বিশ্বে যা কিছু প্রথম

আমরা চারপাশে যেসব পণ্য দেখি, শুরুতে সেগুলোর চেহারা কিন্তু এমন ছিল না। তাহলে কেমন ছিল? চলেন দেখে নেই।


প্রথম মোটরসাইকেলঃ
বিশ্বের প্রথম মোটরসাইকেলটি নির্মাণ করেছিলেন জার্মানির ব্যাড ক্যান্সটাট শহরের বিজ্ঞানী গটলিব ডিমলার ও উইলহেলম মেব্যাচ। ১৮৮৫ সালে নির্মিত এ বাহনটিকে মোটরসাইকেল না বলে ইঞ্জিনচালিত বাইসাইকেল বললেই যেন ঠিক হবে। যদিও উদ্ভাবকরা এটিকে ‘পরিভ্রমণের গাড়ি’ নামে ডাকতেই পছন্দ করতেন।


প্রথম এক্সরেঃ
জার্মান পদার্থ বিজ্ঞানী ভিলহেলম কনরাড রন্টগেন ১৮৯৫ সালের ২২ ডিসেম্বর ফটোগ্রাফিক প্লেটে সদ্য উদ্ভাবিত অজানা আলো, এক্সরের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এমন সময় তাঁর স্ত্রী আনা বার্থা সেখানে উপস্থিত হন। রন্টগেনও মনে মনে কাউকে আশা করছিলেন। তিনি চাইছিলেন নতুন এ অজানা আলো (এক্সরে) যার ভেদন ক্ষমতা আছে, সেটি মানব দেহের ভেতর দিয়ে গিয়ে ফটোগ্রাফিক প্লেটে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায় তা পর্যবেক্ষণ করা। রন্টগেন তাঁর স্ত্রীকে ফটোগ্রাফিক প্লেটের উপরে তাঁর হাত রাখতে বলেন। এরপর তিনি তড়িৎক্ষরণ নল থেকে ক্যাথোড রশ্মি নিক্ষেপ করেন। সেই রশ্মি বার্থার হাত ভেদ করে ফটোগ্রাফিক প্লেটে প্রতিক্রিয়া রেখে যায়। সেটাই ছিল বিশ্বের প্রথম এক্সরে।


প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরাঃ
১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ফটোগ্রাফিক পণ্য নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কোডাকের ইঞ্জিনিয়ার স্টিভ স্যাসন আবিষ্কার করেন ডিজিটাল ক্যামেরা। আকারে টোস্টার মেশিনের মতো এ যন্ত্রটি ১০০*১০০ রেজ্যুলেশন বা ০.০১ মেগাপিক্সেল আকারের সাদাকালো ছবি তৈরি করতে পারত। ছবি তোলার পর সেটি সংরক্ষণ করা হত ক্যাসেটে। অডিও ক্যাসেট আকারের সেই ক্যাসেটে একটি ছবি সংরক্ষণ করতে সময় লাগত ২৩ সেকেন্ড। ছবি দেখার জন্য এর সঙ্গে একটি স্পেশাল কম্পিউটার ও টেপ রিডার ক্যামেরার সঙ্গে বিল্ট ইন ছিল। টেপ থেকে এটি দেখতেও ২৩ সেকেন্ড সময় লাগত।


প্রথম ওয়েবসাইটঃ
দ্য ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, সংক্ষেপে সার্ন (CERN) এর ব্রিটিশ বিজ্ঞানী টিম বার্নার্স লি ১৯৮৯ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ওয়েব তথা ইন্টারনেট উদ্ভাবন করেন। প্রথম ওয়েবসাইটটির ঠিকানা। এই অ্যাড্রেসে গেলে এখনও সেই প্রথম ওয়েবপেজটি দেখা যাবে। প্রথম ওয়েবসাইটের জন্য যে কম্পিউটার ও সার্ভার ব্যবহার করা হয়েছিল।


প্রথম এমপি থ্রি প্লেয়ারঃ
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান সিহান ইনফরমেশন সিস্টেমস ১৯৯৭ সালে প্রথম এমপি থ্রি মিউজিক প্লেয়ার উদ্ভাবন করে। ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে ‘এমপিম্যান’ নামে এটিকে দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে বিক্রি শুরু করে তারা। এর অভ্যন্তরীণ মেমোরি ছিল ৩২ মেগাবাইট। ছয়টি গান রাখা যেত সেখানে। তবে ৬৪ মেগাবাইটের অন্য একটি মডেলও বাজারে এনেছিল তারা।


প্রথম অ্যালবাম কভারঃ
আজ থেকে ১০০ বছর আগে যখন মিউজিক অ্যালবাম বের হত, তখন সেগুলো ব্রাউন পেপার দিয়ে বানানো প্যাকেটে মুড়িয়ে বাজারজাত করা হত। ১৯৩৮ সালে আসে পরিবর্তন। সে বছর মার্কিন গ্রাফিক ডিজাইনার অ্যালেক্স স্টেইনউইজ কলম্বিয়া রেকর্ড থেকে বের হওয়া রজার ও হার্টস নামের দুই শিল্পীর যৌথ মিউজিক রেকর্ডটির কভার বানান তিনি। সেটাই ছিল মোন মিউজিক রেকর্ডের প্রথম কভার।


প্রথম ক্রসওয়ার্ড পাজলঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সাময়িকী নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের ফান পেজের দায়িত্বে ছিলেন আর্থার ওয়েনি। ১৯১৩ সালের ক্রিসমাস সংখ্যার জন্য তিনি একটি স্পেশাল পাজল তৈরি করেন। সূত্রের সাহায্যে শব্দ নির্বাচন করে ছক মেলানোর এ বিশেষ পাজলটি ছাপানো হয় নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের ২১ ডিসেম্বর সংখ্যায়।


প্রথম ম্যাগাজিনঃ
লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘দ্য জেন্টলম্যান’ হচ্ছে বিশ্বের প্রথম ম্যাগাজিন। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৭৩১ সালে। এটির মাধ্যমে ‘ম্যাগাজিন’ শব্দটি প্রথম আলোচনায় আসে। অ্যাডওয়ার্ড কেভ নামের এক ভদ্রলোক ‘সিলভেনাস আর্বান’ ছদ্মনামে এটির সম্পাদনা করতেন। ১৯০৭ সালের সেপ্টেম্বরে দ্য জেন্টেলম্যানের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়।


প্রথম মাইক্রোপ্রসেসরঃ
১৯৭১ সালের নভেম্বরে ইন্টেল নামের একটি কম্পানি মার্কেটে নিয়ে আসে সিঙ্গেল চিপের মাইক্রোপ্রসেসর ‘দ্য ইন্টেল ৪০০৪’। এটি তৈরির পেছনে যাঁদের সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল, তারা হলেন ইন্টেল ইঞ্জিনিয়ার ফেডেরিকো ফগিন, টেড হফ ও স্ট্যান মেজর। এই আবিষ্কারে ফলেই ছোট হতে থাকে ইলেকট্রনিক পণ্য, বিশেষ করে কম্পিউটারের আকার। কারণ এই ইন্ট্রিগেট চিপের ফলে ছোট হতে থাকে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সিপিইউ, মেমোরি ও ইনপুট আউটপুট কন্ট্রোল।


প্রথম গগণচুম্বী ভবনঃ
১৮৮৫ সালে আমেরিকার ইলিনয় প্রদেশের শিকাগো শহরে নির্মাণ করা ‘হোস ইনস্যুরেন্স ভবন’ কে বিশ্বের প্রথম গগণচুম্বী ভবন বলে মনে করা হয়। ১০ তলাবিশিষ্ট ১৩৮ ফুট উচ্চতার এই ভবনটি ইস্পাত ও সিমেন্টের সমন্বয়ে নির্মাণ করা হয়। পরে দুটি তলা বাড়ানো হলে এর উচ্চতা দাঁড়ায় ১৮০ ফুট। ১৯৩১ সালে এটি ভেঙে ফেলা হয়।


বিশ্বের প্রথম ছবিঃ
এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে পুরনো ছবি এটি। অনেকে বিশ্বের প্রথম তোলা ছবি হিসেবেও আখ্যা দেন। ‘লা গ্রাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে’ শিরোনামের এ ছবিটি ১৮২৬ সালে তোলা হয়েছে। ফ্রান্সের উদ্ভাবক ও ফটোগ্রাফার নিসেফঁরি নাইপি ফ্রান্সের সেইন্ট লুপ ডি ভেরেনাসের লা গ্রাস কাউন্টি স্টেটে বসে ছবিটি তুলেছিলেন। ছবিটি তোলার জন্য ফটোগ্রাফার নাইপি নিজের হাতে বানানো অবসকিউর ফোকাস ক্যামেরা ব্যবহার করেছিলেন। আট বাই দশ ইঞ্চির একটা প্লেটে ছবিটা ধারণ করেছিলেন তিনি। প্রথম যুগে এখনকার মতো সুইচ চাপলেই ছবি উঠে যেত না। একটি ছবি তোলার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগত। ‘লা গ্রাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে’ ছবিটি তোলার জন্য সময় লেগেছিল আট ঘণ্টা।


প্রথম কম্পিউটার মাউসঃ
১৯৬৪ সালের শেষ ভাগে স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক ডগলাস অ্যাঞ্জেলবার্ট সর্বপ্রথম মাউস আবিষ্কার করেন। তারা এমন একটি ডিভাইস উদ্ভাবনের চেষ্টায় ছিলেন যেটি ট্রাকিং বল, লাইট প্যানেল বা জয়স্টিকের মাধ্যমে কাজ করতে সক্ষম হবে। সেটি করতে গিয়েই বিজ্ঞানীরা মাউস উদ্ভাবন করেন। প্রথম মাউসটি তৈরি করা হয়েছিল কাঠের চারকোনা ফ্রেমের মধ্যে। তার ভেতরে ছিল ধাতুর চাকা। এর উপর একটি লাল রংয়ের বাটনও ছিল।

লেখকঃ তাসলিমা নীলু।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info
জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info