা ব্যবহার করে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের পরিমাপ ও মহাজাগতিক ক্ষুদ্র তরঙ্গ পটভূমিতে তাপমাত্রার উঠানামার পরিমাপ এবং ছায়াপথসমূহের কোরিলেশন ফাংশন পরিমাপ। এই তিনটি পরিমাপ স্বাধীনভাবে করা হয়েছে এবং তিনটি পরিমাপই তথাকথিত ল্যাম্ব্‌ডা সিডিএম নকশাকে গভীরভাবে সমর্থন করেছে। এই নকশা মহাবিশ্বের অভ্যন্তরস্থ সবকিছুর সুন্দর বর্ণনা দিতে সক্ষম।সৃষ্টির প্রাথমিককালে মহাবিশ্ব সুষম এবং সমতাপীয় রূপে একটিই অতি উচ্চ শক্তি ঘনত্ব এবং উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপবিশিষ্ট পদার্থ দ্বারা পূর্ণ ছিল। মহাবিশ্ব সৃষ্টির ১০−৪৩ সেকেন্ড পর পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো কার্যকারিতা লাভ করে। তাই এই সময়কে প্ল্যাংকের সময় বলা হয়। প্ল্যাংকের সময়ের প্রায় ১০−৩৫ সেকেন্ড পর একটি দশা পরিবর্তন তথা অবস্থান্তর অবস্থার সূচনা ঘটে যার ফলে মহাজাগতিক স্ফীতি শুরু হয়। এই সময় মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হতে শুরু করে। এ সময় থেকে মূলত মহাবিশ্বের exponential সম্প্রসারণ শুরু হয়।মহাজাগতিক স্ফীতি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মহাবিশ্বে কোয়ার্ক গ্লুওন প্লাসমা নামক পদার্থ ছিল। বর্তমানে সম্ভবত এই ধরণেরই একটি পদার্থ বিজ্ঞানী প্রস্তুত করেছেন যা কোয়ার্ক গ্লুওন তরল হিসেবে পরিচিত। এই তরলের মধ্যস্থিত সকল উপাদান একে অপরের সাপেক্ষে চলমান এ তরলের মধ্যকার সকল মৌলিক কণিকাও এভাবে তরলের মধ্যে চলমান থাকে। স্থান কালের কোন একটি বিন্দুতে এই পদার্থের মধ্যে একটি বিক্রিয়া ঘটে যার স্বরূপ এখন পর্যন্ত মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি। এই বিক্রিয়ার ফলে বেরিয়ন সংখ্যার সংরক্ষণ নীতি লংঘিত হয় এবং কোয়ার্ক ও লেপ্টন কণিকার পরিমাণ এদের প্রতিকণিকার চেয়ে সামান্য বেড়ে যায়। অর্থাৎ প্রতি কোয়ার্ক এবং প্রতি লেপ্টনের চেয়ে কোয়ার্ক এবং লেপ্টনের পরিমাণ সামান্য বৃদ্ধি পায়। এর হার ছিল প্রতি ১০১০ ভাগের এক ভাগ। এই প্রক্রিয়াকে বেরিওজেনেসিস বলা হয়।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info

মহাবিশ্বের আয়তন যত বৃদ্ধি পেতে থাকে ততই এর তাপমাত্রা কমতে থাকে। তাপমাত্রা হ্রাসের সময়ই কোন এক পর্যায়ে দশার অবস্থান্তর অবস্থা সৃষ্টি হয় যার ফলে শুরু হয় প্রতিসাম্য ভাঙন। এই ভাঙনের কারণে পদার্থবিজ্ঞানের আলোচ্য মৌলিক বলসমূহ পৃথক পৃথক স্বাধীন অস্তিত্ব লাভ করে। এ সময়ই মৌলিক কণিকাসমূহ সৃষ্টি হয় যা এখনও সেই আদি অবস্থাতেই রয়েছে। কোয়ার্ক এবং গ্লুওন একত্রিত হয়ে বেরিয়ন, যেমন প্রোটন এবং নিউট্রন তৈরি করে। কোয়ার্কের পরিমাণ প্রতি কোয়ার্কের চেয়ে সামান্য বেড়ে যাওয়ার কারণে বেরিয়নের পরিমাণও প্রতি বেরিয়নের চেয়ে সামান্য বেড়ে যায়। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার নিচে কোন নতুন প্রোটন/প্রতিপ্রোটন জোড়া তৈরি হতে পারেনা। এরই সাথে অবশিষ্ট প্রোটন এবং প্রতিপ্রোটনের মধ্যে শুরু হয় ভরের পূর্ণবিলয় (annihilation)। ফলে প্রতিপ্রোটন সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায় আর প্রোটন প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়। তবে কিছু প্রোটন থেকে যায়। নিউট্রন প্রতিনিউট্রন জোড়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। ইলেকট্রন এবং প্রতিইলেকট্রন বা পজিট্রনের ক্ষেত্র এই ঘটনা আরও নিম্ন তাপমাত্রায় সংঘটিত হয়।এর কিছুকাল পরে প্রোটন ও নিউট্রন একত্রিত হয়ে মহাবিশ্বের একেবারে প্রথমদিককার উপাদান ডিউটেরিয়াম এবং হিলিয়াম কেন্দ্রীন তৈরি করে। সৃষ্টির এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মহা বিস্ফোরণ কেন্দ্রীন সংশ্লেষ। মহাবিশ্বের শীতলায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে; এক সময় এই প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ পদার্থের কণাসমূহের মধ্যে যে আপেক্ষিক গতিবেগ ছিল তার পরিমাণ হ্রাস পায়। এই কণাসমূহের মাঝে দুই ধরণের শক্তি ঘনত্ব ছিলঃ নিশ্চল ভর শক্তি ঘনত্ব এবং বিকিরণ শক্তি ঘনত্ব। আপেক্ষিক বেগ কমে যাওয়ার ফলে নিশ্চল ভরজনিত শক্তি ঘনত্ব মহাকর্ষীয়ভাবে বিকিরণজনিত শক্তি ঘনত্বের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। মহা বিস্ফোরণের প্রায় ৩৮০,০০০ বছর পর ইলেকট্রন এবং নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে পরমাণু তৈরি করে তার মধ্যে মূলত হাইড্রোজেন পরমাণু সৃষ্টি হয়। এর সূত্র ধরে পদার্থ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া শক্তি বিকিরণ আকারে সমগ্র মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে কারণ একে তেমন কোন বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় না। এই সুপ্রাচীন বিকিরণের নাম মহাজাগতিক ক্ষুদ্রতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ।

সম্প্রসারণের সাথে সাথে মহাবিশ্বের বণ্টন প্রায় সুষম হয়েছিলো। কিন্তু এর মাঝেও কিছু অসামঞ্জস্যতা ছিল। এর কারণে যে অঞ্চলগুলো অন্যান্য অঞ্চল থেকে খানিকটা ঘন সেখানের পদার্থগুলো আশেপাশের অন্যান্য বস্তুকে মহাকর্ষ বলের মাধ্যমে আকর্ষণ করে। এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয় তারা, ছায়াপথ এবং অন্যান্য জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুর যা আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। তবে এই প্রক্রিয়াটি অত সহজ নয়। এর মূল বিষয়গুলো নির্ভর করে মহাবিশ্বের ওই অঞ্চলের পদার্থের ধরন এবং পরিমাণের উপর। তখন মহাবিশ্বে সম্ভাব্য তিন ধরণের পদার্থ বিরাজমান ছিল: শীতল অদৃশ্য বস্তু ও উত্তপ্ত অদৃশ্য বস্তু এবং বেরিয়নীয় বস্তু। ডব্লিউএমএপি নামক কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে যে মহাবিশ্বে শীতল অদৃশ্য বস্তুর পরিমাণ সবচেয়ে বেশী, প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ। অন্যান্য দুই ধরণের বস্তুর পরিমাণ মাত্র ২০%।বর্তমান মহাবিশ্বের অধিকাংশ স্থান জুড়ে একটি রহস্যময় ধরণের শক্তি বিরাজ করছে। মহাবিশ্বের বিপুল ভর ও শক্তির জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী এই শক্তিকে অদৃশ্য শক্তি বা dark energy বলা হয়। বর্তমান মহাবিশ্বের মোট শক্তি ঘনত্বের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ জুড়েই রয়েছে এই অদৃশ্য শক্তি। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে একটি বেগ দূরত্ব সম্পর্কিত লেখের মাধ্যমে প্রকাশ করলে লেখচিত্রের রেখাটি সরলরৈখিক হয়না। অদৃশ্য শক্তির কারণেই এমনটি হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই শক্তির কারণে দূরত্ব যখন অনেক বেশি হয় তখন উক্ত বস্তুর বেগ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। অর্থাৎ দূরত্ব যত বাড়ে বেগ বৃদ্ধির পরিমাণও ততই বেড়ে যায়। একেবারে সাধারণ বিষয় ধর্তব্যের মধ্যে আনলে অদৃশ্য শক্তির এই পরিমাণটি আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণে একটি মহাজাগতিক ধ্রুবকের রূপ নেয় যদিও এই শক্তির প্রকৃত রূপ এখনও উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। বলতে গেলে এই শক্তির অবস্থার সমীকরণ এবং কণা পদার্থবিজ্ঞানের আদর্শ নকশার সাথে এর সম্পর্ক বিষয়ে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয়ক্ষেত্রে অনেক পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণা এখনও বাকি রয়ে গেছে।

এই সবগুলো পর্যবেক্ষণ বিশ্বতত্ত্বের ল্যাম্ব্‌ডা সিডিএম নকশায় সংযুক্ত করা হয়েছে। সবগুলো নকশার নির্যাস নিয়ে গঠিত এই নকশাটি মূলত গাণিতিক যাতে ছয়টি মুক্ত স্থিতিমাপ parameter রয়েছে। তবে রহস্যজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন আমরা মহাবিশ্বের সৃষ্টির গোড়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। সেই সময় পদার্থ কণিকার শক্তি এতো বেশী ছিল যে বর্তমানকালের পরীক্ষণেও তা নিয়ে বাস্তবমুখী গবেষণা করা যায় না। মহা বিস্ফোরণের পর ১০ থেকে ৩৩ সেকেন্ড পর্যন্ত পরিস্থিতি ব্যাখ্যার জন্য উপযোগী কোন সূত্র পদার্থবিজ্ঞানে আজ অবধি আবিষ্কৃত হয়নি। দশা পার্থক্যের এই সময়ের পূর্বের অবস্থা ব্যাখ্যা করার জন্য মহা একীভূত তত্ত্বের কোন বিকল্প নেই। বিস্ফোরণের একেবারে প্রথম বিন্দুতে আইনস্টাইনের মহাকর্ষ তত্ত্বমতে একটি মহাকর্ষীয় ব্যতিক্রমী বিন্দুর কল্পনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে এই বিন্দুতে ঘনত্ব অসীম ছিল।আর এই ভৌত হেঁয়ালি সমাধান করার জন্য একটি কোয়ান্টাম মহাকর্ষ তত্ত্ব প্রয়োজন। এই বিষয়টি বোঝার জন্য যুগোপযোগী তত্ত্ব প্রণয়নই বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞানের বৃহত্তম সমাধানহীন সমস্যা।


মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণঃ
মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ ভৌত বিশ্বতত্ত্বে আলোচিত এক ধরণের তাড়িতচৌম্বক বিকিরণ যা সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে সমরূপভাবে বিস্তৃত রয়েছে। অণুতরঙ্গ ব্যভধিতে অবস্থিত এই বিকিরণ আবিষ্কৃত হয় ১৯৬৫ সালে। আবিষ্কার করেন আরনো অ্যালান পেনজিয়াস এবং রবার্ট উড্রো উইলসন। আর এর আগে ১৯৪৮ সালে বিজ্ঞানী জর্জ গ্যামো এটি সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। সিএমবি এমন বিকিরণ যা মহাবিশ্বের পুরোটা জুড়ে দিক নিরপেক্ষভাবে বিদ্যমান। সিএমবি দেখতে পেলে সমগ্র মহাবিশ্ব আমাদের কাছে সমরূপভাবে উজ্জ্বল মনে হত।সিএমবি বিকিরণের শক্তি ঘনত্ব বনাম তরঙ্গদৈর্ঘ্য লেখ কৃষ্ণকায়া বিকিরণের অনুরূপ লেখের খুবই কাছাকাছি। বাস্তবে কৃষ্ণকায় বিকিরণের এতো কাছাকাছি কোন লেখ অর্জন করা অসম্ভব। তাই অবশ্যই সিএমবি কোন কৃষ্ণকায়া থেকে নির্গত হয়েছে। আর কৃষ্ণকায় তথা তাপীয় সাম্যাবস্থায় থাকা বস্তু বা ব্যবস্থা হতে পারে অনেক আগের মহাবিশ্ব যাকে উত্তপ্ত মহা বিস্ফোরণ নকশা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মহা বিস্ফোরণের কয়েকশো হাজার বছর পরে মহাবিশ্ব এরকম কৃষ্ণকায়ার মত ছিল। সেখান থেকেই সিএমবি নিঃসরিত হতো। পরবর্তীতে মহাবিশ্ব আরও প্রসারিত হতে থেকেছে এবং সিএমবি'র তাপমাত্রা কমতে থেকেছে। এর বর্তমান তাপমাত্রা প্রায় ৩° কেলভিন। এভাবেই সিএমবি'র মাধ্যমে মহা বিস্ফোরণ তত্ত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।

মৌলিক কণিকার আদর্শ মডেল এর চিত্র
মৌলিক কণাঃ
কণা পদার্থবিজ্ঞানে মৌলিক কণা বা প্রাথমিক কণা হল সেসব কণা যাদের ক্ষুদ্রতর কোন ভিত্তি বা গাঠনিক একক নেই অর্থাৎ এরা কোন ক্ষুদ্রতর কণার সন্নিবেশে গঠিত হয়নি। যদি কোন মৌলিক কণার প্রকৃতপক্ষেই কোন ক্ষুদ্রতর একক না থাকে তবে তাকে মহাবিশ্বের গাঠনিক একক হিসাবে বিবেচনা করা হয় যা থেকে অন্য সব কণা তৈরি হয়েছে। আদর্শ মডেল অনুযায়ী কোয়ার্ক লেপটন এবং গেজ বোসনকে মৌলিক কণিকা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।ঐতিহাসিকভাবে হ্যাড্রন, মেসন এবং বেরিয়ন যেমন প্রোটন ও নিউট্রন এবং এমনকি পুরো পরমাণুই একসময় মৌলিকা কণিকা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। মৌলিক কণা তত্ত্বের একটি ভিত্তিসূচক ধারণা হল ২০ শতাব্দীর সূচনাভাগের কোয়ান্টার ধারণা যা তড়িৎচৌম্বক বিকিরণ সংক্রান্ত অধ্যয়নে নতুন যুগের সূচনা করেছে এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। গাণিতিক প্রয়োজনে মৌলিক কণাসমূহকে বিন্দু কণা হিসেবে বিবেচনা করা হয় যদিও কিছু কণা তত্ত্ব যেমন স্ট্রিং তত্ত্বে এর ভৌতিক মাত্রার ধারণা দেওয়া হয়েছে।


এক নজরে বিভিন্ন গোত্রের প্রাথমিক এবং যৌগিক কণিকা, এবং তাদের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়ার তত্ত্বঃ
সব মৌলিক কণাই হয় বোসন নয়তো ফার্মিওন যা তাদের ঘূর্ণনের ওপর নির্ভর করে। ঘূর্ণন পরিসংখ্যান তত্ত্ব লব্ধি কোয়ান্টাম পরিসংখ্যান চিহ্নিত করে যা ফার্মিওন এবং বোসনের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়। এ পদ্ধতি অনুযায়ী পদার্থের সাথে জড়িত কণাসমূহ হল ফার্মিয়ন যার ঘূর্ণন সংখ্যা অর্ধ পূর্ণসংখ্যা এদের বারোটি ফ্লেভারে ভাগ করা হয়। মৌলিক বলের সাথে যুক্ত কণাদের বলা হয় বোসন যার স্পিন হল পূর্ণসাংখ্যিক।কণা পদার্থবিজ্ঞানের আদর্শ মডেল ১২ ধরণের ফ্লেভারের প্রাথমিক ফার্মিওন এবং তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিপদার্থ পাশাপাশি বোসন কণা যারা বলের মধ্যস্ততাকারী এবং হিগস বোসন কণা নিয়ে গঠিত। তবে আদর্শ মডেলের তত্ত্বকে কোন মৌলিক তত্ত্ব হিসাবে না দেখে কেবল একটি ধারণা হিসেবেই বিবেচনা করা হয় কারণ এটি আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা জানা যায়নি।

সৌরমণ্ডলের গ্রহগুলি সূর্যকে কেন্দ্র করে পাক খায় মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে
মহাকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণঃ
মহাকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যা দ্বারা সকল শারীরিক সংস্থা একে অপরকে আকর্ষণ করে। মাধ্যাকর্ষণ শারীরিক বস্তুসমূহে ওজন প্রদান করে এবং পতিত হবার সময় সোজা ভূমিতে পড়ার যুক্তি সৃষ্টি করে। আধুনিক পদার্থবিদ্যায় মহাকর্ষ সবচেয়ে সঠিকভাবে আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব দ্বারা বর্ণনা করা হয় যা দ্বারা স্থান কাল এর বক্রতার একটি ফল হিসাবে মহাকর্ষকে অভিহিত করা হয়।
পদার্থবিজ্ঞানে মহাবিশ্বের বস্তুসমূহের মধ্যে পারস্পারিক আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষ বা মাধ্যাকর্ষণ বলা হয়। প্রকৃতির চারটি মৌলিক বলের একটি হল মহাকর্ষ । স্যার আইজ্যাক নিউটন সর্বপ্রথম মহাকর্ষ বলের গাণিতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এটি নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র নামে পরিচিত। প্রাত্যহিক জীবনে মহাকর্ষ খুবই পরিচিত একটি জিনিস কারণ এটি ভরসম্পন্ন যে কোনো বস্তুকে ওজন দান করে যার ফলে বস্তুটি উপর থেকে ফেললে মাটিতে পড়ে। মহাকর্ষের কারণেই পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহগুলি সূর্যের চারিদিকে ঘূর্ণায়মান। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব সাহায্যে মহাকর্ষকে ব্যখ্যা করা হয় যেখানে বলা হয়েছে স্থান কালের বক্রতার জন্য মহাকর্ষ বল সৃষ্টি হয়। স্যার আইজাক নিউটন ১৬৮৭ সালে তার Philosophia Naturalis Principia Mathmatica বইটিতে মহাকর্ষ বিষয়ে ধারণা দেন ৷ তার সূত্রটি ছিল মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে এবং এ আকর্ষণ বলের মান বস্তুকণাদ্বয়ের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক ও তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক এবং এ আকর্ষণ তাদের কেন্দ্র সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে ৷

মহাকর্ষীয় প্রাবল্যঃ
মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একক ভরের কোনো বস্তু স্থাপন করলে এর উপর যে বল প্রযুক্ত হয় তাকে ওই ক্ষেত্রের দরুন ওই বিন্দুর আকর্ষণ বল বা মহাকর্ষীয় প্রাবল্য বলে। মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে m ভরের বস্তুর উপর F বল ক্রিয়া করলে ওই বিন্দুতে মহাকর্ষীয় প্রাবল্য হবে । মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের বিভিন্ন বিন্দুতে প্রাবল্য বিভিন্ন হবে। বস্তুর ভর বেশি হলে প্রাবল্য বাড়বে দূরত্ব বেশি হলে প্রাবল্য কমবে। এটি একটি ভেক্টর রাশি । এর মান ও দিক আছে ৷ কোনো বিন্দুতে একাধিক প্রাবল্য ক্রিয়াশীল হলে ভেক্টর যোগের পদ্বতি অনুযায়ী ওই বিন্দুতে লব্দি প্রাবল্য গণনা করা যায় ৷ প্রাবল্যের অভিমুখই মহাকর্ষীয় ক্ষূত্রের অভিমুখ নির্দেশ করে ৷ অনেক ক্ষেত্রের প্রাবল্য বোঝাতে শুধু মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র লেখা হয় ৷ এসআই পদ্ধতিতে প্রাবল্যের একক নিউটন পার কিলোগ্রাম ৷

লেখকঃ লেখা পাগলা।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।