সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়নি ক্লিওপেট্রার


ইতিহাসখ্যাত সুন্দরী ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্যের প্রশংসা সারা বিশ্ব জুড়ে। মিশরের সর্বশেষ এই রানীর জীবন নিয়ে আমাদের রয়েছে যেমন কৌতূহল তেমনি তার মৃত্যু নিয়েও রয়েছে জল্পনা-কল্পনা। তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে সবচাইতে প্রচলিত ধারনা হল, তিনি অ্যাস্প (এক ধরণের গোখরো সাপ) এর কামড়ে মৃত্যুবরণ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩০ সালের অগাস্টে নীলনদের এই রানী ৩৯ বছর বয়সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন প্রেমিক মার্ক অ্যান্টনির শোকে। অ্যাক্টিয়ামের যুদ্ধে পরাজয়ের পর নিজের প্রাণ নেনে মার্ক অ্যান্টনি।

ইতিহাসবিদদের গবেষণা থেকে জানা যায়, ক্লিওপেট্রার সাথে মৃত্যুবরণ করে তার দুই চাকরানীও। সাপের কামড়ে মৃত্যু হলে এমন ঘটনা ঘটত না। নতুন এক গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ক্লিওপেট্রার মৃত্যু হয় কয়েকটি বিষের একটি মিশ্রণ পান করে।

ইউনিভার্সিটি অফ ট্রিয়ের এর জার্মান ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক ক্রিস্টোফার শ্যাফার এর মতে, ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর সাথে সাপের কোন সম্পর্ক ছিল না। ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর ২০০ বছর পর রোমান ইতিহাসবিদ ক্যাসিয়াস ডিও’র লেখা অনুযায়ী, ক্লিওপেট্রার মৃত্যু ছিল শান্তিপূর্ণ এবং যন্ত্রণাবিহীন। কিন্তু অ্যাস্পের কামড়ে মৃত্যু হলে তা হত যথেষ্ট যন্ত্রণাদায়ক। জার্মান টক্সিকোলজিস্ট ডিট্রিক মেবস জানান, অ্যাস্পের কামড়ের পর শরীরে নানান রকম যন্ত্রণাদায়ক উপসর্গ দেখা যায়। এর মাঝে আছে বমি, ডায়রিয়া এবং শ্বাসকষ্ট।


৪৫ মিনিটের মাঝেই ঘটত মৃত্যু এবং কামড়ের স্থানে ফুলে যাওয়ার উপসর্গ দেখা দিত। সাপের কামড়ে আত্মহত্যা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, সাপের কামড়ে বিষের যে পরিমাণ তা একেক ক্ষেত্রে হয় একেক রকম এবং ক্ষেত্রবিশেষে এটি হতে পারে এতটাই কম যে তাতে মৃত্যু হবার সম্ভাবনা না ও থাকতে পারে। তাছাড়াও, সে সময়ে মিশরের তাপমাত্রা এত বেশি ছিল যে একটা সাপকে স্থির রেখে তার থেকে কামড় খাওয়াটা হত যথেষ্টই ঝামেলার ব্যাপার। এ থেকে নাকচ করে দেওয়া যায় ক্লিওপেট্রার মৃত্যুতে সাপ ব্যবহারের ধারনাটি।

আলেকজান্ড্রিয়ায় গিয়ে তথ্য সংগ্রহের সময়ে গবেষকরা কিছু প্রাচীন চিকিৎসাবিদ্যার বই পড়ে দেখেন এবং এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ভেষজ কিছু বিষের মিশ্রণে তৈরি একটি পানীয় পান করেন ক্লিওপেট্রা। কারণ এমন একটি বিষ তৈরি করার ক্ষেত্রে পরিমাণগুলো নির্ণয়ও হত যথেষ্ট সহজ এবং এর ফলাফলও সহজেই আন্দাজ করে নেওয়া যেত। যথেষ্ট শক্তিশালী একটি মিশ্রণ গ্রহনের ফলে মৃত্যু নিশ্চিত করা হত সাপের কামড়ের চাইতে সহজে। পুরনো প্যাপিরাস পড়ে দেখা গেছে, প্রাচীনকালে মিশরীয়দের মাঝে এসব বিষের ব্যাপারে জ্ঞান ছিল এমনকি ক্লিওপেট্রা নিজে এসব বিষ পরীক্ষা করে দেখতেন। এ থেকে বোঝা যায় যে তার পক্ষে এসব বিষের কার্যকারিতা জানা এবং নিজে ব্যবহার করার যথেষ্টই সম্ভাবনা ছিল।

শ্যাফার এবং মেবস এর মতে, ক্লিওপেট্রা পান করেন এমন একটি বিষ যার মাঝে ছিল আফিম, অ্যাকোনাইটাম এবং হেমলকের মত কয়েকটি ভেষজের মিশ্রণ। আন্ত্রিক রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করত অ্যাকোনাইটাম এবং ব্যাথা কমিয়ে যন্ত্রণাবিহীন মৃত্যু ঘটাতে সাহায্য করত আফিম এবং হেমলক। তবে তারা এটাও বলেন, যে ক্লিওপেট্রার সময়ে মিশরে ভেষজ মিশ্রনের মাধ্যমে বিষ তৈরির পদ্ধতিটি ছিল বিরল। রহস্যে ঘেরা ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে তখনি যখন তার দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া যাবে এবং তার ফরেনসিক অ্যানালাইসিস করা যাবে।

লেখকঃ দিয়া।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info
জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info