পূর্বের পর্বঃ ইতিহাসের ১০ জন মানবি রূপী শয়তান (১ম পর্ব)।
আচ্ছা একটা ছোট প্রশ্ন করি, মানুষ হিসেবে আমদের কোন গুন অন্যান্য বন্য প্রানীদের থেকে আমাদের মহৎ করেছে? এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে বলতে হয় "মানবিকতা"। কিন্তু আমাদের মাঝে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের মধ্যে এই মানবিক গুনাবলীর বেশ ঘার্তি আছে। আর যখন এই ঘার্তি থাকে তখন যে কোন মানুষ হয়ে ওঠে অমানবিক বা হিংস্র কোন পশু। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় অনেক পুরুষ তাদের হীন কর্মের জন্য অখ্যাত এবং নিন্দিত। কিন্তু এই অখ্যাত এবং নিন্দিত এর সারিতে এমন অনেক নারী আছে যারা বেশ আলোচিত চরিত্র ইতিহাসের পাতায়। আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব এমন ১০ জন নারীর সাথে যারা ইতিহাসের পাতায় মানবি রূপী শয়তার হিসেবে পরিচিত। চলুন তাহলে শুরু করা যাক,
০৫) বেল গিনেসঃ
বেল গিনেসের উচ্চতা ৬ ফুট আর ওজন ৯১ কেজি। স্বাভাবিক ভাবেই নারী হিসেবে বেশ শক্তিশালী দেহের অধিকারি তিনি। তিনি নরওয়েজিয়ান বংশদ্ভুত আমেরিকার সব থেকে ঘৃনিত এবং সন্তান উৎপাদনশীল মহিলা। তিনি তার দু'জন স্বামীকে হত্যা সহ সময়ের ব্যাবধানে তার সকল সন্তানকে হত্যা করেন। তার এই হত্যার মূল উদ্দেশ্য একদম সোজা। ইন্স্যুরেন্স কম্পানির টাকা পাওয়ার জন্য তিনি এই সকল হত্যাকান্ড ঘটান। এছাড়াও তিনি অনেকের সম্পত্তি নিজের করে নেবার জন্য অনেককে খুন করেন। এছাড়াও স্বামী মারা যাবার পরে তিনি তার বহু প্রেমিকদের হত্যা করেন। অনেকের মতে তিনি ১০০ এর উপরে মানুষ খুন করেন। অন্যের সম্পত্তি ক্রোক করার জন্য হত্যা, প্রেমিকের হত্যা এবং তার দুই মেয়ে মারটেল এবং লুছি এর হত্যার জন্য মৃত্যুদন্ডো পান। কিন্তু তার মৃত দেহের ময়নাতদন্তের পর দেখা যায় বেল গিনেসের দেহ ৬ ফুট থেকে ২ ইঞ্চি কম। অনেকেই মনে করে অর্থের প্রভাবে তার মৃত্যুকে সাজানো হয়েছিল অন্য কাউকে দিয়ে। আমেরিকার অপরাধ জগতের রূপ কথার রানী সে, আর এই জগতে তাকে সকলেই চেনে A Female Bluebeard নামে।
০৪) মেরি অ্যান কটনঃ
ব্রিটেনের প্রথম সিরিয়াল কিলার মেরি অ্যান কটন জন্মগ্রহন করেন ১৮৩২ সালে "কাউন্টি ডরহম" এর "লো মজলি" অঞ্চলে। ২০ বছর বয়সে তার বিয়ে হয় "উইলিয়াম মোরব" এর সাথে। নব্যবিবাহিত দম্পতি "প্লেমাউথ" অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। পরিবারে জন্ম নেয় ৫ জন সন্তান যার মধ্যে তিন জন মারা যায় প্রচন্ড পেটে ব্যাথার কারনে। সন্তানের মৃত্যুর পরে তারা ইংল্যান্ডের উত্তর পুর্ব অঞ্চলে বসবাস করা শুরু করে। কিন্তু এখানেও দূর্ভাগ্য তাদের পিছু ছাড়ে না। এসময় পরিবারে জন্ম নেয় আরো তিনজন সন্তান আর মারা যায় আরো তিনজন সন্তান। মেরির স্বামী উইলিয়াম লক্ষ করেন যে প্রতিবার তার সন্তান প্রচন্ড পেটে ব্যাথার কারনে মারা যেতে থাকে।
১৮৬৫ সালে তার ২য় স্বামীও মারা যায় একই ভাবে প্রচন্ড পেটে ব্যাথার কারনে। এসময় কোন এক কারনে এই মৃত্যু গুলি পত্রিকার সাংবাদিকের নজর কারে। এরপর তদন্ত করে তারা দেখতে পান যে, মেরির তিন জন স্বামী, এক জন প্রেমিক, এক জন বন্ধু, মেরির মা এবং মেরির এক ডজন সন্তান একই ভাবে প্রচন্ড পেটে ব্যাথার কারনে মৃত্যুবরন করে।
তৎকালীন আদালতের নির্দেশে ২৪শে মার্চ ১৮৭৩ সালে মেরিকে আর্সেনিক দিয়ে মানুষ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
০৩) ইলজে কখঃ
ইলজে কখ জন্ম গ্রহন করেন ২২শে সেপ্টেম্বর ১৯০৬ সালে। যার অনেক গুলি প্রচলিত নাম আছে, যেমনঃ “Die Hexe von Buchenwald” মানে The Witch of Buchenwald, “Buchenwälder Schlampe” মানে The Bitch of Buchenwald। তার স্বামীর নাম "কার্ল অটো"। তিনি ছিলেন নাৎসি বাহিনীর প্রথম দিকের বিশিষ্ট্য সদস্য, যার বিচার আমেরিকার আর্মির মাধ্যমে করে হয়। নাৎসি বাহিনীতে স্বামীর উচ্চপদস্থানের কারনে তিনি যা খুশি তাই করতেন। বিশেষ করে নারী বন্দিদের বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার এবং নৃশংস ভাবে হত্যার জন্য বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে নাৎসি বাহিনীর হাতে বন্দী সকল নারীর হাতে একটা নাম্বর ট্যাটু করে দেওয়া হত। ইলজে কখ এই সব নারীদের হত্যা করে তাদের চামড়া কেটে এই সব ট্যাটু সংগ্রহে রাখতেন। অনেকটা ডাকটিকিট সংগ্রহ করার মত এটা ছিল তার একটা শখ মাত্র। ১৯৪০ সালের দিকে দেখা যায় যে ইলজে কখ এর সংগ্রহে এই ট্যাটুর সংখ্যা প্রায় ২৫০,০০০ এর মত। নাৎসি বাহিনীর পতনের পরে বিচারের জন্য যে কারাগারে তাকে রাখা হয় সেই কারাগারে ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৬৭ সালে গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মোহত্যা করেন।
০২) ক্যাথ্রিন নাইটঃ
২৪শে অক্টবর ১৯৫৫ সালে জন্ম নেওয়া ক্যাথ্রিন নাইট প্রথম অষ্ট্রেলিয়াম মহিলা যাকে অজামিন যোগ্য আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ক্যাথ্রিন তার প্রাক্তন স্বামীর প্রতি এত বেশি ক্ষিপ্ত ছিলেন যে তিনি তার প্রাক্তন স্বামীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। ক্যাথ্রিন যদিও খুন করেছিল একজনকেই মাত্র কিন্তু খুন করার পদ্ধতি আপনার শরীরের মধ্য দিয়ে শীতল শিহরন বইয়ে দিয়ে। ক্যাত্রিনের স্বীকারোক্তি অনুস্বারে, প্রথমে তিনি তার প্রাক্তন স্বামীকে ভারি বস্তু দিয়ে মুখের সামনে বারি মেরে তার সামনের সব গুলি দাঁত ফেলে দেয়, এর পরে প্রাক্তন স্বামীর জ্ঞান ফিরলে তার সামনে তার কুকুরের গলা কেটে ফেলে। এর পরে ছুড়ি দিয়ে ক্যাথ্রিনের প্রাক্তন স্বামিকে মোট ৩৭ বার কোপ মারেন। সামনে এবং পিছে দু'দুকেই প্রায় সমান ভাবে কোপান। এরপরে তিনি তার প্রাক্তন স্বামীর চামড়া ছিলে ড্রইং রুমে টানিয়ে রাখেন, এরপরে মাথা কেটে মাথার সুপ এবং নিতম্ব কেটে তার রোষ্ট বানান। রোষ্টের সাথে অবশ্য কিছু সবজিও বানিয়েছিলেন। এরপর এগুলি তিনি তার সন্তান্দের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেন আর সাথে একটি হুমকি দেওয়া চিঠিও দেন। এগুলির খবর পুলিশ পেলে তারা ক্যাথ্রিনকে গ্রেফতার করেন।
০১) এলিজাবেথ ব্যাথোরিঃ
এলিজাবেথ ব্যাথোরিকে নিয়ে পূর্বে "বিশ্বের ভয়ংকরতম নরপিশাচদের গল্প" লেখাটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছিল তাই এখনে আর কিছু লিখলাম না।
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন