রহস্যময় ভয়াবহ প্রাণী ।। Mysterious Terrifying Creatures


গোবি মরুভূমি, মঙ্গোলিয়া। নিঃসঙ্গ আর রুক্ষ মরুভূমি এক রহস্যময় ভয়াবহ প্রাণীর জন্য পুরো দেশজুড়ে এক আতঙ্কের নাম। 'অলঘোই খরখোই' (Allghoi khorkhoi) নামে এই প্রাণীটি মঙ্গোলিয়ার 'মৃত্যু কীট' বা 'কৃমি', ইংরেজিতে 'Mongolian death worm'। প্রাণীটি দেখতে কেমন? যারা এটা দেখেছেন বলে দাবি করেছেন তাদের মতে প্রাণীটি সমান্তরাল, রক্তের মত লাল ও সাপের মত লম্বা, দৈর্ঘ্যে প্রায় ২ থেকে ৪ ফুট। দেখতে অনেকটা গরুর ভূড়ি বা অন্ত্রের মত। অলঘোই খরখোই নামটির মূল অর্থ হচ্ছে 'পেটের অন্ত্রের কৃমি'। মঙ্গোলিয়ার জনগণ এর প্রাণীটিকে এতোটাই ভয় পায় যে অনেকে মনে করেন এটার নাম নিলেও অমঙ্গল হয়। এর ভয়াবহ ভাবে মানুষ ও প্রাণী হত্যা করার ক্ষমতা রীতিমত কিংবদন্তীতুল্য। অনেকের ধারণা, প্রাণীটি প্রাণঘাতী বিষ ছিটিয়ে কিংবা বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে তার শিকারকে বীভৎসভাবে মেরে ফেলে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info


চেক প্রজাতন্ত্রের লেখক ইভান ম্যাকেরলে তাঁর একজন মঙ্গোলীয় ছাত্রীর কাছ থেকে এই প্রাণীটি সম্পর্কে জানতে পারেন ও এটা নিয়ে গবেষণার জন্য মঙ্গোলিয়াতে যান। কিন্তু তিনি খুব বেশি তথ্য পাচ্ছিলেন না কারণ মঙ্গোলিয়ার সাধারণ মানুষ এ প্রাণীটি নিয়ে কথা বলতে চাইতো না। তার উপর তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক সরকার মঙ্গোলিয়াকে বাইরের বিশ্ব থেকে আলাদা করে রেখেছিল। সরকার মনে করতো এই প্রাণীটি আসলে স্থানীয় রূপকথা। ১৯৯০ সালে সমাজতান্ত্রিক সরকারের পতন হয় ও ইভান নতুন করে তার অভিযান শুরু করেন। তিনি ও তার সহকর্মীরা কয়েকজন মঙ্গোলীয় যাযাবরের সাক্ষাত পান যারা সেই প্রাণীটি নিয়ে তাদের সাথে কথা বলতে আগ্রহী হয়। তারা জানায় অলঘোই খরখোই আকৃষ্ট হয় হলুদ রঙের প্রতি। একবার একটি ছোট্ট ছেলে হলুদ খেলনার বাক্স নিয়ে খেলছিল। এসময় একটি অলঘোই খরখোই মাটির নিচ দিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসে। ছেলেটি প্রাণীটিকে ধরামাত্র মারা যায়। তারা বাবা-মা এসে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে ও মাটিতে দাগ দেখতে পায়। সেটাকে অনুসরণ করে প্রাণীটিকে মারার জন্য এগিয়ে যেতেই আকস্মিক ভয়াবহ আক্রমণে তারাও প্রাণ হারান। এরকম আরো বহু ঘটনা আছে।


চলুন জানা যাক বিজ্ঞান কি বলে? সত্যিই যদি এরকম কোন প্রাণীর অস্তিত্ব থাকে তবে সেটা কৃমিগোত্রীয় প্রাণী নয়। কারণ অ্যানিলিড ও অন্যান্য অমেরুদণ্ডী প্রাণীরা গোবি মরুভূমির মতো উত্তপ্ত ও রুক্ষ আবহাওয়াতে বেঁচে থাকতে পারে না। কারণ এদের ত্বক আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে না ও এই পরিবেশে এরা পানিশূন্যতার স্বীকার হয়ে মারা যাবে। তাই হতে পারে এটা সাপ কিংবা অন্য কোন সরীসৃপ। যেমনঃ গিরগিটি। কিন্তু স্থানীয়দের বর্ণনার শুনে মনে হয় না এটা গিরগিটি। আরেকটি সম্ভাবনা হচ্ছে এটা হতে পারে কোবরা পরিবারের সদস্য 'The Death Adder'। কিন্তু এরা বিষাক্ত হলেও বিষ ছিটিয়ে দেয় না ও শুধু অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনিতেই এদেরকে পাওয়া যায়। এছাড়া অনেকে মনে করেন বিষ ছিটিয়ে নয় বরং বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গের মাধ্যমে এটা এর শিকারকে মেরে ফেলে। কিন্তু এ অনুমান কতটুকু সত্য? কিছু প্রাণী যেমন ইলমাছ বিদ্যুৎ তৈরি করলেও তারা হচ্ছে মাছ ও মাটিতে বাস করতে পারে না।

অনেকেই এই প্রাণীটির অস্তিত্ব আছে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। কারো কারো মতে এর ক্ষমতা আসলে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু এটাও ঠিক, যে প্রাণী কারো চোখে পড়া মাত্র তাকে হত্যা করতে সক্ষম তাকে দেখার পর তার ব্যপারে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য কেউ কি জীবিত অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে?

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।