বিস্ময়কর পাথর


যদি আপনি একটি পাথরের গায়ে আঘাত করেন, তবে ‘ধুপ-ধাপ’ জাতীয় শব্দ শুনবেন। এ শব্দ একেবারেই নিষ্প্রাণ ও একঘেয়ে। কিন্তু নিশ্চয়ই এরকম হয় না যে, আপনি পাথরে আঘাত করার সাথে সাথে বাজনা বেজে উঠলো! প্রিয় পাঠক, হ্যাঁ এরকম পাথরও আছে!

রিংগিং রক কাউন্টি পার্ক, পেনসিলভিনিয়া। এখানে ১২৮ একরের এই পার্কের অন্তত ৭-৮ একর জুড়ে ছড়িয়ে আছে এই বিশেষ ধরণের পাথর। যাদেরকে আপনি আঘাত করলেই বেজে উঠবে বাজনা। এ পাথর গুলোতে যদি কোনো হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয় তবে ঝনঝন করে আওয়াজ হয়। ঠিক যেমনটা হয় কোনো ধাতুর তৈরি জিনিসে আঘাত করা হলে। আমেরিকার আদিবাসীরা বহু প্রাচীনকাল থেকেই এ পাথরগুলো সম্পর্কে জানতো। এরপর যখন শ্বেতাঙ্গ বসতি স্থাপনকারীরা আমেরিকাতে আসে, তখন তারা আদিবাসীদের কাছে এ পাথরগুলো সম্পর্কে জানতে পারে।


গুগল ম্যাপে রিংগিং রক কাউন্টি পার্কে পাথর গুলির অবস্থান

পাথরগুলোতে আঘাতের ফলে সৃষ্ট শব্দ এতোটাই চমকপ্রদ যে, আপনার কিছু সময়ের জন্য মনে হবে এ পাথর গুলো কি আসলেই পাথর কিনা! পাথরে সৃষ্ট শব্দ ধাতুর ঝনঝনানির মতো। এ অদ্ভুতুড়ে ঘটনা বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানী ও ভূতত্ত্ববিদদেরকে ধাঁধার মাঝে ফেলে রেখেছে। রহস্য উন্মোচনের জন্য বহু গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। ১৯৬৫ সালে পেনসিলভিনিয়ার একজন গবেষক রিচার্ড ফ্যাস এ পাথর গুলো নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তিনি দেখেন একক ভাবে এ পাথর গুলো খুবই নিম্ন কম্পাঙ্কের শব্দ তৈরি করে, যা কানে শোনা যায় না। কিন্তু যখন এদের অনেক গুলো পাথরকে এক সাথে আঘাত করা হয়, তখনো শব্দ আমাদের কানে ধরা দেয়।


রিচার্ড পাথরে সৃষ্ট শব্দের প্রকৃতি নির্ণয় করতে পেরেছিলেন, কিন্তু এটা কীভাবে তৈরি হয় সেটা বুঝতে পারেন নি। এ পাথর গুলো আগ্নেয়গিরি থেকে সৃষ্ট পদার্থ দিয়ে তৈরি। আর সব পাথরের মতো এসব পাথরেও রয়েছে লোহা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ। কিন্তু ‘কিছু একটা’ এসব পাথরে রয়েছে যে কারণে এরা আলাদা। কিছু বিজ্ঞানীর ধারণা পাথর গুলোর অভ্যন্তরীণ চাপের কারণ এ অস্বাভাবিক শব্দ তৈরি হয়। তবে শুধু শব্দের জন্যই নয়। আরো কিছু কারণে এ পাথর গুলো উদ্ভট। এ পাথরগুলো পর্বতের বরফ ধসের ফলে তৈরি হয়েছে বলে অনুমান করেন অনেকে। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, এ বিস্তীর্ণ প্রান্তরের অবস্থান একটি পাহাড়ের উপরে, পাদদেশে নয়। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, এ পাথরগুলো পাহাড় ধসের ফলে তৈরি হয় নি। তাহলে এ রহস্যময় পাথর গুলো এখানে এলো কীভাবে?

এছাড়া যেসব জায়গায় এ পাথর গুলো রয়েছে, সেখানে কোনো ধরণের গাছ পর্যন্ত জন্মায় না, কোনো পোকা-মাকড়ও দেখা যায় না। শুধু তাই নয়, আশেপাশে বনভূমি থেকে এখানে তাপমাত্রাও অনেক বেশি, অনেকে দাবি করেছেন এখানে ক্যাম্পাসও কাজ করে না। যদিও এখানে কোনো ধরণের তেজস্ক্রিয়তা কিংবা তড়িৎ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের অদ্ভুতুড়ে আচরণের প্রমাণ পাওয়া যায় নি।

তাহলে এবার চলুন এই পাথরের উপর আঘাত করলে কেমন শব্দ হয় তা দেখে নেই,



লেখকঃ জুলকারনাইন মেহেদী।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info