ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণবিবর নিয়ে আমাদের জল্পনা কল্পনার কোনো শেষ নেই। এমনই রহস্যময় এই কৃষ্ণবিবর। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে দেখা যায়, কৃষ্ণবিবর বা ব্ল্যাকহোল হচ্ছে মহাকাশের এমন একটি জায়গা যেখানে পদার্থের ঘনত্ব খুবই বেশি এবং মাধ্যাকর্ষণ বল এতোই বেশি যে কোনো কিছুই, এমনকি আলোও, এর আওতা থেকে পালাতে পারে না। চিন্তা করেন একবার, এমনই এর শক্তি যে আলোর মতো শক্তিও এর কাছে তুচ্ছ। অ্যালিস যদি এই ওয়ান্ডারল্যান্ডে ঘুরতে যেতো তাহলে সে নিজেকে এখানের লুকানো ভরের কারণে সৃষ্ট শূন্যতায় দেখতে পেতো আর এখানকার স্থান কাল যে অদ্ভুত আচরণ করে সেটাও পর্যবেক্ষণ করতে পারতো। কিন্তু সে যা দেখেছে সেটা আর ফিরে এসে বলতে পারতো না। মোদ্দা কথা হলো, ব্ল্যাকহোল থেকে কোনো কিছুই ফিরে আসে না। একবার ঢুকলে তার আর কোনো অস্তিত্ব থাকে না।


তবে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে বলা হয়, ব্ল্যাকহোল দেখতে পাওয়া যায় না। তবে প্রমাণের মাধ্যমে এর অস্তিত্ত্ব বোঝা যায়। এর প্রচণ্ড রকম ভরের কারণে চারপাশের পদার্থগুলোকে শুষে নেয়ার ফলে এর চারপাশে ঘূর্ণাবর্তা সৃষ্টি হয়। তিন দশক ধরে বিভিন্ন তত্ত্ব দেয়ার পরে আর বিভিন্ন ভাবে খোঁজাখুজির পরে সবচাইতে সন্দেহপ্রবণ জ্যোতির্পদার্থবিদ সহ সবাই ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ত্ব নিশ্চিত করেছে।
বিজ্ঞানীরা এমনও প্রমাণ পাচ্ছেন যে প্রায় সব গ্যালাক্সির কেন্দ্রভাগেই প্রচণ্ড ভরসম্পন্ন এই কৃষ্ণবিবরগুলো রয়েছে। আর এই কৃষ্ণবিবরগুলোর ভর তাদের গ্যালাক্সিগুলোর ভরের আনুপাতিক। হাবল টেলিস্কোপ এবং হাওয়াইয়ের গ্রাউন্ড বেজড টেলিস্কোপগুলোর পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা একই সাথে প্রথমবারের মতো ঘটনা দিগন্ত বা ইভেন্ট হরাইজন (Event Horigon) কেও খুঁজে পেয়েছেন। ইভেন্ট হরাইজন হচ্ছে এমন একটা সীমারেখা যা পার হলে কোনো কিছুই আর ফিরে আসতে পারে না।
বিজ্ঞানীরা এমনও প্রমাণ পাচ্ছেন যে প্রায় সব গ্যালাক্সির কেন্দ্রভাগেই প্রচণ্ড ভরসম্পন্ন এই কৃষ্ণবিবরগুলো রয়েছে। আর এই কৃষ্ণবিবরগুলোর ভর তাদের গ্যালাক্সিগুলোর ভরের আনুপাতিক। হাবল টেলিস্কোপ এবং হাওয়াইয়ের গ্রাউন্ড বেজড টেলিস্কোপগুলোর পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা একই সাথে প্রথমবারের মতো ঘটনা দিগন্ত বা ইভেন্ট হরাইজন (Event Horigon) কেও খুঁজে পেয়েছেন। ইভেন্ট হরাইজন হচ্ছে এমন একটা সীমারেখা যা পার হলে কোনো কিছুই আর ফিরে আসতে পারে না।
ব্ল্যাকহোল এতো বেশি সংখ্যায় থাকাটা ড. রিচস্টোনের তত্ত্বাবধানে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দলের কাছে এখনো বড়ো একটা রহস্য। আরেকটা বড়ো রহস্য হচ্ছে গ্যালাক্সির ভরের সঙ্গে ব্ল্যাকহোলের ভরের আনুপাতিক থাকাটা। তবে এর ব্যাখ্যা যাই হোক না কেন, গ্যালাক্সির গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে সেটা আমাদের অনেক কিছু জানতে সহায়তা করবে। ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে জ্যোতি পদার্থবিদরা যতোই জানতে পারছেন ততোই তারা মহাবিশ্বের ইতিহাস সম্পর্কেও জানতে পারছেন। সায়েন্টিফিক আমেরিকান লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত “গ্র্যাভিটি’স ফ্যাটাল অ্যাট্রাকশন” বইটিতে ড. মিশেল বেগেলম্যান (ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো) এবং স্যার মার্টিন রিস (ক্যাম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটির জ্যোতিপদার্থবিদ এবং রয়্যাল অব ইংল্যান্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী) ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে লিখেন, ‘যে কোনো বলের চেয়ে মাধ্যাকর্ষণ বল যে শক্তিশালী তা ব্ল্যাকহোল প্রমাণ করে।’ তারা এও বলেন যে, সত্যিকারভাবে ব্ল্যাকহোলকে বুঝতে পারলে মহাবিশ্বের সৃষ্টিটাও বোঝা সহজ হবে।
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে দু ধরনের ব্ল্যাকহোল রয়েছে, স্টেলার এবং গ্যালাকটিক। স্টেলারগুলো বেশ ছোটখাট হয়ে থাকে। যখন সূর্যের চাইতে কয়েক গুণ ভরসম্পন্ন তারাগুলোর পারমাণবিক জ্বালানি ফুরিয়ে যায় তখন এগুলো ঘনীভূত হয়ে মাত্র কয়েক মাইল ব্যাসে এসে পৌঁছায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হয়। কিন্তু সবচাইতে বেশি ভরসম্পন্ন তারাগুলো ঘনীভূত হয়ে কৃষ্ণবিবরে পরিণত হয়। এদের বেশিরভাগগুলো মহাকাশের যে অঞ্চলে নক্ষত্ররা অবস্থান করে সেখানেই থাকে। তবে তাদেরকে চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব।
কিন্তু কিছু কিছু স্টেলার ব্ল্যাকহোলকে চিহ্নিত করা যায়, কারণ সেগুলো বাইনারি সিস্টেম বা দ্বৈত নক্ষত্র হিসেবে থাকে। যার ফলে এই ব্ল্যাকহোলগুলোর সঙ্গী হিসেবে একটি সাধারণ নক্ষত্র থাকে। আর ব্ল্যাকহোলটি সেই সঙ্গী নক্ষত্রকে গিলতে শুরু করে।
তবে গ্যালাক্সির কেন্দ্রভাগে যেসব ব্ল্যাকহোল রয়েছে সেগুলো জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সম্ভবত মহাজাগতিক ইতিহাসের প্রায় ৯০ ভাগ সময় ধরে এগুলো রয়েছে। গ্যালাক্সির কেন্দ্রভাগে বিশাল পরিমাণে ভর জমা রয়েছে। সৌরজগতের মতো স্বল্প পরিসরে প্রায় তিন বিলিয়ন সূর্যের সমান ভর জমা থাকে। এখন পর্যন্ত এটি কেন ঘটছে তার কোন ব্যাখ্যা নেই। অর্থাৎ এই ভরের জন্য যে ব্ল্যাকহোল দায়ী, তা বলাই যায়।
কিন্তু কিছু কিছু স্টেলার ব্ল্যাকহোলকে চিহ্নিত করা যায়, কারণ সেগুলো বাইনারি সিস্টেম বা দ্বৈত নক্ষত্র হিসেবে থাকে। যার ফলে এই ব্ল্যাকহোলগুলোর সঙ্গী হিসেবে একটি সাধারণ নক্ষত্র থাকে। আর ব্ল্যাকহোলটি সেই সঙ্গী নক্ষত্রকে গিলতে শুরু করে।
তবে গ্যালাক্সির কেন্দ্রভাগে যেসব ব্ল্যাকহোল রয়েছে সেগুলো জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সম্ভবত মহাজাগতিক ইতিহাসের প্রায় ৯০ ভাগ সময় ধরে এগুলো রয়েছে। গ্যালাক্সির কেন্দ্রভাগে বিশাল পরিমাণে ভর জমা রয়েছে। সৌরজগতের মতো স্বল্প পরিসরে প্রায় তিন বিলিয়ন সূর্যের সমান ভর জমা থাকে। এখন পর্যন্ত এটি কেন ঘটছে তার কোন ব্যাখ্যা নেই। অর্থাৎ এই ভরের জন্য যে ব্ল্যাকহোল দায়ী, তা বলাই যায়।
১৯৯৪ সালে হাবল টেলিস্কোপ থেকে তোলা ছবি থেকে এ ধরনের অতিভরসম্পন্ন ব্ল্যাকহোলের প্রমাণ পাওয়া গেছে এম ৮৭ নামের বিশাল গ্যালাক্সিতে। ব্ল্যাকহোলটির চারপাশের প্রায় ৫০০ আলোক বর্ষ পরিমাণ জায়গা জুড়ে ঘূর্ণায়মান গ্যাসের স্রোত দেখা গেছে। এই গ্যাসগুলো কৃষ্ণবিবরের দিকে পড়ার সময় যে শক্তি নির্গত হয় তা ইলেক্ট্রনের একটি জেট তৈরি করে যেটি আলোর সমান গতিতে ব্ল্যাকহোলের বাইরের দিকে ছিটকে পড়ে। আরো গ্যালাকটিক ব্ল্যাকহোলের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ে বা আকাশ গঙ্গার কেন্দ্র ভাগেও ব্ল্যাকহোল আছে বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সিংহ নক্ষত্রমণ্ডলের ৩৩৭৯ এনজিসি গ্যালাক্সির কেন্দ্রভাগেও ব্ল্যাকহোল আছে বলে সম্প্রতি জানা গেছে। তাদের ভর সূর্যের তুলনায় যথাক্রমে ৫০ মিলিয়ন এবং ১০০ মিলিয়ন গুণ বেশি। ভাবেন একবার, কি বিশাল সেই ভর! কণ্যা নক্ষত্রমণ্ডলের ৪৪৮৬ এনজিসি গ্যালাক্সির কেন্দ্রভাগেও আরেকটি ব্ল্যাকহোল পাওয়া গেছে।
হাবল টেলিস্কোপ থেকে এইসব গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণের সময় দেখা যায় এদের কেন্দ্রের কাছাকাছি তারাগুলোর গতি ক্রমশই বাড়ছে। আর এটা সম্ভব হতে পারে একমাত্র ব্ল্যাকহোলের প্রচণ্ডরকম ভরের কারণেই। এইসব তথ্য এবং অন্যান্য আবিষ্কার থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি কম্পিউটার মডেল তৈরি করেন যাতে এই গতিবেগ দেখে ব্ল্যাকহোলের উপস্থিতি জানা যায়। এই মডেল ব্যবহার করে তারা কাছাকাছি আরো ১৫ টি গ্যালাক্সির ওপর পর্যবেক্ষেণ চালান। এতে ১৪ টিরই আচরণে বোঝা যায় যে এদের কেন্দ্রভাগে ব্ল্যাকহোল রয়েছে।
এইসব তথ্যের ভিত্তিতে বিখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানী ড. রিচস্টোন ধারণা করেন যে প্রায় সব গ্যালাক্সিতেই কৃষ্ণবিবর রয়েছে। ধারণা করা হয় যে ব্ল্যাকহোলের শক্তি তার গ্যালাক্সির আকারের ওপর নির্ভরশীল। গ্যালাক্সির বিবর্তনের পিছনে যে কৃষ্ণবিবরের ভূমিকা রয়েছে তাও এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়। ড. রিচস্টোন বলেন যে এই তথ্যটি কোয়াসারের শক্তির উৎস হিসেবে যে ব্ল্যাকহোল কাজ করছে সেই তত্ত কেও সমর্থন করে।
বলতেই পারেন যে কোয়াসার কি? কোয়াসার হচ্ছে আমরা মহাকাশে যেসব বস্তু দেখতে পাই তাদের মধ্যে সবচেয়ে দূরতম, প্রাচীনতম এবং উজ্জ্বলতম। কিছু কিছু কোয়াসারকে এখনো দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু নতুন কিছু প্রমাণ থেকে দেখা যায় যে গ্যালাকটিক ব্ল্যাকহোলগুলোতে ‘ফসিল কোয়াসার’ রয়েছে। গ্যালাকটিক ব্ল্যাকহোলগুলো ইতিহাস আর স্টেলার ব্ল্যাকহোলগুলো তারাদের বিবর্তন ও মৃত্যু নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
জাপান ও আমেরিকার যৌথ উদ্যোগে মহাকাশে পাঠানো এক্সরে অ্যাস্ট্রোনমি স্যাটেলাইট থেকে ঘটনা দিগন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। এতে দুটি নক্ষত্রের ওপর পর্যবেক্ষণ চালান বিজ্ঞানীরা। এদের একটি সাধারণ এবং অপরটি প্রচণ্ডরকম ঘনত্ব সম্পন্ন নক্ষত্র। মজার ব্যাপার হল, এই তারা দুটো থেকে আসা এক্সরে বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে কম্পিউটার মডেলে স্টেলার কৃষ্ণবিবর যেরকম আচরণ করে ঠিক সেরকমটি দেখা যাচ্ছে।
কৃষ্ণবিবর নিয়ে এত সব চিন্তাভাবনার কারণ আর কিছুই নয়। সবাই একটা বিষয় নিয়েই চিন্তা করে যে কি কারণে এর ভিতরে সবকিছুর অস্তিত্ব নেই হয়ে যায়। আর প্রত্যেকটি নক্ষত্রের পরিণতি যেহেতু কৃষ্ণবিবর কাজেই এ নিয়ে তো জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চিন্তাভাবনা থাকবেই, এ আর এমনকি!
লেখকঃ মশহুরুল আমিন।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
জাপান ও আমেরিকার যৌথ উদ্যোগে মহাকাশে পাঠানো এক্সরে অ্যাস্ট্রোনমি স্যাটেলাইট থেকে ঘটনা দিগন্ত আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। এতে দুটি নক্ষত্রের ওপর পর্যবেক্ষণ চালান বিজ্ঞানীরা। এদের একটি সাধারণ এবং অপরটি প্রচণ্ডরকম ঘনত্ব সম্পন্ন নক্ষত্র। মজার ব্যাপার হল, এই তারা দুটো থেকে আসা এক্সরে বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে কম্পিউটার মডেলে স্টেলার কৃষ্ণবিবর যেরকম আচরণ করে ঠিক সেরকমটি দেখা যাচ্ছে।
কৃষ্ণবিবর নিয়ে এত সব চিন্তাভাবনার কারণ আর কিছুই নয়। সবাই একটা বিষয় নিয়েই চিন্তা করে যে কি কারণে এর ভিতরে সবকিছুর অস্তিত্ব নেই হয়ে যায়। আর প্রত্যেকটি নক্ষত্রের পরিণতি যেহেতু কৃষ্ণবিবর কাজেই এ নিয়ে তো জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চিন্তাভাবনা থাকবেই, এ আর এমনকি!
লেখকঃ মশহুরুল আমিন।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
Darun post.
উত্তরমুছুন