চের কাটা হাত ও মৃত্যু মুখোশ


বলিভিয়ার স্বরাস্ট্রমন্ত্রি আন্তোনিয়ো আর্গেদাস, একই সঙ্গে সামরিক শাসক বাররিয়েন্তোসের ডান হাত হিসেবেও খ্যাত ছিলেন, মূলত পূর্ব বলিভিয়ার চের নেতৃত্বে পরিচালিত বিপ্লব দমনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। চে আটক হন ও সঙ্গীদের সঙ্গে তাকে হত্যা করা (১৯৬৭) হয়। পরে আর্গেদাসের সঙ্গে সামরিক শাসক বাররিন্তোসের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তিনিই গোপনে চের ডায়েরি কপি করে পাচার করেন কিউবায়। এর সঙ্গে তিনি আরো একটি অবিশ্বাস্য ঘটনার রূপকারও ছিলেন। তিনি গোপনে ঠিক যেভাবে চের ডায়েরির কপি চালান করেছিলেন, সেভাবেই ফরমালডিহাইডের একটি গ্লাস কনটেইনারে চের হাত ও তাঁর মুখের প্লাস্টারের মুখোশ (ভালেগ্রান্দেতে তৈরি) পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। অবশ্য এ ক্ষেত্রে অনেক বছর পরও এই দুটো জিনিসের অস্তিত্ব ও পাচারের বিষয়টি আবিষ্কৃত হয়নি। আসলে আজও চের হাত ও মৃত্যু মুখোশের গল্প ততটা প্রচারিত নয়।

এ দুটো জিনিসের অভিযাত্রা চের ডায়েরির কাহিনির চেয়ে জটিল ও অনুসরণ করা কঠিন। যে লোক চের হাত কাটেন ও প্লাস্টার দিয়ে মৃত্যু মুখোশ তৈরি করেন, তার নাম "রবার্তো তোতো কিন্তানিলা", আর্গেদাসের মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। চের মৃত্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও বহু চরিত্রের মতো ১৯৭০ সালের নভেম্বরে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তিনি নিহত হন। অজ্ঞাত অস্ত্রধারী হামবুর্গ, জার্মানিতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে কর্মস্থলেই তাকে হত্যা করে। সেখানে বলিভিয়ান কনসালের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। তার সম্পর্কে এর চেয়ে বেশি কিছু জানা যায় না। আর্গেদাসের মতে, চের আঙুলের ছাপ প্রত্যয়ন করার লক্ষ্যে বলিভিয়ায় পাঠানো আর্জেন্টাইন ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেটরদের পরিদর্শনের পর জেনারেল ওবান্দো চের হাত ও মৃত্যু মুখোশ তাকে দিয়েছিলেন।


জেনারেল "ওবান্দো আর্গেদাসকে" দুটো জিনিসই অবিলম্বে কোনো চিহ্ন না রেখে নষ্ট করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর্গেদাস অবশ্য ওবান্দোর নির্দেশ উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেগুলো নিরাপদ হেফাজতে রাখার জন্য বলিভিয়ান লেখক ও দৈনিক পত্রিকা হোর্নাদার সম্পাদক, ঘনিষ্ঠ বন্ধু হোসে সুয়ারেসের হাতে তুলে দেন। ১৯৯৫ সালে আর্জেন্টাইন সাংবাদিক উকি গোনিকে দেওয়া এক স্বল্প বিদিত সাক্ষাৎকারে সুয়ারেস দাবি করেন, চের মৃত্যুর সাত থেকে আট দিন পর আর্গেদাস ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাপ করার কথা বলে তাকে নিজ অফিসে ডেকে পাঠান। সুয়ারেস যাওয়ার পর আর্গেদাস একটা গ্লাস কনটেইনার এবং আধা স্বচ্ছ ব্যাগ বের করে আনেন, ওগুলোর ভেতরের জিনিস প্রথমে ঠিক ঠাহর করতে পারেননি সুয়ারেস। সামনে এগিয়ে এসে তাকে ওগুলো পরখ করতে বলেন আর্গেদাস। গ্লাস কনটেইনারে এক জোড়া হাত ভাসতে দেখেন সুয়ারেস, ব্যাগের ভেতর একটা সাদা প্লাস্টারের মুখোশ দেখতে পান। নিবিড়ভাবে মুখোশটা পরখ করার সময় চোখ খোলা অবস্থায় চের অসাধারণ ভালো একটা প্রতিরূপ চিনতে পারেন তিনি। তার দাড়ির খুঁটিনাটি পর্যন্ত দেখতে পান। মৃত কারও চেহারা নয়, বরং রীতিমতো জীবন্ত কেউ যেন। সুয়ারেস গোনিকে বলেছিলেন, ওই চেহারা কোনো দিনই ভুলবেন না তিনি।


হাতজোড়া ও মুখোশ পুড়িয়ে নদীতে ছাই ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য জেনারেল ওবান্দোর কড়া নির্দেশের কথা সুয়ারেসকে খুলে বলেন আর্গেদাস, কিন্তু তিনি সেই হুকুম না মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সুয়ারেসকে ওগুলো নিজের বাড়িতে লুকিয়ে রাখতে বলেন তিনি। ভীত ও বিষণ্ন হলেও ওই অনুরোধ রক্ষা করতে রাজি হন সুয়ারেস। সুয়ারেসের মতে, আর্গেদাস নিজেকে চের একজন ভক্ত দাবি করে বলেন, বলিভিয়ান সেনাবাহিনীর ওপর মহল ও মার্কিন দূতাবাসসহ বিশেষ প্রভাবশালী মহলের লোকজন তাকে বিশ্বাস করে না। আসলে তিনি বলেন, মার্কিন দূতাবাস বরং তাকে বিপ্লবী ও গেরিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে বলে সন্দেহ করে। মৃত্যু মুখোশ ও চের হাত ধ্বংস না করে জীবনের ঝুকি নেওয়ার দাবি করেন আর্গেদাস।

নিজের শোবার ঘরে একধরনের পাথুরে শবাধার বা কফিন বানিয়ে ওগুলো লুকিয়ে রাখেন সুয়ারেস। আর্গেদাস কারাবন্দী থাকার সময় বলিভিয়ান সিক্রেট পুলিশ বেশ কয়েকবার তার বাড়িতে তল্লাশি চালালেও চের হাত ও মৃত্যু মুখোশ পাওয়া যায়নি। ১৯৬৯ সালে খোদ জেনারেল ওবান্দোর সামরিক সরকারের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মেক্সিকোর উদ্দেশে বলিভিয়া ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত সেগুলো সুয়ারেসের শোবার ঘরের মেঝের নিচেই ছিল। সুয়ারেস গোনিকে জানান, বলিভিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা ও সিআইএ পরে সিদ্ধান্তে পৌছেছিল যে চের হাত ও মৃত্যু মুখোশ সম্ভবত ডিপ্লোম্যাটিক পাউচে করে দেশের বাইরে নিয়ে গেছেন তিনি, তো তারা সেগুলোর খোঁজ বন্ধ করে দেয়। যদিও নিজের শোবার ঘরের মেঝের নিচেই সেগুলো রেখে গিয়েছিলেন তিনি।


ধনাঢ্য এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের দায়ে আর্গেদাসকে গ্রেফতার করে কারাগারে পুরে বলিভিয়ান কর্তৃপক্ষ, ১৯৮৬-১৯৮৯ পর্যন্ত কারাগারে কাটানোর পর ছাড়া পেয়ে মেক্সিকোয় রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের আবেদন বিবেচনাধীন থাকার সময় মেক্সিকান দূতাবাসে আশ্রয়ের আবেদন জানান আর্গেদাস। মেক্সিকোর উদ্দেশে সুয়ারেসের দেশ ত্যাগের খবর জানতে পেরে চের ডায়েরি পাঠানোর মতো একই পদ্ধতিতে চের হাত ও মৃত্যু মুখোশ কিউবায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেন তিনি। ১৯৬৯ সালের জুলাই মাসে সাংবাদিক বন্ধু ভিক্তর সানিয়েরকে জিনিস দুটো কিউবায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। সানিয়ের আবার হোর্হে সাত্তোরি ও হুয়ান করোনেলের হাতে দায়িত্ব তুলে দেন। সোভিয়েতপন্থী বলিভিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি থাকলেও তাদের বিশ্বাস করা যেতে পারে বলে ভেবেছিলেন সানিয়ের। পার্টির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে কিউবায় পাড়ি দিতে পারবেন তারা। চের হাত সংরক্ষিত গ্লাস কনটেইনার ও পত্রিকায় জড়ানো মৃত্যু মুখোশের ব্যাগ পাঁচ মাস নিজের বিছানার নিচে রেখে সাত্তোরির সঙ্গে ইউরোপ ও সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে কিউবায় যাওয়ার জোগাড়যন্ত্র করছিলেন হুয়ান করোনেল।


মৃত্যু মুখোশে তুলে ধরা চের বৈশিষ্ট্য দেখে চমকে গিয়েছিলেন তিনি। গ্লাস কনটেইনারটাকে মোম দিয়ে মুখ বন্ধ ১০ ইঞ্চি লম্বা ও সাত ইঞ্চি চওড়া সিলিন্ডার আকৃতির বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। ভেতরের বাদামি তরলে হাত দুটো ভাসছিল। শক্তিশালী কারও হাত বলেই মনে হয়েছে। তিনি বলেছেন, আঙুল গুলো সূক্ষ্ একটা আস্তরণে ঢাকা ছিল (খুব সম্ভব চের হাতের ছাপ নেওয়ার জন্য ব্যবহূত কালি); অনুপযুক্ত কোনো অস্ত্র দিয়ে কাটায় কবজির কাছে বিশ্রী এব্রোখেবড়ো কাটা দাগ। কাটা হাতজোড়া সম্পর্কে করোনেলের বর্ণনা, বলিভিয়ান মিলিটারি সত্যিই বিখ্যাত চে গুয়েভারাকে আটক ও হত্যা করেছে প্রমাণ করতে বলিভিয়ায় পাঠানো আর্জেন্টাইন ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেটরদের তোলা ও বহু বছর পর উন্মুক্ত করা চের হাতের ভীতিকর ছবির সঙ্গে মিলে যায়। ছবিতে চের হাতজোড়াকে পত্রিকার পাতার ওপর কালিমাখা আঙুলগুলো ভেতরের দিকে গোটানো ভঙ্গিতে পাশে কালির শিশি ও প্যাডসহ উল্টো রাখা অবস্থায় দেখা যায়।

চের দেহাবশেষ উদ্ধার হলো যেভাবেঃ
১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর দিনদুপুরেই আকাশ থেকে খসে পড়েছিল এক জ্বলজ্বলে তারকা। বলিভিয়ার মাটি রক্তে রাঙিয়ে নিভে যাওয়া এই তারকার নাম চে গুয়েভারা। মহান এই বিপ্লবী নেতাকে হত্যা করার পরদিন বলিভিয়ার ছোট শহর ভালেগ্রান্দের হাসপাতালে তার মরদেহ সাংবাদিকদের সামনে রাখা হয়। এরপর চের মরদেহ উধাও হয়ে যায়। বিষয়টি রাষ্ট্রীয় গোপন বিষয় হয়ে দাড়ায়। তখন সবার মনে প্রশ্ন, বিপ্লবী নেতার মরদেহ গেল কোথায়? বলিভিয়ার সেনাবাহিনী এ ব্যাপারে কাউকে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। কিছু লোক আন্দাজ করেন, চের মরদেহ যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গেছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। কেউ কেউ ধারণা করেন, তার মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। বিমানে করে দেহভস্ম ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জঙ্গলে। কেউবা আবার ভাবেন, অজ্ঞাত কোনো কবরে শুইয়ে রাখা হয়েছে বিপ্লবীর প্রাণহীন দেহ।

একপর্যায়ে এসব ধারণা একটি বিন্দুতে এসে থামে। মোটামুটি সবাই ধরে নেয়, সিআইএর গুপ্তচর গুসতাভো ভিলোলদো ভালেগ্রান্দে বিমানবন্দরের কাছে কোনো কবরে সমাহিত করেছেন চের মরদেহ, যার কোনো চিহ্ন নেই। বিপ্লবী নেতার সঙ্গে তার ছয়জন সাবেক সঙ্গীকেও সমাহিত করা হয়। এটুকু অন্তত বলা যায় যে যেখানে চের হাড়গোড় পাওয়া গেছে, সেখানেই সমাহিত করা হয় তাকে।

চের মৃত্যুর ৩০ বছর পর ১৯৯৭ সালের জুলাইয়ে ভালেগ্রান্দে বিমানবন্দরের কাছে ছয় সঙ্গীসহ তার দেহাবশেষের সন্ধান মেলে। তা ছিল প্রায় দুই বছর ধরে খোঁজাখুঁজির ফল। কিউবা ও আর্জেন্টিনার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গড়া একটি দল এই অনুসন্ধান চালায়। এসব কঙ্কাল উদ্ধারের পর বিশেষজ্ঞ দলটি একটি ব্যাপারে নিশ্চিত হয়, এটাই চের দেহাবশেষ। মুখের হাড়ের কাঠামো, দাঁত এবং হাত লাপাত্তা হওয়া নেতার কঙ্কাল শনাক্ত করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া দেহাবশেষের সঙ্গে এমন এক জ্যাকেট পাওয়া যায়, যা চের বলে নিশ্চিত হন বিশেষজ্ঞরা। কঙ্কালের পায়ে মোজা ছিল না। চের মরদেহের শেষ আলোকচিত্রের সঙ্গে কঙ্কালের সজ্জার মিল পাওয়া যায়।


১৯৯৫ সালে চের দেহাবশেষ আবিষ্কারে যখন অনুসন্ধান শুরু হয়, বিপ্লবী নেতার জীবন নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ফলাও করে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হতে থাকে। সে বছর ২৬ নভেম্বর নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বলিভিয়ার সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মারিও বারগাস সালিনাসের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে তিনি বলেন, ভালেগ্রান্দ বিমানবন্দরের অবতরণ ক্ষেত্রের নিচে সমাহিত করা হয়েছে চের মরদেহ। এ ব্যাপারে বলিভিয়ার প্রয়াত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল আন্দ্রে সেলিচের স্ত্রীও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। চে গুয়েভারাকে নিয়ে আত্মজীবনীমূলক বই লেখার জন্য তথ্য জোগাড় করছিলেন মার্কিন সাংবাদিক জন লি অ্যান্ডারসন। তাকে ওই কর্নেলের স্ত্রী বলেন, ভালেগ্রান্দে বিমানবন্দরের কাছেই ছয় কমরেডের মরদেহসহ চের মরদেহ সমাহিত করা হয়। এ কাজে তার স্বামীসহ কয়েকজন বলিভীয় সেনা কর্মকর্তা অংশ নেন। এর মধ্যে বারগাসও ছিলেন। বুলডোজার দিয়ে দুটি কবর খুড়ে তাদের প্রাণহীন দেহ সমাহিত করা হয়। কবর দুটির চিহ্ন রাখা হয়নি। পরে অ্যান্ডারসনের প্রশ্নের জবাবে বারগাস বলেন, ওই বিমানবন্দরের প্রান্তে একটি কবরেই সব মরদেহ সমাহিত করা হয়। তবে কবরটি শনাক্ত করার কোন চিহ্ন রাখা হয়নি।

নিউইয়র্ক টাইমস এর ওই প্রতিবেদনে চের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়। এতে বলিভিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট হইচই পড়ে যায়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর সূত্র ধরে চের মৃত্যু ও বলিভিয়ায় তাঁর ভয়ানক ঝুকিপূর্ণ বিপ্লবী কর্মকাণ্ড নিয়ে তথ্যের বন্যা বয়ে যায়।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের এসব তৎপরতায় ভীষণ চাপের মুখে পড়ে বলিভিয়ার তৎকালীন সরকার। একপর্যায়ে চে ও তার ছয় সঙ্গীর মরদেহ উদ্ধারে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেয় সরকার। শুরু হয় তাদের মরদেহ উদ্ধারে বহুল প্রচারিত বিচিত্র এক অভিযান। বলিভিয়া, আর্জেন্টিনা ও কিউবার বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক ও অনেক কৌতূহলীর ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে আট হাজার লোকের ছোট শহর ভালেগ্রান্দে। ফরেনসিক নৃবিজ্ঞানী ও ভূতাত্ত্বিকেরা প্রথমে পাঁচজন গেরিলার দেহাবশেষ উদ্ধার করেন। ওই এলাকায় ৩২ জন গেরিলাকে হত্যা করে অজ্ঞাত স্থানে পুঁতে ফেলা হয়েছিল। এই পাঁচজন তাদেরই অংশ। এরপর দীর্ঘ ১৬ মাস বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়ি করেও চের দেহাবশেষের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

ততদিনে ভালেগ্রান্দের পৌর কর্মকর্তারা চের দেহাবশেষ ‘জাতীয় সম্পদ’ বলে ঘোষণা করেছেন। তাদের কারণে এই অনুসন্ধানকাজ ১৯৯৭ সালের জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থগিত থাকে। এরপর আবার শুরু হয় উদ্ধার অভিযান।

১৯৯৭ সালের জুনের শেষ দিকে কিউবা ও আর্জেন্টিনার বিশেষজ্ঞরা সম্মিলিতভাবে ভালেগ্রান্দে উদ্ধার অভিযান চালান। একপর্যায়ে একসঙ্গে কয়েকটি মানুষের দেহাবশেষের মধ্যে পাওয়া যায় বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই কঙ্কাল, যার হাত দুটি ছিল না। বিশেষজ্ঞরা জানতেন, মৃত্যুর পর চের হাত দু'টি কেটে ফেলা হয়েছিল। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন লেখক সাংবাদিক জন লি অ্যান্ডারসন। সে অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যিকারের রোমাঞ্চ আর আনন্দ কাকে বলে, কিউবানদের চেহারায় তখন তা দেখেছি। পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে তারা কাঁদছিলেন।’

১৯৬৭ সালের অক্টোবর মাস। মার্কসবাদী বিপ্লবী 'এর্নেস্তো চে গুয়েভারা' কে বলিভিয়াতে ধরে ফেলার পর, তাকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার একজন সাক্ষী ফেলিক্স রদ্রিগেজ, মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএর একজন কর্মকর্তা, যিনি চে গুয়েভারাকে খুঁজে বের করতে সাহায্য করেছিলেন। কিভাবে ধরা হয়েছিলো তাকে? ৪৭ বছর আগের এই ঘটনার দিকে ফিরে তাকিয়েছেন বিবিসির মাইক ল্যাঞ্চিন, তার প্রতিবেদনটি পরিবেশন করছেন মিজানুর রহমান খান।



লেখকঃ শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info