এ বছরের জুন মাসের ৫ তারিখে একটা প্রত্নতাত্ত্বিক এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার দুনিয়া জুড়ে মিডিয়াতে বেশ গুরুত্ব নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। ১০,০০০ বছরের পুরানো এক উলি ম্যামথের দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে লায়াখোভস্কি নামক এক সাইবেরিয়ার দ্বীপে। ইয়াকুটস্ক এর নর্থইস্ট ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিষ্কারক দলটি দাবি করছেন এই ফসিল থেকে তরল রক্ত পাওয়া গিয়েছে! কোন ফসিল থেকে তরল রক্ত পাওয়ার প্রথম দাবি এইটি! প্রচন্ড ঠান্ডায় বরফে প্রোথিত থাকার কারনে এইরকম রক্তরে মধ্যে জীবিত কোষ পাওয়া যেতে পারে বলেও দাবি করছেন তারা। বলছেন, যখন তারা ফসিলটি খোঁচাখুঁচি করছিলেন তখন সেখান থেকে তরল রক্ত গড়িয়ে পড়েছে।
![]() |
ছবিঃ আবিষ্কৃত ম্যামথের দেহাবশেষ |
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যামথ জাদুঘরের প্রধান সেমন গ্রিগোরিভ লিখেছেন, "ম্যামথের শরীর থেকে যেই পেশী পেয়েছি তার রঙ ছিল প্রাকৃতিক ভাবেই লাল। আমরা এমন একটি আবিষ্কার করতে পেরেছি কারন ম্যামথটির নিচের অংশ পুরোটাই কঠিন বরফের মধ্যে নিমজ্জ্বিত ছিল এতকাল ধরে।"
![]() |
ছবিঃ আবিষ্কৃত ম্যামথের দেহ থেকে নেয়া পেশী। লাল রঙ দেখতে পাচ্ছেন |
দলটি বলছে, ম্যামথের রক্তের রঙ ছিল কালচে লাল। সম্ভবত বরফ ভেদ করে পানিতে পড়ে গিয়েছিল ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী ম্যামথটি এবং আর উঠতে না পেরে সেখানেই মারা যায়। ফলে নিচের চোয়াল এবং জিহ্বার কিছু অংশসহ পুরো পিছনের দিকটাই প্রায় অক্ষত রয়ে গেছে। যখন খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছিল তখন যায়গাটির তাপমাত্রা ছিল -৭ থেকে -১৭ ডিগ্রী সেলশিয়াস।
গ্রেগোরিভ বলছেন প্রাপ্ত রক্তের উপাত্তটি 'অমূল্য'। এই রক্ত দিয়ে হয়তো নতুন একটি ম্যামথ ক্লোন করা যাবে, কারন তরল রক্তে জীবিত কোষ থাকার সম্ভাবনা আছে। আর সেজন্যই তারা কোরিয়ার সিউলের একটি গবেষণাগারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন। কিন্তু সিউলের গবেষণাগারটির নামে খুব ভাল কথা বৈজ্ঞানিক মহলে ছড়ানো নেই। গবেষণাগারটি ২০০৪ সালে মানুষের ভ্রূণ স্টেম সেল তৈরি ভূয়া খবর দিয়েছিল। ফলে বিশ্বজুড়ে এই আবিষ্কার এবং এর ক্লোনিং এর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
আজকে লেখাটা এই আবিষ্কারের সম্ভাবনা নিয়েই আলোচনা। আগের লেখাটায় বলেছিলাম কি কি উপায়ে আমরা ম্যামথ ক্লোন করতে পারি। বলেছিলাম যে ম্যামথ ক্লোন করার সবচেয়ে সহজ উপায় হয় যদি ম্যামথের একটি জীবিত কোষ কোনভাবে পাওয়া যায়। স্পার্ম পাওয়া গেলে তো কথাই নেই। সেইজন্যই সম্প্রতি এই তরল রক্ত পাওয়াটা এত জরুরী একটি খবর। কিন্তু এই আবিষ্কারের সত্যতা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন। কেউই আসলে জানেনা ম্যামথটি থেকে পাওয়া এই অদ্ভুত তরল আসলেই রক্ত কিনা। বরফযুগের স্তন্যপায়ী বিশেষজ্ঞ রস ম্যাকফি বলছেন, " আমরা এই তরল বস্তুটিকে যাই বলেই ডাকিনা কেন, সেখান থেকে জীবিত কোষ পাওয়া গেলে সেটা হবে দারুন! আমি অপেক্ষা করছি আরেকটু এই নিয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্যের।" তবে খবরটা শুনে অনেক ডাকশাইটে জীববিজ্ঞানীই জীবিত কোষের সত্যিই উপস্থিতি থাকতে পারে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন।
আবিষ্কারটি নিয়ে একটা ব্যাপার এখানে বলে নেই। অনেকেই প্রশ্ন করছেন রক্ত কিভাবে -১৭ ডিগ্রী সেলশিয়াসে তরল থাকে, যেখানে আমাদের রক্ত জমাটা বেঁধে যায় -০.৬ সেঃ তাপমাত্রায়? এই বিষয়ে গ্রিগোরিভ বলছেন, "ম্যামথের রক্তে প্রাকৃতিক এন্টিফ্রিজ আছে।" এন্টিফ্রিজ হলো কোন রাসায়নিক বা প্রোটিন বা পেপটাইড যা কোষ বা জৈবিক অণুকে ঠান্ডায় জমাট বাঁধতে প্রতিরোধ করে। এদেরকে cryoprotectant ও বলে। ব্যাপারটা আসলে সত্যি হতেই পারে। আসলে ম্যামথের জেনোম বিন্যাস থেকে দেখা গেছে এর হিমোগ্লোবিন প্রোটিন (যা আমাদের দেহে অক্সিজেন পরিবহন করে) হাতির হিমোগ্লোবিন থেকে এমন ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে যে সেটা কম তাপমাত্রাতেও অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। এই অভিযোজন ম্যামথকে প্রচন্ড ঠান্ডায় বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছে। শুধু ম্যামথে নয়, শীতল পানিতে বেঁচে থাকা মাছের দেহে ঠান্ডায় বেঁচে থাকার উপায় হিসেবে এন্টিফ্রিজ প্রোটিনের ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
গ্রেগোরিভ বলছেন প্রাপ্ত রক্তের উপাত্তটি 'অমূল্য'। এই রক্ত দিয়ে হয়তো নতুন একটি ম্যামথ ক্লোন করা যাবে, কারন তরল রক্তে জীবিত কোষ থাকার সম্ভাবনা আছে। আর সেজন্যই তারা কোরিয়ার সিউলের একটি গবেষণাগারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন। কিন্তু সিউলের গবেষণাগারটির নামে খুব ভাল কথা বৈজ্ঞানিক মহলে ছড়ানো নেই। গবেষণাগারটি ২০০৪ সালে মানুষের ভ্রূণ স্টেম সেল তৈরি ভূয়া খবর দিয়েছিল। ফলে বিশ্বজুড়ে এই আবিষ্কার এবং এর ক্লোনিং এর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
আজকে লেখাটা এই আবিষ্কারের সম্ভাবনা নিয়েই আলোচনা। আগের লেখাটায় বলেছিলাম কি কি উপায়ে আমরা ম্যামথ ক্লোন করতে পারি। বলেছিলাম যে ম্যামথ ক্লোন করার সবচেয়ে সহজ উপায় হয় যদি ম্যামথের একটি জীবিত কোষ কোনভাবে পাওয়া যায়। স্পার্ম পাওয়া গেলে তো কথাই নেই। সেইজন্যই সম্প্রতি এই তরল রক্ত পাওয়াটা এত জরুরী একটি খবর। কিন্তু এই আবিষ্কারের সত্যতা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন। কেউই আসলে জানেনা ম্যামথটি থেকে পাওয়া এই অদ্ভুত তরল আসলেই রক্ত কিনা। বরফযুগের স্তন্যপায়ী বিশেষজ্ঞ রস ম্যাকফি বলছেন, " আমরা এই তরল বস্তুটিকে যাই বলেই ডাকিনা কেন, সেখান থেকে জীবিত কোষ পাওয়া গেলে সেটা হবে দারুন! আমি অপেক্ষা করছি আরেকটু এই নিয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্যের।" তবে খবরটা শুনে অনেক ডাকশাইটে জীববিজ্ঞানীই জীবিত কোষের সত্যিই উপস্থিতি থাকতে পারে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন।
আবিষ্কারটি নিয়ে একটা ব্যাপার এখানে বলে নেই। অনেকেই প্রশ্ন করছেন রক্ত কিভাবে -১৭ ডিগ্রী সেলশিয়াসে তরল থাকে, যেখানে আমাদের রক্ত জমাটা বেঁধে যায় -০.৬ সেঃ তাপমাত্রায়? এই বিষয়ে গ্রিগোরিভ বলছেন, "ম্যামথের রক্তে প্রাকৃতিক এন্টিফ্রিজ আছে।" এন্টিফ্রিজ হলো কোন রাসায়নিক বা প্রোটিন বা পেপটাইড যা কোষ বা জৈবিক অণুকে ঠান্ডায় জমাট বাঁধতে প্রতিরোধ করে। এদেরকে cryoprotectant ও বলে। ব্যাপারটা আসলে সত্যি হতেই পারে। আসলে ম্যামথের জেনোম বিন্যাস থেকে দেখা গেছে এর হিমোগ্লোবিন প্রোটিন (যা আমাদের দেহে অক্সিজেন পরিবহন করে) হাতির হিমোগ্লোবিন থেকে এমন ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে যে সেটা কম তাপমাত্রাতেও অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। এই অভিযোজন ম্যামথকে প্রচন্ড ঠান্ডায় বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছে। শুধু ম্যামথে নয়, শীতল পানিতে বেঁচে থাকা মাছের দেহে ঠান্ডায় বেঁচে থাকার উপায় হিসেবে এন্টিফ্রিজ প্রোটিনের ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
![]() |
ছবিঃ আবিষ্কৃত ম্যামথের দেহ থেকে পাওয়া রক্তের উপাত্ত |
কিন্তু প্রাপ্ত রক্তের উপাত্ত্বে জীবিত কোষ পাওয়া কতটা যৌক্তিক হতে পারে? জীব মারা যাওয়ার কিছু পরেই ডিএনএ ভাঙা শুরু হয়ে যায়। তাই প্রায় অক্ষত ম্যামথের দেহের কোষেও যেই ডিএনএ পাওয়া যাবে সেটাও হয়তো ভেঙে যাওয়া ডিএনএ। আবার এন্টিফ্রিজ রাসায়নিক এতদিন ধরে সত্যিই রক্তকে জমাটা বাঁধা থেকে বাঁচিয়ে রাখা কতটা সম্ভব? আর সেজন্যই মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যানিয়েল ফিশার মনে করছেন যে ডিএনএ পাওয়া যাবে সেটা মোটেই ক্লোনিং এর উপযুক্ত হবেনা।
কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেভিন ক্যাম্পবেল এর সঙ্গে আসলে গ্রিগোরিভের দলটি যোগাযোগ করেছিলেন এই আবিষ্কার নিয়ে। গ্রিগোরিভ নাকি ক্যাম্পবেলকে বলেছেন যে এই রক্ত জাদুঘরের -১৭ সেঃ তাপমাত্রাতেও জমে যায় নি! ক্যাম্পবেল ভাবছেন তিনি এই অদ্ভুত বিষয়টা নিয়ে কিছু পরীক্ষা করে দেখবেন। কারন ম্যামথের মত প্রাণীতে ঠান্ডায় জমাট প্রতিরোধী রাসায়নিক (cryoprotectant) এর উপস্থিতি খুবই বিরল বিষয় হবে। কিছু পোকা এবং মেরুদন্ডীর দেহে জমাট নিরোধী পেপটাইড (ছোট প্রোটিন) বা গ্লাইকোপ্রোটিন পাওয়া যাওয়া প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলছেন, "যদি ম্যামথের রক্তও একই রকম আচরণ করে তবে আমার জানামতে এটা হবে স্তন্যপায়ীদের মধ্যে একমাত্র উদাহরণ (যদিও মেরু অঞ্চলের ভূমি স্কোয়ারেল এর পেট চরম ঠান্ডা (-২.৯ সেঃ) পর্যন্ত যেতে পারে, তবে এর প্রক্রিয়া বুঝে ওঠা হয়নি এখনও।) যেকোন ভাবেই হোক না কেন, আমার জন্য চরমঠান্ডা রক্ত থাকতে পারাটা বিশ্বাস করাটা কঠিন। তবে কিভাবে রক্তের মত তরলটি -১৭ সেঃ এও তরল থাকে সেটা পরীক্ষা করে দেখা দাবী রাখে।"
এই নতুন ম্যামথ আবিষ্কার নিয়ে এবং এর উপর পরীক্ষাগুলি নিয়ে এখনও কোন বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়নি। আশা করছি বিজ্ঞানীর দ্রুতই আমাদের সামনে কিছু পরীক্ষালব্ধ উপাদান পেশ করবেন যা দিয়ে আসলেই এই রহস্যময় ম্যামথকে পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবো। বিশেষ করে রক্তের মত উপাদান গুলি আসলে কি, তার মধ্যে কি আছে বা আদৌ জীবিত কোষ আছে কিনা সেটা জানতে পারাটা দারুণ হবে। সত্যিই জীবিত কোষ পাওয়া গেলে হয়তো ম্যামথ ক্লোনিং এর স্বপ্ন বিজ্ঞানীরা আসলেই বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
লেখকঃ সজীব ওসমান।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেভিন ক্যাম্পবেল এর সঙ্গে আসলে গ্রিগোরিভের দলটি যোগাযোগ করেছিলেন এই আবিষ্কার নিয়ে। গ্রিগোরিভ নাকি ক্যাম্পবেলকে বলেছেন যে এই রক্ত জাদুঘরের -১৭ সেঃ তাপমাত্রাতেও জমে যায় নি! ক্যাম্পবেল ভাবছেন তিনি এই অদ্ভুত বিষয়টা নিয়ে কিছু পরীক্ষা করে দেখবেন। কারন ম্যামথের মত প্রাণীতে ঠান্ডায় জমাট প্রতিরোধী রাসায়নিক (cryoprotectant) এর উপস্থিতি খুবই বিরল বিষয় হবে। কিছু পোকা এবং মেরুদন্ডীর দেহে জমাট নিরোধী পেপটাইড (ছোট প্রোটিন) বা গ্লাইকোপ্রোটিন পাওয়া যাওয়া প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলছেন, "যদি ম্যামথের রক্তও একই রকম আচরণ করে তবে আমার জানামতে এটা হবে স্তন্যপায়ীদের মধ্যে একমাত্র উদাহরণ (যদিও মেরু অঞ্চলের ভূমি স্কোয়ারেল এর পেট চরম ঠান্ডা (-২.৯ সেঃ) পর্যন্ত যেতে পারে, তবে এর প্রক্রিয়া বুঝে ওঠা হয়নি এখনও।) যেকোন ভাবেই হোক না কেন, আমার জন্য চরমঠান্ডা রক্ত থাকতে পারাটা বিশ্বাস করাটা কঠিন। তবে কিভাবে রক্তের মত তরলটি -১৭ সেঃ এও তরল থাকে সেটা পরীক্ষা করে দেখা দাবী রাখে।"
এই নতুন ম্যামথ আবিষ্কার নিয়ে এবং এর উপর পরীক্ষাগুলি নিয়ে এখনও কোন বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়নি। আশা করছি বিজ্ঞানীর দ্রুতই আমাদের সামনে কিছু পরীক্ষালব্ধ উপাদান পেশ করবেন যা দিয়ে আসলেই এই রহস্যময় ম্যামথকে পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবো। বিশেষ করে রক্তের মত উপাদান গুলি আসলে কি, তার মধ্যে কি আছে বা আদৌ জীবিত কোষ আছে কিনা সেটা জানতে পারাটা দারুণ হবে। সত্যিই জীবিত কোষ পাওয়া গেলে হয়তো ম্যামথ ক্লোনিং এর স্বপ্ন বিজ্ঞানীরা আসলেই বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
লেখকঃ সজীব ওসমান।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন