তিন বিচিত্র প্রাণীর গল্প ।। Three Exotic Animal Stories

ক্যাঙ্গারুঃ
আপনাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় এমন একটি প্রাণীর নাম বলেন যেটি অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যায়। আপনি চট করে সবার আগে যে নামটি বলবেন তা হলো ক্যাঙ্গারু। ক্যাঙ্গারু দেখতে যেমন অদ্ভূত, গায়েও তাদের অনেক শক্তি। ওদেশের রেড ক্যাঙ্গারু বা লাল ক্যাঙ্গারু সবচেয়ে বিখ্যাত।ক্যাঙ্গারু হলো স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা মারসুপিয়াল গোত্রের প্রাণী। মারসুপিয়াল মানে যে প্রাণী তার সন্তানকে পেটের থলের ভেতরে রেখে লালন পালন করে। বেশিরভাগ ক্যাঙ্গারুর বাস অস্ট্রেলিয়ায়। ক্যাঙ্গারু শুকনো পরিবেশ খুব পছন্দ করে। তারা যেসব এলাকায় থাকে সেখানে বছরে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিও হয় কিনা সন্দেহ।


hybridknowledge.info hybridknowledge.info

তারা খোলামেলা তৃনপ্রান্তরে বাস করতেও ভালোবাসে। যদিও ছায়ার জন্য প্রায়ই গাছের নিচে গিয়ে বসে থাকে। রোদের তেজ যখন খুব কম একমাত্র তখনই ক্যাঙ্গারু রোদ পোহায়। কড়া সূর্যতাপ তারা একদমই সহ্য করতে পারে না। এ রকম উষর পরিবেশের সঙ্গে ক্যাঙ্গারু নিজেদেরকে খুব সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। তারা সমভূমি কিংবা মালভূমির ঘাস ইত্যাদি খয়ে জীবন ধারণ করে। আর ঘাসটাস তারা সাধারণত রাতের বেলাতেই খায়। আর দীর্ঘ সময় পানি পান না করলেও তাদের চলে। তাদের পায়ে অনেক শক্তি। বহুদূর লাফাতে লাফাতে যেতে পারে ক্যাঙ্গারু, একটুও ক্লান্ত হয় না। লাল ক্যাঙ্গারু নাম বলেই যে তারা সবাই দেখতে লাল এমন কিন্তু নয়। বেশিরভাগ পুরুষ ক্যাঙ্গারুর গায়ের রঙ ফ্যাকাশে বা মরিচা লাল। কোনও কোনও পুরুষের গায়ের রঙ লালচে ধূসর রঙেরও হয়ে থাকে। তবে মেয়ে ক্যাঙ্গারুরা সাধারণত এরকম গায়ের রঙ হয়। তবে কিছু এলাকায় নারী-পুরুষ দু’জাতের ক্যাঙ্গারুর গায়ের রঙই লালচে। নবজাতক ক্যাঙ্গারু শিশুকে তার মা নিজের থলিতে একটানা ২৩৫ দিন বহন করে। এ সময়ের মধ্যে ক্যাঙ্গারু শিশু হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে, ওজন দাঁড়ায় ৪ থেকে ৫ কেজিতে। চেহারা হয় বড়দের ক্ষুদ্র সংষ্করণের মত। তবে গায়ের রঙ লালচে হয়ে ওঠে আরও পরে। মেয়ে ক্যাঙ্গারু গায়ের রঙ লালচে হয় যখন তাদের বয়স ১৫ থেকে ২০ মাস। আর পুরুষ ক্যাঙ্গারু লালচে রঙের হয়ে ওঠে দু’বছর বয়সে। তবে গায়ের রঙ লাল হয়ে গেল বলেই যে তারা বড় হয়ে গেছে এমনটি ভাববার অবকাশ নেই। গায়ের রঙ লাল হওয়ার পরেও তারা আকারে বাড়তে থাকে। ক্যাঙ্গারুর মত পেটের থলিতে বাচ্চা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আরও একটি অস্ট্রেলিয় প্রাণী, তার নাম কোয়ালা। জন্মের সময় কোয়ালার বাচ্চার ওজন থাকে মাত্র ০.৫ গ্রাম। মায়ের থলিতে তারা ৭ মাস থাকে। কোয়ালা মাটিতে কিছু সময়ের জন্য হাঁটি-হাঁটি করলেও তার বেশিরভাগ সময় কেটে যায় গাছে গাছে। কোয়ালা দিনের বেলা গাছের ডালে ঘুমায়। রাতে বাচ্চাকে খাওয়ায় এবং নিজে খায়। তাদের প্রধান খাদ্য হলো ইউক্যালিপাটাস গাছের পাতা।

কোয়ালাওঃ


ক্যাঙ্গারুর মত কোয়ালাও নিভৃতচারী প্রাণী। তারা জঙ্গলে জঙ্গলে থাকে। কোয়ালার প্রধান শক্রু আদিবাসীর দল এবং ডিঙ্গো নামের এক বুনো কুকুর। অস্ট্রেলিয়ায় ইউরোপীয়রা অনুপ্রবেশ করে প্রচুর ইউক্যালিপটাস গাছ ধ্বংস করেছে। তাতে খাদ্য এবং বাসস্থান সংকটে পড়ে গেছে কোয়ালার দল। বিপন্ন হয়ে উঠেছে তাদের জীবন।

উমব্যাটঃ


অস্ট্রেলিয়ায় আরেকটি মারসুপিয়াল প্রাণী আছে যাদের সম্পর্কে আমরা এখনও খুব একটা জানি না। এ প্রাণীটির নাম উমব্যাট (Woombat)। অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম দিকে যারা উপনিবেশ হয়ে তুলেছিল তারা এদের নাম রেখেছিল ব্যাজার (Badgar) বা বিবর। কারণ তারা গাছের ফাঁক ফোকরে থাকতে খুব পছন্দ করে। উমব্যাটরা যে এলাকায় প্রচুর গর্ত কিংবা গাছের ফাঁকফোকর রয়েছে, বসবাসের জন্য সেসব জায়গা খোঁজে নেয়। ২ থেকে ৫ মিটার লম্বা গর্তগুলো হয় তাদের সাময়িক আস্তানা। তবে তারা ২০ মিটার দীর্ঘ গর্তেও বাসা বাঁধে। এসব গর্তে দিনের বেলায় আশ্রয় নেয় উমব্যাটরা। এই গর্তগুলোতে ঢোকার প্রবেশপথ তৈরি করে রাখে উমব্যাটরা খাঁড়ির চালও বসবাসের জন্য উপযুক্ত আস্তানা বলে মনে করে উমব্যাটরা। কারও বাড়িতে সদস্য সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে উমব্যাটরা ঘর অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করতে দ্বিধা করে না। কোয়ালার মত এরাও একাকি থাকতে ভালোবাসে। তাদের খাদ্য গ্রহণের এলাকাও থাকে ভাগ করা। অন্য প্রাণীদেরকে উমব্যাটরা নিজেদের এলাকায় প্রবেশ করতে দেয় না। উমব্যাটরা রাতের বেলায় খুব ব্যস্ত থাকে। কারণ তখন তাদের খাওয়ার সময়। তারা ঘাস, গাছের শেকড় এবং গাছপালা খায়। খাবার খেতে তাদের ৩ থেকে ৮ ঘন্টা সময় লাগে। খেতে খেতে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে পাড়ি দেয় মাইলের পর মাইল রাস্তা। মেয়ে উমব্যাট একটি মাত্র সন্তান জন্ম দেয়। বাচ্চাটি থলেতে রেখে লালন পালন করে ৬ মাস। মা যেখানে যায় বাচ্চাও মার সঙ্গে থলের ভেতরে মজাসে যেখানে ভ্রমণ করে। অরণ্যে তাদের গড় আয়ু ৫ বছর। তবে চিড়িয়াখানায় উমব্যাটরা বাঁচে কমপক্ষে ২০ বছর। কোয়ালাদের মত ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীরা উমব্যাটদের প্রাকৃতিক বাসস্থানের প্রচুর ক্ষতি করেছে। এখন অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ অঞ্চলে রক্ষনাবেক্ষণের চেষ্টা চলছে। তবে ভিক্টোরিয়া ছাড়া। কারণ এই অঞ্চলে উমব্যাটরা ফসলের ক্ষতি করে বলে চাষীদের চোখে তারা ক্ষতিকর প্রাণী হিসেবে অভিহিত। উমব্যাট দেখলেই তারা মেরে ফেলে।

লেখকঃ অনীশ দাস অপু।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।