হারিয়ে যাওয়া শহর "আটলান্টিস"


আটলান্টিস হল পৌরাণিক উপকথা অনুযায়ী সমুদ্রতলে হারিয়ে যাওয়া একটি দ্বীপ। এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় খৃষ্টপূর্ব ৩৬০ অব্দের প্লেটোর ডায়ালগ টাইমাউস এন্ড ক্রিটিয়াসে। প্লেটোর মতে প্রায় ৯০০০ বছর আগে আটলান্টিস ছিল হারকিউলিসের পিলারের পাদদেশে একটি দ্বীপ যা এর নৌ সক্ষমতা দিয়ে ইউরোপের অধিকাংশ স্থান জয় করেছিল। কিন্তু এথেন্স জয় করার একটি ব্যার্থ প্রয়াসের পর এক দিন ও এক রাতের প্রলয়ে এটি সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

প্লেটোর এই ঘটনা কোন পৌরাণিক কল্পকাহিনী অনুপ্রানিত কি না এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদরা এখনও একমত হতে পারে নি। তবে প্লেটো ক্রিটিয়াসে দাবি করেন যে তিনি এই গল্প সোলোনের কাছ থেকে শুনেছেন। সোলোন ছিলেন খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের এথেন্সের বিখ্যাত নিতীনির্ধারক। প্রাচীন মিশরে প্যাপিরাসের কাগজে এথেন্স এবং আটলান্টিস সম্পর্কে হায়ারোগ্লিফিতে কিছু নথি ছিল যা গ্রীকে অনুবাদ করা হয়। সোলোন সেখান থেকে আটলান্টিস সম্পর্কে জানতে পারেন। তবে কিছু পন্ডিৎ মনে করেন যে প্লেটো প্রাচীন কিছু যুদ্ধের কাহিনী থেকে অনুপ্রানীত হয়ে এই কাহিনী গড়েছেন।

আটলান্টিসের সম্ভাব্য অস্তিত্ব নিয়ে প্রাচীনকালে অনেক বিতর্ক হয়েছে তবে পরবর্তীতে বিভিন্ন লেখক এর সমালোচনা এবং ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করেছেন। এলেন ক্যামেরুনের বলেন প্রাচীনকালে আটলান্টিসের ঘটনাকে কেউ এত গুরুত্বের সাথে না নিলেও বর্তমানেই এই প্রাচীন কাহিনীকে গম্ভীরভাবে দেখা হচ্ছে।

প্লেটো
আটলান্টিসের গল্প শুরু হয় প্লেটোর একটি লেখায়। এই লেখায় প্রথম উঠে আসে আটলান্টিসের হারিয়ে যাওয়া জনপদের কথা। অনেকেই ভাবে, আটলান্টিস আর কিছুই ছিলনা প্লেটোর কল্পনা মাত্র। আবার অনেকেই খুঁজে যাচ্ছেন আটলান্টিসের জনপদকে। আজ পর্যন্ত অনেক প্রত্নতাত্বিক নির্দশন আবিষ্কার হয়েছে তবে এগুলো যে হারানো আটলান্টিস তার কোন জোরালো প্রমাণ নাই।

প্রায় এগারো হাজার বছর আগে আটলান্টিক মহাসাগরের কোন এক দ্বীপ নগরী ছিল আটলান্টিস। আটলান্টিসের কথা প্রথম জানা যায় প্লেটোর ডায়লগ Timaeus and Critias এ। এখানে তিনি বলেন আটআন্টিস প্রায় নয় হাজার বছর পূর্বে কোন ভূমিকম্প বা সুনামিতে ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি বলেন আটলান্টিসের আবস্থান ছিল পিলার অফ হারকিউলিসের আশে পাশে।

আটলান্টিসের খোঁজে অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা আর অনুসন্ধান চলেছে। হারানো আটলান্টিসের হাজারো অবস্থান চিহ্নিত করেছেন অনেক প্রত্নত্তবিদরা। কিন্তু কেউই জোর কোন প্রমাণ দেখাতে পারে নাই। ১৯৬৮ সালে এগার ক্যাচি তার বই On Atlantis এ দাবি করেন তিনি মিশরের নীল নদ এবং স্ফিংস এর মূর্তির মাঝে Hall of Records অবিষ্কার করেন যা তিনি দাবি করেন আটলান্টিসের ধ্বংসাবশেষ।

আসলেই কি আটলান্টিসের কোন অস্তিত্ব ছিল? ম্যাক্রাইন এসার (Maxine Asher) ১৯৭৩ গ্রীষ্মকালে ইপিআই (United Press International) এবং আরো গুরূর্ত্বপূর্ণ কিছু সংবাদ সংষ্থাকে জানান তার অনুসন্ধান দলের স্কুবা ডাইভাররা সমুদ্রের তলদেশ থেকে আটলান্টিসের নিদর্শন উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। এই নিদর্শন ঘুলোর মধ্যে ছিল স্তম্ভ আর প্লেটোর বর্ণণা করা সপর্লি রাস্তা।


আর অনেক ইতিহাসবিদ আর প্রত্নত্ত্ববিদরা বিশ্বাস করতে শুরু করেন আটলান্টিসের অস্তিত্ব কারন মায়া পুরাণেও আছে তারা এক প্রলয়ের পর তাদের সমুদ্রের মাঝখানের দেশ থেকে এখানে আসে।

১৯৭০ তে ডক্টর রে ব্রাউন (Dr Ray Brown) বাহামাস এর কাছ থেকে কিছু ধাতব বস্তু এবং আম্চর্য এক ক্রিষ্টাল। যার মধ্যে দিয়ে শক্তি প্রবেশ করলে তা বহু গুণে বর্ধিত হয়। ১৯৬০ সালে ডক্টর ভ্যালেনটাইন (Dr Mansan Valentine) বাহামাস এর সমুদ্রের নীচে প্রাচীন দালান, রাস্তার ছবি তোলেন।

বিভিন্ন পুরোন যেসব ম্যাপ আছে সেখানেও আটলান্টিস নামের ভূখন্ড দেখানো হয়েছে। এমন কি কলম্বাস আমেরিকা যাবার পথ অনুসন্ধান করার জন্য যে প্রাচীন গ্রিক ম্যাপ ব্যবহার করেছিলেন তাতেও আটলান্টিস নামের ভূখন্ড ছিল।


মায়া, মিশর, আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপ এর প্রাচীন পুথি আর পুরাণে সমুদ্র মাঝের ভূখন্ড এবং এর সাথে ব্যাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা আছে।

এক সময় পর্যন্ত এগুলো বেশ মুখোরোচক কাহিনী ছিল। কিন্তু ১৯৮০ সালে স্পেনে আট ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট মানুষের খুলি আবিষ্কৃত হয়, যা পুরা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের অবাক করে দেয়।


তাহলে কি আসলেই আটলান্টিয়ানরা অন্যগ্রহের মানুষ ছিল? নাকি ছিল কোন উন্নত সভ্যতা যা আমাদের অজানা? উত্তর আমার জানা নেই।

মানব ইতিহাসের অন্যতম রহস্যময় বিষয় যার সঠিক উত্তর আজও পাওয়া যায়নি। এটি একটি লোক কথা বা উপকথার মতো যুগে যুগে রয়ে গেছে। বলা হয়ে থাকে, আটলান্টিস একটি উন্নত সভ্যতা যা হাজার হাজার বছর পূর্বে ধবংস হয়ে গেছে বা হারিয়ে গেছে। যদিও এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই তবুও এটি মানুষের মনের আলেয়া হয়ে আজও পৃথিবীতে রয়ে গেছে।

প্লেটো তার একটি সংলাপে যাতে তিমাউস ও ক্রিটিয়াস নামক দুই গ্রিক আটলান্টিসের কথা উল্লেখ করেন। সংলাপের এই দুই চরিত্র উল্লেখ করেন যে, এই সভ্যতাটি ভূমিকম্প বা জলোচ্ছাসের দ্বারা ঐ সময় হতে ৯০০০ বছর পূর্বে ধবংস হয়ে গিয়েছিল। প্লেটোর কথা অনুযায়ী গল্পটি প্রাচীন মিসরীয় পুরোহিতদের কাছ থেকে সংগ্রহীত। কিছু লোকের ধারনা এটি সংলাপের উদ্দেশ্যে প্লেটোর তৈরি একটি কল্প কাহিনী। কিন্তু অনেকেই একে ঐতিহাসিক গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে। পৃথিবীর অধিকাংশ সংস্কৃতিতেই "হারানো সভ্যতার" উপকথা প্রচলিত রয়েছে। কিছু পণ্ডিত মত প্রকাশ করেন যে এসব উপকথার একটি সাধারন ভিত্তি থাকতে পারে, কারন বিভিন্ন দেশের বা সংস্কৃতির এসব উপকথার মাঝে কিছু সামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করা যায়।

আসুন আমরা জানার চেষ্টা করি কিভাবে এই "আটলান্টিস" মিথ এর উৎপত্তি। প্লেটোর সংলাপটি এক্ষেত্রে একমাত্র লিখিত প্রমান যাতে স্পষ্টভাবে আটলান্টিসের কথা বলা হয়েছে। প্লেটোর সংলাপ অনুযায়ী আটলান্টিস একটি উন্নত রাজ্য যার একটি সুগঠিত বিশাল সেনাবাহিনী ছিল। একটি কনফেডারেশনের মাধ্যমে দেশটির শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হতো। শাসকদের নতুন রাজ্য জয়ের আকাঙ্ক্ষার ফলশ্রুতিতে আটলান্টিয়ান সেনাবাহিনী পাড়ি দিল আটলান্টিক মহাসাগর লক্ষ্য ইউরোপ এবং এশিয়া। তাদের এই আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এথেনিয়ান্সরা গঠন করল এক বিশাল কোয়ালিশন বাহিনী। কোয়ালিশন বাহিনী মুখোমুখি হল আটলান্টিয়ানদের। পদে পদে পযুর্দুস্ত হতে হতে তরুপের তাসের মত উড়ে গেল কোয়ালিশন বাহিনী। একে একে ইউরোপ এশিয়ার অনেক দেশ কুক্ষিগত করে ফেলল আটলান্টিয়ানরা। কোয়ালিশন বাহিনী ভেঙ্গে গেলেও জেদী এথেনিয়ান্সরা পণ করেছিল জীবন থাকা পর্যন্ত মাতৃ ভূমি ছাড়বে না। মরনপণ লড়াই করে চলল তারা লক্ষ্য নিজ দেশকে এবং আটলান্টিয়ানদের কবল থেকে অন্য দেশগুলোকে নিজেদের দখলে নেওয়ার। অবশেষে জয় হল সাহসীদেরই। তারা আটলান্টিসও দখল করে নিল। তাদের জয়ের অল্প সময়ের মধ্যেই (এথেনিয়ান্সরা আটলান্টিয়ানদের রাজ্য তাদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে ফেরত আসার আগেই) মহাদেশটিকে ধাক্কা দিল ক্যাটাস্ট্রপিক ভূমিকম্প এবং জলোচ্ছাস। ডুবে গেল একটি আস্ত মহাদেশ।

আটলান্টিসের অস্তিত্বের স্বপক্ষে প্রমানঃ ১৯৭৩ সালে Maxine Asher, আটলান্টিসের খোজে পরিচালিত বৈজ্ঞানিক অভিযানের উপপরিচালক, দাবী করেন যে এই অভিযানের মাধ্যমে তাঁরা সাগর তলে আটলান্টিসের খোঁজ পেয়েছেন। তাঁর তৎকালীন ইউপিআই (United Press International) এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংবাদ সংষ্থাকে জানানো হয়। তিনি আরও বলেন,
“The divers had found evidence of roads and large columns, some with concentric spiral motifs, in the exact place described by the Greek philosopher Plato. This is probably the greatest discovery in World history”
১৯৭০ সালে Dr Ray Brown বাহামার কাছে সমুদ্র তলে একটি পিরামিডের সন্ধান পান। তিনি এবং তাঁর সহকারি ৪ স্কুবা ড্রাইভার সাগর তলে রাস্তার চিহ্ন, ডোম, আয়তাকার ভবন, অপরিচিত কিছু ধাতব যন্ত্রপাতি এবং পিরামিড খচিত এবং ক্রিস্টাল দ্বারা তৈরি একটি “রহস্যময়” দন্ড বাহী ভাস্কর্যের সন্ধান পান। ধাতব যন্ত্রপাতি গুলো এবং ক্রিস্টাল দণ্ডটি পরীক্ষা করার জন্য ফ্লোরিডাতে পাঠানো হয়। ক্রিস্টাল দণ্ডটি পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা আশ্চর্য হয়ে যান। কারন এটি এর ভেতর দিয়ে গমনকারী শক্তিকে বিবর্ধিত করে।
১৯৬০ সালে Dr Mansan Valentine বাহামাস এর সমুদ্রের নীচে প্রাচীন দালান, রাস্তার ছবি তোলেন।

১৯৭৭ সালে Ari Marshall তাঁর অভিযানে বাহামা দ্বিপপুঞ্জে ১৫০ ফুট পানির নিচে একটি বিশাল পিরামিডের অস্তিত্ব খুজে পান। পিরামিডটি প্রায় ৬৫০ ফুট দীর্ঘ। আর রহস্য জনক ব্যাপার হচ্ছে এই পিরামিডটির চারপাশের পানি পিরামিডটির মুখ থেকে নিঃসৃত সাদা জ্বলজ্বলে পানির ঘূর্ণি দ্বারা প্রভাবিত হয় আর চারপাশের পানির বর্ণ সবুজ যেখানে একই গভীরতায় অন্যান্য স্থানের পানি কাল বর্ণের।

Boris Asturua নামক এক সোভিয়েত তাঁর অভিযানের মাধ্যমে পর্তুগালের ৪০০ মেইল দূরে এক ডুবন্ত শহরের খোঁজ পান। তিনি বলেন রাস্তার চিহ্ন গুলো দেখে বোঝা যায় এতে রেলপথ রয়েছে। তিনি সেখান থেকে একটি ভাস্কর্য সংগ্রহ করেন। এছারাও সাগরের গভিরে পাঁচ একর জুড়ে পিলারের উপর উত্থাপিত নগর দুর্গের সন্ধান পাওয়া গছে যা গ্রীক সম্রাজ্যের সময়কালে তৈরি নগর দুর্গের অনুরূপ।

Heinrich Schilemann ট্রয় নগরীর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। ফলে ট্রয় নগরীর কাহিনির কিছু প্রমান পাওয়া যায় যাকে এর পূর্বে ঐতিহাসিকগণ মিথ হিসেবে বিবেচনা করতেন। তিনি তাঁর অভিযানের মাধ্যমে পাওয়া অনেক জিনিসের মধ্যে একটি ব্রোঞ্জের তৈরি বাক্সের মধ্যে সংরক্ষিত কিছু অজানা ধাতব বস্তু খুজে পান। বাক্সটিতে পাওয়া তথ্য গবেসনা করে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে এটি আটলান্টিসের রাজা ক্রোনোস এর পক্ষ থেকে ট্রয়ের রাজা প্রিয়ামের জন্য উপহার।

এছাড়াও ভূপৃষ্ঠে কিছু কিছু স্থানে এমন পুরনো ভবন, রাস্তার চিহ্ন পাওয়া গেছে যা ঐ স্থানের অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্যের চেয়ে ভিন্ন। অনেক প্রাচীন মানচিত্রেও আটলান্টিসের অবস্থান দেখতে পাওয়া যায়।

আটলান্টিয়ানদের পরিচিতিঃ আটলান্টিস শুধু একমাত্র মহাদেশ নয় যা সাগর গর্ভে নিমজ্জিত হয়েছিল। সেসময় Lemuria নামক বিশাল মহাদেশ ছিল যার সাথে Mu এবং Mar নামক দুটি দেশও ছিল। এর অবস্থান ছিল এখনকার প্রশান্ত মহাসাগরের স্থলে। আরও ছিল লুমানিয়া নামক মহাদেশ যা এখনকার ভারত মহাসাগরের স্থলে ছিল। বর্তমানে এসব মহাদেশের বিশাল পাহাড়ের চূড়াগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপের সৃষ্টি করেছে। যেমন ধারনা করা হয় Easter Island লিমুরিয়া এর একটি অংশ যেখানে এখনও একটি বিশালাকৃতির পাথরের ভাস্কর্য আছে, যদিও ভাস্কর্যটির শুধুমাত্র মাথার অংশটুকু সমুদ্র সমতলের উপরে রয়েছে।

এছাড়াও পৃথিবীর উত্তর অংশে Thule এবং Hyperborea নামক মহাদেশ ছিল যা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধ্বংস হয়ে গিয়ে বর্তমানে উত্তর মেরুর সৃষ্টি হয়েছে। ধারনা করা হয় যে দক্ষিন মেরুতেও অতীতে একটি মহাদেশ ছিল। এই মহাদেশগুলো কিভাবে এত উন্নতির শিখরে পৌঁছেছিল তা আজও রহস্যময় আবার এই সভ্যতার ধ্বংসও রহস্যময়।


আটলান্টিয়ানরা কারা এবং তারা কিভাবে জীবনযাপন করতো? এসব প্রশ্নের উত্তর খোজার জন্য বিভিন্ন উৎস হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ধারনা করা হয় প্রকৃত আটলান্টিয়ানরা ভিন্ন গ্রহ থেকে পৃথিবীতে এসেছিল প্রায় ৫০০০০ বছর পূর্বে। তারা দেখতে এখনকার মানুষের মতই ছিল। শুধু পার্থক্য ছিল তাদের দেহের দৈর্ঘ্যে। তারা প্রায় ৮ থেকে ১২ ফুট লম্বা দেহের অধিকারী ছিল। Book of Genesis এ এদের বর্ণনা পাওয়া যায়। আরও জানা যায় যে তাদের জীবনকাল ছিল ৮০০ বছর।

প্রায় সব প্রাচীন সভ্যতায় দৈত্যাকৃতি মানুষ জাতির কথা বলা আছে। এসব ৮ থেকে ১২ ফুট লম্বা মানুষের উপকথা গুলোকে মিথ ভাবা হতো। কিন্তু ১২ ফুট লম্বা মানুষের কিছু কঙ্কাল আবিষ্কৃত হওয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিস্মিত হন এবং বিজ্ঞানীরাও নড়েচড়ে বসেন। এছাড়াও স্প্যানিশ অভিযাত্রীদের লিপিবদ্ধ ইনকা অভিযানের ঘটনায় ৮-১২ ফুট লম্বা সোনালী চুল এবং নীল চোখের মানুষের বর্ণনা পাওয়া যায়। Genesis চ্যাপ্টার ৬ ভার্স ১৬ তে এসব বিশালাকৃতির মানুষের কথা বলা আছে এবং এর সাথে বলা আছে,
"When the sons of the Elohim came unto the daughters of man, and they bore them children"
আটলান্টিয়ানদের প্রযুক্তিঃ আটলান্টিয়ানদের প্রুযুক্তি, জ্ঞান এবং ধ্যানধারণা অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতা থেকে ভিন্ন ধরনের ছিল। তারা চতুর্মাত্রিক এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ের উপর পারদর্শী ছিল। সমসাময়িক অন্যান্য সভ্যতার তুলনায় প্রযুক্তিগত ভাবে আটলান্টিয়ানরা অনেক উন্নত ছিল। ধারনা করা হয় কিছু কিছু ব্যাপারে তারা এখনকার পৃথিবীর চেয়েও অগ্রগামী ছিল।

তাদের অর্জিত প্রযুক্তির মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হল ‘আবহাওয়া নিয়ন্ত্রন’, যার দ্বারা তারা প্রচুর খাদ্যশস্য উৎপাদনে সক্ষম ছিল। তারা পুরো বছরই প্রচুর খাদ্যশস্য উতপাদন করত। কোন কিছুরই অভাব ছিলনা তাদের। দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র, ক্ষুদা ইত্যাদি তাদের স্পর্শ করতনা। কিন্তু এত প্রাচুর্যের মধ্যে থেকেও তাদের জীবনটাকে একঘেয়ে লাগতে শুরু করল। জীবনে পরিবর্তন আনতেই তারা অভিযান করে নতুন কিছু জানার নেশায়।

ভূতাত্ত্বিক ঘটনা যেমন অগ্নুৎপাত, জলোচ্ছ্বাস এসব কিছু তারা প্রভাবিত করত বলে ধারনা করা হয়। কিন্তু একসময় তারা তাদের চিত্তবিনোদনের জন্য অগ্নুৎপাত, জলোচ্ছ্বাস, লাভার ঝর্না এসব ইচ্ছেমত পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকল। ধারনা করা হয় যে এভাবে একসময় তারা ভূতাত্ত্বিক এসব বিষয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং ধ্বংসের মুখে পরে। আটলান্টিয়ানদের মধ্যে ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের ব্যবহার বেস ব্যাপক ভাবে ছিল। তারা ক্রিস্টাল এর প্রতিসরণ, বিবর্ধন এবং সংগ্রহণ ক্ষমতার উপর প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেছিল। ক্রিস্টাল এর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি কোন শক্তিকে বিবর্ধিত করে। এটি এর ভেতর দিয়ে গমনকারী শক্তিকে বিবর্ধিত করে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে নিয়ে আসে এবং এরপর তাকে স্থানান্তরিত বা ট্রান্সমিট করে বা বিক্ষিপ্ত করে। অপর একটি অনুরূপ ক্রিস্টালকে সংগ্রাহক বা রিসিভার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এরপর সেই রিসিভার ক্রিস্টালটি ট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে যা অপর একটি ক্রিস্টালে শক্তি স্থানান্তর করে। আটলান্টিয়ানরা এমন একধরনের ক্রিস্টালের তৈরি বিশাল পিরামিডগুলোকে শক্তি নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করত। বিষয়টা একটু গভির ভাবে ভেবে দেখুন। যখন পৃথিবীর একপ্রান্ত শক্তির উৎসের দিকে মুখ করে থাকে তখন ঐ প্রান্তের পিরামিডটি শক্তিটিকে বিবর্ধিত করে দূরবর্তী এবং সঠিক গননার মাধ্যমে স্থাপিত আরেকটি পিরামিডে শক্তি ট্রান্সমিট করে যা রিসিভার হিসেবে কাজ করে। এভাবে পর্যায়ক্রমে তারা শক্তি স্থানান্তরিত এবং ব্যবহার করত। এ পদ্ধতিতে যখন কোন পিরামিডে শক্তির ঘাটতি হয় তখন অপর পিরামিড গুলো তার প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। খুবই সহজ সরল এবং কার্যকরী পদ্ধতি। কিন্তু নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে না চলায় পরে এ পদ্ধতি তাদের ধংসের কারন হয়েছিল।

গ্রীক দার্শনিক ক্রেন্টরই (খ্রীঃপূঃ ৪০০) প্রথম আটলান্টিসের অস্তিত্ব নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা শুরু করেছিলেন। তিনিও তাঁর রচনায় আটলান্টিস সম্পর্কে তথ্যের সূত্র হিসেবে ঈজিপ্টশিয়ান নগরী সাইসের শিলালিপির কথা উল্লেখ করেন। ষষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত বিভিন্ন বিখ্যাত দার্শনিক এবং পন্ডিতদের বিলুপ্ত মহাদেশটির অজানা তথ্য জানার জন্য রাতের ঘুম হারাম করার নজির পাওয়া যায়। তারপর হঠাৎ একদিন সব কেমন জানি স্তব্ধ হয়ে গেল। আটলান্টিস হয়ে রইল একান্তই প্লেটোর কল্পনা। ধীরে ধীরে যেন গল্পটি সবার স্মৃতিতে ফ্যাকাসে হয়ে গেল।

আটলান্টিসের পুনরুত্থান আরো ৯০০ বছর পর। সময়টি জাগরণের, ঘুম ভেঙ্গে পৃথিবীর জেগে উঠার, সময়টা রেঁনাসার। জেগে উঠে আটলান্টিস নামের আলেয়াটাও। এবার আটলান্টিসের অস্তিত্বের পক্ষে ওকালতি করার জন্য অনেক পন্ডিত জুটে গেলেন, তবে বিরুদ্ধ পক্ষও যে ছিল না তা কিন্তু নয়। অর্থাৎ পক্ষ বিপক্ষ সবাইকে নিয়ে বিশ্ব রঙ্গমঞ্চে আবার সদর্পে ফিরে আসল আটলান্টিস।

পন্ডিত সমাজে বিতর্কটা ঝড় তুললেও সাধারণ মানুষেরা এর সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। সাধারণ জনগণ এই রহস্যের সংস্পর্শে আসতে আসতে পেরিয়ে যায় আরো প্রায় ৩০০ বছর অর্থাৎ ঊনবিংশ শতাব্দীতে। আর এই কাজটি করলেন ঔপন্যাসিক ইগ্নাটিয়াস ডোনেলি (১৮৩১-১৯০১) তাঁর 'Atlantis: The Antediluvian World' বইটির মাধ্যমে। বইটিতে তিনি আটলান্টিস সম্পর্কিত পৌরাণিক কাহিণী এবং জনশ্রুতির সম্মিলন ঘটান।

ইগ্নাটিয়াস ডোনেলি
কাহিণী গুলোতে হারিয়ে যাওয়া সভ্যতাটার বর্ণনার কিছু ভিন্নতা থাকলেও মহাদেশটির অস্তিত্ব সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য ছিল না। এসব তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ডোনেলি এই উপসংহারে পৌছেন যে, স্বর্গ সদৃশ এক সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল আটলান্টিসে। তিনি ভৌগলিক একটা ধারণাও দিলেন মহাদেশটির। শুধু তাই না তিনি দাবী করলেন সেই সভ্যতা নতুন আর পুরানো পৃথিবীর মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি করেছিল।

এভাবেই মানুষের মনে ধীরে ধীরে অবয়ব পেতে থাকল এক প্রাচীন ‘সুপার সিভিলাইজেসন’। এর পক্ষে বিপক্ষে চলতে থাকল অবিরাম তর্ক বিতর্ক। এভাবে পরিমার্জিত হয়ে উঠতে থাকল কাহিণীটি। ঝরে পড়তে থাকল এর কাল্পনিক অংশগুলো।

আটলান্টিস নিয়ে অনেক রচনা থাকলেও ডোনেলিয় মূলত আকর্ষণটা বিশেষজ্ঞদের টেবিল থেকে সাধারণদের কাতারে এনে ফেলেন। তিনি যখন আটলান্টিকের মধ্যিখানে একটি সভ্যতার হারিয়ে যাবার করুণ গাঁথা রচনা করেন তখনই সবাই সেই ডুবে যাওয়া মহাদেশটির প্রতি এক অমোঘ আকর্ষণ অনুভব করে। ১৯০৯ সালে দ্যা টাইমসে প্রত্নতাত্ত্বিক কে.টি. ফ্রস্টের আটলান্টিস বিষয়ক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এখানে তিনি দাবী করেন আটলান্টিস সভ্যতাটা গড়ে উঠেছিল দ্যা মেডিটেরিয়ান আইল্যান্ড অফ ক্রীটের প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতির উপর ভর করে। আর কি চাই বলুন? এভাবেই ফ্রস্টের সংস্কৃতি বিষয়ক ব্যাখা আর ডোনেলির ভৌগলিক সীমারেখা নির্ধারণের মধ্য দিয়ে আটলান্টিস হয়ে উঠতে থাকে মায়া, ইনকা, সভ্যতার মত অতিবাস্তব একটা বিলুপ্ত সভ্যতা।


আটলান্টিসের গল্পঃ অনেক আলোচনা হল আসুন এবার সংক্ষেপে মিথটা বলি।

একটা কনফেডারেসনের মাধ্যমে চলত দেশটার শাসন ব্যবস্থা। বিশাল আটলান্টিয়ান সেনাবাহিনী পাড়ি দিল আটলান্টিক মহাসাগর লক্ষ্য ইউরোপ এবং এশিয়া। তাদের এই আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এথেনিয়ান্সরা গঠন করল এক বিশাল কোয়ালিশন বাহিনী। কোয়ালিশন বাহিনী মুখোমুখি হল আটলান্টিয়ানদের। পদে পদে পযুর্দুস্ত হতে হতে তরুপের তাসের মত উড়ে গেল কোয়ালিশন বাহিনী। একে একে ইউরোপ এশিয়ার অনেক দেশ কুক্ষিগত করে ফেলল আটলান্টিয়ানরা। কোয়ালিশন বাহিনী ভেঙ্গে গেলেও জেদী এথেনিয়ান্সরা পণ করেছিল ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদেনী’। মরনপণ লড়াই করে চলল তারা লক্ষ্য নিজ দেশকে এবং আটলান্টিয়ানদের কবল থেকে অন্য দেশ গুলোকে নিজেদের দখলে নেওয়ার। অবশেষে জয় হল সাহসীদেরই। তারা আটলান্টিসও দখল করে নিল।

তাদের জয়ের অল্প সময়ের মধ্যেই (মহানুভব এথেনিয়ান্সরা আটলান্টিয়ানদের রাজ্য তাদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে ফেরত আসার আগেই) মহাদেশটিকে ধাক্কা দিল ক্যাটাস্ট্রপিক ভূমিকম্প এবং জলোচ্ছ্বাসে ডুবে গেল একটি আস্ত মহাদেশ।

আপনাদের সেই সোলনের কথা মনে আছে নিশ্চয়, তাঁরও আটলান্টিস নিয়ে একটা গল্প ছিল। এখন সেটা বয়ান করি।

সোলনের মতে আটলান্টিসের ইতিহাস সূচনা হয় পৃথিবীর শুরুর দিকে। এটা সে সময় যখন পৃথিবীতে বিচরণ ছিল অমর দেবতাদের। তাঁরা সমগ্র পৃথিবীকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিলেন। দেবতা পসেডিয়ানের ভাগে পড়েছিল আটলান্টিস, যে ভুখন্ড কিনা লিবিয়া এবং এশিয়ার মিলিত ভূখন্ডের চেয়েও বৃহৎ ছিল। তিনি স্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন একজন সাধারণ মানবীকে নাম ক্লিয়েটো এবং এই ক্লিয়েটোর মাধ্যমেই পত্তন ঘটে আটলান্টিসের রাজপরিবারের।

দেবতা পসেডিয়ান তাঁর প্রিয়তমা পত্নী ক্লিয়েটোর জন্য দ্বীপের ঠিক মাঝখানে পাহাড়ের উপর গড়েন এক সুরোম্য অট্টালিকা। সেই অট্টালিকাটিকে সুরক্ষিত করার জন্য তিনি ওটার চারপাশে গড়ে তোলেন পাঁচটি জল ও স্থলের চক্র। সৃষ্টি করলেন উষ্ণ এবং শীতল পানির ঝরনা অর্থাৎ ভবিষ্যত নগরায়নের সব ব্যবস্থা তিনি সম্পন্ন করে রাখেন।

ক্লিয়েটোর কোল আলো করে আসে দেবতা পসেডিয়ানের পাঁচ জোড়া সন্তান। এটলাসকে, যিনি ছিলেন প্রথম জোড়ার প্রথম জন, তার পিতা এ সমগ্র ভূখন্ডের রাজা হিসেবে নিয়োগ করেন। তাঁর অন্য সন্তানেরা হন রাজকুমার এবং তাদেরকে দ্বীপটির বিভিন্ন অংশের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এটলাসেরো অনেক গুলো সন্তান ছিল এবং রাজমুকুট বংশ পরম্পরায় জেষ্ঠ্য সন্তানের মাথাতেই উঠত।

বহু বছর ধরেই আটলান্টিসের অধিবাসীদের জীবনযাত্রা ছিল শান্তিপূর্ণ এবং উন্নয়নশীল। অধিবাসীদের অধিকাংশ চাহিদাই দ্বীপের খনি, চাষের জমি এবং বন থেকেই মিটে যেত। অবশিষ্ট রপ্তানী হত দ্বীপটির বাইরে থেকে।

দেবতা পসেডিয়ান আটলান্টিসের জীবনযাত্রাকে সুশৃঙ্খল জন্য কিছু আইন তৈরী করেন। কোন একক শাসক নয় বরং দশ জনের এক শাসকগোষ্ঠি পরিচালনা করত এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে (এটলাস এবং তার বাকি নয় জন ভাই, যারা পরাক্রমশীলতার সাথে রাজত্ব করেছিলেন)। শাসক চক্রের সব সদস্য নিয়মিত মিলিত হত দেবতা পসেডিয়ানের মন্দিরে। সেই প্রাচীন বৈঠকের শুরুতে তারা একে অপরকে সম্ভাষন করতেন। তারপর একটি তেজী ষাঁড়কে ধরে প্রথমে সেটাকে হত্যা করে রক্ত সংগ্রহ করা হত এবং পরবর্তীতে ষাঁড়টিকে স্বর্গের দেবতাদের উদ্দেশ্যে পুরানো হত আগুনে। ষাঁড়ের রক্ত ওয়াইনের সাথে মিশিয়ে কিছুটা ছিটানো হত আগুনের উপর। আর বাকি ওয়াইনের স্থান হত দশটি স্বর্ণ পাত্রে। প্রত্যেকে সেই পাত্র আগুনের সামনে উচিয়ে পিতৃদেব প্রদত্ত আইন সঠিক ভাবে পালনের শপথ করতেন। শপথ গ্রহণ ও পাণীয় পানের পর স্বর্ণ পাত্রগুলো উৎসর্গ করা হত মন্দিরে।

সর্বশেষে থাকত এক প্রীতি নৈশ ভোজ যেখানে দ্বীপের অধিকর্তারা পসেডিয়ানের আইনানুযায়ী রাজ্য পালনের কর্মপন্থা ঠিক করতেন।

এভাবে ভালই কাটছিল দিন। বিচক্ষণ পসেডিয়ানের প্রদর্শিত পথে আটলান্টিস হয়ে উঠছিল স্বর্গের জন্যেও ঈর্শনীয়। কিন্তু পসেডিয়ানের বংশধরদের রক্তে যে মানুষেরও সংমিশ্রণ ছিল, আর মানুষ যে ভুলেরই সমার্থক। তারা যখন ধীরে ধীরে পসেডিয়ানের নিয়মকানুন ভুলে যেতে বসল তখনই শুরু হল বিপত্তি। বেশির ভাগ শাসকই সাধারণ মানুষকে বিয়ে করল, তাদেরর আচরণ হয়ে উঠতে লাগল নির্বোধের মত। তাঁরা দেবতাদের কথা ভুলে হয়ে উঠতে লাগল স্বেচ্ছাচারী ও ক্ষমতালোভী, লালায়িত হতে লাগল আরো বৃহৎ ক্ষমতার জন্য।

দেবরাজ জিউস উপর থেকে সবই পর্যবেক্ষণ করলেন, দেখলেন কিভাবে মানুষেরা কিভাবে দেবতাদের অনুশাস্ন ভুলে হয়ে উঠেছে শয়তানের দাস। অলিম্পাসে বসল দেবতাদের বৈঠক আর ঘোষিত হল আটলান্টিসের ভাগ্য, এরপরের ইতিহাস সবারই জানা।

এই আটলান্টিসকে খোঁজা নিয়ে একটা প্রামান্য অনুষ্ঠান বানিয়েছে Nation Geography নামে বিখ্যাত টিভি চ্যানেল এবার আসুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক ভিডিওটি,



ভিডিও দেখে নিশ্চই আরো বেশি দ্বিধায় পরে গেলেন? এখানে দেখানো হয়েছে এই আটলান্টিস আছে ভূমিতে অবশ্য আবার দেখানো হয়েছে তা আছে পানিতে! আসলে আছে কোথায়?

এবার ভূমির নিচে থাকার পক্ষে সব থেকে বড় যুক্তি হিসেবে যেটা দ্বার করিয়েছে সেটি নিয়ে একটু আলোচনা করি।

মিথেন গ্যাসের লেয়ার
প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। এই গ্যাস কিভাবে তৈরি হয় তা কি জানেন? এই গ্যাস তৈরি হয় বহুবছর ধরে মাটির নিচে চাপা পরে থাকা জীব দেহ থেকে। এখানে তারা ভূমিকে স্ক্যান করে একটা নির্দিষ্ট লেয়ারে এই মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছেন। তার মানে এই ভূমির এই লেয়ারে অনেক প্রানী কোন এক সময়ে এক সাথে মাটির নিচে চাপা পরেছে। এখন আবার একটু মনে করিয়ে দেই। বলা হয়, এই আটলান্টিস শহর একদিনেই সম্পূর্ন ধ্বংস হয়েছে। আর এই মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি তাই প্রমান করে।


এছাড়াও আটলান্টিস এর গঠন অনুসারে এর চারপাশে গোল করে তিনটি লেয়ারে মানুষের তৈরি পানির লেক ছিল আর এই লেকে মধ্যে দিয়ে আসা যাওয়ার জন্য ছিল মাত্র একটি পথ। আর কর্দমাক্ত অঞ্চলে স্যাটালাইটের মাধমে যে ছবি পাওয়া যায় তা এরকম গঠনের রূপ রেখা দেয়।

কিন্তু এখানে খোড়া খুড়ি করা সম্ভব হয় নাই। কেননা এতে যে পরিমান অর্থের প্রোয়জন তা তাদের কাছে নেই। তবে ভবিষ্যতে যে এখানে কোন প্রকার অনুসন্ধান চালানো হবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

এইতো জানা হয়ে গেল এই হারিয়ে যাওয়া শহর নিয়ে অনেক কিছু। এখন এর অস্তিত্ব সত্যি সত্যি আছে কি নেই তার বিচার আপনারাই করবেন। কেননা মারমেইডের মত এই কল্পপুরির শহর যদি সত্যি বাস্তব রূপ নেয় তাহলে নিশ্চই মন্দো হবে না।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

৮টি মন্তব্য:

  1. copy korei fellam :) ha ha ha. site woner you think ??????

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. অনেক কষ্টে লেখা... দয়া করে লেখকের নাম ব্যবহার করেন...

      মুছুন
  2. আমি কি ভিডিও তৈরিতে এইটা ব্যবহার করতে পারি

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. করুন... কিন্তু অনুরোধ রইল আমাদের ক্রেডিট দেবার জন্য... :)

      মুছুন
  3. আমি কি ভিডিও তৈরিতে এইটা ব্যবহার করতে পারি

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. করুন... কিন্তু অনুরোধ রইল আমাদের ক্রেডিট দেবার জন্য... :)

      মুছুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info