ভয়ংকর সুন্দর রাস্তা ।। Fearsome But Beautiful Roads

আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব এই ধরণীর ভয়ংকর সুন্দরতম রাস্তাগুলির সাথে। যার সুন্দর্য দেখে যেমন আপনাদের চোখ জুড়িয়ে যাবে তেমনি ভয়ে চমকে উঠবেন।


Chalous Road, Iran:
ইরানের রাজধানী তেহরানের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির নাম Road 59। যার অন্যনাম Chalous Road বা Kandovan Road। প্রতি সপ্তাহান্তে কিংবা ছুটির দিনে এই সড়কে বেড়াতে আসে হাজার হাজার পর্যটক। কারণ আর কিছুইনা সর্পিল এই সড়কটির চারপাশ রঙ্গিন ফুলের ঝোপঝাড়ে ভরা। এই সড়কের উপর রয়েছে Kandevan Tunnel যেটি সংযুক্ত করেছে তেহরানের সাথে Alborz পর্বতমালার সাথে। Chalous Road এর এই অংশটি Kandevan Tunnel থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info


Furka Pass, The Alps, Switzerland:
সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালার ২৪২৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই প্যাঁচানো সড়কের নাম Furka Pass বা Furka-Oberalp-Bahn line । এই সড়ক সংযোগ স্থাপন করেছে উপর Gletsch, Valais এবং Realp, Uri শহরের মাধ্যমে। এই সড়কের ২১ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত বাইপাস Furka Tunnel এটি নির্মাণ করা হয় ১৯৮২ সালে। এখানে চিত্রায়িত হয়েছিলো জেমস বন্ড সিরিজের ছবি Goldfinger।


The North Yungas Road:
এই রাস্তাটি Grove's Road, Coroico Road, Camino de las Yungas, El Camino de la Muerte, Road of Death or Death Road বা মৃত্যুর রাস্তা নামে পরিচিত! এই North Yungas Road হলো পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তাগুলোর একটি।। ৬৯ কিমি (৪৩ মাইল) লম্বা এই রাস্তাটি দক্ষিণ আমেরিকার দেশ Bolivia-র La Paz এবং Coroico নামক শহর দুটোর মাঝে সংযোগ সড়ক হিসেবে ব্যাবহার করা হয়।। রাস্তাটি ভূমি থেকে প্রায় ২০০০ ফুট উপরে এবং এটি এতই সরু যে, একবারে শুধুমাত্র একটি গাড়ি চলাচল করতে পারে।। প্রতি বছর এই রাস্তায় দুর্ঘটনায় প্রায় ২০০-৩০০ মানুষ মারা যায়।। রাস্তায় দুর্ঘটনার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিতে প্রায়ই এই রাস্তায় ভূমিধ্বস, পাহারধ্বস ঘটে থাকে!! ১৯৯৫ সালে Inter-American Development Bank এই রাস্তাটিকে World's Most Dangerous Road" হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।


Gigantic Snow Wall Along Tateyama Kurobe Alpine Route, Japan:
উত্তর জাপানের অনন্য ও দৃষ্টিনন্দন এই সড়কের নাম Tateyama Kurobe Alpine Route। যার দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে দৈত্যাকৃতির বরফের দেয়াল। সড়কটি সংযোগ স্থাপন করেছে জাপানের Toyama এবং Omachi। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৭১ সালে। এই সড়ক দিয়ে চলার সময় চোখে পড়ে Hida পর্বতের অপার্থিব সৌন্দর্য। অতি সতর্কতার সাথে এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এই সড়ক দিয়ে যে সব গাড়ি চলাচল করে এদের থেকে কোন ধুঁয়া নির্গত হতে পারবেনা। বরফের যেন কোন ক্ষতি না হয় তাই এই সতর্কতা। এর কোন কোন জায়গায় বরফের দেয়ালের উচ্চতা ২০ মিটার পর্যন্ত হয়।


Oberalp Pass, Switzerland:
ফিতার মত দেখতে সুন্দর এই সড়কের নাম Oberalp Pass বা Cuolm d'Ursera। Swiss Alps পর্বতমালা ২০৪৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত সড়কটি সংযোগ স্থাপন করেছে Graubünden ও Uri শহর এবং Disentis ও Andermatt শহরের মধ্যে। শীতকালে তুষারপাতের কারণে সড়কটি বন্ধ থাকে।


Avenida 9 De Julio in Buenos Aires Argentina:
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রশস্ত সড়কটির অবস্থান আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে। আর্জেন্টিনা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলো ১৮১৬ সালের ৯ জুলাই। সেই দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই সড়কটির নাম রাখা হয় Avenida 9 de Julio। এই সড়কটির প্রসস্ততা প্রায় ১১০ মিটার। সড়কটির পূর্বাংশের নাম Pellegrini and Bernardo de Irigoyen এবং পশ্চিমাংশের নাম Cerrito and Lima। এই সড়কটি নির্মাণে প্রথম পরিকল্পনা করা হয় ১৮৮৮ সালে। তখন এই সড়কটির নাম দেয়া হয় Ayohuma। তবে পার্শ্ববর্তী ভূমিমালিক এবং বাসিন্দাদের আপত্তির মুখে ১৯৩৫ সাল এই সড়কের কাজ শুরু করা যায়নি। ১৯৩৭ সালের ৯ জুলাই আর্জেন্টিনার স্বাধীনতা দিবসে সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সড়কটির মূল অংশের কাজ শেষ হয় ৬০এর দশকে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয় ১৯৮০ সালে। Avenida 9 de Julio সড়কটি Line A, Line B, Line C ,Line D এবং Line E। Line C বরাবর মাটির নীচে চলাচল করে পাতাল রেল Buenos Aires Metro। সড়কটির উপর স্থাপিত মনুমেন্টের নীচে Line B, Line C এবং Line D বরাবর রয়েছে ৩ টি subway station । ষ্টেশন ৩টির নাম Carlos Pellegrini, Diagonal Norte এবং 9 de Julio।


Heaven Linking Avenue, China:
The Big Gate Road নামেও পরিচিত এই সড়কটির অবস্থান গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের হিউনান (Hunan) প্রদেশে। Zhangjiajie City (পূর্বের Dayong City)-র Tian Men Shan পর্বতের ঢালে তৈরি এই সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিলো ১৯৯৮ সালে এবং শেষ হয় ২০০৬ সালে। সমুদ্র সমতলের ২০০ মিটার(৬৫৬ ফুট) নীচ থেকে শুরু হওয়া এই সড়কের সর্বোচ্চ বিন্দু ১৩০০ মিটার( ৪৬২৫ ফুট) উচ্চতায়। চীনা সংস্কৃতিতে ৯ সংখ্যাটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক বিবেচনা করা হয়, তাদের ধারণা স্বর্গের সংখ্যা ৯ টি। চুলের পিনের মত ৯৯ টি বাঁক নিয়ে Tian Men Shan পর্বতের ঢালে নীচ থেকে উপরে উঠা এই সড়ককে তাদের স্বর্গের সিঁড়ির কথা মনে করিয়ে দেয়। সড়কটির ডাকনামও তাই Heaven-Linking Avenue বা Avenue Towards Heaven। চলতি পথে এই সড়কটিতে যাত্রা বিরতির সুযোগ নেই বলে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এখানে গাড়ি চালাতে হয়, অসতর্ক হলেই হয়তো Heaven-Linking Avenue আপনাকে স্বর্গে পৌছে দেবে। তাইতো এই সড়কটির ইতিমধ্যেই The Most Dangerous Road In China তকমা জুটেছে।


The Ledo Burma Road, Assam:
সর্পিল ফিতার মত দেখতে এই সড়কের নাম The Ledo Road বা The Ledo Burma Road। ভারতের আসামের লেডো জেলার বুক ছিড়ে চলে যাওয়া এই সড়কটি সংযোগ স্থাপন করেছে মায়ানমার( বার্মা) Kachin প্রদেশের সাথে চীনের Kunming শহরের সাথে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই সড়কটি নির্মাণ করেছিল জাপানী পদাতিক বাহিনী। ১৯৪৫ সালে মার্কিন জেনারেল Joseph Stilwell এর নামে এই সড়কের নাম রাখা হয় Stilwell Road।


Guoliang Tunnel Road:
চীনের Henan প্রদেশের Taihang পর্বতের গা ঘেঁষে তৈরি এই সুড়ঙ্গ সড়কটির নাম Guoliang Tunnel Road। যেটি বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক সড়ক হিসেবে বিবেচিত। Taihang পর্বত ঘেঁষে গ্রামটির নাম Guoliang। ১৯৭২ সালে এই গ্রামের Shen Mingxin নামের এক ব্যাক্তির নেতৃত্বে ১৩ জন গ্রামবাসী প্রথম এই পর্বত ঘেঁষে এই Tunnel Road-টি তৈরির জন্য যাবতীয় যন্ত্রপাতি কেনার অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। এই যন্ত্রপাতির বেশীর ভাগই ছিল হাতিয়ার গোঁছের। ১লা মে ১৯৭৭ সালে যখন যান চলাচলের জন্য এই সুড়ঙ্গটি খুলে দেয়া হয় তখন এর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১২০০ মিটার (০.৭৫ মাইল), যার প্রস্থ ও উচ্চতা ছিল যথাক্রমে ৪ মিটার (১৩ ফুট) এবং ৫ মিটার( ১৬ ফুট)। এই টানেল নির্মাণে শ্রম দিয়েছিল Guoliang গ্রামবাসীরা , যাদের কোন কারিগরি বিদ্যাই ছিলনা । মারাও গিয়েছিল কয়েকজন। খুব দ্রুতই এই টানেলটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। আস্তে আস্তে এই অঞ্চলে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠে আবাসিক হোটেল। যদি এই টানেলটি নির্মাণ করা না হত তাহলে সড়ক পথে Guoliang গ্রামটি আধুনিক পৃথিবী থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্নই থাকত। দূর থেকে Taihang পর্বতের উপত্যকা ঘিরে নির্মিত টানেলকে কয়েকটি জানলার মত মনে হয়। অনেকটা আদিম পন্থায় নির্মিত এই টানেলের সড়ক ও দেয়াল খুবই রুক্ষ। বর্ষাকালে পিচ্ছিল হয়ে উঠে টানেলের সড়ক। তখন দেখেশুনে পথ না চললে বুঝতেই পারছেন অবস্থা কি হবে?

লেখকঃ মামুনুর রশিদ এবং রাজিব হুমায়ুন তন্ময়।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।