অবিশ্বাস্য ১২ টি প্রত্নতাত্ত্বিক খোঁজ ।। Amazing 12 Archaeological Find

আমারা আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য বা ইতিহাস সম্পর্কে আসলে কতটুকু জানি? অতীতের এমন কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে যা আমাদের বরাবর অবাক করে। এমন কি বর্তমানের আধুনিক যুগেও আমরা কল্পনাও করি তেমন কোন কিছু তৈরি করতে যা আমাদের পূর্বপুরুষেরা তৈরি করেছিল। এর মধ্যে অনেক কিছুই ধ্বংস হয়ে গেছে। আবার অনেক নতুন নতুন অবাক করার মত প্রত্নতাত্ত্বিক খোঁজ মিলছে যা মানুষকে বরাবরের মতই অবাক করে চলেছে। আজ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব এরকম ১২টি প্রত্নতাত্ত্বিক খোঁজ যা আপনাকে অবাক করতে বিন্দুমাত্র কার্পন্য করবে না। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।


১২) অসমাপ্ত স্মারকস্তম্ভঃ
সরাসরি গ্রানাইড পাথরের পাহাড় কেটে বানাবার কাজ চলছিল এই স্মারকস্তম্ভের। কিন্তু স্তম্ভের মাঝ বরাবর ফাটল দেখা দেবার কারনে এটি তৈরির কাজ অসম্পূর্ন থেকে যায়। ঐতিহাসবিদদের অবাক করে দেয় এই স্তম্ভ দুটি কারনে। প্রথমত, এটি তৈরি করা হয়েছে গ্রানাইট পাথর কেটে আর তৎকালীন সময় এরকম নিখুঁত ভাবে পাথর কাটার সরঞ্জাম সম্পর্কে এখন পর্যন্ত তাদের কোন ধারনা আর যে গুলির খোঁজ পাওয়া যায় তা দিয়ে এত বড় আঁকারে আর নিখুঁত ভাবে পাথর কাঁটা এক কথায় অসম্ভব। দ্বিতীয়ত, এটি তৈরি করা হয়ে গেলে তার নিচে কিভাবে তারা কাটতো? আর না কাটলে এটি খাঁড়া করত কি ভাবে?


১১) প্রস্তর যুগের সুড়ঙ্গঃ
প্রস্তর যুগে মানব কর্তৃক পাহাড় কেটে তৈরি করা হয় এই সুরঙ্গ। বিশাল বড় এই সুড়ঙ্গ তৈরি করার কারন বা পদ্ধতি এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয় নাই।


১০) কোষ্টারিকার গোলাকার পাথরঃ
এই পাথর গুলি নিয়ে আর আগে '২০টি রহস্যময় স্থান (শেষ পর্ব)' লেখায় আলোচনা করেছিলাম।


০৯) ভয়নিখের পান্ডুলিপিঃ
এই রহস্যময় বই নিয়ে 'রহস্যময় ভয়নিখের পান্ডুলিপি' লেখায় বিস্তর আলোচনা করা হয়েছিল তাই আর বেশি কিছু লিখলাম না।


০৮) অক্ষত পাঃ
১৯৮০ সালে কিছু প্রত্মতাত্ত্বিকবিদেরা নিউজিল্যান্ডের ওয়েন পাহাড়ের একটি গুহাতে কোন কিছু খোঁজের উদ্দেশ্যে যান। সেখানে তারা আবিস্কার করে বেশ বড়সড় হাড়ের স্তূপ। আর সেখানেই খোঁজাখুঁজি করতে যেয়ে তারা খুঁজে পান এই পা। তারা কিছুটা অবাক হয় এতটা অক্ষত পা দেখে। আরো অবাক হন যখন তারা জানতে পারে এই পা-টির বয়স ৩০০০ বছর। এত বছর কি ভাবে আর কোন কারনে এতটা অক্ষত রয়ে গেছে তা এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয় নাই। এই পা-টি 'Upland Moa' নামক বিলুপ্ত একটি পাখির।


০৭) Göbekli Tepe:
প্রত্নতাত্ত্বিক এই শহরটি তুর্কির পাহাড়ের চুড়ায় বানানো হয়েছিল। এখন এটি শুধু মাত্র একটি ধ্বংস অবশেষ। এই শহরের মধ্যে খুঁজে পাওয়া অনেক জিনিষ তৎকালীন সময়ের সমাজ ব্যাবস্থাকে বুঝতে অনেক বেশি সাহায্য করেছে। যেমন শহরটি কেন্দ্রে গড়ে ওটা প্রার্থনালয় বলে দেয় তৎকালীন সমাজে ধর্ম বেশ বড় আঁকারে প্রভাব ফেলত।


০৬) L'Anse aux Meadows:
ক্যানাডার এই ১০০০ বছর পুরাতন ছোট ভাইকিংদের বসতি একদম জ্বলজ্যান্ত প্রমান যে কলাম্বাসের পূর্বেই তারা আমেরিকা আবিস্কার করেছিল। এ নিয়ে অবশ্য '১০টি মিথ্যা আমাদের শিখানো হয়' লেখায় আলোচনা করেছিলাম।


০৫) Mohenjo-daro:
পাকিস্থানে খুঁজে পাওয়া এই শরহটি এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া মানব সভ্যতার সব থেকে পুরাতন শহর গুলির মধ্যে একটি। এই শহরটি বিশেষজ্ঞদের বরাবর অবাকই করেছে। কেননা এই শহরের আঁকার দেখে মনে হয় এখানে মোটামটি ৪০,০০০ এর মত লোক বসবাস করত, আর তাদের সকলের জন্য বরাদ্দ ছিল আলাদা আলাদা জায়গা। আর এই শহরের যে জিনিষটি অবাক করেছে সকলকে তা হল এই শহরের পয়নিস্কাষন ব্যাবস্থা। মানব সভ্যতার এত পূর্বে যে এই ব্যাবস্থা চালু ছিল তা কেউ ধারনাই করতে পারত না যদি এই শহর আবিস্কার না হত।


০৪) Yonaguni Monument:
জাপানের Yonaguni অঞ্চলের সমুদ্র গর্ভে খোঁজ মেলে এই পাথরের স্থাপত্যের। এখানকার পাথর গুলি নিখুঁত ভাবে ৯০ ডিগ্রী কোনে কাঁটা। যদিও এখন পর্যন্ত কেই নিশ্চিন্ত ভাবে বলতে পারে নাই যে এগুলি মানুষের তৈরি নাকি প্রাকৃতিক ভাবেই এগুলি তৈরি হয়েছে।


০৩) The Longyou Grottoes:
পলিপাথর খোঁদাই করে মানব নির্মিত এই গুহার খোঁজ মিলে চায়নাতে। কে বা কারা এই গুহা তৈরি করেছিল তা এখনও আবিস্কার করা সম্ভব হয় নাই। তবে অনেকের ধারনা এই গুহা তৈরি করা হয় 'Qin Dynasty' এর পূর্বে অর্থাৎ এই গুহার বয়স প্রায় ২২১ খ্রিষ্টপূর্ব।


০২) সূর্যের দরজাঃ
বলিভিয়ায় অবস্থিত ১৩,০০০ ফুট উচু এই স্থাপত্য সম্পর্কে অনেকের দাবি এটিই মানব সভ্যতার ইতিহাসে তৈরি প্রথম স্থাপনা। অনেকের ধারনা এখান থেকেই মানুষের যাত্রা শুরু হয়। এই স্থাপনাটির কিছু জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত কিছু গুরুত্ব যদিও রয়েছে।


০১) Saksaywaman:
পেরুতে অবস্থিত এই দেওয়াল সত্যিকার অর্থেই অবাক করার মত এবং অবিশ্বাস্য। দেওয়ালের পাথর গুলি দেখুন। প্রতিটির ওজন শতটনের থেকেও বেশি, কিন্তু পাথর গুলিকে এমন সুন্দর ভাবে একটির উপর আরেকটিকে বসানো হয়েছে যে এর মধ্যে কোন ফাঁকফোকর নেই। আর এই পাথর গুলির মাঝ থেকে একটা পাতলা কাগজের টুকরাও ঢুকাতে পারবেন না। এত সুন্দর করে আর নিখুঁত ভাবে সিমেন্ট বিহীন ভাবে দেওয়াল তৈরি করার প্রযুক্তি বর্তমান সময়েও নেই।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info