পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি

প্রিয় পাঠিকাগণ,

পহেলা বৈশাখের সপ্তাহ দুয়েক আগে কিছু কাজের জিনিস শিখিয়ে দিই। বাংলাদেশের সমাজ যদি চিনে থাকেন, জেনে নিন, ভীড়ের মধ্যে আপনার শ্লীলতাহানী করতে ইতোমধ্যেই তৈরি হচ্ছে বরাহের দল। যখন এধরণের কিছুর শিকার হবেন, কেউ আপনাকে সহায়তা করবেনা বলেই ধরে রাখুন। কাউকে এগুলো বললে সে বরং মনে মনে সুখ নেবে বিষয়টা কল্পনা করে, এটাই বাস্তবতা।

সুখের বিষয় হচ্ছে, আপনার কাউকে দরকারও নেই।

বাংলাদেশে মেয়ে হয়ে জন্মানো মোটামুটি আজন্ম পাপ, আমি এমন কোন মেয়েকে চিনিনা যে জীবনের কোন এক পর্যায়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়নি। বড় ধরণের কিছু না হলে কেউ ঝামেলার ভয়ে থানাপুলিশ করতেও চায়না।

উপায় একটাই, নিজের ব্যবস্থা নিজের করে নেয়া। শরীরে অপ্রীতিকর স্পর্শ পাওয়ামাত্র বিনা দ্বিধায় স্পর্শকারীকে কিভাবে পিটিয়ে হালুয়া বানাবেন এই নিয়ে আজকের পোস্ট।


মানব শরীরে তিনটা দুর্বল জায়গা যেখানে সামান্য আঘাতেই অতি বড় পালোয়ানও কুপোকাৎ হয়ে যেতে বাধ্য। এই তিনটা জায়গা হচ্ছে চোখ, অণ্ডকোষ এবং কণ্ঠনালীর নীচের নরম জায়গাটি। কয়েকটা ছবি দিচ্ছি গুগল করে, এগুলো দেখুন এবং আগামী দুই সপ্তাহ বন্ধুবান্ধব/ভাইবোন মিলে অনুশীলন করুন (অনুশীলনের সময় সতর্ক থাকবেন যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে)।


হাত মুঠ করে অণ্ডকোষে আঘাত করতে, আঙুল দিয়ে চোখে গুঁতো দিতে বা কনুই দিয়ে পেছনে কারো তলপেটে আঘাত করতে ব্রুস লী হওয়া লাগেনা, লাগে বাসার বালিশ নিয়ে কাজিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওটার উপর পাঁচবার অনুশীলন।

বাসায় ভাই/বোন/বাবা/মা আছেন না? তাঁদের বলুন শক্ত করে বালিশ ধরে দাঁড়াতে। যে জায়গায় আঘাত করা অনুশীলন করবেন, সে জায়গায় বালিশ ধরতে বলুন যাতে আপনার করা আঘাত বালিশে গিয়ে লাগে। পুরো শক্তিতে মারবেন না প্রথমে, আগে শিখুন কিভাবে মারবেন। পাঁচবার অনুশীলন করুন আস্তে, তারপর যিনি বালিশ ধরে আছেন তাঁকে বলুন বালিশ যেন শরীর থেকে দূরে ধরে( চাইলে কোলবালিশ নিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়েও অনুশীলন করতে পারেন, তবে ভুলে আবার দেয়ালে মেরে বসবেন না!)

সর্বশক্তিতে আঘাত করা প্রাকটিস করুন।অতি অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবেন।


আমি রেকমেন্ড করছি নীচের পাঁচটি মুভঃ
  • কনুই দিয়ে পেছনের বদমায়েশের পেটে প্রচন্ড জোরে আঘাত।
  • হাত দিয়ে পেছনে দাঁড়ানো বদমায়েশের অণ্ডকোষে আঘাত।
  • হাতের থাবা দিয়ে চোখ/নাকে আঘাত।
  • অণ্ডকোষ/তলপেট বরাবর হাঁটু দিয়ে আঘাত (শাড়ি পরে লাত্থি মারাটা কঠিন। জিন্স/পাজামা হলে লাত্থি দিতে সুবিধা )
  • হাঁটু বরাবর সজোরে লাত্থি (হাঁটু উচ্চতায় বালিশ রেখে প্রাকটিস করুন)
এই মুভগুলো অথবা আপনার পছন্দ হয় এরকম যে কোন মুভ গুগল/ইউটিউব থেকে দেখে বাসায় এই দুই সপ্তাহ অন্তত প্রতিদিন দশ মিনিট করে প্রাকটিস করে নিন।

মনে রাখবেন, একজন সত্যিকারের পুরুষ কখনোই আপনার বিনা অনুমতিতে মরে গেলেও আপনাকে বাজেভাবে স্পর্শ করবেনা। যারা এটা করে, তারা তেলাপোকারও অধম, তার শরীরের সাইজ যাই হোক না কেন। আপনার সামান্য প্রতিরোধ, একটুখানি সাহস এই নর্দমার কীটগুলোর হাত থেকে আপনাকে এবং সমাজকে বাঁচাতে পারে।

নিজেকে রক্ষা করতে যতটা দরকার, সেটুকু শক্তি প্রয়োগ করতে এক বিন্দু দ্বিধা করবেন না। বাংলাদেশের (বা ভারতের) পেনাল কোডের ধারা ১০০ গুগল করুন, দেখবেন আইন আপনার সাথেই আছে।

ভীড়ে কেউ গায়ে হাত দিলে দয়া করে চেপে যাবেন না। Be Brave. Shout. Create a Scene. Fight Back.

মনে রাখবেন, চুপ থাকতে থাকতেই আজ এই অবস্থা। It's Time To Fight Back!!!

(আর্টিকেলে দুটো প্রশ্ন বার বার এসেছে, উত্তরগুলো সংযুক্ত করে দিলাম)

“একসাথে অনেকে আসলে কি করব? তখন কি এইটা কাজে আসবে?”
– জ্বি, আসবে। হাতের কাছে যেইটারে পাবেন ওইটারে দিয়ে শুরু করবেন। তেলাপোকার দল একা আসলেই কি একশ আসলেই কি, একটারে মাইর খেতে দেখলে বাকিগুলা পলায়ে কুল পাবেনা। এদের মাইন্ডসেট বুঝতে চেষ্টা করেন, এরা আপনার কাছ থেকে কোন প্রতিরোধ আশা করবেনা। সারপ্রাইজ দেন। আরো ভাল হয় যদি তিন চার জন একসাথে থাকেন। ওরা দল বেঁধে আসলে আপনিও দল বেঁধে প্রতিরোধ করবেন।

“এত ঝামেলা না করে পহেলা বৈশাখে বের না হলেই তো হয়?”
– না, হয়না। হায়েনার দল প্রতিটা জায়গায় আছে, কয় জায়গাতে যাওয়া বন্ধ করবেন? ঈদের সময়, বাংলাদেশের খেলার সময়, নববর্ষের দিন, মার্কেটের ভীড় এমনকি রাস্তার জ্যামে- সব জায়গায় এরা লোল ফেলে শিকার খুঁজে বেড়ায়। বদমায়েশদের ভয়ে রাস্তায় বের হওয়া যাবেনা এই ধারণার সাথে নীতিগতভাবে আমি তীব্র দ্বিমত পোষণ করি। আজকে আপনি এদের ভয়ে ঘরে থাকবেন, কালকে এরা ঘরে ঢুকে আপনাকে ছিঁড়ে খাবে। ইট হ্যাজ টু স্টপ ইন দা বিগিনিং।

পুলিশ একাডেমিতে আলফা কোম্পানির ড্রিল প্রশিক্ষক আকবর ওস্তাদ একটা জিনিস শিখিয়েছিলেন- “স্যার, আপনি এসপি হন আর আইজি হন, মনে রাখবেন, আপনার বডিগার্ড সবার আগে আপনি নিজে”

এই কথাটা শুধু পুলিশ না, প্রত্যেকের জন্যে প্রযোজ্য। বাংলাদেশের মেয়েদের মূল সমস্যা তাদের সক্ষমতায় নয়, মাইন্ডসেটে। বছরের পর বছর সমাজের ভুল কন্ডিশনিং এর ফলে একটা মেয়ে নিজেকে দুর্বল ভাবতে শেখে, আর এর সুযোগ নেয় হায়েনার দল। আমাদের মেয়েরা খুব ভালোভাবেই সক্ষম নিজেকে রক্ষা করতে, শুধু প্রয়োজন মাইন্ডসেট পাল্টানো।

এই লক্ষ্যেই গতকাল এবং আজকের লেখা।

প্রথমে আসি গতকালকের সবচাইতে কমন প্রশ্নে। দল বেঁধে বিশজন একসাথে আপনাকে টার্গেট করলে কি করবেন এই প্রশ্নটা অনেকেই করেছেন। আমি Worst Case Scenario এর কথা লিখছি, ধরুন আপনি একা আর ওরা বিশ জন।

জেনারেল আইজেনহাওয়ারের একটা কথা আছে: 'Its Not The Size Of The Dog, It's The Size Of The Fight In The Dog That Matters Most.'

বিপদের মুখে আপনি কতটা এ্যাগ্রেসিভ এটাই আপনার পরিণতি ঠিক করে দেবে। আমি বার বার একটা জিনিস বলি, আপনারা Criminal Mindset মিস করছেন। ভীড়ের মধ্যে একটা মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে যৌনসুখ পায় কোন ধরণের পুরুষ? যে পুরুষের সাহস নেই সুস্থ্য, ভদ্রোচিত উপায়ে একটা মেয়েকে প্রপোজ করার। এই কুকর্মটি করতে যার আবার দল বেঁধে যেতে হয়, এরা রাস্তার নেড়ি কুকুরের চাইতেও ভীতু, কুকুর তো তবু দূরে গিয়ে হলেও হাঁকডাক দেয়। এদের একটাই অস্ত্র, আপনি প্রতিবাদ না করে চেপে যাবেন এই বিশ্বাসটুকু।

'Dear Sister, Don’t Give The Bastard The Pleasure.'

যে মুহুর্তে বুঝলেন কেউ আপনাকে বাজেভাবে স্পর্শ করছে, 'Raise Hell Around You. Scream At The Top Of Your Voice.'

আগে থেকেই সতর্ক থাকুন কে করতে পারে আশেপাশে, তারপর আপনার গায়ে হাত দেয়ামাত্র ধরে ফেলুন। যদি দশ-পনের জন একসাথে আসে, সবচেয়ে কাছে যেটাকে পাবেন ওটাকে দিয়ে শুরু করুন। Go Completely Insane.

কোথায় কোথায় আঘাত করবেন বলে দেইঃ

চোখঃ হাতের পাঁচ আঙুল দিয়ে থাবা বানিয়ে সর্বশক্তিতে গুঁতো দিন
নাকঃ হাতের তালু এবং কবজির সংযোগস্থল দিয়ে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা দিন
হাঁটুঃ লাত্থি দিন যে কোন দিক দিয়ে
গলাঃ হাতটাকে ছুরির মত বানিয়ে প্রচন্ড জোরে আঘাত করুন।
অন্ডকোষঃ লাত্থি মারুন, হাত দিয়ে সজোরে বাড়ি দিন।
ছবিতে বিস্তারিত দেখানো আছে, দেখুন।

মনে রাখবেন, নিজেকে রক্ষা করার পূর্ণ আইনগত অধিকার আপনার আছে (পেনাল কোড ধারা একশ দেখুন)। যে মুহূর্তে আক্রান্ত হচ্ছেন, মানবতা সভ্যতা ইত্যাদি ভুলে যান। এমন ধোলাই দিন যেন আর এ জীবনে কোন মেয়ের গায়ে হাত দেবার কথা দুঃস্বপ্নেও না ভাবে।

আমার প্রশিক্ষক তমাল ভাই একটা মজার ঘটনা শেয়ার করেছেন। তার এক ছাত্রী এরকম একসাথে দশ বারোজনের আক্রমনের শিকার হল। একটুও ভয় না পেয়ে সে রাস্তা থেকে একটা থান ইঁট তুলে নিয়ে চিৎকার করে বলল, “আয়, কে আগে মরতে চাস আয়”। মেয়েটির আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখে সব কয়টা সুড়সুড় করে দৌড়!

আড়ালে আবডালে হাত দিয়ে স্পর্শসুখ নিতে চাওয়া কাপুরুষ থান ইঁটের বাড়ি খেতে চাইবেনা- এই সহজ সরল সত্যটা মনে রাখতে পারলেই আপনি নিজেই বুঝবেন কি করতে হবে।

চুলের কাঁটা, সেফটিপিন, আলপিন, চোখা পেনসিল- এগুলো দারুণ অস্ত্র বদমায়েশদের সাইজ দেবার। এগুলো কিছুই যদি না থাকে, দাঁত আর নখ তো আছে, তাইনা? কামড় দিয়ে গায়ের মাংসসুদ্ধো তুলে নিন, নখ দিয়ে আঁচড়ে ছিন্নভিন্ন করে দিন মুখমন্ডলের চামড়া।

'When you’re attacked, DO NOT be civil. Be wild. Make the bastard realize that he messed with the wrong girl.'

এবার নীচের বিষয়গুলো মাথায় রাখুনঃ
  • মানসিক প্রস্তুতি নিন যে আপনার উপর আক্রমণ হতে পারে। ভীড়ে অসতর্ক থাকবেন না, চারপাশে ঘন ঘন নজর রাখুন। আপনার ঘন ঘন নজর রাখা অনেক পটেনশিয়াল বদমাশকে দূরে রাখবে।
  • একসাথে চার পাঁচজন দল বেঁধে চলুন। যখন আক্রান্ত হবেন, অন্তত একজন যেন দৌড়ে গিয়ে আশেপাশের লোক জড়ো করতে পারেন এটা মাথায় রাখবেন। নিজেরা নিজেরা আলোচনা করুন কে কি করবেন। ইটস অল এবাউট টিমওয়ার্ক।
  • হ্যারাসমেন্টের ভয়ে ঘরে বসে থাকাটা কোন সমাধান না। দুদিন পর এরা আপনার ঘরে ঢুকে আক্রমণ করবে যদি আজ আপনি এদের প্রশ্রয় দেন।
  • আপনার “ইজ্জত” এত সস্তা না যে কেউ গায়ে হাত দিলে তা চলে যাবে। বরং এই অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলে মানুষ হিসেবে আপনি নিজেই নিজের সম্মান বিকিয়ে দিলেন।
  • “সমাজের” কথায় পাত্তা দেবেন না। যেই সমাজ সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের শিকার মেয়েটাকেই উল্টো বলে যে তার চলন বলন ঠিক নেই, সেই সমাজ একটা অপরাধী, হারামীমার্কা সমাজ। এর না আছে আপনাকে রক্ষা করার ক্ষমতা, না আছে আপনার দিকে আঙুল তোলার অধিকার।
আমি চাই এই পহেলা বৈশাখে বাংলার বাঘিনীরা জেগে উঠুক।

প্রিয় পাঠিকা, জেনে রাখুন, যে কোন প্রজাতিতেই নারীটি পুরুষের চাইতে অনেক বেশি ভয়ংকর। শেষ হোক আপনাকে দমিয়ে রাখার দিন, আজই, এ মুহুর্ত থেকে।

আমি যে সেল্ফ ডিফেন্স সিস্টেমের (Krav Maga) ছাত্র, এতে ক্রাউড ফাইটিং এর একটা মজার জিনিস শেখানো হয়। আপনার একেবারে কাছে মাত্র চারজন আপনার শরীরে আক্রমণ করতে পারে চারদিক থেকে। নিজের শরীরের চারপাশে এই চারজনের হাত থেকে যদি নিজেকে রক্ষা করতে পারেন, এই একই সিস্টেমে যতজনই আসুক পিটিয়ে সোজা করতে পারবেন।

এবার একটা অতি জরুরী কথা বলি। আপনি যখন আক্রান্ত, আপনার মূল উদ্দেশ্য নিরাপদে ওখান থেকে বেরিয়ে আসা, এবং এজন্যে যা যা প্রয়োজন সব আপনি করবেন। একটা পালানোর পথ বের করে ওখান দিয়ে আপনাকে বেরিয়ে যেতে হবে, বিশ জনকে একাই পেটানো আপনার মূল উদ্দেশ্য নয়। কাজেই, কৌশলগত ভাবে মাত্র দু'তিনজনকে আঘাত করেই আপনি বিপদ কাটাতে পারবেন যদি মাথা একটু ঠান্ডা থাকে।

'ক্রাভ মাগা' ইন্সট্রাকটর তমাল ভাইয়ের সাথে কথা বলে এবং উইকিহাউ (wiliHow) আর্টিকেল এর সাথে নিজের ক্রাউড কনট্রোল এক্সপেরিয়েন্স মিশিয়ে আপনাদের জন্যে একটা বেসিক গাইডলাইন আমি তৈরি করেছি।

এর একটা Achronym দিয়েছিঃ 'পহেলা বৈশাখ'।
#‎প‬ মানে প্রস্তুতি। প্রিপারেশন ইজ এভরিথিং। এর দুটো ধাপ আছে, মানসিক এবং শারীরিক। মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন যে আপনার উপর আক্রমন হবেই, এবং মনে মনে ঠিক করুন কিভাবে আপনি আপনার কৌশল সাজাবেন। একসাথে তিন চারজন মিলে যান, নিজেরা আলাপ করুন আগে থেকেই। একটা জায়গায় ঢোকার আগে বিপদ এলে কোন জায়গায় সবার আগে দৌড়ে যাবেন এটা মাথায় রাখুন। শারীরিক প্রস্তুতি হিসেবে এ লেখার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে দেখানো কৌশল গুলো বাসায় নিজে নিজে অনুশীলন করুন। মাত্র দশ মিনিট অনুশীলন লাইফ এ্যান্ড ডেথ পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। অস্ত্র হিসেবে চোখা পেনসিল, রুটি বেলার ছোট বেলন, সেফটিপিন, পয়সা ভরা ছোট ব্যাগ এগুলো সাথে রাখুন, বিপদে যাতে ব্যবহার করতে পারেন।

‪#‎হে‬ মানে হেলাফেলা না করা। বিপদ হলে হবে অন্য কারো, আমার কিছু হবেনা- এই হেলাফেলা করেছেন কি মরেছেন। এই যে উপরের প্যারায় অস্ত্র সাথে রাখতে বললাম, জানি, নব্বই পারসেন্ট পাঠিকা এটা পাত্তাও দেবেন না। আপনারা প্রসাধনীর পেছনে যতটা সময় ব্যয় করেন, প্রতিদিন তার একটা অতি ক্ষুদ্র অংশ যদি আজ থেকে পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত হেলাফেলা না করে অনুশীলনে ব্যয় করেন, কোন বদমায়েশ আপনার হাত থেকে পালাতে পারবেনা। এই বকাটুকু আপনাকে খোঁচা দিতে নয়, একজন ভাই হিসেবে আপনার ভেতরের ফাইটিং স্পিরিট জাগিয়ে তুলতে দায়িত্ব নিয়েই দিলাম। আমার এ লেখা যদি মাত্র একজন মেয়েকে অনুপ্রাণিত করে নিজেকে রক্ষা করতে, 'I will consider all my effort successful.'

‪#‎লা‬ মানে লাত্থি। আক্রমণকারী দলের পালের গোদা যেটা, ওটার কাছে এগিয়ে গিয়ে সরাসরি তার অন্ডকোষ বা হাঁটুতে প্রচন্ড জোরে লাথি মারুন। দশ-বারোজনের দলে যে বদমায়েশকে দেখবেন সবার আগে আপনাকে নিয়ে বাজে কমেন্ট করছে, নিজেই এগিয়ে গিয়ে স্ট্রেইট লাত্থি মারুন। লাত্থির সাথে আঁচড়, কামড়, রুটি বেলার বেলনের বাড়ি, সেফটিপিনের খোঁচা ইত্যাদি যা যা আছে সব প্রয়োগ করুন। নাক বরাবর ঘুষি, চোখে আঙুল চালানো, গলা বরাবর হাত দিয়ে কারাটে চপ-বিনা দ্বিধায় সর্বশক্তিতে চালিয়ে দিন। পিটিয়ে লাশ বানান আপনার উপর আক্রমণ করা কাপুরুষগুলোকে, যাতে বাপের জন্মে আর এ কাজ কোন মেয়ের সাথে না করে। 'Once you attack, go all out.'

‪#‎বৈ‬ মানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। নিজেকে অবলা নারী না ভেবে, অসহায় ভিকটিম মনে না করে এই সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার একজন এজেন্ট হিসেবে ভাবুন। মনে রাখবেন, এই নষ্ট সমাজ চায় আপনাকে দমিয়ে রেখে ডমিনেট করতে, এবং কেউ আপনার প্রতিবাদ দেখতে চায়না। ভাল “ম্যারেজ ম্যাটেরিয়াল”, “সুইট ওয়াইফ থিংগি” না হয়ে ওই বেপরোয়া ডানপিটে মেয়েটি হোন যে কিনা সমাজের চাপিয়ে দেয়া “ভাল মেয়ের” সংজ্ঞাকে পায়ে ছুঁড়ে দিয়েছে। সব অন্যায় মেনে নিয়ে ম্যারেজ ম্যাটেরিয়াল না হয়ে একজন আত্মমর্যাদাশীল, প্রতিবাদী মানুষ হয়ে উঠুন। এই পহেলা বৈশাখে বখাটেদের উপর আপনার এক একটা থাপ্পড় হোক সমাজের মুখে এক একটা কুঠারাঘাত। যে কৌশলগুলো শেখালাম, তার দু একটা বরাদ্দ রাখুন সেই সব বদমায়েশগুলোর জন্য যারা পাশে দাঁড়িয়ে কুমন্তব্য করবে।

#‎শা‬ মানে শারীরিক সক্ষমতা। এমন কোন পোশাক পরবেন না যেটা পরে আক্রমন প্রতিহত করা অসুবিধাজনক। একটা কথা স্পষ্টভাবে বলি, এর মানে এই না যে কোন অবস্থাতেই আমি নারীর প্রতি আক্রমণকে তার পোশাক দিয়ে জায়েজ করছি। 'Even if a girl is stark naked, still she is NOT asking for it.' আমার কথার মানে হল, কিছু পোশাক আছে যেগুলো পরে লাত্থি মারা বা দৌড়ানো অসুবিধাজনক। আপনার জন্য কোন পোশাক সুবিধাজনক এটা আপনিই ভাল বলতে পারবেন। আমার মা যেমন শাড়ি পরেই দৌড়ঝাঁপ সব করতে পারেন, ছোট বোনটা পরে জিন্স, ফতুয়া বা কামিজ। নতুন জুতো পরে বৈশাখি মেলায় গিয়ে দেখলেন হাঁটতেই পারছেন না, এমন যেন না হয়। 'Do not wear anything that will limit your physical movement.'

#‎খ‬ মানে খবরদারি। দয়া করে নিজের উপর কাউকে খবরদারি করতে দেবেন না। বিশেষ করে “কি দরকার অনুষ্ঠানে যাওয়ার” টাইপ কথাবার্তা শুনে কোন অবস্থাতেই দমে যাবেন না। “I am the master of my fate, I am the captain of my soul”- ইনভিক্টাস কবিতার এই দুলাইন মর্মমূলে গেঁথে নিন। আমি বার বার এই মাইন্ডসেটের কথা বলছি কারণ আপনার মাইন্ডসেট যদি ঠিক থাকে, কতজন আক্রমণ করল সেটা কোন ব্যাপার না।

উপরে যা যা বললাম তার সারমর্ম মানা:

তে প্রস্তুতি
হে তে হেলাফেলা না করা
লা তে লাত্থি দেয়া
বৈ তে বৈপ্লবিক পরিবর্তন
শা তে শারীরিক সক্ষমতা
তে খবরদারি না মানা

জানি, নিরানব্বই ভাগ পাঠিকাই এ লেখাটা পাত্তা দেবেন না, দিলেও বড়জোর ওই পড়া পর্যন্তই, অনুশীলনটুকু আর করবেন না।

তাও, এমন একজন বাঘিনীও কি নেই যিনি এই লেখা কাজে লাগিয়ে অন্তত একজন যৌন নিপীড়ককে শায়েস্তা করবেন? এই পহেলা বৈশাখে অন্তত একটা দুর্ঘটনা ঠেকাবেন?

কোন এক বোনের ভাই হিসেবে, কোন এক মায়ের সন্তান হিসেবে, গরিব দেশের ততোধিক গরীব একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে প্রশ্ন রেখে গেলাম।

আমার দায়িত্বাধীন এলাকার মেয়েরা সপ্তাহে অন্ততঃ এক দুবার সরকারী নম্বরে ফোন করে বলবে, “ভাইয়া, এক বদমায়েশ ইভটিজিং করতে এসেছিল, পিটিয়ে আলুভর্তা বানিয়েছি। শিগগির পুলিশ পাঠান”। আমিও হাসতে হাসতে দুজন কন্সটেবল পাঠিয়ে দেব অন দা স্পট। আমার বদলীর সময় আসতে আসতে এই ফোন কলের সংখ্যা শূন্যতে নেমে আসবে।

এই স্বপ্ন মোটেও দিবাস্বপ্ন না। আমাদের মেয়েরা এভারেস্টে ওঠে, ফাইটার এয়ারক্রাফট চালায়, প্যারাট্রুপার হয়। আমার মা পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন নারী, but if you mess with her, God save you.

তিনি তাঁর পুলিশ পুত্রকে কিচ্ছু জানাবেন না, নিজেই পিটিয়ে আপনাকে লাশ বানিয়ে ফেলবেন। আমার বয়েস একত্রিশ এবং আমি একজন প্রফেশনাল ক্রাইম ফাইটার, still I am afraid of her.

নওরীন ভাবী একটা মজার কথা বলেছেন, “বাঙালি পুরুষ শব্দটা হচ্ছে Oxymoron, করলার রসগোল্লার মত”। নিজে বাঙালি পুরুষ হয়েও বলতে পারি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইটা শতভাগ সত্য। Consent বলে কোন শব্দ আমাদের অভিধানে নেই। একটা মেয়েকে একা পেলে তার গায়ে হাত দেয়াটাকে আমরা অধিকার বলে মনে করি। অফিসের যে কলিগ রাস্তার নেড়ি কুকুরের ডাকেও পালিয়ে পথ পায়না, বিদেশের কনফারেন্সে গিয়ে সেই লোকটাই পাশের নারী কলিগের হোটেল রূমে মাতাল হয়ে হানা দেয়। বাসার ড্রাইভার, গৃহশিক্ষক, রিক্সাচালক, অফিসের বস থেকে শুরু করে এমনকী ইউনিফর্ম সার্ভিস- সব জায়গায় এ ধরণের লোক আছে এবং খুব ভাল পরিমাণেই আছে।

এই সমস্যা সমাধানের দুইটা উপায় আছে। প্রথমটা দীর্ঘমেয়াদীঃ সমাজ পাল্টাতে হবে। এর জন্যে ক্লাস ওয়ান থেকে টেক্সটবইতে শেখাতে হবে কোন আচরণ গ্রহণযোগ্য আর কোনটা না। আইনের শাসন, অপরাধীর শাস্তি ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে।

দ্বিতীয় উপায়টা ইন্সট্যান্ট ধামাকা।

আপনি যদি পুরুষ হন, মেয়েদের সেক্সুয়ালি হ্যারাস করা থেকে দূরে থাকুন। কাউকে যদি ভাল লাগে, সাহস করে শালীন উপায়ে নিজের ভাললাগা তাকে জানান। তিনি সম্মতি দিলে (এবং এতে যদি কারো ক্ষতি না হয়) বিনা দ্বিধায় তার সাথে ঘণিষ্ট হোন, আর সম্মতি না দিলে সম্মানের সাথে সরে আসুন। দিস ইজ হোয়াট আ রিয়েল ম্যান ডাজ।

মনে রাখবেন, ফাইট ব্যাক করতে ব্লাক বেল্ট হওয়া লাগেনা, আপনার সাহসই যথেষ্ট।

কেউ বাজেভাবে স্পর্শ করেছে? ব্যাগ থেকে চাবি বের করুন, ছবিতে দেখানো স্টাইলে মুঠ করে ধরুন, তারপর ওটা দিয়ে চোয়াল/গলা বরাবর মারুন ঘুষি।
হাতে কিছু নেই? ছবিতে দেখানো গলার নরম অংশে আঙুল দিয়ে সজোরে আঘাত করুন।
রেইপ করতে এসেছে? দুই আঙুল আক্রমণকারীর চোখে ঢুকিয়ে দিন।
মায়া করবেন না। পেনাল কোডের একশ ধারা অনুযায়ী আইন আপনার পক্ষে, এবং নিজেকে রক্ষা করতে এমনকী মৃত্যু ঘটানোর অধিকারও আইন আপনাকে দিয়েছে যদি প্রয়োজন হয়।

আমার একটা বোন আছে। আমি কখনোই চাইবোনা সে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়ে আমার কাছে কান্নাকাটি করুক, বরং আমার ইচ্ছা সে ওই বদমায়েশের এমন অবস্থা করবে যাতে তাকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতাল নেয়া লাগে।

Violence is never my cup of tea. I never preach violence. However, if it is needed for self defense, I recommend going all out.

সারাজীবন পড়ে পড়ে মার খাওয়া আমাদের মেয়েরা পাল্টা মার দিতে শিখুক, ছিন্ন করুক সমাজের পরিয়ে দেয়া দাসত্বের শেকল।

One pervert at a time.

লেখকঃ মাসরুফ হোসেন।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info