বিখ্যাতদের মজার ঘটনা ।। Famous People's Fun Facts

অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তি আছেন যাদের ব্যাক্তিগত জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা শুনলে না হেসে পারা যায় না। আসুন তাহলে এবার জেনে নেই ইতিহাসের সব থেকে বিখ্যাত কিছু ব্যাক্তিদের মজার কিছু ঘটনা।


ভন নিউমানঃ
রকেট নির্মাণকারী একটি শিল্প-প্রতিষ্ঠান বিখ্যাত গণিতজ্ঞ জন ভন নিউমানকে কনসাল্টেন্ট হিসেবে ডেকে এনেছিল। ভন নিউমান তাদের অর্ধ-সমাপ্ত রকেটটা দেখে বললেন, কারা এটার ডিজাইন করেছে? আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা, ম্যানেজার জানালেন। ইঞ্জিনিয়াররা, ভন নিউমান তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললেন, তারা রকেট বানানোর কি জানে! ম্যানেজার সাহেব চুপ। রকেট বানানোর সব গাণিতিক সূত্র আমার ১৯৫২ সালের একটা গবেষণাপত্রে রয়েছে ওটা ভালো করে পড়ুন। বলে ভন নিউমান চলে গেলেন। ম্যানেজারের হুকুমে সবাই তাড়াহুড়ো করে ভন নিউমানের গবেষণাপত্র পড়ে, তার সূত্রগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করে বহু ডলার খর্চা করে নতুন একটা রকেট তৈরি করল। কিন্তু সেটা আকাশে উঠতে না উঠতেই বিকট আওয়াজ করে ফেটে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। ম্যানেজার ভীষণ রেগে ভন নিউমানকে ফোন করতে উনি বললেন, ও হ্যাঁ, তাতো হবেই, ১৯৫৩ সালে আমার আরেকটা গবেষণাপত্রে এই রকেট ফাটা সমস্যাটার সমাধান আমি করেছি।


জ্যাক বেনিঃ
কমেডিয়ান জ্যাক বেনি ভাব দেখাতেন, তার মতো কঞ্জুস পৃথিবীতে কেউ নেই। ওর একটা রেডিও শো ছিল। সেই শোতে সবাই একদিন শুনতে পেল জ্যাক বেনিকে এক ডাকাত এসে বলছে, হয় তোমার টাকা দাও, নয় তোমার প্রাণ। কোনও উত্তর নেই। চারদিক নিস্তব্ধ। শুনছো না, খানিক বাদে ডাকাত আবার হুংকার দিয়ে বলল, হয় তোমার টাকা দাও, নয় প্রাণ হারানোর জন্য প্রস্তুত হও। আমি ভাবছি, একটু ভাবছি, জ্যাক বেনির উত্তর।


আইনস্টাইনঃ
আইনস্টাইন একবার ট্রেনে চড়ে যাচ্ছেন। টিকিটচেকার এসে টিকিট চাইতে আইনস্টাইন খুঁজে পাচ্ছেন না কোথায় টিকিটটি রেখেছেন। টিকিটচেকার আইনস্টাইনকে চিনতে পেরে বললেন, ‘প্রফেসর, আপনাকে আর খুঁজতে হবে না। আমি জানি আপনি নিশ্চয় টিকিট কেটেছেন।’ ‘না, না, খুঁজতে হবে’, আইনস্টাইন ব্যস্ত হয়ে বললেন, ‘ওটা না পেলে আমি জানব না আমি কোথায় যাচ্ছি!’

ইংরেজ ফ্রেঞ্চদের সঙ্গে যেমন রেষারেষি, সেই একই রকমের রেষারেষি জার্মানদের সঙ্গেও। জার্মানিতে সে সময় হিটলারের রাজত্ব। নাৎসীদের ইহুদিবিদ্বেষের জন্য আইনস্টাইন পালিয়ে এসেছেন আমেরিকাতে। ইতিমধ্যে ওর আপেক্ষিকবাদ তত্ত্ব নিয়ে সারাবিশ্বে তুমুল আলোড়ন শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে জার্মান আর ফ্রান্সের কি মত, সে নিয়ে আইনস্টাইনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেন, আমার আপেক্ষিকবাদ যদি নির্ভুল প্রমাণিত হয়, তাহলে জার্মানরা দাবি করবে আমি জার্মান, আর ফ্রেঞ্চরা বলবে আমি একজন বিশ্বনাগরিক। কিন্তু ওটা যদি প্রমাণিত হয় ভুল বলে, তাহলে ফ্রেঞ্চরা বলবে আমি জার্মান; আর জার্মানরা বলবে আমি ইহুদি।

আইনস্টাইনের ‘থিউরি অফ রিলেটিভিটি’ অল্প কয়েকজন বিজ্ঞানীই শুধু বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই আবিষ্কারের ফলেই তার জনপ্রিয়তা সর্বস্তরে পৌঁছে যায়। এক চুরুট কোম্পানি তো তাদের চুরুটের নামই রেখে ফেলে রিলেটিভিটি চুরুট। এ সময় আমেরিকা ভ্রমণের আমন্ত্রণ পেয়ে সস্ত্রীক রওনা হন তিনি। জাহাজ থেকে নামার মুহুর্তেই সাংবাদিকরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। একজন একেক রকম প্রশ্ন করতে থাকেন। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করে বসেন,আচ্ছা বলুন তো মেয়েরা আপনাকে এত পছন্দ করে কেন? আইনস্টাইন মৃদু হেসে উত্তর দেন ,আপনি জানেন কি না জানি না, মেয়েরা সবসময় লেটেস্ট ফ্যাশন পছন্দ করে, আর এ বছরের ফ্যাশন হল ‘থিউরি অফ রিলেটিভিটি’, আমাকেও ওটার অংশ হতে হয়েছে কি না!


ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরঃ
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর খদ্দরের চাদর পরতেন।শীত বা গ্রীষ্ম যাই হোক না কেন গায়ে শুধু চাদর আর কাঠের খড়ম পরেই সংস্কৃত কলেজে ক্লাস নিতে যেতেন। মাঘ মাসের শীতের সময় প্রতিদিন সকালে এভাবে ঈশ্বর চন্দ্রকে ক্লাস নিতে যেতে দেখে প্রায়ই হিন্দু কলেজের এক ইংরেজ সাহেব যাওয়ার পথে বিদ্যাসাগরকে ক্ষ্যাপানোর জন্য বলতেন, “কি হে,বিদ্যার সাগর, বিদ্যার ভারে বুঝি ঠান্ডা লাগে না তোমার?” বিদ্যাসাগর প্রতিদিন কথা শুনতেন, কিন্তু কিছু বলতেন না। একদিন শীতের সকালে ঠিক একইভাবে তিনি ক্লাস নিতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে আবার সেই ইংরেজের সাথে দেখা। আবার সেই একই প্রশ্ন। এবার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বর চন্দ্র তার ট্যামর থেকে একটা কয়েন বের করে বললেন, “ এই যে গুজে রেখেছি, পয়সার গরমে আর ঠান্ডা লাগেনা। এবার হলো তো?”


জন ড্রাইডেনঃ
বিখ্যাত ইংরেজ কবি সমালোচক জন ড্রাইডেন প্রায় সারাক্ষণই পড়াশোনা আর সাহিত্যচর্চা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন; স্ত্রীর প্রতি খুব একটা মনোযোগ দিতেন না। একদিন স্ত্রী লেডি এলিজাবেথ তার পড়ার ঘরে ঢুকে রেগে গিয়ে বললেন, ‘তুমি সারা দিন যেভাবে বইয়ের ওপর মুখ গুঁজে পড়ে থাকো তাতে মনে হয় তোমার স্ত্রী না হয়ে বই হলে বোধ হয় তোমার সান্নিধ্য একটু বেশি পেতাম। ড্রাইডেন বইয়ের ওপর মুখে গুঁজে রেখেই বললেন, ‘সে ক্ষেত্রে বর্ষপঞ্জি হয়ো, বছর শেষে বদলে নিতে পারব!’


আব্রাহাম লিংকনঃ
যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের সময় এক ধর্মযাজক কথা প্রসঙ্গে আব্রাহাম লিংকনকে বলেছিলেন, ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আসুন, আমরা বিশ্বাস রাখি এবং প্রার্থনা করি যে এই দুঃসময়ে মহান ঈশ্বর আমাদের পক্ষে থাকবেন।’ প্রতি উত্তরে লিংকন একটু ভেবে নিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, ‘আপনি যাই বলুন না কেন, ঈশ্বর নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত নই। কারণ আমি একথা জানি যে ঈশ্বর সব সময় ন্যায় ও সত্যের পক্ষেই থাকেন। এর চেয়ে বরং আসুন, আমরা সবাই প্রার্থনা করি, এই জাতিটা যেন সব সময় ঈশ্বরের পক্ষে থাকতে পারে।’


নোবার্ট উইনারঃ
এমআইটির অধ্যাপক নোবার্ট উইনার অন্যমনস্কতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। একদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে দেখা হয় এক বন্ধুর সঙ্গে। কিছুক্ষণ কথা বলার পর তিনি বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে কোনদিকে আমার গন্তব্য ছিল বলতে পারো? বন্ধু বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘কেন, ম্যাসাচুসেটস অ্যাভেনিউর দিকে!’ ‘ধন্যবাদ তোমাকে’ তার মানে আমার দুপুরের খাবার কাজটা শেষ করে ফেলেছি।

ইয়ান বোথামঃ
এক অ্যাশেজের ঘটনা। ব্যাট করতে এসেছেন ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথাম।অস্ট্রেলিয়ার রড মার্শ এগিয়ে গিয়ে তাঁকে ‘স্বাগত’ জানালেন, ‘হাই ইয়ান, তোমার বউ আর আমার বাচ্চারা কেমন আছে?’ বোথামের জবাব, ‘বউ ভালোই আছে। কিন্তু বাচ্চারা সব বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মেছে দেখছি!’

আলফ গাওয়ারঃ
১৯৩৬ সাল। ভারত বনাম ইংল্যান্ড ক্রিকেট ম্যাচ চলছে।ফিল্ডিং করছে ইংল্যান্ড দল। বল করছেন ফাস্ট বোলার আলফ গাওয়ার। তৃতীয় বল ছোড়ার জন্য ছুটতে শুরু করলেন গাওয়ার। কিন্তু ব্যাটসম্যানের দিকে বল না ছুড়ে তিনি হাতে বল নিয়ে ছোটা শুরু করলেন। ছুটছেন তো ছুটছেন। একসময় পেরিয়ে গেলেন আম্পায়ার, পিচ,দর্শক তারপর প্যাভিলিয়ন। তখনও সেই বল তাঁর হাতে। পরে জানা যায়, প্রকৃতির ডাক তাঁকে এত চেপে ধরেছিলো যে হাতের বলটি আর কাউকে দেওয়ার সময় পাননি গাওয়ার। তাই তাঁর অমন তড়িৎ প্রস্হান!

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

২টি মন্তব্য:

  1. এতটা ভালোলাগছে এই পোস্টটি যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আপনার ভাল লেগেছে জেনে সত্যিই খুশি হলাম...

      মুছুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info