সূর্য

সূর্য, সৌরজগতের প্রাণ এবং একমাত্র নক্ষত্র। এর ব্যাসার্ধ প্রায় ১,৩৯২,০০০ কিলোমিটার (৮৬৫,০০০ মাইল) পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ১০৯ গুন বেশি। এর ভর ২ এরপর ৩০ টি শুণ্য বসালে যত হবে তত কিলোগ্রাম (পৃথিবীর চাইতে ৩৩০,০০০ গুন বেশি)। সৌরজগতের মোট ভরের প্রায় ৯৯.৮% সূর্যের দখলে। সূর্য থেকে পুথিবীর দূরত্ব প্রায় ১৪.৯৬ কোটি কিলোমিটার। এই দুরত্ব অতিক্রম করতে আলোর সময় লাগে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড। এর আকার প্রায় পূর্ণ গোলাকার ফুটবলের মত (মেরু অঞ্চলের ব্যাস, নিরক্ষীয় অঞ্চলের ব্যাস চেয়ে মাত্র ১০ কিঃমিঃ বেশি)।


সূর্যের গঠনঃ
কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকের অংশ গুলো হলঃ
০১) কেন্দ্র বা কোর (Core) এখানেই হাইড্রোজেন প্রতিনিয়ত হিলিয়ামে রূপান্তরিত হচ্ছে।
০২) রেডিয়েশন জোন (Radiation Zone)।
০৩) কনভেকশন জোন (Convection Zone)।
০৪) ফটোস্ফিয়ার (Photosphere) মুলতঃ সূর্যের এই অংশই আমরা টেলিস্কোপের মাধ্যমে দেখি।
০৫) ক্রমোস্ফিয়ার (Chromosphere) শুধুমাত্র সূর্যগ্রহনের সময় আমরা দেখতে পাই যখন চাঁদ পুরোপুরিভাবে ফটোস্ফিয়ারকে ঢেকে ফেলে।
০৬) করোনা (Corona) সবচেয়ে বাইরের অংশ যা মিলিয়ন মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত এবং দুরত্বের সাথে তা আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে যায়। তাপমাত্রা প্রায় মিলিয়ন ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি।


সূর্যের কেন্দ্র:
সূর্য ৭০ ভাগ হাইড্রোজেন আর ২৮ ভাগ হিলিয়াম এবং বাকি ২ ভাগ বিভিন্ন ধাতুর (কার্বন, নিয়ন, লোহা) সংমিশ্রণে গঠিত। সূর্য একটি গ্যাসীয় গোলক এবং এ কারনে এর বিভিন্ন অঞ্চলের ঘোরার জন্য সময়ও বিভিন্ন। সূর্যের নিরক্ষীয় অঞ্চলের একটি পূর্ণ ঘুর্ণনের জন্য ২৫.৪ দিন লাগে। আবার সূর্যের মেরুতে একটি পূর্ণ ঘুর্ণনের জন্য প্রায় ৩৩.৫ দিন লাগে। কিন্তু সূর্যের কেন্দ্র প্রায় শক্ত গোলকের মতই ঘুরতে থাকে।

সূর্যের "বায়ুমন্ডল"--সূর্য পৃষ্ঠের উপরিভাগ সংলগ্ন অঞ্চলকে এর বায়ুমন্ডল বলা হয় (যদিও কোন বাতাস নাই; পৃথিবীর সাথে তুলনামুলক আলোচনার জন্য একে "বায়ুমন্ডল" বলা হয়)। সূর্যের "বায়ুমন্ডল" সবচেয়ে ভাল দেখা যায় সূর্য গ্রহনের সময়। এসময় গ্রহণ-বলয়ের চারপাশে যে উজ্বল অঞ্চল দেখা যায় সেটাই সূর্যের "বায়ুমন্ডল"।


কিভাবে সূর্য আলো ও তাপ দেয়ঃ
সূর্যের শক্তি অবিশ্বাস্য প্রায় ৩৮৬ বিলিয়ন বিলিয়ন মেগাওয়াট! এই ক্ষমতা তৈরি হয় ফিউশনের কারনে। সূর্যের কেন্দ্রে প্রতি সেকেন্ডে ৭০০,০০০,০০০ টন হাইড্রোজেন ৬৯৫,০০০,০০০ টন হিলিয়ামে রূপান্তরিত হচ্ছে এবং বিপুল শক্তি ও গামা রশ্মি উৎপন্ন হচ্ছে। সূর্যের কেন্দ্রে (কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে ২৫% পর্যন্ত ব্যাসার্ধকে সূর্যের কেন্দ্র বলা হয়) তাপমাত্রা প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং চাপ পৃথিবীর বায়ুচাপের ২৫০ বিলিয়ন গুন বেশি!! ঘনত্ব পানির প্রায় ১৫০ গুন। ৩০% ব্যাসার্ধের পর হাইড্রোজেন-হিলিয়াম ফিউশন হয়না। কেন্দ্রে উৎপন্ন এই শক্তি সূর্যের বিভিন্ন স্তর ভেদ করে বাইরের দিকে আসতে থাকে এবং ফটোস্ফেয়ার ভেদ করে এই শক্তি গুলো তাপ হিসেবে এবং গামা রশ্মি গুলো আলো হিসেবে মহাশুন্যে ছড়িয়ে পড়ে।


সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রঃ
সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৬০০০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড। কিন্তু পৃষ্ঠের ঠিক উপরি ভাগে তাপমাত্রা প্রায় ১,০০০,০০০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন সূর্যের অতিব শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র তাপমাত্রার এই তীব্রতার কারন। এ শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র এতই তীব্র যে তা তাপকে আকৃষ্ট করে তাপের বলয় তৈরি করে।

সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্র প্লুটো গ্রহ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং অত্যন্ত জটিল।

সূর্যের স্যাটেলাইটঃ
সূর্যের মোট ৮টি স্যাটেলাইট (গ্রহ) এবং ১৮টি উপগ্রহ আছে। তাপ এবং আলো ছাড়াও সূর্য তার চতুর্দিকে কম ঘনত্বের চার্জড পার্টিকেল নিঃসরণ করে (বেশিরভাগই ইলেকট্রন এবং প্রোটন) যাকে সৌর বায়ু বলা হয়। এই সৌর বায়ুর নিঃসরণের গতিবেগ নিরক্ষরেখায় প্রায় ৪৫০কিঃমিঃ/সে কিন্তু মেরুতে দ্বিগুন (৭৫০কিঃমিঃ/সে)।

সূর্যের বয়স ও আয়ুষ্কালঃ
সূর্যের বয়স প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর। এই দীর্ঘ সময়ে সূর্যের কেন্দ্রের অর্ধেক হাইড্রোজেন ফুরিয়ে গেছে। কাজেই আরো প্রায় ৫ বিলিয়ন বছর সূর্য আলো এবং তাপ বিকিরণ করে যাবে। এরপর এর জ্বালানী (হাইড্রোজেন) ফুরিয়ে যাবে। এবং বলার অপেক্ষা রাখে না ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের সুন্দর এ ধরিত্রী।


সূর্য সম্পর্কে মজার তথ্যঃ
১। সূর্য প্রায় ১ মিলিয়ন পৃথিবীকে তার বুকে ধারন করতে পারে।
২। সূর্য তার গ্রহ, উপগ্রহ সাথে নিয়ে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সেন্টারকে কেন্দ্র করে ২৫০ মিলিয়ন বছরে একবার প্রদক্ষিন করছে।
৩। সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিনকালে পৃথিবী প্রতিদিন প্রায় ১৫ লাখ মাইল অতিক্রম করে।
৪। সূর্যের নিজস্ব গতির কারনে কোন সূর্যগ্রহণই ৭ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হতে পারে না।
৫। মাত্র ৫৫% আমেরিকান বিশ্বাস করে যে সূর্য একটি নক্ষত্র (তারা)।

লেখকঃ জর্জিস।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

২টি মন্তব্য:

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info