সবাই ভাবে এই পুরুষতান্তিক সমাজে নারীর কোন ক্ষমতা নাই তাই নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে চলছে ব্যাপক তোড়জোড়। প্রাচীন কালে নারীরা কতটা অবহেলিত ছিল সেটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু এতসবের পরও কিছু কিছু নারীরা ছিল ব্যাপক ক্ষমতাশালী। আমি সেই সমস্থ ক্ষমতাশালী নারীদের মধ্য থেকে সেরা ১০ জন নারীর পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করব। আমার দৃষ্টিতে যারা সেরা।
১০) একুইটাইনের ইলিনরঃ (জন্মঃ ১১২২ খ্রিষ্টাব্দ, মৃত্যুঃ ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ)
ইলিনর ছিলেন উচ্চ মধ্য যুগের সময়কার ইউরোপ তথা পৃথিবীতে সবচেয়ে ধনী এবং ক্ষমতাশালী নারী। তার পিতার মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতায় বসেন যখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। দ্বাদশ শতাব্দীতে একুইটাইন ছিল ফ্রান্স এর সবচেয়ে সম্পদশালী এবং বড় প্রদেশ। ইলিনর সেই মধ্য যুগের নারীদের মত অশিক্ষিত ছিলেন না। তিনি এবং তার পরিবারের সবাই সুশিক্ষিত ছিলেন। ফ্রান্স এর রাজা লুইস VI এর সাথে ১১৩৭ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি ফ্রান্স এর রানী হন।তিনি ১১৪৭ সালে দ্বিতীয় ক্রুসেডে অংশগ্রহণ করেন তার স্বামীর সাথে। ইলিনর ছিলেন ঐ সময়কার ব্যবসা বাণিজ্য উন্নয়নের প্রতীক।
০৯) হ্যাটসহেপসুটঃ (জন্মঃ ১৫০৮ খ্রীষ্টপূর্ব, মৃত্যুঃ ১৪৫৮ খ্রীষ্টপূর্ব)
হ্যাটসহেপসুট ছিলেন প্রাচীন পৃথিবীর একজন অন্যতম ক্ষমতাশালী নারী। তিনি মিশরীয় সাম্রাজ্যের পঞ্চম ফারাও এবং তিনি মিশরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা মহিলা। তার সময়কালে তিনি মিশরে অবকাঠামো গত উন্নয়নে হাত দেন এবং ব্যবসা বাণিজ্য বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।
০৮) অষ্ট্রিয়ার মারিয়া থেরেসাঃ (জন্মঃ ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দ, মৃত্যুঃ ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দ)
তিনি ১৭৬৫ সালে মধ্য ইউরোপে ক্ষমতায় আসেন। তিনি ছিলেন প্রগতিশীল নারী। তিনি তার সময়কালে তার সাম্রাজ্যে অর্থনীতিতে এবং রাজনিতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। তিনি তার সৈন্য বাহিনিকে ২০০% বৃদ্ধি করেন এবং দি'গুন পরিমান কর আদায় করতে সক্ষম হন। তিনি শিক্ষা বিস্তারে সুদুর প্রসারী ভূমিকা রাখেন। সে লক্ষে তিনি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন।
০৭) সম্রাজ্ঞী থিওডোরাঃ (জন্মঃ ৫০০ খ্রীষ্টাব্দ, মৃত্যুঃ ৫৪৮ খ্রীষ্টাব্দ)
মধ্য যুগের গোড়ার দিকে থিওডোরা ছিলেন একজন প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাশালী নারী। তিনি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য যৌথ ভাবে তার স্বামীর সাথে শাসন করতেন। রাজ্যের বেশির ভাগ কাজ হত তার আদেশে। তিনিই সম্ভবত সর্বপ্রথম নারীর অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। তিনি অনেক চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন।সাথে সাথে তিনি একজন ভাল অভিনেত্রীও ছিলেন।
০৬) সম্রাজ্ঞী ওয়ু জেতিয়ানঃ (জন্মঃ ৬২৫ খীষ্টাব্দ, মৃত্যুঃ ৭০৫ খীষ্টাব্দ)
সম্রাজ্ঞী ওয়ু জেতিয়ান চীনা ইতিহাসে একজন অন্যতম সেরা ক্ষমতাশালী নারী। তিনি ট্যাং সাম্রাজ্যের সময় জন্ম গ্রহণ করেন এক ধনী এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তিনিই একমাত্র চীনা নারী যিনি সম্রাট হিসাবে চীন শাসন করেছেন।
০৫। ইসাবেলা ১: (জন্মঃ ১৪৫১ খ্রিষ্টাব্দ, মৃত্যুঃ ১৫০৪ খ্রিষ্টাব্দ)
ইসাবেলা ১ কে ধরা হয় স্পেনের ইতিহাসে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারী যদিও এ বিষয়ে বিতর্ক আছে। তিনি ক্রিস্টফার কলম্বাসের সমুদ্র যাত্রায় পৃষ্ঠপোষকতাকারী হিসাবে স্মরণীয়। তিনি তার স্বামীর সাথে যৌথ ভাবে স্পেন শাসন করতেন। বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত তিনিই নিতেন।
০৪) ইংল্যান্ডের এলিজাবেদ ১: (জন্মঃ ১৫৩৩ সালে, মৃত্যুঃ ১৬০৩ সালে)
এলিজাবেদ ১ হলেন সত্যিকারে প্রথম মুকুটধারী রানী যিনি সফলতার সাথে শাসন করেছেন পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করে। তিনি বিবাহ করেন নাই। তাই তাকে কুমারী রানী বলা হয়। ইংল্যান্ডে রেনেসাঁ আনয়নকারী হিসাবে তিনি সবচেয়ে বেশি স্মরণীয়। মূলত তার হাত ধরেই ইংল্যান্ডে রেনেসাঁ আসে।
০৩) সম্রাজ্ঞী দোয়াগার সিজিঃ (জন্মঃ ১৮৩৫ সালে, মৃত্যুঃ ১৯০৮ সালে)
সম্রাজ্ঞী দোয়াগার সিজি সম্ভবত ওয়ু জেতিয়ান এর চেয়েও বেশি ক্ষমতাশালী ছিলেন। তিনি ছিলেন উচ্চাখাংখী এবং রক্ষণশীল নেতা। তিনি বিদেশি প্রভাব মেনে নেন নি।
০২) রাশিয়ার কাথেরিন ২: (জন্মঃ ১৭২৯ সালে, মৃত্যুঃ ১৭৯৬ সালে)
কাথেরিন ২ আসলে "কাথেরিন দ্যা গ্রেট" নামে পরিচিত। তিনি পুরো রাশিয়া শাসন করেছেন টানা ৩৪ বছর ধরে আর ভৌগলিক দিক দিয়ে রাশিয়াই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশ। ৩৪ বছর রাশিয়াকে সফল্ভাবে শাসন করার জন্য উনাকে আমি দ্বিতীয় স্থানে রেখেছি।
০১) রানী ভিক্টোরিয়াঃ (জন্মঃ ১৮১৯, মৃত্যুঃ ১৯০১)
ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারীর তালিকায় তাকে আমি ১ নম্বরে রেখেছি কারন তিনি শুধুমাত্র ইংল্যান্ড শাসন করেছেন এজন্য নয় তিনি পুরো পৃথিবী শাসন করেছেন। ছয়টি মহাদেশই তার শাসনে ছিল। তার সাম্রাজ্য ছিল ১৪.২ মিলিয়ন বর্গ মাইল। তার শাসনামলে ৪০০ থেকে ৪৫৮ মিলিয়ন মানুষ তার সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল।
লেখকঃ অকুল পাথার।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।