৮ জন ব্যাক্তি যাদের বসবাদ মৃত আত্মীয়দের সাথে (শেষ পর্ব)


প্রকৃতির নিয়মেই মানুষ জন্মগ্রহন করে আর যে জন্মে তার জন্য মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যু আমাদের জীবনের এমন এক নির্মম সত্য। যা আমাদের আলাদা করে দেয় বহু বছরের চির চেনা মানুষদের কাছ থেকে। মৃত মানুষের দেহ ধর্ম ও জাতী বিশেষে আমরা বিভিন্ন উপায়ে অন্তষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকি। অন্তষ্টিক্রিয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে এর আগে "১০টি উদ্ভট অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া (১ম পর্ব এবং ২য় পর্ব)" লেখায় বিস্তর আলোচনা করেছিলাম।

আজ আপনাদের এমন ৮ জন ব্যাক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিব যারা তাদের আপন জনদের এতটাই বেশি ভালবাসতেন যে মৃত্যুর পরেও তাদের মৃতদেহকে নিজের থেকে দূরে চলে যেতে দেননি। বরং তারা বসবাস করা শুরু করেছিল তাদের আত্মীয়দের মৃত দেহর সাথে। চলুন তাহলে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই তাদের সাথে।


স্বামীর পচে যাওয়া লাশের সাথে বসবাসঃ
বেলজিয়ামের অধিবাসি ৭৯ বছর বয়স্ক "Marcel H" মারা যান ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে, হাঁপানি রোগের কারনে। তার স্ত্রী এতে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে যান যে সে তার মৃত স্বামীর সাথে বসবাস এবং ঘুমাতে শুরু করেন। তার স্বামীর মৃত্যুর প্রায় এক বছর পরে তারা যে ফ্লাটে থাকতেন তার মালিক পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন যে তার ভাড়াটিয়া প্রায় এক বছর যাবত তাকে ভাড়া পরিশোধ করছে না। অবশেষে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আসলে ২০১৩ এর নভেম্বর মাসে Marcel H এর পচে যাওয়া লাশ আবিস্কার করেন। সব থেকে অবাক করার বিষয় লাশ পচে যাওয়ার গন্ধো নিয়ে কারো কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।


প্রায় এক দশক মৃত মায়ের সাথেঃ
আর্জেন্টিনার রাজধানির একটি আবাসিক এলাকা থেকে পুলিশের কাছে কয়েক জনের কাছ থেকে অভিযোগ আসে যে তাদের এলাকায় বিশ্রী পচা গন্ধে ভরে গেছে। আর এই অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখতে তারা হাজির হয়। আর গন্ধের উৎস খুঁজতে খুঁজতে তারা হাজির হয় ৫৮ বছর বয়স্ক Claudio Alferi এর বাড়ি। তারা দরজা খোলা পেয়ে ভিতরে ঢুকে দেখে যে মৃত Claudio Alferi সোফার উপর শুয়ে আছে আর তার পাশে চেয়ারে বসা পলিথিনে মোড়ানো মানুষের পচে যাওয়া লাশ। পরে ময়না তদন্তে বেড়িয়ে আসে পচে যাওয়া লাশটি Claudio Alferi এর মা Margarita Aimer de Alferi। এক জন বয়স্ক প্রতিবেশি জানান যে Margarita Aimer de Alferi সে প্রায় দশ বছর আগে জীবিত দেখেছিলেন যখন তার বয়স ছিল ৯০, কিন্তু Claudio Alferi সবাইকে বলতেন যে তার মা বেঁচে আছে আর বয়সের কারনে বিছানা ছেড়ে বাইরে আসতে পারছেন না।


মৃত স্ত্রীর সাথে জীবিতদের মত আচারনঃ
মালয়শিয়ার একজন রাজ মিস্ত্রির বৌ ৪২ বছর বয়সে মারা যাবার পর তার স্বামী তাকে ৩৫ দিন স্বযত্নে আগলে রাখে, এবং মৃত স্ত্রীর সাথে এমন ভাবে ব্যাবহার করতে থাকেন যেন তার স্ত্রী এখনও বেঁচে আছে। Lim Ah Tee, ৪২ বছর বয়সে হৃদ যন্ত্রক্রিয়া বন্ধো হয়ে মারা যান। কিন্তু জীবন সংগীকে হারাবার সত্যতা হয়ত মেনে নিতে না পেরে মৃত স্ত্রীর সাথে সাভাবিক ভাবেই কথা বলতে থাকেন তিনি। পুলিশের ভাষ্য মতে তাদের ১৬ বছরের ছেলে এই বিষয়ে জানত। কিন্তু সে তার বাবাকে কিছু বলত না, কেননা সে চেয়েছিল সে যেন নিজ থেকেই বোঝে। এমন কি এই সময়ের মধ্যে আত্মীয়রা কেউ ফোন দিয়ে তার স্ত্রীর কথা জিজ্ঞাসা করলে বিভিন্ন কথা বলে এড়িয়ে যেত। শেষমেশ ৩৫ দিন পরে Lim Ah Tee এর স্বামী পুলিশকে ফোন দিয়ে স্ত্রীর মৃত্যুর কথা জানান। পুলিশ যখন আসে তখন তারা দেখতে পারে যে লাশের গায়ে সম্পূর্ন ধোঁয়া কাপড় পরানো। প্রায় প্রতিদিন Lim Ah Tee এর স্বামী তার কাপড় পাল্টে দিতেন আর রুমেও তেমন কোন লাশ পচা গন্ধো নেই কেননা চারিদিকে সুগন্ধি ছড়িয়ে রূমকে দূর্গন্ধো মুক্ত রাখা হয়েছে। আর রূমটাও একদম ঝকঝকে করে গুছানো।


অর্থের লোভে মৃত পিতার সাথে পাঁচ মাসঃ
২০১০ এর ৩১শে অক্টোবর, Penwortham, Lancashire অঞ্চলে, ৫৪ বছর বয়স্ক Guy Blackburn প্রকৃতিক কারনেই মারা যান, কিন্তু তার সন্তান ২৯ বছর বয়স্ক Christopher Blackburn পিতার শেয়ারের লাভ নিজের করে পাবার জন্য তার পিতার মৃত্যুর খবর চেপে যান। এসময় তাদের সাথে বসবাসরত Christopher Blackburn এর ১০ বছরের মেয়ে দাদার কথা জানতে চাইলে সে বলে যে দাদা ঘুমিয়ে আছে। এভাবেই সে লুফে নেয় পিতার পাওনা অর্থ। অন্নান্য আত্মীয়রা Christopher Blackburn এ সন্দেহজনক আচারন এবং Guy Blackburn এর কোন খোঁজ না পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। অবশেষে ২০১১ সালের মার্চে পুলিশ আবিস্কার করে পাঁচ মাসে আগে মারা যাওয়া Guy Blackburn এর মৃত দেহ। Christopher Blackburn কে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং মৃতদেহর সৎকার না করার অভিযোগে এবং £১৮৬৯ ইউরো চুলির দায়ে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info