এভারেস্ট জয়ের গল্প


তার থেকে উঁচুতে পৃথিবীর বুকে আর কিছুই নেই, কিছুই নেই তাকে ছাড়িয়ে। উপরে শুধুই আকাশ, দুই পাশে দুটি ছোট্ট ভুখন্ড। দক্ষিণে নেপাল আর উত্তরে তিব্বত। মাঝে সে দাঁড়িয়ে, সোজা, উঁচু, সবাইকে ছাড়িয়ে আকাশকে ছুঁয়ে। নেপালীরা তাকে ডাকে ‘সাগরমাথা’ বলে। তিব্বতীয়রা ডাকে ‘কুমুলুংমা’, যার অর্থ পৃথিবীর জননী। কিন্তু আমাদের সবার কাছে তার নাম কিন্তু এর একটিও নয়। আমরা তাকে চিনি ‘মাউন্ট এভারেস্ট’ নামে। হিমালয় পর্বতমালার সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ এভারেস্ট।

আমরা এখন সবাই জানি মাউন্ট এভারেস্টই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। আগে কিন্তু আমরা জানতাম না। প্রথমে সবার ধারণা ছিলো হিমালয়েরই আরেকটি পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজক্সঘাই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। কিভাবে আমাদের এই ভুল ভাঙলো? এক বাঙ্গালীই কিন্তু সবার ভুল ভাঙ্গিয়েছিলেন। চলেন শুনি সেই গল্প।


সালটা ১৮৩১। পুরো ভারতবর্ষে তখন চলছে ব্রিটিশ শাসন। ব্রিটিশ সরকার ভারত শাসন করলেও তাদের এই ভূখন্ড সম্পর্কে জানা ছিলো না অনেক কিছুই। সেজন্যে তারা একটা জরিপ শুরু করে। জরিপ হলো, কোনো দেশের বা অঞ্চলের কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে সঠিক তথ্য বের করার ব্যবস্থা। এই জরিপের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জর্জ এভারেস্ট (যার নামে পরবর্তিতে মাউন্ট এভারেস্ট এর নাম হয়)। এই জরিপে তিনি গণিতবিদ হিসেবে কলকাতা হিন্দু কলেজের ছাত্র রাধানাথ শিকদারকে পেয়ে যান।

১৮৪৩ সালে জর্জ এভারেস্ট অবসরে গেলে তার পদে আসেন কর্নেল ওয়া নামের আরেক বৃটিশ ভদ্রলোক। তার অধীনেই ভারতের দেরাদুনে কাজ করতে থাকেন রাধানাথ। এ সময় হিমালয়ের পর্বতগুলোর উচ্চতা মাপার কাজ চলছিলো পুরোদমে। একদিন দুরবীন দিয়ে ওয়া সাহের পর্যবেক্ষণ করছেন হিমালয় পর্বতমালা। হঠাৎ তিনি দূরে একটা শৃঙ্গ দেখতে পেলেন। তার মনে হলো ঐ শৃঙ্গটি কাঞ্চনজক্সঘার থেকেও উঁচু। কিন্তু এতোদূর থেকে তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না। তিনি কাঞ্চনকে পিক ‘এ’ আর অপরটিকে পিক ‘বি’ হিসেবে চিহ্নিত করলেন। পরবর্তীতে তিনি নিকোলাস নামের এক ব্যক্তিকে পাঠালেন এই দুই পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা নির্ণয়ের জন্য। নিকোলাস তথ্য সংগ্রহ করলেন ঠিকই, কিন্তু উনি ফেরত আসার পর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হলেন। এতে তিনি আর হিসেবের কাজ শেষ করতে পারলেন না। নিকোলাসের সংগ্রহ করা সেই তথ্য গুলো দিয়েই, ১৮৫২ সালে রাধানাথ হিসেব করতে গিয়ে দেখেন যে পিক “বি” শৃঙ্গের উচ্চতা ২৯০০২ ফুট, আর কাঞ্চনের উচ্চতা ২৮১৬৪ ফুট। বারবার হিসেব করার পরও ফলাফল একই থাকে। রাধানাথ তৎক্ষণাৎ কর্নেল ওয়াকে জানালেন তার পাওয়া হিসেবের কথা। কর্নেল সাহেব আর কয়েক বছর হিসেবনিকেষ করে বিশ্ববাসীর কাছে উন্মুক্ত করেছিলেন এই তথ্য। এক বাঙ্গালী গণিতজ্ঞের অসাধারণ দক্ষতায় আমরা জানতে পেরেছি পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা সবচে উঁচু শৃঙ্গটির উচ্চতা।

হিমালয় পর্বতমালার অন্য পর্বতশৃঙ্গগুলোকে আমরা আঞ্চলিক নামে চিনলেও এভারেস্টকে চিনি ভিন্ন নামেই। সব পর্বতের নাম সে অঞ্চলের মানুষ যে নামে ডাকে সে নামেই হবে, এই নিয়ম চালু করেছিলেন জর্জ এভারেস্ট নিজেই। কিন্তু যখন আবিষ্কৃত হলো সর্বোচ্চ শৃঙ্গটির কোনো একক আঞ্চলিক নাম নেই, তখন কর্নেল ওয়া প্রস্তাব করেছিলেন জর্জ এভারেস্ট এর নামেই এর নাম রাখতে। এভারেস্ট সাহেব নিজে এই প্রস্তাবের বিপক্ষে থাকলেও, কোনো গ্রহণযোগ্য আঞ্চলিক নাম না পাওয়া যাওয়ায়, এভারেস্টই হয়ে যায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম।

এভারেস্টের বিশালতাই যেন মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডেকেছে বারবার, টেনে নিয়ে গেছে তার দিকেই। অনেক চেষ্টার পরেই মানুষ জয় করতে পেরেছিলো এভারেস্ট। কিন্তু একদিনেই পরাজয় বরণ করেনি এভারেস্ট। অনেক প্রাণই ঝরে গিয়েছে। বারবার মানুষ পরাজিত হয়েছে এভারেস্টের উচ্চতার কাছে। কিন্তু থেমে থাকেনি এভারেস্ট অভিযান।

এভারেস্টের চূড়ায় মানুষের পদচিহ্ন এঁকে দেওয়া সম্ভব, এটা প্রথম জানা যায় ১৮৮৫ সালে। লন্ডনের আলপাইন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন থমাস ডেন্ট তার Above the Snow Line বইয়ে দাবি করেন, অজেয় নয় এভারেস্ট। কিন্তু এভারেস্টে প্রথম অভিযানটি হয় তারও ৩৬ বছর পর, ১৯২১ সালে। লন্ডন আলপাইন ক্লাব ও রয়্যাল জিওগ্রাফিকাল সোস্যাইটি মিলে গঠিত হয় ‘মাউন্ট এভারেস্ট কমিটি’। কর্নেল চার্লস হাওয়ার্ড ব্যারির নেতৃত্বে এই দলটি সেই সময় নেপালের রাজা আর তিব্বতের দালাইলামার কাছে অনুমতি নিয়ে ১৮মে দার্জিলিং থেকে এভারেস্টের দিকে যাত্রা শুরু করে।

১০০ ঘোড়া আর ২২ জন নেপালী কুলি নিয়ে দুর্গম পথ ধরে চলতে থাকে প্রথম এভারেস্ট অভিযান। লক্ষ্য, এভারেস্ট এর উত্তর দিক থেকে চূড়ায় ওঠার পথ খোঁজা। অনেক দুর্গম পথ পেরিয়ে দলটি পৌঁছায় হিমালয়ের পাদদেশে। কিন্তু এরই মধ্যে পথেই অসুস্থ হয়ে গেছেন অনেকে, মারাও গেছেন একজন। সামনে তখন আকাশ ছোঁয়া পর্বত। প্রচন্ড খাড়া তার পাদদেশ। চারদিকে তুষার আর তুষার। চলতে হয় পা মেপে মেপে। একবার ফসকালেই সরাসরি খাদে, নিশ্চিত মৃত্যু। দলের প্রধান পর্বতারোহী রিবার্ন সাহেবের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাওয়ায় দলটির নেতৃত্ব দিলেন ম্যালরী সাহেব। এই ম্যালরী সাহেব এভারেস্ট অভিযানের ইতিহাসে সবচে আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তার দুঃসাহস এখনো কিংবদন্তী হয়ে আছে। সে গল্পে আমরা পরে যাবো। এই অভিযানে ম্যালরি সাহেব এভারেস্টের উত্তর আর পূর্ব কোণে আঁতিপাঁতি করে খুঁজতে থাকেন এর চূড়ায় ওঠার পথ। খুঁজতে খুঁজতে, প্রায় ২৩০৩০ ফুট উপরে তিনি উত্তর-পূর্ব দিক বরাবর একটি সরু পথ খেয়াল করেন। অভিজ্ঞ ম্যালরী বুঝতে পারেন, এই সরু পথ দিয়েই যেতে হবে এভারেস্ট চূড়ায়। এই পথের তিনি নাম দিলেন নর্থ কোল বা উত্তরের পথ। কিন্তু তাদের এই দলটির অবস্থা শোচনীয় হওয়াতে নতুন করে এই দীর্ঘ পথটি পাড়ি দেবার কথা ভাবতে পারলেন না ম্যালরী। এই নর্থ কোলই পরবর্তীতে এভারেস্ট বিজয়ের পথকে সুগম করে। এভারেস্টের দিকে প্রথম দুঃসাহসিক দলটির অভিযান এভারেস্টে ওঠার পথটি আবিষ্কার করেই শেষ করতে হয়।

এভারেস্টে দ্বিতীয় অভিযানটি শুরু হয় ঠিক এর পরের বছরেই, ১৯২২ সালে। এটিই কিন্তু এভারেস্ট চূড়া জয়ের লক্ষ্যে পরিচালিত প্রথম অভিযান। এই অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ব্রিটিশ জেনারেল চার্লস গ্যাব্রিয়েল ব্রুস। পর্বতারোহণের নেতৃত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এডওয়ার্ড স্ট্রাট। এই দলেও আগের অভিযানের ম্যালরী সাহেব ছিলেন। মোট ১৩ জন ইংরেজ, ৬০ জন শেরপা নিয়ে শুরু হয় এই অভিযান।


২ মে, ১৯২২ সাল। হিমালয়ের ১৮০০০ ফুট উঁচুতে স্থাপন করা হলো প্রথম বেসক্যাম্প। বেসক্যাম্প থেকেই মূল অভিযান চালানো হয়। এই দলটি বেসক্যাম্পে ৫ দিন কাটিয়ে ৭ মে ১৯৩৬০ ফুট উপরে দ্বিতীয় তাবুটি স্থাপন করে। ৮ মে ২১০০০ ফুট এবং ১৭ মে ২৩ হাজার ফুট উচুতে তাবু স্থাপন করা হয়। এতো উঁচুতে স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালানো বেশ কঠিন। প্রয়োজন হয় অক্সিজেন সিলিন্ডারের। কিন্তু সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডার না থাকায় দলটি থেকে ফেরত পাঠানো হয় অনেককে। বাকিরা থেকে যান অভিযান শেষ করার জন্যে। ২৩মে ফ্লিঞ্চ এবং ব্রুস প্রথমবারের মত ২৭৩০০ ফুট উপরে উঠলেন। কিন্তু এবারে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রকৃতি। বৃষ্টি আর তুষারপাতের তীব্রতায় যাত্রা বিরতি দিতে বাধ্য হয় দলটি। প্রায় সপ্তাহ খানেক বিরতির পর, আবার যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু তার পরেই ঘটলো বিপত্তি। তুষারে পা পিছলে সাতজন শেরপা প্রাণ হারান। এই দুর্ঘটনার পরে আর অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। তাই ব্যর্থতাতেই শেষ হয় এভারেস্ট জয়ের প্রথম প্রচেষ্টা।

এই অভিযানের দু’বছর পর, আবার এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয় যাত্রা। এবারেও নেতৃত্বে জেনারেল ব্রুস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় নেতৃত্বের ভার তুলে নেন কর্নেল নর্টন। আর প্রধান পর্বতারোহী আমাদের পূর্ব পরিচিত দুঃসাহসিক ম্যালরী। আরও ছিলেন নতুন দুজন, আরভিন এবং ওডেল, যারা পরবর্তীতে ইতিহাসে জায়গা করে নেন। অসম্ভব কঠিন পথ, আর বিভিন্ন সমস্যাকে পাড়ি দিয়ে ১৯২৪ সালের ১ জুন ম্যালরী এবং ব্রুস চূড়ায় ওঠার চেষ্টা চালান। অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া তাদের এই অভিযানে তারা প্রায় ২৫০০০ ফুট উঁচুতে ওঠার পরে ফেরত আসেন ক্যাম্পে। তাদের মতোই অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই নর্টন এবং সামারভেল দ্বিতীয় চেষ্টা চালান। সামারভিল মাঝপথে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ায় একাই এগিয়ে যেতে হয় নর্টনকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকেও ফেরত আসতে হয়। তাদের এই চেষ্টাও ব্যর্থ হওয়ার পর, ম্যালরী, তরুণ আরভাইন এবং ওডেল চূড়ায় ওঠার মরণপণ চেষ্টা শুরু করেন। এবার সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার নেয়া হয়। কিছুদুর যাওয়ার পর ওডেলকে রেখে বাকি দুইজন রওনা দেন। ওডেল ২৬০০০ ফুট উচ্চতায় দুরবীন দিয়ে ম্যালরী এবং আরভাইন এর চূড়া জয়ের চেষ্টা দেখতে থাকেন। তাদের চূড়ার অনেক কাছাকাছি পৌঁছানো পর্যন্ত দেখতে পান তিনি। কিন্তু এর পরে কুয়াশা এসে ঢেকে দেয় চারদিক। কুয়াশা কেটে গেলে আর খুঁজে পাওয়া যায় না এই দুই সাহসী অভিযাত্রীকে। তারা আর ফেরত আসেননি। ওডেল বিশ্বাস করতেন ম্যালরী নিশ্চয়ই শৃঙ্গে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। এভারেস্ট অভিযানের ইতিহাসে ম্যালরী এবং আরভাইনের নাম লেখা আছে স্বর্ণাক্ষরে।


পরপর দুটি অভিযানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটায় দালাইলামা ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত আর কোনো অভিযানের অনুমতি দেননি। ’৩৪ সাল থেকে ’৫২ সাল পর্যন্ত ১০ বারের বেশি চেষ্টা করা হয় এভারেস্ট বিজয়ের। কিন্তু এর কোনোটিই সফল হয়নি। ১৯৫২ সালে সুইজারল্যান্ডের রেমন্ড লামবার্ট ৮৪০০ মিটার বা ২৭৫০০ ফুট পর্যন্ত উঠে নতুন রেকর্ড করেন। কিন্তু তিনিও চূড়ায় উঠতে পারেননি। অবশেষে এভারেস্ট মানুষের কাছে হার মানে ১৯৫৩ সালে। সেই গল্পটি এবারে আমরা শুনবো।

তিব্বত দখল করে নেবার পর এভারেস্টে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয় চীন। অন্যদিকে নেপাল প্রত্যেক বছর শুধুমাত্র একটি অভিযানের অনুমতি দিতো তখন। ১৯৫৩ সালে অভিযান চালানোর অনুমতি পায় জয়েন্ট হিমালয়ান কমিটি। এরা আসলে মাউন্ট এভারেস্ট কমিটিরই উত্তরসুরি। সেই দলেই আমন্ত্রণ পান নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী এডমন্ড হিলারি এবং তার বন্ধু জর্জ লউ। সানন্দে তারা গ্রহণ করে নিলেন এই প্রস্তাবটি। হিলারির সঙ্গেই ছিলেন শেরপা তেনজিং নোরগে। তেনজিং এর আগের বছরেই রেমন্ডের সঙ্গেও অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। তখনই তারা আবিষ্কার করেন সাউথ কোল বা দক্ষিণের পথটি। ৩৬২ জন মুটে, ২০ জন শেরপাসমেত চারশতাধিক অভিযাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে এই ঐতিহাসিক অভিযান। বেস ক্যাম্প থেকে মার্চ মাসে সাউথ কোল দিয়ে যাত্রা শুরু করে ২৬০০০ ফুট উঁচুতে শেষ ক্যাম্পটি স্থাপন করা হয়। ২৬মে চেষ্টা করা হয় চূড়ায় ওঠার। কিন্তু বিধিবাম, আবারো নষ্ট হয়ে গেলো অক্সিজেন সিলিন্ডার। ফলাফল সেই ব্যর্থতা। দলনায়ক হান্ট এবারে হিলারি এবং তেনজিংকে চূড়ায় ওঠার চেষ্টা চালাতে বললেন।

সেই চেষ্টা করতে গিয়ে টানা তুষার ঝড়ে নাস্তানাবুদ হয়ে দুইদিন সাউথ কোলে আটকে থাকেন হিলারি আর তেনজিং। ২৮মে তারা ২৭৯০০ ফুট উঁচুতে ৮ নম্বর তাবু গাড়েন। পরের দিন সকাল বেলা হিলারি এবং তেনজিং ইতিহাস গড়ার পথে তাদের শেষ যাত্রা শুরু করেন। চূড়ার আগের শেষ ধাপ ৪০ ফুট উঁচু একটি পাথরের চাঁই। তার উপরেই এভারেস্ট চূড়া, তার সমস্ত অহঙ্কার। হিলারি পাথরে একটা ফাটল দেখতে পান। তার সাহায্যে উপরে উঠতে থাকেন তিনি। তাকে অনুসরন করেন তেনজিং। এর পরেই আসলো সেই ঐতিহাসিক মুহ‚র্ত। ২৯মে ১৯৫৩, প্রথম মানুষের পায়ের নিচে চাপা পড়লো এভারেস্ট। হিলারি উঠলেন এভারেস্ট চূড়ায়, উঠলেন তেনজিং, সঙ্গে পুরো মানব জাতি। তারা এভারেস্টের চূড়ায় এঁকে দিলেন পদচিহ্ন। পুরো বিশ্ব মেতে উঠলো হিলারি-তেনজিং এর বন্দনায়। নাইট উপাধিতে ভূষিত হলেন হিলারি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত মে মাসের ২৯ তারিখটি সারা পৃথিবীতে এভারেস্ট দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।


এর পরেও কিন্তু থেমে থাকেনি এই অভিযান, আজো চলছে এভারেস্ট জয়ের অভিযান। নানা দুঃসাহসিক কাহিনী জন্ম হয়েছে এভারেস্ট অভিযানকে ঘিরে। এভারেস্টে উঠতে গিয়ে অনেকেই মারা গেছেন। তবুও মানুষ ছুটে যায় এভারেস্ট জয়ের নেশায়। বারবার তাকে জয় করে, আবার ছুটে যায়। যতোবার জয় করা যায়, ততোবারই যেন আমাদের কাছে বেড়ে যায় এভারেস্টের মহিমা। তাই যেনো তাকে এতোবার জয় করার তীব্র নেশা। এভারেস্ট জয় করার গর্বের অংশীদার এখন আমরাও। আমাদের বাংলাদেশের তরুণ, মুসা ইব্রাহীম ২০১০ সালের ২৩ মে জয় করেছেন এভারেস্ট। এভারেস্টের চূড়ায় গেঁথে এসেছেন বাংলাদেশের পতাকা। পৃথিবীর বুকের সবচে উঁচুতেও আজ পত পত করে উড়ছে আমাদের লাল-সবুজ পতাকা।

লেখকঃ সৌরভ ওয়াহেদ।
সম্পাদকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info