পুনর্জন্ম (১ম পর্ব) ।। Reincarnation (1st Part)


আচ্ছা একজন মানুষ এ পৃথিবীতে কতবার জন্ম নেয়? পুনর্জন্ম কি সত্য? অনেক ধর্ম বিশ্বাসে পুনর্জন্ম লাভের কথা রয়েছে। মানুষ কি তার অতীত জন্মের কথা মনে রাখতে পারে? আজকে আমরা সেরকমই কিছু ঘটনার কথা জানবো। বেশির ভাগ ঘটনার কোন যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা নেই। তো শুরু করা যাক।


hybridknowledge.info hybridknowledge.info

০১) এডওয়ার্ড অস্ট্রিয়ানঃ
প্যাট্রিসিয়া অস্ট্রিয়ানের ৪ বছরের ছেলে এডওয়ার্ডের খুব অদ্ভুত ফোবিয়া বা ভীতি ছিল, সেটা হচ্ছে সে মেঘলা দিন গুলোকে ভয় পেত। এক সময় সে বলতে শুরু করে যে তার গলার ভেতরে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। সে প্রায়ই বলতো, তার গলার ভেতরে গুলিটা রয়ে গিয়েছে। সে প্রায়ই তার মাকে তার অতীত জীবনের কথা বলতো। সে বলতো সে ১ম বিশ্বযুদ্ধে একজন সৈনিক ছিল ও তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। সে ঘটনা গুলোর এত নিখুঁত বর্ণনা দেয় যে তা অবিশ্বাস করার মতো উপায় ছিল না। তাকে চিকিৎসকদের কাছে নেয়া হলে চিকিৎসকরা প্রথমে কিছুই খুঁজে পান নাই। এরপর তার গলার টনসিল অপারেশন করা হয়। এরপরেই তার গলার ভেতরে অত্যন্ত রহস্যময় ধরণের ‘সিস্ট’ বা ফোসকার মত একটি জিনিস দেখা যায়। চিকিৎসকরা বুঝতে পারছিলেন না কিভাবে এটাকে দূর করা যাবে। এদিকে এডওয়ার্ড তার বাবা-মা কে বলতে থাকে তার পূর্ব জন্মের বিভিন্ন ঘটনা। একদিন হঠাৎ করেই ফোসকাটি মিলিয়ে যায় ও চিকিৎসকরা এর কোন কারণই বের করতে পারেন নাই।


০২) দাদা যখন নাতি কিংবা নাতি যখন দাদাঃ
শিশুটির নাম গাস টেইলর। মাত্র ১৮ মাস বছরে সে বলতে শুরু করে যে পূর্ব জন্মে সে ছিল নিজেরই দাদা। ছোট বাচ্চারা অনেক সময়ই নিজেদের চিনতে পারে না, কিন্তু এক্ষেত্রে ঘটনা ভিন্ন। গাসের জন্মের এক বছর আগে তারা দাদা মারা যান। ছোট শিশুটির দৃঢ বিশ্বাস ছিল সে এবং তার মৃত দাদা একই ব্যক্তি। যখন তাকে কোন পারিবারিক ছবি দেখানো হত, কেউ চিনিয়ে না দিলেও সে ছবি গুলোতে তার দাদাকে চিনতে পারতো, যদিও ছবি গুলোতে হয়তো আরো বয়স্ক মানুষ ছিলেন। ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করে যখন গাস এমন সব পারিবারিক গোপন ঘটনা নিয়ে কথা বলে যেটা তার জানার কথা নয় বা এর আগে কেউ সেটা নিয়ে তার সাথে কথাও বলে নি। গাসের দাদার নাম ছিল অজি (Augie)। অজির বোনকে খুন করা হয় ও স্যান ফ্র্যান্সিস্কো উপসাগরে ফেলে দেয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা হতবাক হয়ে গেল যখন তারা দেখল যে, ৪ বছর বয়সের গাস সেই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বলছে ও খুন হওয়া মেয়েটিকে নিজের ‘বোন’ বলে পরিচয় দিচ্ছে। গাস বলে সে আসলে অজি, যাকে ঈশ্বর মৃত্যুর পর একটি টিকেট দিয়েছেন যেটা দিয়ে তিনি একটি হোল বা গর্তের মাঝ দিয়ে পরজন্মে উপস্থিত হয়েছেন।


০৩) ইমাদ এলাওয়ারঃ
লেবাননের ৫ বছর বয়সী ইমাদ এলাওয়ার হঠাৎ করেই তার পূর্ব জীবন নিয়ে বলতে শুরু করে। সে জীবনে সে নাকি তাদের পাশের গ্রামে বাস করতো। সে যখন কথা বলতে শুরু করে তখন প্রথম দুটি শব্দ ছিল ‘মাহমুদ’ ও ‘জামিলেহ’। দুই বছর বয়সে সে যখন হাঁটতে শুরু করে তখন সে রাস্তায় বের হয়ে অপরিচিত পথচারীদের আটকে বলতো, “আমরা বন্ধু ছিলাম, আমাকে চিনতে পারছো না!?” সে এরকম ৫৫ টি ঘটনার কথা বলে যেগুলো সে দাবি করে যে তার পূর্ব জন্মে ঘটেছিল। ডক্টর ইয়ান স্টিভেনসন ইমাদ ও তার বাবা-মা’র সাথে কথা বলেন, শুরু করেন ঘটনার তদন্ত। ইমাদ, তার বাবা-মা ও স্টিভেনসন সেই গ্রামে গেলেন যেটা নিয়ে ইমাদ আগে কথা বলেছিল। সে বাড়িটি খুঁজে পাওয়া গেল যেটা কিনা ইমাদের দাবি অনুসারে তার পূর্ব জন্মের বাসস্থান ছিল। এরকম ১৩ টি নিদর্শন পাওয়া গেল যেগুলো নির্ভূল বলে প্রমাণিত হলো। ইমাদ ঐ বাড়িতে পাওয়া বিভিন্ন ছবি দেখে তার পূর্ব জন্মের চাচা মাহমুদ ও প্রেমিকা জামিলেহকে চিনতে পারে। যাই হোক, ইমাদের দাবি করা ৫৭ টি দাবির মাঝে ৫১ টি প্রমাণিত হয়।


০৪) স্টিভ জবসঃ
স্টিভ জবসের মৃত্যুর পর অ্যাপল’র একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার টনি সিউং থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি দলের কাছে একটি ইমেইল পাঠালেন এটা জানতে চেয়ে যে মৃত্যুর পর স্টিভ জবস কেমন আছেন এবং অত্যন্ত অস্বাভাবিক ভাবে সেই ইমেইলের উত্তরও পেয়ে যান তিনি। এতে লেখা হয়, মৃত্যুর পর জবস এখন স্বর্গের একজন দার্শনিক ও ক্যালিফোর্নিয়ায় অ্যাপল হেডকোয়ার্টারের ঠিক উপরেই স্বর্গে একটি কাচের প্রাসাদে তিনি বসবাস করছেন। মালয়েশিয়াতে জবসের ভক্তরা তার মৃত্যুর পর এক অদ্ভুত অনুষ্ঠান পালন করেন। তারা প্রত্যেকেই একটি একটি আপেল নিয়ে তাতে এক কামড় দেন ও বাকি আপেলটুকু সজোরে নিক্ষেপ করেন সমুদ্রে। তাদের বিশ্বাস ছিল এর ফলে জবসের পুনর্জীবন লাভ দ্রুত হবে। ধাম্মাকায়া মন্দিরের পুরোহিত 'Phra Chaibul Dhammajayo' নিশ্চিত যে জবস পুনর্জন্ম নিয়েছেন ও শিল্প-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর আগ্রহ আছে। শুধু তাই নয়, এটাও বলা হয় তাঁর অনুসারীদের সাথে তিনি বিশেষ ব্যবস্থায় যোগাযোগ করেন!

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।