বিশ্বের ভয়ংকরতম নরপিশাচদের গল্প (পর্বঃ ০১)

সাধারনত সিনেমা গল্পতেই দেখা পাই এইসব নরপিশাচদের। যারা অবলীলায় করে যায় ভয়ংকর হিংস্র সব কাজ। যা আমাদের ভাবনা চিন্তারও বাইরে। সত্যি বলতে আমাদের চিন্তার শেষ যেখানে ঠিক সেখান থেকেই এদের চিন্তার শুরু। আর বাস্তবতার কাছে মানুষের কল্পনাও হার মানে। বাস্তব দুনিয়াতেই ছিল এমন কিছু নরপিশাচ তুল্য সিরিয়াল কিলার। তাদের নিয়েই মুলত এই লেখা।


গ্যালো দে রেইস (১৪০৪-১৪৪০) একজন ফরাসি নাইট। তৎকালীন সময়ে ফরাসি সমাজের উপর তলার লোক ছিল সে। মুলত তাকেই ধরা হয় সিরিয়াল কিলার দের প্রথম পথ প্রদর্শক হিসেবে। জোয়ান অফ আর্কের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন ছিল সে। তাকে মুলত দায়ী করা হয় ধর্ষণ, নির্যাতন, সমকামীতা এবং কম করে হলেও কয়েক ডজন হত্যার জন্য। তার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া শিকারদের কাছ থেকে জানা যায় তার অপরাধের বর্ণনা, গ্যালো প্রথমে কিশোরদের বিশেষ করে নীল চোখ বিশিষ্ট কিশোরদের প্রলুব্ধ করে তার প্রাসাদে নিয়ে যেত। তারপর সেখানে নিয়ে ধর্ষণ, বিভিন্য অঙ্গহানি সহ নানা রকমের নির্যাতন চালাত। এমনকি তার বিরুদ্ধে শিকারের মৃতপ্রায় দেহ দেখে হস্তমৈথুনে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়।

তারপর কিশোরটি মারা গেলে, সে এবং তার সহকারী কিশোরটির মাথা কেটে নিয়ে অন্যান্য মাথার সাথে তুলনা করে দেখত কোনটা সব চেয়ে বেশি সুন্দর। তার সঠিক খুনের সংখ্যা যদিও জানা যায়নি কারন বেশির ভাগ শিকারের শরীরই পুড়ে বা মাটিতে পুতে ফেলা হয়েছিল। সাধারনত তার খুনের সংখ্যা ধরা হয় ৮০ থেকে ২০০, কারো কারো মতে সংখ্যাটা প্রায় ৬০০ এর কাছাকাছি। তার প্রত্যেকটা ভিক্টিমের বয়স থাকত সাধারণত ৬ থেকে ৮ বছর। যদিও তার প্রথম পছন্দ ছিল ছেলেদের কিন্তু প্রয়োজনে মেয়েদেরও সে নির্যাতন করত।

এক প্রতিলিপিতে তার কর্মচারী হেনরি তার মালিকের অপরাধের বর্ণনা দিয়েছে অনেকটা এভাবে, হিনরি তার কর্তার জন্য ১৪৩৫ সালের দিকে কিশোর শিকার করতে শুরু করে, সে তার শিকারকে প্রলুব্ধ করে গ্যালোর বাড়িতে নিয়ে আসত এবং যখন তাদের নির্যাতন করা হত তখনও সে সেখানে উপস্থিত থাকত। বেশিরভাগ সময়েই বাচ্চাদের নির্যাতন করার ভার পড়ত হেনরি এর উপর। গ্যালো সেই সব বাচ্চাদের ভয়ে আর যন্ত্রনায় কুকড়ে যাওয়া চেহারা দেখে মজা নিত। তার আর একটা প্রিয় কাজ ছিল ওই সব বাচ্চাদের রক্তে গোসল করা। এজন্য ওই সব বাচ্চাদের জুগুলার ধমনি কেটে দেয়া হত যাতে শরীর থেকে ছিটকে বেড়ান রক্তে তার গোসল হয়! যখন সব শেষ হয়ে যেত, বাচ্চাটা ঢলে পড়ত মৃত্যুর কোলে তখন গ্যালোর মন ভরে উঠত তিব্র অনুশোচনায়। সাথে সাথে বিছানায় প্রার্থনায় বসে যেত সে, যতক্ষন না তার কর্মচারী সব কিছু সাফ সুতরা করত ততক্ষণ সে তার প্রার্থনা চালিয়ে যেত। তারপর তার কর্মচারী বিশাল একটা চুলা জ্বালিয়ে তার মধ্যে বাচ্চাটি এবং তার সমস্ত জিনিসপত্র পুড়িয়ে দিত। এভাবেই একের পর এক চলতে থাকত মৃত্যুলীলা।

অবশেষে ধরা পরে গ্যালো। ১৪৪০ সালের ২৫ অক্টোবর সে তার জবানবন্দীতে তার সব দোষ স্বীকার করে এবং নটরডেম এর চার্চের পাশে কবর দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। ২৬ অক্টোবর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। প্রথমে তাকে ফাঁসিতে ঝুলান হয়, তারপর তার মাথাটা তার শরির থেকে আলাদা করে ফেলা হয়। তারপর সেটাকে আগুনে পোড়ানো হয়। তার কর্মচারী হেনরির ভাগ্যেও একি পরিণতি জোটে।

সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info
জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info