এক সময় সারা দুনিয়ার জলপথ দাপিয়ে বেড়িয়েছে জলদস্যুরা। বাণিজ্য জাহাজ, যাত্রী জাহাজ কারো নিস্তার ছিল না এই জলদস্যুদের হাত থেকে। মুহূর্তের মধ্যে তারা লুটে নিতো বণিক সওদাগর আর নিরীহ যাত্রীদের ধন সম্পদ। এমন কি সুযোগ পেলে এক দল জলদস্যু অন্য দলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তেও দ্বিধা করতো না। আপনাদের নিয়ে যাব ইতিহাসের সেই সব কুখ্যাত জলদস্যুদের কাছে।
ঘটনা ০১ (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ১৭১৭):
শান্ত ক্যারিবীয় সাগরে ভাসছিল সওদাগরের জাহাজ। নাবিকরা খোশ গল্পে মত্ত। জাহাজে আছে ময়দা। ১২০ ব্যারেল ময়দা নিয়ে জাহাজটা ছেড়েছে হাভানা থেকে। পেছনে আরেকটা জাহাজ দেখা গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। না ভয়ের কিছু নেই, পতাকা দেখেই বোঝা গেল ওটাও হাভানারই জাহাজ। আস্তে আস্তে দুটি জাহাজের মধ্যে দূরত্ব কমতে লাগলো। সওদাগরের জাহাজের সারেংও ভাবছিল, অনেক দিন পর নিজ দেশের লোকজনের সঙ্গে কথা তো হবে! হঠাৎ কান ফাটানো শব্দে কেঁপে উঠলো বণিক জাহাজ। বোমার শব্দ। মুহুর্তেই উবে যায় নাবিকদের খোশ মেজাজ। মুহুর্মুহু বোমা পড়তে থাকে। নাবিকরা ডেকে উঠে আসে। বদলে গেছে ওই জাহাজটার পতাকা। সেখানে পত পত করে উড়ছে আরেকটি পতাকা। সবচেয়ে বয়স্ক, অভিজ্ঞ নাবিক আঁতকে উঠলো এই পতাকা দেখে। এটা যে জলদস্যু হর্নিগোল্ডের নিশানা!
শান্ত ক্যারিবীয় সাগরে ভাসছিল সওদাগরের জাহাজ। নাবিকরা খোশ গল্পে মত্ত। জাহাজে আছে ময়দা। ১২০ ব্যারেল ময়দা নিয়ে জাহাজটা ছেড়েছে হাভানা থেকে। পেছনে আরেকটা জাহাজ দেখা গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। না ভয়ের কিছু নেই, পতাকা দেখেই বোঝা গেল ওটাও হাভানারই জাহাজ। আস্তে আস্তে দুটি জাহাজের মধ্যে দূরত্ব কমতে লাগলো। সওদাগরের জাহাজের সারেংও ভাবছিল, অনেক দিন পর নিজ দেশের লোকজনের সঙ্গে কথা তো হবে! হঠাৎ কান ফাটানো শব্দে কেঁপে উঠলো বণিক জাহাজ। বোমার শব্দ। মুহুর্তেই উবে যায় নাবিকদের খোশ মেজাজ। মুহুর্মুহু বোমা পড়তে থাকে। নাবিকরা ডেকে উঠে আসে। বদলে গেছে ওই জাহাজটার পতাকা। সেখানে পত পত করে উড়ছে আরেকটি পতাকা। সবচেয়ে বয়স্ক, অভিজ্ঞ নাবিক আঁতকে উঠলো এই পতাকা দেখে। এটা যে জলদস্যু হর্নিগোল্ডের নিশানা!
কিছুক্ষণের মধ্যে আরেকটি ছোট জাহাজ এসে পাশে ভিড়ে। এই ছোট জাহাজটা বণিকরা আগে খেয়ালই করে নি। এই ছোট জাহাজে আছে নয়া দস্যু এডওয়ার্ড টেচ। সে হর্নিগোল্ডের শিষ্য। ভয়ঙ্কর দুঃসাহসের পরিচয় দিয়ে গুরুর মন জয় করেছে টেচ। পুরস্কার হিসেবে হর্নিগোল্ড তাকে এই ছোট জাহাজটা দিয়েছে। টেচের জাহাজে দস্যুরা তলোয়ার আর কুড়াল ঘুরাচ্ছে। চিৎকার করে গালি দিচ্ছে বণিকদেরকে। গাদা বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়ছে একের পর এক। বণিক জাহাজের নাবিকদের ভয়ে প্রাণ উড়ে যায় যায়। এর মধ্যেই বিকট শব্দে আরও একটি বোমা বিস্ফোরণ হলো। বণিক জাহাজ পাগলের মতো ঘুরতে থাকে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে জাহাজ। একজন নাবিক দৌঁড়ে যায় সারেঙের ঘরে। রক্তে মাখামাখি সারা ঘর। সারেং মারা গেছে। এটাই ওদের কৌশল, ওরা প্রথমেই জাহাজের সারেংকে হত্যা করার চেষ্টা করে। দেখতে দেখতে দস্যুদের জাহাজ আরও কাছে চলে আসে। দস্যুরা লাফিয়ে পড়তে থাকে বণিকদের জাহাজে। কিছুক্ষণ পর দস্যুদের জাহাজ থেকে বণিক জাহাজের ডেকে লাফিয়ে নামে লম্বা, চওড়া কাঁধের এক দস্যু। তার পায়ে হাঁটু পর্যন্ত উঁচু বুট। গায়ে লম্বা কোট। বুকের কাছে ঝোলানো অসংখ্য ছুরি আর ছোট ছোট তলোয়ার। হোলস্টারে ঝুলছে তিনটি পিস্তল। মাথায় ইউরোপিয়ান হ্যাট। শান্ত কিন্তু হিংস্র চোখে জ্বলজ্বল করছে নিষ্ঠুরতা। মুখে কালো লম্বা দাড়ি। সে দাড়িগুলোকে ছোট ছোট বেণী করে রেখেছে। ওর নাম এডওয়ার্ড টেচ। হর্নিগোল্ডের নিষ্ঠুরতা ছাপিয়ে গেছে টেচের চেহারায়। ওর ওই বেণী বাঁধা দাড়ির কারণেই লোকে ওর নাম দিয়েছে ব্ল্যাক বিয়ার্ড (কালো দাড়ি)। নাবিকরা জানে আত্মসমর্পন করলে অন্তত প্রাণে বাঁচা যাবে। হয়তো জাহাজটাও বেঁচে যেতে পারে। কারণ ওরা কখনই বন্দীদেরকে হত্যা করে না। এর মধ্যেই জাহাজটা তছনছ করে ফেলেছে দস্যুরা। লুটে নিয়েছে তাদের সব দামি জিনিসপত্র, কিচ্ছু বাদ দেয় নি। এর পর দস্যুরা চলে যায় নিজেদের জাহাজে। চোখের পলকে উধাও হয়ে যায় জাহাজ দুটি।
ঘটনা ০২:
হর্নিগোল্ডের র্যাঞ্জার নামের বিশাল জাহাজের পাশে শান্তভাবে চলছে ব্ল্যাক বিয়ার্ডের ছোট্ট জাহাজ। দূর থেকে দেখে ওটাকে ডিঙ্গি নৌকা মনে হয়। কিছুদিন আগে ডাকাতি করা ময়দাগুলো ওরা শহরে নিয়ে কম দামে বেচে দিয়েছে। ভালই চলছে দস্যুদের সময়। ব্ল্যাকবিয়ার্ডের শিকারী চোখ খুঁজে ফেরে নতুন জাহাজ। হর্নিগোল্ডের জাহাজের সারেং খবর দেয় দূরে একটা ছোট জাহাজ দেখা যাচ্ছে। ব্ল্যাকবিয়ার্ড সতর্ক হয়ে উঠে। জাহাজের পতাকা দেখিয়ে সঙ্কেত দেখায় যে ছেলেটা, সেই হাওয়ার্ডকেই নির্দেশ দেয় ওই জাহাজটি সম্পর্কে খোঁজ নিতে। কিছুক্ষণ পর হাওয়ার্ড জানায়, জাহাজটা বারমুডা থেকে আসছে। আকারে বেশি বড় নয়। খুব বেশি হলে ১০০টি ব্যারেল থাকতে পারে ওখানে।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ "ব্ল্যাকবিয়ার্ডের কাছে কোন জাহাজেরই নিস্তার নেই। ছোট বলে আমি কোন জাহাজকেই অবহেলা করি না।"
হো হো করে তার বিশাল শরীর কাঁপিয়ে হেসে উঠে এডওয়ার্ড টেচ। হর্নিগোল্ডের কাছ থেকেও পাওয়া গেছে সবুজ সঙ্কেত। হাওয়ার্ড জাহাজে বারমুডার পতাকা তুলে দেয়। গতি বাড়িয়ে দিয়েছে ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ডের র্যাঞ্জার। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের ছোট্ট জাহাজ। বারমুডার জাহাজের কাছাকাছি চলে এসেছে দস্যুরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আক্রমণ করে বসে জাহাজটায়। তেমন কোন যুদ্ধই করতে হয় না ওদের। আসলে মালবাহী ওই বাণিজ্য জাহাজের নাবিকরা কোনো বাধাই দেয় নি। হাওয়ার্ডের ধারণাই সত্যি। জাহাজ থেকে একশ ব্যারেল ওয়াইন পেয়েছে ওরা। ডাকাতি করা মাল নিয়ে ছুটে চলে র্যাঞ্জার। সঙ্গে নয়া দস্যু ব্ল্যাক বিয়ার্ড। দস্যুদের জাহাজে খুশির উৎসব। সারারাত গানবাজনার শব্দ শোনা যায়। অনেকে খুশিতে নাচছেও। জাহাজে মদের অভাব নেই। ডাকাতির বড় একটা অংশ পেয়েছে ক্যাপ্টেন হর্নিগোল্ড, তারপরের বড় ভাগটা পেয়েছে ব্ল্যাক বিয়ার্ড, আর বাকিটা অন্য নাবিকরা সমান ভাগে ভাগ করে নিয়েছে। এই দলে হর্নিগোল্ডের পরেই ব্ল্যাক বিয়ার্ডের স্থান। সে তার নিষ্ঠুরতা আর ভয়ঙ্কর চেহারা দিয়ে সবাইকে দমিয়ে রাখে। এভাবেই আনন্দের মধ্যে কেটে যায় আরও কয়েকদিন। এর মধ্যেই ডাকাতদের জন্য আসে আরেকটা সুখবর। ম্যাডেরিয়া থেকে সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ার চার্লস্টোনের দিকে আরেকটি বড় বাণিজ্য জাহাজ আসছে। পুরো জাহাজে খুশির বন্যা বয়ে যায়।
হর্নিগোল্ড আর ব্ল্যাকবিয়ার্ড দাবা খেলছিল। ব্ল্যাকবিয়ার্ড কিস্তির চালে আটকে দিয়েছে হর্নিগোল্ডের মন্ত্রীকে। কিন্তু এ নিশ্চিত পরাজয়ের মধ্যেও একটা হাসির ঝিলিক নেচে যায় হর্নিগোল্ডের ঠোঁটে। কারণ ওই বাণিজ্য জাহাজ। সে তার অভিজ্ঞতা থেকে জানে এটা হবে অনেক বড়ো জাহাজ। আর এই জাহাজে স্বর্ণ, রূপার মত মহামূল্যবান ধনরত্ন নিশ্চয়ই আছে। হাসির অর্থটা ব্ল্যাকবিয়ার্ডের কাছেও পরিস্কার। তার মুখেও হাসিটা সংক্রমিত হয়। করিৎকর্ম্মা সারেং কিন্তু জাহাজের মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছে। এখন তাদের জাহাজ চলছে চার্লস্টোনের দিকে। কিছুক্ষণ পরে ব্ল্যাকবিয়ার্ড চলে যাবে তার নিজের জাহাজে। খুশিতে নিজের ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দেয় হর্নিগোল্ড।
হর্নিগোল্ডের র্যাঞ্জার নামের বিশাল জাহাজের পাশে শান্তভাবে চলছে ব্ল্যাক বিয়ার্ডের ছোট্ট জাহাজ। দূর থেকে দেখে ওটাকে ডিঙ্গি নৌকা মনে হয়। কিছুদিন আগে ডাকাতি করা ময়দাগুলো ওরা শহরে নিয়ে কম দামে বেচে দিয়েছে। ভালই চলছে দস্যুদের সময়। ব্ল্যাকবিয়ার্ডের শিকারী চোখ খুঁজে ফেরে নতুন জাহাজ। হর্নিগোল্ডের জাহাজের সারেং খবর দেয় দূরে একটা ছোট জাহাজ দেখা যাচ্ছে। ব্ল্যাকবিয়ার্ড সতর্ক হয়ে উঠে। জাহাজের পতাকা দেখিয়ে সঙ্কেত দেখায় যে ছেলেটা, সেই হাওয়ার্ডকেই নির্দেশ দেয় ওই জাহাজটি সম্পর্কে খোঁজ নিতে। কিছুক্ষণ পর হাওয়ার্ড জানায়, জাহাজটা বারমুডা থেকে আসছে। আকারে বেশি বড় নয়। খুব বেশি হলে ১০০টি ব্যারেল থাকতে পারে ওখানে।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ "ব্ল্যাকবিয়ার্ডের কাছে কোন জাহাজেরই নিস্তার নেই। ছোট বলে আমি কোন জাহাজকেই অবহেলা করি না।"
হো হো করে তার বিশাল শরীর কাঁপিয়ে হেসে উঠে এডওয়ার্ড টেচ। হর্নিগোল্ডের কাছ থেকেও পাওয়া গেছে সবুজ সঙ্কেত। হাওয়ার্ড জাহাজে বারমুডার পতাকা তুলে দেয়। গতি বাড়িয়ে দিয়েছে ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ডের র্যাঞ্জার। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের ছোট্ট জাহাজ। বারমুডার জাহাজের কাছাকাছি চলে এসেছে দস্যুরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আক্রমণ করে বসে জাহাজটায়। তেমন কোন যুদ্ধই করতে হয় না ওদের। আসলে মালবাহী ওই বাণিজ্য জাহাজের নাবিকরা কোনো বাধাই দেয় নি। হাওয়ার্ডের ধারণাই সত্যি। জাহাজ থেকে একশ ব্যারেল ওয়াইন পেয়েছে ওরা। ডাকাতি করা মাল নিয়ে ছুটে চলে র্যাঞ্জার। সঙ্গে নয়া দস্যু ব্ল্যাক বিয়ার্ড। দস্যুদের জাহাজে খুশির উৎসব। সারারাত গানবাজনার শব্দ শোনা যায়। অনেকে খুশিতে নাচছেও। জাহাজে মদের অভাব নেই। ডাকাতির বড় একটা অংশ পেয়েছে ক্যাপ্টেন হর্নিগোল্ড, তারপরের বড় ভাগটা পেয়েছে ব্ল্যাক বিয়ার্ড, আর বাকিটা অন্য নাবিকরা সমান ভাগে ভাগ করে নিয়েছে। এই দলে হর্নিগোল্ডের পরেই ব্ল্যাক বিয়ার্ডের স্থান। সে তার নিষ্ঠুরতা আর ভয়ঙ্কর চেহারা দিয়ে সবাইকে দমিয়ে রাখে। এভাবেই আনন্দের মধ্যে কেটে যায় আরও কয়েকদিন। এর মধ্যেই ডাকাতদের জন্য আসে আরেকটা সুখবর। ম্যাডেরিয়া থেকে সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ার চার্লস্টোনের দিকে আরেকটি বড় বাণিজ্য জাহাজ আসছে। পুরো জাহাজে খুশির বন্যা বয়ে যায়।
হর্নিগোল্ড আর ব্ল্যাকবিয়ার্ড দাবা খেলছিল। ব্ল্যাকবিয়ার্ড কিস্তির চালে আটকে দিয়েছে হর্নিগোল্ডের মন্ত্রীকে। কিন্তু এ নিশ্চিত পরাজয়ের মধ্যেও একটা হাসির ঝিলিক নেচে যায় হর্নিগোল্ডের ঠোঁটে। কারণ ওই বাণিজ্য জাহাজ। সে তার অভিজ্ঞতা থেকে জানে এটা হবে অনেক বড়ো জাহাজ। আর এই জাহাজে স্বর্ণ, রূপার মত মহামূল্যবান ধনরত্ন নিশ্চয়ই আছে। হাসির অর্থটা ব্ল্যাকবিয়ার্ডের কাছেও পরিস্কার। তার মুখেও হাসিটা সংক্রমিত হয়। করিৎকর্ম্মা সারেং কিন্তু জাহাজের মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছে। এখন তাদের জাহাজ চলছে চার্লস্টোনের দিকে। কিছুক্ষণ পরে ব্ল্যাকবিয়ার্ড চলে যাবে তার নিজের জাহাজে। খুশিতে নিজের ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দেয় হর্নিগোল্ড।
ঘটনা ০৩ (সেপ্টেম্বর ১৭১৭):
চার্লস্টোনের জাহাজটা ডাকাতি করার পর কিছুদিন ধরে ওদের হাতে তেমন কোনো কাজ নেই। অলস হয়ে পড়েছে নাবিকরা। দস্যুরা গাদা বন্দুক পরিষ্কার করে, কেউ তলোয়ারে ধার দিয়ে সময় পার করে। কেউবা আবার সাগরে মাছ ধরে। সন্ধ্যা হলেই বসে গানের আসর। হর্নিগোল্ড আর ব্ল্যাকবিয়ার্ড বসে দাবা খেলতে। বেশির ভাগ দিনই ব্ল্যাক বিয়ার্ড জিতে যায়। মাঝ রাত পর্যন্ত চলে জুয়ার আসর।
একদিন সারেং খবর দেয় দূরে একটা জাহাজ দেখা গেছে। দস্যুদের মধ্যে চঞ্চলতা দেখা যায়। আড়মোড়া ভাঙে অলস দস্যুরা। হর্নিগোল্ডের চোখে সেই পরিচিত খুশির ঝিলিক। আর ব্ল্যাক বিয়ার্ডের মুখে ছড়িয়ে পরে ইবলিশের হাসি। সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেয় ক্যাপ্টেন হর্নিগোল্ড। নিজের ছোট জাহাজে চলে যায় ব্ল্যাক বিয়ার্ড, নিজের সঙ্গীদের প্রস্তুত হবার নির্দেশ দেয়। হাওয়ার্ড তৎপর হয় নিজ দায়িত্বে। সারেং ছোট জাহাজটিকে আস্তে আস্তে র্যাঞ্জারের আরও কাছে নিয়ে যায়। যেন সেখান থেকেই ক্যাপ্টেন হর্নিগোল্ডের নির্দেশ শুনতে পারে ব্ল্যাক বিয়ার্ড।
হাওয়ার্ড কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর নিয়ে হাজির হয় ব্ল্যাক বিয়ার্ডের সামনে,
হাওয়ার্ডঃ ক্যাপ্টেন, মনে হচ্ছে দস্যু জাহাজ।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ কীভাবে বুঝলে?
হাওয়ার্ডঃ এখনও কোন নিশানা লাগায় নি জাহাজটি। আমার মনে হয় অন্য জাহাজের পতাকা দেখেই ওরা পতাকা ওড়াবে।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ জাহাজটি কত বড়?
হাওয়ার্ডঃ বেশি বড় নয়। মাঝারি। কিন্তু সে কথা কেন ক্যাপ্টেন? তুমি কি দস্যু জাহাজে ডাকাতি করতে চাচ্ছ?
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ আলী বাবা কী করেছিল? চোরের ওপর বাটপারি সব সময় লাভ জনক। আমাকে হর্নিগোল্ডের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
ব্ল্যাকবিয়ার্ড ডেকের কোনায় চলে আসে। চিৎকার দিয়ে ডাকে হর্নিগোল্ডকে,
- ক্যাপ্টেন।
- বল টেচ
- সামনের জাহাজটা মনে হচ্ছে দস্যু জাহাজ
- তুমি কী ওটাতে হামলা করতে চাচ্ছ?
- আমার তাই ইচ্ছা। তুমি কী বল?
- তুমি একটা সাক্ষাৎ শয়তান। হা হা হা। আমার অমত নেই।
ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ড এগিয়ে যায় সারেং এর ঘরের দিকে। চিৎকার করে নির্দেশ দেয়,
- গতি বাড়াও সারেং...
ব্ল্যাক বিয়ার্ডও একই নির্দেশ দেয় নিজের সারেংকে। শান্ত সমুদ্রে দুর্বার গতিতে ছুটে চলে র্যাঞ্জারের পাশে পাশে ছোট জাহাজ। দস্যুদের মধ্যে চাঞ্চল্য চলে এসেছে। সবাই কুড়াল, তলোয়ার আর গাদা বন্দুক নিয়ে প্রস্তুত। চিৎকার করে নিজেদের চাঙা করে লুটেরারা। দেখতে দেখতে তারা আরও কাছে চলে আসে জাহাজটার। ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন ওই জাহাজটাকে থামার নির্দেশ দেয়। কিন্তু জাহাজ থেকে চ্যালেঞ্জ জানায় নতুন ডাকাতরা। বাধ্য হয়ে হর্নিগোল্ড নির্দেশ দেয় ফায়ার। এক ঝাক গাদা বন্দুকের গুলি আঘাত করে নতুন জাহাজটায়। যদিও জাহাজ থেকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল কিন্তু তাদের দিক থেকে প্রত্যুত্তরে কোন গুলি আসে না। ততক্ষণে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের জাহাজ ওই নতুন জাহাজের একেবারে গায়ের কাছে লেগে যায়। ব্ল্যাক বিয়ার্ড উঠে পড়ে জাহাজের ডেকে। ব্ল্যাক বিয়ার্ডকে দেখেই নতুন জাহাজের ডাকাতরা নিজেদের অস্ত্র নামিয়ে ফেলে। হর্নিগোল্ডও নিজের দস্যুদের গুলি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।
ব্ল্যাক বিয়ার্ডঃ হা হা হা। তোমরা তো বেশ বীর পুরুষ দেখছি। চ্যালেঞ্জ করলে অথচ একটা গুলি পর্যন্ত ছুড়লে না। আবার আমি জাহাজে ওঠা মাত্র আত্মসমর্পণ করলে।
নতুন জাহাজের একজন দস্যু বলল, আমরা আমাদের ক্যাপ্টেনকে পছন্দ করি না। ওর সঙ্গে আমাদের ঝগড়া চলছিল। এর মধ্যেই তোমরা থামার নির্দেশ দিলে। আমরা বললাম তোমাদের সঙ্গে আলোচনা করি। দল বেধে যদি আমরা দস্যুতা করি তাহলে আমাদের সবারই সুবিধা কিন্তু আমাদের ক্যাপ্টেন চ্যালেঞ্জ করল। আমরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারি নি। তাই আমরা কোনো গুলি করি নি।
ব্ল্যাক বিয়ার্ডঃ বাহ্। কে তোমাদের হতভাগ্য ক্যাপ্টেন? নাম কী ওর?
দস্যুঃ ওর নাম স্টেড বনেট।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ স্টেড বনেট! কই সে।
এক সুঠাম দেহের যুবক এগিয়ে আসে।
- আমিই স্টেড বনেট।
- বাহ তোমার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে ভাল লাগছে। বিদ্রুপ স্পষ্ট হয় ব্ল্যাকের কণ্ঠে।
- তা কবে থেকে জলদস্যুর খাতায় নাম লিখিয়েছ
- এ বছরের গোড়ায়।
- আগে কী করতে?
- সেনাবাহিনীর অফিসার ছিলাম।
- বাহরে সেনাবাহিনীর অফিসার! মাত্র সত্তরজন ক্রুই সামলাতে পরো না! এসো, তোমার সঙ্গে একটা সন্ধি করি।
- সন্ধি!
- হ্যাঁ। আমার মনে হয় এটা বরং তোমার জন্য অনেক ভালো প্রস্তাব। নইলে তোমার মৃত্যুই একমাত্র খোলা পথ জানো তো।
- কী ধরনের সন্ধি?
ব্ল্যাকবিয়ার্ড হর্নিগোল্ডের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে, ক্যাপ্টেন আমি এই জাহাজটা নিতে চাই।
হর্নিগোল্ডঃ নিয়ে নাও। ওটা তো তোমারই।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ ধন্যবাদ ক্যাপ্টেন। শোন স্টেড, তোমার এসবে কাজ নেই। তুমি আমার জাহাজে অতিথির মতো থাকো। আর তোমার এই জাহাজের দায়িত্ব এখন থেকে আমার।
স্টেডঃ আমি একটু ভাবতে চাই।
ব্ল্যাক বিয়ার্ড- আমি কখনও আমার শত্রুকে ভাবার জন্য প্রস্তাব দেই না। বরং আমি দেই সিদ্ধান্ত। তোমার হাতে কোনো বিকল্প নেই।। অবশ্য যদি তুমি মরতে চাও সেটা আলাদা কথা।
স্টেড বুঝতে পারে তার আসলে বলার আর কিছুই নেই। বরং ব্ল্যাকবিয়ার্ডের প্রস্তাব মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
চার্লস্টোনের জাহাজটা ডাকাতি করার পর কিছুদিন ধরে ওদের হাতে তেমন কোনো কাজ নেই। অলস হয়ে পড়েছে নাবিকরা। দস্যুরা গাদা বন্দুক পরিষ্কার করে, কেউ তলোয়ারে ধার দিয়ে সময় পার করে। কেউবা আবার সাগরে মাছ ধরে। সন্ধ্যা হলেই বসে গানের আসর। হর্নিগোল্ড আর ব্ল্যাকবিয়ার্ড বসে দাবা খেলতে। বেশির ভাগ দিনই ব্ল্যাক বিয়ার্ড জিতে যায়। মাঝ রাত পর্যন্ত চলে জুয়ার আসর।
একদিন সারেং খবর দেয় দূরে একটা জাহাজ দেখা গেছে। দস্যুদের মধ্যে চঞ্চলতা দেখা যায়। আড়মোড়া ভাঙে অলস দস্যুরা। হর্নিগোল্ডের চোখে সেই পরিচিত খুশির ঝিলিক। আর ব্ল্যাক বিয়ার্ডের মুখে ছড়িয়ে পরে ইবলিশের হাসি। সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেয় ক্যাপ্টেন হর্নিগোল্ড। নিজের ছোট জাহাজে চলে যায় ব্ল্যাক বিয়ার্ড, নিজের সঙ্গীদের প্রস্তুত হবার নির্দেশ দেয়। হাওয়ার্ড তৎপর হয় নিজ দায়িত্বে। সারেং ছোট জাহাজটিকে আস্তে আস্তে র্যাঞ্জারের আরও কাছে নিয়ে যায়। যেন সেখান থেকেই ক্যাপ্টেন হর্নিগোল্ডের নির্দেশ শুনতে পারে ব্ল্যাক বিয়ার্ড।
হাওয়ার্ড কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর নিয়ে হাজির হয় ব্ল্যাক বিয়ার্ডের সামনে,
হাওয়ার্ডঃ ক্যাপ্টেন, মনে হচ্ছে দস্যু জাহাজ।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ কীভাবে বুঝলে?
হাওয়ার্ডঃ এখনও কোন নিশানা লাগায় নি জাহাজটি। আমার মনে হয় অন্য জাহাজের পতাকা দেখেই ওরা পতাকা ওড়াবে।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ জাহাজটি কত বড়?
হাওয়ার্ডঃ বেশি বড় নয়। মাঝারি। কিন্তু সে কথা কেন ক্যাপ্টেন? তুমি কি দস্যু জাহাজে ডাকাতি করতে চাচ্ছ?
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ আলী বাবা কী করেছিল? চোরের ওপর বাটপারি সব সময় লাভ জনক। আমাকে হর্নিগোল্ডের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
ব্ল্যাকবিয়ার্ড ডেকের কোনায় চলে আসে। চিৎকার দিয়ে ডাকে হর্নিগোল্ডকে,
- ক্যাপ্টেন।
- বল টেচ
- সামনের জাহাজটা মনে হচ্ছে দস্যু জাহাজ
- তুমি কী ওটাতে হামলা করতে চাচ্ছ?
- আমার তাই ইচ্ছা। তুমি কী বল?
- তুমি একটা সাক্ষাৎ শয়তান। হা হা হা। আমার অমত নেই।
ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ড এগিয়ে যায় সারেং এর ঘরের দিকে। চিৎকার করে নির্দেশ দেয়,
- গতি বাড়াও সারেং...
ব্ল্যাক বিয়ার্ডও একই নির্দেশ দেয় নিজের সারেংকে। শান্ত সমুদ্রে দুর্বার গতিতে ছুটে চলে র্যাঞ্জারের পাশে পাশে ছোট জাহাজ। দস্যুদের মধ্যে চাঞ্চল্য চলে এসেছে। সবাই কুড়াল, তলোয়ার আর গাদা বন্দুক নিয়ে প্রস্তুত। চিৎকার করে নিজেদের চাঙা করে লুটেরারা। দেখতে দেখতে তারা আরও কাছে চলে আসে জাহাজটার। ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন ওই জাহাজটাকে থামার নির্দেশ দেয়। কিন্তু জাহাজ থেকে চ্যালেঞ্জ জানায় নতুন ডাকাতরা। বাধ্য হয়ে হর্নিগোল্ড নির্দেশ দেয় ফায়ার। এক ঝাক গাদা বন্দুকের গুলি আঘাত করে নতুন জাহাজটায়। যদিও জাহাজ থেকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল কিন্তু তাদের দিক থেকে প্রত্যুত্তরে কোন গুলি আসে না। ততক্ষণে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের জাহাজ ওই নতুন জাহাজের একেবারে গায়ের কাছে লেগে যায়। ব্ল্যাক বিয়ার্ড উঠে পড়ে জাহাজের ডেকে। ব্ল্যাক বিয়ার্ডকে দেখেই নতুন জাহাজের ডাকাতরা নিজেদের অস্ত্র নামিয়ে ফেলে। হর্নিগোল্ডও নিজের দস্যুদের গুলি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।
ব্ল্যাক বিয়ার্ডঃ হা হা হা। তোমরা তো বেশ বীর পুরুষ দেখছি। চ্যালেঞ্জ করলে অথচ একটা গুলি পর্যন্ত ছুড়লে না। আবার আমি জাহাজে ওঠা মাত্র আত্মসমর্পণ করলে।
নতুন জাহাজের একজন দস্যু বলল, আমরা আমাদের ক্যাপ্টেনকে পছন্দ করি না। ওর সঙ্গে আমাদের ঝগড়া চলছিল। এর মধ্যেই তোমরা থামার নির্দেশ দিলে। আমরা বললাম তোমাদের সঙ্গে আলোচনা করি। দল বেধে যদি আমরা দস্যুতা করি তাহলে আমাদের সবারই সুবিধা কিন্তু আমাদের ক্যাপ্টেন চ্যালেঞ্জ করল। আমরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারি নি। তাই আমরা কোনো গুলি করি নি।
ব্ল্যাক বিয়ার্ডঃ বাহ্। কে তোমাদের হতভাগ্য ক্যাপ্টেন? নাম কী ওর?
দস্যুঃ ওর নাম স্টেড বনেট।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ স্টেড বনেট! কই সে।
এক সুঠাম দেহের যুবক এগিয়ে আসে।
- আমিই স্টেড বনেট।
- বাহ তোমার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে ভাল লাগছে। বিদ্রুপ স্পষ্ট হয় ব্ল্যাকের কণ্ঠে।
- তা কবে থেকে জলদস্যুর খাতায় নাম লিখিয়েছ
- এ বছরের গোড়ায়।
- আগে কী করতে?
- সেনাবাহিনীর অফিসার ছিলাম।
- বাহরে সেনাবাহিনীর অফিসার! মাত্র সত্তরজন ক্রুই সামলাতে পরো না! এসো, তোমার সঙ্গে একটা সন্ধি করি।
- সন্ধি!
- হ্যাঁ। আমার মনে হয় এটা বরং তোমার জন্য অনেক ভালো প্রস্তাব। নইলে তোমার মৃত্যুই একমাত্র খোলা পথ জানো তো।
- কী ধরনের সন্ধি?
ব্ল্যাকবিয়ার্ড হর্নিগোল্ডের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে, ক্যাপ্টেন আমি এই জাহাজটা নিতে চাই।
হর্নিগোল্ডঃ নিয়ে নাও। ওটা তো তোমারই।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ ধন্যবাদ ক্যাপ্টেন। শোন স্টেড, তোমার এসবে কাজ নেই। তুমি আমার জাহাজে অতিথির মতো থাকো। আর তোমার এই জাহাজের দায়িত্ব এখন থেকে আমার।
স্টেডঃ আমি একটু ভাবতে চাই।
ব্ল্যাক বিয়ার্ড- আমি কখনও আমার শত্রুকে ভাবার জন্য প্রস্তাব দেই না। বরং আমি দেই সিদ্ধান্ত। তোমার হাতে কোনো বিকল্প নেই।। অবশ্য যদি তুমি মরতে চাও সেটা আলাদা কথা।
স্টেড বুঝতে পারে তার আসলে বলার আর কিছুই নেই। বরং ব্ল্যাকবিয়ার্ডের প্রস্তাব মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
ঘটনা ০৪ (নভেম্বর, ১৭১৭) নিউ প্রভিডেন্সঃ
১৮ শতকের শুরুর দিকে হেনরি জেনিংস আর তার চ্যালারা তাদের ঘাটি হিসেবে নিউ প্রভিডেন্স ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। হেনরি জেনিংসও একসময় প্রাইভেটিয়ার ছিল। পরে জলদস্যু হয়। নিউ প্রভিডেন্স ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় কারণ একে তো দ্বীপটা ছিল প্রায় শুণ্য তার ওপর ফ্লোরিডা স্ট্রেইটস থেকে সহজে এখানে পৌছানো যেত। নিউ প্রভিডেন্সের পোতাশ্রয়ে খুব সহজে শত শত জাহাজ রাখা যায়। কিন্তু এখানকার পানি এত অগভীর যে রাষ্ট্রীয় নৌবাহিনীর জাহাজ ঢুকতে পারে না। এ সুযোগটা যারা কাজিয়ে লাগিয়েছিল তাদের মধ্যে হর্নিগোল্ডও একজন। পরে সম্ভবত আটরেচট চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই ১৭১৬ সালে টেচ জ্যামাইকা ছেড়ে এখানে এসে হর্নিগোল্ডের দলে ভিড়ে যায়। আসলে এটা, যে সব প্রাইভেটিয়াররা পরে জলদস্যু হয়ে গিয়েছিল তাদের সবার জন্যই নিরাপদ আস্তানা হয়ে উঠেছিল। ক্যাপ্টেন হর্নিগোল্ডের দলে এখন তিনটি জাহাজ। তার নিজের র্যাঞ্জার, ব্ল্যাকবিয়ার্ডের ছোট্ট জাহাজ, আর স্টেড বনেটের কাছ থেকে পাওয়া নতুন জাহাজ। নতুন এই জাহাজটার নতুন নাম দিয়েছে ব্ল্যাকবিয়ার্ড। জাহাজের নাম রাখা হয়েছে রিভেঞ্জ বা প্রতিশোধ। রিভেঞ্জেই চলছে আজকের রুদ্ধদ্বার বৈঠক। দস্যুরা অভিযোগ করেছে ক্যাপ্টেন হর্নিগোল্ড ব্রিটিশ জাহাজ ছেড়ে দেয়। অথচ এসব জাহাজে থাকে অনেক মনি মাণিক্য। সুতরাং হর্নিগোল্ডকে পদ থেকে ডিমোশন দিতে হবে। বৈঠকে কে কে আছে কেউ জানে না। বাইরে দুই একজন অপেক্ষা করছে বৈঠকের ফলাফল জানার জন্য। কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে একজন ঘোষক বাইরে বেরিয়ে এল।
- ক্যাপ্টেন হর্নিগোল্ডকে বর্তমান পদ থেকে নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চিৎকার করে বলে ঘোষক। এর মধ্যেই ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ড নিজেও বাইরে বের হয়ে আসে। সে বলে, আসলে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি অবসর নেব। চলে যাব এখান থেকে। অবশ্যই যাবার সময় আমার র্যাঞ্জার আর একটা ছোট জাহাজ নিয়ে যাব।
দস্যুদের মধ্যে গুঞ্জন দেখা দেয়। কে হবে তাহলে পরবর্তী সর্দ্দার? আর হর্নিগোল্ড সত্যিই তাহলে এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছে?
১৮ শতকের শুরুর দিকে হেনরি জেনিংস আর তার চ্যালারা তাদের ঘাটি হিসেবে নিউ প্রভিডেন্স ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। হেনরি জেনিংসও একসময় প্রাইভেটিয়ার ছিল। পরে জলদস্যু হয়। নিউ প্রভিডেন্স ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় কারণ একে তো দ্বীপটা ছিল প্রায় শুণ্য তার ওপর ফ্লোরিডা স্ট্রেইটস থেকে সহজে এখানে পৌছানো যেত। নিউ প্রভিডেন্সের পোতাশ্রয়ে খুব সহজে শত শত জাহাজ রাখা যায়। কিন্তু এখানকার পানি এত অগভীর যে রাষ্ট্রীয় নৌবাহিনীর জাহাজ ঢুকতে পারে না। এ সুযোগটা যারা কাজিয়ে লাগিয়েছিল তাদের মধ্যে হর্নিগোল্ডও একজন। পরে সম্ভবত আটরেচট চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই ১৭১৬ সালে টেচ জ্যামাইকা ছেড়ে এখানে এসে হর্নিগোল্ডের দলে ভিড়ে যায়। আসলে এটা, যে সব প্রাইভেটিয়াররা পরে জলদস্যু হয়ে গিয়েছিল তাদের সবার জন্যই নিরাপদ আস্তানা হয়ে উঠেছিল। ক্যাপ্টেন হর্নিগোল্ডের দলে এখন তিনটি জাহাজ। তার নিজের র্যাঞ্জার, ব্ল্যাকবিয়ার্ডের ছোট্ট জাহাজ, আর স্টেড বনেটের কাছ থেকে পাওয়া নতুন জাহাজ। নতুন এই জাহাজটার নতুন নাম দিয়েছে ব্ল্যাকবিয়ার্ড। জাহাজের নাম রাখা হয়েছে রিভেঞ্জ বা প্রতিশোধ। রিভেঞ্জেই চলছে আজকের রুদ্ধদ্বার বৈঠক। দস্যুরা অভিযোগ করেছে ক্যাপ্টেন হর্নিগোল্ড ব্রিটিশ জাহাজ ছেড়ে দেয়। অথচ এসব জাহাজে থাকে অনেক মনি মাণিক্য। সুতরাং হর্নিগোল্ডকে পদ থেকে ডিমোশন দিতে হবে। বৈঠকে কে কে আছে কেউ জানে না। বাইরে দুই একজন অপেক্ষা করছে বৈঠকের ফলাফল জানার জন্য। কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে একজন ঘোষক বাইরে বেরিয়ে এল।
- ক্যাপ্টেন হর্নিগোল্ডকে বর্তমান পদ থেকে নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চিৎকার করে বলে ঘোষক। এর মধ্যেই ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ড নিজেও বাইরে বের হয়ে আসে। সে বলে, আসলে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি অবসর নেব। চলে যাব এখান থেকে। অবশ্যই যাবার সময় আমার র্যাঞ্জার আর একটা ছোট জাহাজ নিয়ে যাব।
দস্যুদের মধ্যে গুঞ্জন দেখা দেয়। কে হবে তাহলে পরবর্তী সর্দ্দার? আর হর্নিগোল্ড সত্যিই তাহলে এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছে?
ঘটনা ০৫ (নভেম্বর ২৮, ১৭১৭):
স্বাভাবিকভাবেই ব্ল্যাকবিয়ার্ড সর্দার হয়েছে। খবর এসেছে হর্নিগোল্ড বাহামার গভর্নর উডস রোজার্সের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমা নিয়েছে। সুতরাং এখন ব্ল্যাক বিয়ার্ড আর হর্নিগোল্ডের রাস্তা আলাদা। নিজের সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে হলে ব্ল্যাক বিয়ার্ডকে আরও অনেক কঠোর হতে হবে। ডেকে বসে এসবই ভাবছিল এডওয়ার্ড টেচ।
এ সময় হাওয়ার্ড এসে খবর দেয়, সেইন্ট ভিনসেন্ট উপকূলের কাছে একটা ফরাসী বাণিজ্য জাহাজ এসেছে।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ অতএব, দুটি জাহাজ নিয়ে চলো সে দিকে গাধা।
ক্যাপ্টেনের সিদ্ধান্ত মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে দস্যুদের মধ্যে। সবাই প্রস্তুত। দুটি জাহাজ নিয়ে সেইন্ট ভিনসেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায় দস্যুদল। দেখতে দেখতে দুরন্ত জাহাজ দুটি পৌঁছে যায় সেখানে। হাওয়ার্ডের খবর ছিল অভ্রান্ত। অতর্কিতে তারা জাহাজটিতে আক্রমণ করে। যুদ্ধে কুলিয়ে উঠতে পারে না বণিক জাহাজের ক্যাপ্টেন। ব্ল্যাকবিয়ার্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে সে। জাহাজটা ছিল দাসে বোঝাই। তাদের মাঝখান থেকে শক্তিশালী কয়েকজনকে নিজের দলে ভিড়িয়ে নেয় টেচ। আর বাকি সবাইকে নির্জন দ্বীপে ফেলে রেখে চলে জাহাজটি নিয়ে। জাহাজটির নাম ছিল লা কনকর্ড। পরে টেচ এর সংস্কার করে নাম দেয় কুইন এন’স রিভেঞ্জ। জাহাজে সে চল্লিশটি বন্দুক বসায়। এর পর আর দুর্ধর্ষ টেচ থেমে থাকে নি। একের পর এক আক্রমণ করে চলে বণিক জাহাজ। এর মধ্যে সে গ্রেট এলেন নামের আরেকটি জাহাজে আক্রমণ করে। মালামাল সব লুটে নিয়ে আগুন ধরিয়ে ডুবিয়ে দেয় জাহাজটি।
স্বাভাবিকভাবেই ব্ল্যাকবিয়ার্ড সর্দার হয়েছে। খবর এসেছে হর্নিগোল্ড বাহামার গভর্নর উডস রোজার্সের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমা নিয়েছে। সুতরাং এখন ব্ল্যাক বিয়ার্ড আর হর্নিগোল্ডের রাস্তা আলাদা। নিজের সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে হলে ব্ল্যাক বিয়ার্ডকে আরও অনেক কঠোর হতে হবে। ডেকে বসে এসবই ভাবছিল এডওয়ার্ড টেচ।
এ সময় হাওয়ার্ড এসে খবর দেয়, সেইন্ট ভিনসেন্ট উপকূলের কাছে একটা ফরাসী বাণিজ্য জাহাজ এসেছে।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ অতএব, দুটি জাহাজ নিয়ে চলো সে দিকে গাধা।
ক্যাপ্টেনের সিদ্ধান্ত মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে দস্যুদের মধ্যে। সবাই প্রস্তুত। দুটি জাহাজ নিয়ে সেইন্ট ভিনসেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায় দস্যুদল। দেখতে দেখতে দুরন্ত জাহাজ দুটি পৌঁছে যায় সেখানে। হাওয়ার্ডের খবর ছিল অভ্রান্ত। অতর্কিতে তারা জাহাজটিতে আক্রমণ করে। যুদ্ধে কুলিয়ে উঠতে পারে না বণিক জাহাজের ক্যাপ্টেন। ব্ল্যাকবিয়ার্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে সে। জাহাজটা ছিল দাসে বোঝাই। তাদের মাঝখান থেকে শক্তিশালী কয়েকজনকে নিজের দলে ভিড়িয়ে নেয় টেচ। আর বাকি সবাইকে নির্জন দ্বীপে ফেলে রেখে চলে জাহাজটি নিয়ে। জাহাজটির নাম ছিল লা কনকর্ড। পরে টেচ এর সংস্কার করে নাম দেয় কুইন এন’স রিভেঞ্জ। জাহাজে সে চল্লিশটি বন্দুক বসায়। এর পর আর দুর্ধর্ষ টেচ থেমে থাকে নি। একের পর এক আক্রমণ করে চলে বণিক জাহাজ। এর মধ্যে সে গ্রেট এলেন নামের আরেকটি জাহাজে আক্রমণ করে। মালামাল সব লুটে নিয়ে আগুন ধরিয়ে ডুবিয়ে দেয় জাহাজটি।
ঘটনা ০৬ (লেফটেন্যান্ট মেইনার্ডের জাহাজ)
মুখ খুলে লেফটেন্যান্ট রবার্ট মেইনার্ড, ব্ল্যাক বিয়ার্ডকে গ্রেপ্তার করার জন্য আমাকে ডেকেছেন ভার্জিনিয়ার গভর্নর আলেকজান্ডার স্পটসউড। রবার্ট মেইনার্ড যেমন দুঃসাহসী তেমনি অভিজ্ঞ। রোজার আর ফ্রায়ার মিল তার পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের চোখ সমুদ্রের দিকে। শান্ত গতিতে ছুটে চলেছে তাদের জাহাজ। দুইদিন ধরে চলছে তাদের জাহাজ। আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে চলে গিয়েছিল ওরা একটা জলদস্যু দলকে ধাওয়া করে। তাদের বারোটা বাজানোর পরই একটা সরকারি খবর এসেছে মেইনার্ডের কাছে। কিন্তু এ দুইদিনে একবারও মুখ খোলে নি সে। এটাই তার স্বভাব। আজও হয়তো তেমন কিছুই বলবে না। তবে নাবিকরা বুঝতে পারল কেন তারা ভার্জিনিয়াতে যাচ্ছে।
রোজারঃ ব্ল্যাক বিয়ার্ড মানে এ সময়ের দুনিয়া কাঁপানো জলদস্যু!
রগচটা হিসেবে বেশ কুখ্যাতি আছে রোজারের। সবাই তাকে বেশ সমঝে চলে। এমন কি প্রিয় বন্ধু ফ্রায়ার মিল পর্যন্ত মাঝে মাঝে তাকে সমীহই করে। ও যখন কথা বলে তখন জাহাজে যেন ভূমিকম্প হয়।
ফ্রায়ার মিলঃ হ্যা, ওর আসল নাম এডওয়ার্ড টেচ।
ফ্রায়ার মিল ইতিহাসে পণ্ডিত। যে কোনো ঘটনার সাল তারিখ সব তার মুখস্থ। তার এই জ্ঞানের জন্যই অন্য নাবিকরা তাকে ডাকে ফ্রায়ার।
মেইনার্ডঃ অনেকে কিন্তু বলে ওর নাম এডওয়ার্ড ডারমন্ড।
ফ্রায়ার মিলঃ হুম কিন্তু সে ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। ব্রিটেনের ব্রিস্টলে, সম্ভবত ১৬৮০ সালের দিকে একটা ধনী পরিবারে ওর জন্ম। ১৬৯৯ সালের দিকে একটা বাণিজ্য জাহাজে আরও সঠিক ভাবে বললে সম্ভবত এক দাস জাহাজে করে ও ক্যারিবিয়াতে এসেছিল। ক্যারিবিয়াতে যে দ্বীপে ও নামে, তার নাম জ্যামাইকা।
রোজার বাধা দিয়ে বলেঃ মিল তোমার এই সাল তারিখের ক্যাচক্যাচানি বন্ধ করবে! এমনিতেই মেজাজ খিচড়ে আছে। তোমার এই সাল তারিখ শুনে আমার মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে।
ফ্রায়ার মিলঃ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। আর সাল তারিখ বলব না। আঠারোশ শতাব্দীতে।
রোজারঃ মিল! আমরা জানি এটা আঠারোশ শতাব্দী।
সবাই হেসে উঠে।
মিলঃ দুঃখিত। লেখক জনসন লিখেছেন টেচ মানে ব্ল্যাক বিয়ার্ড রাণী এনের যুদ্ধের সময় জ্যামাইকাতে একটা প্রাইভেটিয়ারে নাবিক হিসেবে কাজ করতো। রাণী এন সেই টেচের প্রাইভেটিয়ারকে ফরাসী আর স্প্যানিশ জাহাজ আক্রমণ করার আর লুণ্ঠিত মালামাল নিজের কাছে রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন। এটা স্প্যানিশ বিপ্লবের সময়কার ঘটনা।
মেইনার্ডঃ পরে যুদ্ধ শেষ হলে টেচ হয়ে ওঠে এক অভিজ্ঞ জলদস্যু। প্রাইভেটিয়ারে থাকাকালীনই সে ডাকাতিতে অনেক দক্ষ হয়ে উঠেছিল। সে আর ভাল মানুষ হয় নি, ভিড়ে যায় ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ডের দলে।
রোজারঃ ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ড! মানে নিউ প্রভিডেন্সের সেই কুখ্যাত ডাকাত! কিছুদিন আগে যে সাধারণ ক্ষমা গ্রহণ করল?
মুখ খুলে লেফটেন্যান্ট রবার্ট মেইনার্ড, ব্ল্যাক বিয়ার্ডকে গ্রেপ্তার করার জন্য আমাকে ডেকেছেন ভার্জিনিয়ার গভর্নর আলেকজান্ডার স্পটসউড। রবার্ট মেইনার্ড যেমন দুঃসাহসী তেমনি অভিজ্ঞ। রোজার আর ফ্রায়ার মিল তার পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের চোখ সমুদ্রের দিকে। শান্ত গতিতে ছুটে চলেছে তাদের জাহাজ। দুইদিন ধরে চলছে তাদের জাহাজ। আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে চলে গিয়েছিল ওরা একটা জলদস্যু দলকে ধাওয়া করে। তাদের বারোটা বাজানোর পরই একটা সরকারি খবর এসেছে মেইনার্ডের কাছে। কিন্তু এ দুইদিনে একবারও মুখ খোলে নি সে। এটাই তার স্বভাব। আজও হয়তো তেমন কিছুই বলবে না। তবে নাবিকরা বুঝতে পারল কেন তারা ভার্জিনিয়াতে যাচ্ছে।
রোজারঃ ব্ল্যাক বিয়ার্ড মানে এ সময়ের দুনিয়া কাঁপানো জলদস্যু!
রগচটা হিসেবে বেশ কুখ্যাতি আছে রোজারের। সবাই তাকে বেশ সমঝে চলে। এমন কি প্রিয় বন্ধু ফ্রায়ার মিল পর্যন্ত মাঝে মাঝে তাকে সমীহই করে। ও যখন কথা বলে তখন জাহাজে যেন ভূমিকম্প হয়।
ফ্রায়ার মিলঃ হ্যা, ওর আসল নাম এডওয়ার্ড টেচ।
ফ্রায়ার মিল ইতিহাসে পণ্ডিত। যে কোনো ঘটনার সাল তারিখ সব তার মুখস্থ। তার এই জ্ঞানের জন্যই অন্য নাবিকরা তাকে ডাকে ফ্রায়ার।
মেইনার্ডঃ অনেকে কিন্তু বলে ওর নাম এডওয়ার্ড ডারমন্ড।
ফ্রায়ার মিলঃ হুম কিন্তু সে ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। ব্রিটেনের ব্রিস্টলে, সম্ভবত ১৬৮০ সালের দিকে একটা ধনী পরিবারে ওর জন্ম। ১৬৯৯ সালের দিকে একটা বাণিজ্য জাহাজে আরও সঠিক ভাবে বললে সম্ভবত এক দাস জাহাজে করে ও ক্যারিবিয়াতে এসেছিল। ক্যারিবিয়াতে যে দ্বীপে ও নামে, তার নাম জ্যামাইকা।
রোজার বাধা দিয়ে বলেঃ মিল তোমার এই সাল তারিখের ক্যাচক্যাচানি বন্ধ করবে! এমনিতেই মেজাজ খিচড়ে আছে। তোমার এই সাল তারিখ শুনে আমার মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে।
ফ্রায়ার মিলঃ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। আর সাল তারিখ বলব না। আঠারোশ শতাব্দীতে।
রোজারঃ মিল! আমরা জানি এটা আঠারোশ শতাব্দী।
সবাই হেসে উঠে।
মিলঃ দুঃখিত। লেখক জনসন লিখেছেন টেচ মানে ব্ল্যাক বিয়ার্ড রাণী এনের যুদ্ধের সময় জ্যামাইকাতে একটা প্রাইভেটিয়ারে নাবিক হিসেবে কাজ করতো। রাণী এন সেই টেচের প্রাইভেটিয়ারকে ফরাসী আর স্প্যানিশ জাহাজ আক্রমণ করার আর লুণ্ঠিত মালামাল নিজের কাছে রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন। এটা স্প্যানিশ বিপ্লবের সময়কার ঘটনা।
মেইনার্ডঃ পরে যুদ্ধ শেষ হলে টেচ হয়ে ওঠে এক অভিজ্ঞ জলদস্যু। প্রাইভেটিয়ারে থাকাকালীনই সে ডাকাতিতে অনেক দক্ষ হয়ে উঠেছিল। সে আর ভাল মানুষ হয় নি, ভিড়ে যায় ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ডের দলে।
রোজারঃ ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ড! মানে নিউ প্রভিডেন্সের সেই কুখ্যাত ডাকাত! কিছুদিন আগে যে সাধারণ ক্ষমা গ্রহণ করল?
মিলঃ হ্যা ১৭১৮ সালের জুন মাসে হাভানার গভর্নর উডস রজার্সের কাছে।
রোজারঃ মিল আমি কিন্তু এবারে সত্যি ক্ষেপে যাবো।
মিলঃ আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত রোজার। কিন্তু সাল তারিখ ছাড়া আমি কথাই বলতে পারি না তাতো তুমি জানোই। যা হোক, সম্ভবত আটরেচট চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই টেচ জ্যামাইকা ছেড়ে নিউ প্রভিডেন্সে চলে আসে। আসলে এটা যে সব প্রাইভেটিয়াররা পরে জলদস্যু হয়ে গিয়েছিল তাদের সবার জন্যই নিরাপদ আস্তানা হয়ে উঠেছিল। সম্ভবত ১৭১৬ সালে টেচ হর্নিগোল্ড এর দলে যোগ দেয়।
রোজারঃ বাচাল তোতাপাখি মিল, আমি তোমাকে কিন্তু জ্যান্ত খেয়ে ফেলব।
মিল থতমত খায়।
মেইনার্ডঃ আচ্ছা থামো তোমরা। একটু ওয়াইন গেলা যাক।
মিলঃ হ্যা এটা কিন্তু ভাল প্রস্তাব। আঠারোশ...
মেইনার্ডঃ মিল!
মিল বুঝতে পারে এর পরে আরও কথা বললে খবর আছে।
ঘটনা ০৭ (ভার্জিনিয়া, ১০ জুলাই ১৭১৮):
চারদিকে ব্ল্যাকবিয়ার্ড আতঙ্ক। নগরপালদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে জলদস্যুরা। সওদাগরেরা বাণিজ্যে যেতে সাহস পাচ্ছে না। অর্থনীতি প্রায় ভেঙে পড়ার জোগাড়। পেনিসিলভানিয়ার গভর্ণর তো এতই চিন্তিত হয়ে উঠেছিলেন যে জলদস্যুদের গ্রেপ্তার করার জন্য তিনি ছোট ছোট দুটি জাহাজও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে। ভার্জিনিয়ার গভর্ণর স্পটস উডের চোখেও ঘুম নেই। কারণ নর্থ ক্যারোলিনাতে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের দলের সাবেক চ্যালারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। চিন্তায় তার কপালে ভাঁজ পড়ে গেছে। কাপের পর কাপ চা গিলছে আর চলছে সিগার।
স্পটস উড তার সেক্রেটারিকে ডাকলেন।
স্পটস উডঃ শোনো, শহরে নোটিশ জারি করে দাও যে শহরে যে সব নাগরিক আগে জলদস্যু ছিল তারা যেন শিগগিরই তা কর্তৃপক্ষকে জানায়। তাদেরকে অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশও দাও। তারা যেন একসঙ্গে তিনজনের বেশি কোথাও ভ্রমণ না করে। এভাবে একটা নোটিশ লিখে আনো। আমি সই করে দিচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর সেক্রেটারি চিঠি নিয়ে আসে। সই দিয়ে বের হয়ে যায় স্পটস উড। চলে আসে নগরের গোপন কারাগারে। এখানেই আছে টেচ বা ব্ল্যাকবিয়ার্ডের পতাকা-সঙ্কেত নির্দেশের তত্ত্বাবধায়ক উইলিয়াম হাওয়ার্ড। হাওয়ার্ড ব্ল্যাকবিয়ার্ডের ‘রাণী এনের প্রতিশোধ’ নামের যে জাহাজটা তার দেখভাল করতো। সম্প্রতি স্পটসউডের বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
স্পটস উড চিন্তা করতে থাকে, এই হাওয়ার্ড ব্যাটাই জানে টেচ এর সব খবর। ওকে ঠিকমত সাইজ করতে পারলেই সব খবর বেরিয়ে যাবে। স্পটসউড ঢুকে যায় হাওয়ার্ডকে যে নিরাপদ কক্ষে রাখা হয়েছে সেখানে। হাওয়ার্ড গভর্ণরকে দেখে খেক খেক করে হেসে উঠে।
হাওয়ার্ডঃ কী গভর্ণর, তোমার আদরের ক্যাপ্টেন ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগটা কেমন হয়েছে বলতো। তুমি নিশ্চয়ই স্বীকার করবে আমার এটর্নি, জন হলোওয়ে খুবই কাজের মানুষ। আমাকে তোমার আটকে রাখবার কোনো আইনগত অধিকার নেই, এটা কিন্তু হলোওয়েই খুঁজে বের করেছে। তোমাদের এই বেআইনি গ্রেপ্তারের জন্য আমার পক্ষ থেকে পাচশ’ পাউন্ড ক্ষতি পূরণ দাবি করে সে ঠুকেছে আরেকটি মামলা।
বিশ্রিভাবে হেসে উঠে হাওয়ার্ড, এবার ঠেকাও তোমার কিস্তি, দেখি কেমন বাপের বেটা হয়েছো তুমি।
স্পটস উডঃ বেশি খুশি হয়ো না হাওয়ার্ড। মামলাতে তুমি জেতো আর আমিই জিতি; তাতে কোনো ফারাক পড়বে না আমার কাছে। কারণ তার আগেই আমি তোমার কাছে জেনে নেব সব কিছু। সে ব্যবস্থা করতেই আমি এসেছি এখানে।
হাওয়ার্ডের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়ঃ মানে? কী বলতে চাইছো তুমি? তুমি কি আমার গায়ে হাত তুলবে না কি?
স্পটস উডঃ প্রয়োজনে তাই করবো। তোমার মতো একটা নর্দমার কীটের গায়ে হাত তুলতে আমার একটুও বাধবে না।
হাওয়ার্ডঃ তুমি জানো না তাহলে তুমি কতো বড় ভুল করবে।
হাওয়ার্ডের কথা ফুরোনোর আগেই গভর্ণর হাওয়ার্ডের নাক বরাবর একটা চল্লিশ কেজি ওজনের পাঞ্চ বসিয়ে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় একেবারে হতবিহবল হয়ে যায় হাওয়ার্ড। নাক দিয়ে ছলকে বের হয় রক্ত। চারদিক অন্ধকার দেখতে থাকে সে। সম্ভবত এটাকেই বলে দিনের বেলা তারা দেখা।
ঘটনা ০৮:
লেফটেন্যান্ট মেইনার্ডের জাহাজ। ডেকে বসে আছে মেইনার্ড, মিল আর রোজার। পাল তোলা জাহাজের গতি বেড়েছে। মাস্তুলে পটপট শব্দ হচ্ছে।
রোজার: মিল তোমার সাল তারিখ বলার অভ্যাসটা কিন্তু খারাপ না। সব কিছুরই একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। সেই সময়গুলো আমাদের মনে রাখা দরকার। আমার সন্তান হলে তোমাকে তার শিক্ষক বানাবো। ভেব না তোমাকে মাসে অনেক টাকা বেতন দেব।
মিল: মাঝে মাঝেই তুমি যেন কেমন ভাল মানুষ হয়ে যাও রোজার। এমন কি বিয়ে করতেও চাও। আবার তোমার একটা সন্তান থাকবে সেটাও কল্পনা করো।
মেইনার্ড হো হো করে হেসে উঠে, বিয়ের কথা তো মানুষ শুধু মাতাল হলেই চিন্তা করতে পারে। কি বলো রোজার?
রোজারঃ তা তুমি ঠিকই বলেছো লেফটেন্যান্ট। যাক মিল, তুমি ওই ব্যাটা কালা দাড়ি মানে ব্ল্যাক বিয়ার্ডের কথা একটু বলোতো। বুঝতে পারছি শয়তানটার সঙ্গে দেখা হবে খুব শিঘ্রি। তাই ওর সম্পর্কে একটু জেনে রাখা ভালো।
মেইনার্ডঃ এটা অবশ্য তুমি ঠিক বলেছো রোজার।
মিলঃ কোন পর্যন্ত যেন ছিলাম? ও হ্যাঁ, টেচ হার্নিগোল্ডের দলে যোগ দেয়। এরপর সে তার দুঃসাহস আর দক্ষতা দেখিয়ে গুরু হার্নিগোল্ডের মন জিতে নেয়। অন্যদেরকে টপকে হার্নিগোল্ড তাকে ১৭১৬ সালের শেষ দিকে একটি ছোট জাহাজের দায়িত্ব দেয়। ১৭১৭ সালের শুরুর দিকে ওরা দুজনে মিলে হাভানার একটা জাহাজ আটক করে। ওই জাহাজে ছিল ১২০ ব্যারেল ময়দা। এর কিছুদিন পরই বারমুডার একটা ছোট জাহাজে ডাকাতি করে। সেখানে ছিল ১০০ ব্যারেল ওয়াইন। এর কিছুদিন পর ওরা ম্যাডেরিয়া থেকে চার্লস টোনের দিকে ছেড়ে যাওয়া একটা জাহাজে ডাকাতি করে।
রোজার খুব মজা পাচ্ছিল, চালিয়ে যাও মিল। আহ কী মজা! ১২০ ব্যারেল ময়দা, ১০০ ব্যারেল ওয়াইন!! দারুণ! এ তো পুরো স্বর্গ রাজ্য।
মিলঃ হ্যা টেচ আর হর্নিগোল্ড মিল ডাকাতদের এক স্বর্গরাজ্যই গড়ে তুলেছিল। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বরে ওরা স্টেড বনেট কে আক্রমণ করে। স্টেড বনেট ছিল জমিদার আর সেনাবাহিনীর অফিসার। ওই বছরের শুরুর দিকে সে জলদস্যুদের খাতায় নাম লেখায়। তার জাহাজে ৭০ জন ডাকাত ছিল। কিন্তু এরা সবাই বনেটের কমান্ডে অসন্তুষ্ট ছিল। বনেটের সম্মতি নিয়ে টেচ তার ওই রিভেঞ্জ নামের জাহাজটার নিয়ন্ত্রণ নেয়।
রোজারঃ আফসোস। ব্যাটা বনেট। ঠিকমত ডাকাতিটাও করতে পারলো না।
মিলঃ বনেট টেচের জাহাজে আতিথেয়তা গ্রহণ করে। যা হোক এখন হর্নিগোল্ড আর টেচের জাহাজ হয় মোট তিনটি। টেচের পুরোনো ছোট জাহাজ আর নতুন রিভেঞ্জ। এদিকে হর্নিগোল্ডের জাহাজ রেঞ্জার। অক্টোবরের মধ্যে তারা আরও একটি জাহাজে হামলা চালিয়ে তা দখল করে নেয়। এতে দলে যোগ হয় আরো একটি ছোট জাহাজ। ১৭১৭ সালের ২২ অক্টোবর এই দুর্ধর্ষ ডাকাতদল ফিলাডেলফিয়ার জাহাজ রবার্ট আর ডাবলিনের জাহাজ গুড ইনটেন্টকে আটক করে। অবশ্য মালামাল সব ছিনিয়ে নেওয়ার পর জাহাজ দুটিকে ছেড়েও দেয়।
রোজারঃ বাহ এতো দেখি ভালো ডাকাত। ডাকাতি শেষে জাহাজ ছেড়ে দিল।
মেইনার্ডঃ আরেকটা খবর তোমাদের দেই, হর্নিগোল্ড কিন্তু ছিল ব্রিটিশ প্রাইভেটিয়ার। তাই সে শুধু তার সাবেক শত্রুদের জাহাজেই আক্রমণ করতো। আর ব্রিটিশদের জাহাজ অক্ষত অবস্থায় ছেড়ে দিত।
রোজারঃ এ তো দেখি রবিনহুড! একেবারে নীতিবান দস্যু।
মিলঃ এ কারণে হর্নিগোল্ডকে মাসুলও দিতে হয়েছে। সবার প্রমোশন হয়, ওর হয়েছিল ডিমোশন। তার এ ডিমোশনে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের হাত ছিল কি না জানি না তবে কিছুদিনের মধ্যেই সে দস্যুতা থেকে অবসর নেয়। যাওয়ার সময় সে সঙ্গে তার জাহাজ র্যাঞ্জার আর একটা ছোট জাহাজ নিয়ে যায়। এরপর অবশ্য আর দুই দস্যুর মধ্যে কখনও দেখাও হয় নি। তারপর থেকে ব্ল্যাকবিয়ার্ডই হয় দলের একক নেতা।
মেইনার্ডঃ এরপর তো সে মারগারেট নামের একটা বণিক জাহাজ আটকায়।
মিলঃ ১৭১৭ সালের ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখে, ক্র্যাব দ্বীপের উপকূলে, এটা এঙ্গোলার কাছে।
রোজারঃ এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে মিল!
মেইনার্ডঃ ও ঠিকই বলেছে। এই জাহাজের ক্যাপ্টেন হেনরি বস্টোককে ব্ল্যাকবিয়ার্ড আট ঘন্টা আটকে রাখে। বিধ্বস্ত করে দেয় ওর জাহাজ।
রোজারঃ আর ওই বোকা বনেটের কী অবস্থা বলোতো?
মিলঃ ১৭১৭ সালের শেষ থেকে ১৭১৮ সালের শুরু পর্যন্ত টেচের চলাচল অনেকটাই রহস্যময়।
রোজারঃ আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি স্টেড বনেটের কথা গাধা।
মিলঃ হ্যাঁ এই সময়টুকুতে যেসব ডাকাতি হয়েছে, ধারণা করা হয়, বনেট আর টেচ মিলেই সেগুলো করেছে।
ঘটনা ০৯:
ভার্জিনিয়া। স্পটস উডের দপ্তর। বৈঠক চলছে। ১৭১৮ সাল।
স্পটস উডঃ টেচের উপস্থিতি একটা সমস্যা। সম্প্রতি নগরবাসী তার বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ করছে। আপনারা জানেন এ বছরের মে মাসে টেচ ওরফে ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকবিয়ার্ড ...
একজন সভাসদ (কথার মাঝে বাধা দিয়ে): মাফ করবেন গভর্নর, টেচ বর্তমানে আর ক্যাপ্টেন নয় সে কমোডর।
স্পটসউড- ওকে। কমোডর ব্ল্যাক বিয়ার্ড চার্লসটোন বন্দর অবরোধ করেছিল। সেখানে সে পাঁচ থেকে ছয়দিন বন্দর অবরোধ করেছিল। তারা বেশ কয়েকটি জাহাজ এ সময় আটক করে। তাদের আটককৃত জাহাজের একটির নাম ছিল ক্রাউলি। এ জাহাজে ক্যারোলিনা প্রদেশের কাউন্সিল সদস্য স্যামুয়েল র্যাগ পর্যন্ত ছিলেন। এদেরকে জিম্মি করে সে তার দস্যুদের জন্য চার্লস্টোন সরকারের কাছ থেকে ওষুধ আদায় করে নেয়। এ ধরনের হুমকি এখন ভার্জিনিয়ার জন্যও প্রযোজ্য।
অন্য একজন সভাসদ এর মধ্যে জিজ্ঞেস করে, এখন আপনি কী করতে চাচ্ছেন? আর তাছাড়া আমরা তো জানিও না টেচ কোথায় আছে।
স্পটস উডঃ এ ব্যাপারে আমরা তদন্ত করছি। আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে। আমি ভাবছি টেচকে ধরতে নৌবাহিনীর একটা বিশেষ দল পাঠাবো।
অন্য একজন সভাসদ পরামর্শ দিয়ে বলেনঃ তাহলে টেচের মাথার দামও ধরা হোক।
স্পটসউড জবাব দেয়ঃ আমিও তাই চাইছি, যে টেচকে ধরে আনতে পারবে তাকে চারশ পাউন্ড পুরস্কার দেওয়া হবে।
ওই সভাসদই প্রশ্ন তোলেঃ এই টাকা কী আপনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যয় করতে চাচ্ছেন।
স্পটসউড উত্তরে বলেনঃ আমার মনে হয় টেচ কে গ্রেপ্তার করার পর তার মালামাল জব্দ করেই এ টাকা পাওয়া যাবে।
আমি এই অভিযানের জন্য ডেকে পাঠিয়েছি একজন দক্ষ অফিসারকে। ওর নাম মেইনার্ড।
সভার সবাই আশ্বস্ত হলো। এবার সম্ভবতই টেচকে গ্রেপ্তার করা যাবে। এর আগে পেনসিলভানিয়র গভর্ণর টেচকে ধরতে দুটি জাহাজ পাঠিয়েছিল, তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছিল। কিন্তু মেইনার্ডের ওপর সবার ভরসা আছে।
রোজারঃ মিল আমি কিন্তু এবারে সত্যি ক্ষেপে যাবো।
মিলঃ আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত রোজার। কিন্তু সাল তারিখ ছাড়া আমি কথাই বলতে পারি না তাতো তুমি জানোই। যা হোক, সম্ভবত আটরেচট চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই টেচ জ্যামাইকা ছেড়ে নিউ প্রভিডেন্সে চলে আসে। আসলে এটা যে সব প্রাইভেটিয়াররা পরে জলদস্যু হয়ে গিয়েছিল তাদের সবার জন্যই নিরাপদ আস্তানা হয়ে উঠেছিল। সম্ভবত ১৭১৬ সালে টেচ হর্নিগোল্ড এর দলে যোগ দেয়।
রোজারঃ বাচাল তোতাপাখি মিল, আমি তোমাকে কিন্তু জ্যান্ত খেয়ে ফেলব।
মিল থতমত খায়।
মেইনার্ডঃ আচ্ছা থামো তোমরা। একটু ওয়াইন গেলা যাক।
মিলঃ হ্যা এটা কিন্তু ভাল প্রস্তাব। আঠারোশ...
মেইনার্ডঃ মিল!
মিল বুঝতে পারে এর পরে আরও কথা বললে খবর আছে।
ঘটনা ০৭ (ভার্জিনিয়া, ১০ জুলাই ১৭১৮):
চারদিকে ব্ল্যাকবিয়ার্ড আতঙ্ক। নগরপালদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে জলদস্যুরা। সওদাগরেরা বাণিজ্যে যেতে সাহস পাচ্ছে না। অর্থনীতি প্রায় ভেঙে পড়ার জোগাড়। পেনিসিলভানিয়ার গভর্ণর তো এতই চিন্তিত হয়ে উঠেছিলেন যে জলদস্যুদের গ্রেপ্তার করার জন্য তিনি ছোট ছোট দুটি জাহাজও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে। ভার্জিনিয়ার গভর্ণর স্পটস উডের চোখেও ঘুম নেই। কারণ নর্থ ক্যারোলিনাতে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের দলের সাবেক চ্যালারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। চিন্তায় তার কপালে ভাঁজ পড়ে গেছে। কাপের পর কাপ চা গিলছে আর চলছে সিগার।
স্পটস উড তার সেক্রেটারিকে ডাকলেন।
স্পটস উডঃ শোনো, শহরে নোটিশ জারি করে দাও যে শহরে যে সব নাগরিক আগে জলদস্যু ছিল তারা যেন শিগগিরই তা কর্তৃপক্ষকে জানায়। তাদেরকে অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশও দাও। তারা যেন একসঙ্গে তিনজনের বেশি কোথাও ভ্রমণ না করে। এভাবে একটা নোটিশ লিখে আনো। আমি সই করে দিচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর সেক্রেটারি চিঠি নিয়ে আসে। সই দিয়ে বের হয়ে যায় স্পটস উড। চলে আসে নগরের গোপন কারাগারে। এখানেই আছে টেচ বা ব্ল্যাকবিয়ার্ডের পতাকা-সঙ্কেত নির্দেশের তত্ত্বাবধায়ক উইলিয়াম হাওয়ার্ড। হাওয়ার্ড ব্ল্যাকবিয়ার্ডের ‘রাণী এনের প্রতিশোধ’ নামের যে জাহাজটা তার দেখভাল করতো। সম্প্রতি স্পটসউডের বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
স্পটস উড চিন্তা করতে থাকে, এই হাওয়ার্ড ব্যাটাই জানে টেচ এর সব খবর। ওকে ঠিকমত সাইজ করতে পারলেই সব খবর বেরিয়ে যাবে। স্পটসউড ঢুকে যায় হাওয়ার্ডকে যে নিরাপদ কক্ষে রাখা হয়েছে সেখানে। হাওয়ার্ড গভর্ণরকে দেখে খেক খেক করে হেসে উঠে।
হাওয়ার্ডঃ কী গভর্ণর, তোমার আদরের ক্যাপ্টেন ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগটা কেমন হয়েছে বলতো। তুমি নিশ্চয়ই স্বীকার করবে আমার এটর্নি, জন হলোওয়ে খুবই কাজের মানুষ। আমাকে তোমার আটকে রাখবার কোনো আইনগত অধিকার নেই, এটা কিন্তু হলোওয়েই খুঁজে বের করেছে। তোমাদের এই বেআইনি গ্রেপ্তারের জন্য আমার পক্ষ থেকে পাচশ’ পাউন্ড ক্ষতি পূরণ দাবি করে সে ঠুকেছে আরেকটি মামলা।
বিশ্রিভাবে হেসে উঠে হাওয়ার্ড, এবার ঠেকাও তোমার কিস্তি, দেখি কেমন বাপের বেটা হয়েছো তুমি।
স্পটস উডঃ বেশি খুশি হয়ো না হাওয়ার্ড। মামলাতে তুমি জেতো আর আমিই জিতি; তাতে কোনো ফারাক পড়বে না আমার কাছে। কারণ তার আগেই আমি তোমার কাছে জেনে নেব সব কিছু। সে ব্যবস্থা করতেই আমি এসেছি এখানে।
হাওয়ার্ডের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়ঃ মানে? কী বলতে চাইছো তুমি? তুমি কি আমার গায়ে হাত তুলবে না কি?
স্পটস উডঃ প্রয়োজনে তাই করবো। তোমার মতো একটা নর্দমার কীটের গায়ে হাত তুলতে আমার একটুও বাধবে না।
হাওয়ার্ডঃ তুমি জানো না তাহলে তুমি কতো বড় ভুল করবে।
হাওয়ার্ডের কথা ফুরোনোর আগেই গভর্ণর হাওয়ার্ডের নাক বরাবর একটা চল্লিশ কেজি ওজনের পাঞ্চ বসিয়ে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় একেবারে হতবিহবল হয়ে যায় হাওয়ার্ড। নাক দিয়ে ছলকে বের হয় রক্ত। চারদিক অন্ধকার দেখতে থাকে সে। সম্ভবত এটাকেই বলে দিনের বেলা তারা দেখা।
ঘটনা ০৮:
লেফটেন্যান্ট মেইনার্ডের জাহাজ। ডেকে বসে আছে মেইনার্ড, মিল আর রোজার। পাল তোলা জাহাজের গতি বেড়েছে। মাস্তুলে পটপট শব্দ হচ্ছে।
রোজার: মিল তোমার সাল তারিখ বলার অভ্যাসটা কিন্তু খারাপ না। সব কিছুরই একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। সেই সময়গুলো আমাদের মনে রাখা দরকার। আমার সন্তান হলে তোমাকে তার শিক্ষক বানাবো। ভেব না তোমাকে মাসে অনেক টাকা বেতন দেব।
মিল: মাঝে মাঝেই তুমি যেন কেমন ভাল মানুষ হয়ে যাও রোজার। এমন কি বিয়ে করতেও চাও। আবার তোমার একটা সন্তান থাকবে সেটাও কল্পনা করো।
মেইনার্ড হো হো করে হেসে উঠে, বিয়ের কথা তো মানুষ শুধু মাতাল হলেই চিন্তা করতে পারে। কি বলো রোজার?
রোজারঃ তা তুমি ঠিকই বলেছো লেফটেন্যান্ট। যাক মিল, তুমি ওই ব্যাটা কালা দাড়ি মানে ব্ল্যাক বিয়ার্ডের কথা একটু বলোতো। বুঝতে পারছি শয়তানটার সঙ্গে দেখা হবে খুব শিঘ্রি। তাই ওর সম্পর্কে একটু জেনে রাখা ভালো।
মেইনার্ডঃ এটা অবশ্য তুমি ঠিক বলেছো রোজার।
মিলঃ কোন পর্যন্ত যেন ছিলাম? ও হ্যাঁ, টেচ হার্নিগোল্ডের দলে যোগ দেয়। এরপর সে তার দুঃসাহস আর দক্ষতা দেখিয়ে গুরু হার্নিগোল্ডের মন জিতে নেয়। অন্যদেরকে টপকে হার্নিগোল্ড তাকে ১৭১৬ সালের শেষ দিকে একটি ছোট জাহাজের দায়িত্ব দেয়। ১৭১৭ সালের শুরুর দিকে ওরা দুজনে মিলে হাভানার একটা জাহাজ আটক করে। ওই জাহাজে ছিল ১২০ ব্যারেল ময়দা। এর কিছুদিন পরই বারমুডার একটা ছোট জাহাজে ডাকাতি করে। সেখানে ছিল ১০০ ব্যারেল ওয়াইন। এর কিছুদিন পর ওরা ম্যাডেরিয়া থেকে চার্লস টোনের দিকে ছেড়ে যাওয়া একটা জাহাজে ডাকাতি করে।
রোজার খুব মজা পাচ্ছিল, চালিয়ে যাও মিল। আহ কী মজা! ১২০ ব্যারেল ময়দা, ১০০ ব্যারেল ওয়াইন!! দারুণ! এ তো পুরো স্বর্গ রাজ্য।
মিলঃ হ্যা টেচ আর হর্নিগোল্ড মিল ডাকাতদের এক স্বর্গরাজ্যই গড়ে তুলেছিল। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বরে ওরা স্টেড বনেট কে আক্রমণ করে। স্টেড বনেট ছিল জমিদার আর সেনাবাহিনীর অফিসার। ওই বছরের শুরুর দিকে সে জলদস্যুদের খাতায় নাম লেখায়। তার জাহাজে ৭০ জন ডাকাত ছিল। কিন্তু এরা সবাই বনেটের কমান্ডে অসন্তুষ্ট ছিল। বনেটের সম্মতি নিয়ে টেচ তার ওই রিভেঞ্জ নামের জাহাজটার নিয়ন্ত্রণ নেয়।
রোজারঃ আফসোস। ব্যাটা বনেট। ঠিকমত ডাকাতিটাও করতে পারলো না।
মিলঃ বনেট টেচের জাহাজে আতিথেয়তা গ্রহণ করে। যা হোক এখন হর্নিগোল্ড আর টেচের জাহাজ হয় মোট তিনটি। টেচের পুরোনো ছোট জাহাজ আর নতুন রিভেঞ্জ। এদিকে হর্নিগোল্ডের জাহাজ রেঞ্জার। অক্টোবরের মধ্যে তারা আরও একটি জাহাজে হামলা চালিয়ে তা দখল করে নেয়। এতে দলে যোগ হয় আরো একটি ছোট জাহাজ। ১৭১৭ সালের ২২ অক্টোবর এই দুর্ধর্ষ ডাকাতদল ফিলাডেলফিয়ার জাহাজ রবার্ট আর ডাবলিনের জাহাজ গুড ইনটেন্টকে আটক করে। অবশ্য মালামাল সব ছিনিয়ে নেওয়ার পর জাহাজ দুটিকে ছেড়েও দেয়।
রোজারঃ বাহ এতো দেখি ভালো ডাকাত। ডাকাতি শেষে জাহাজ ছেড়ে দিল।
মেইনার্ডঃ আরেকটা খবর তোমাদের দেই, হর্নিগোল্ড কিন্তু ছিল ব্রিটিশ প্রাইভেটিয়ার। তাই সে শুধু তার সাবেক শত্রুদের জাহাজেই আক্রমণ করতো। আর ব্রিটিশদের জাহাজ অক্ষত অবস্থায় ছেড়ে দিত।
রোজারঃ এ তো দেখি রবিনহুড! একেবারে নীতিবান দস্যু।
মিলঃ এ কারণে হর্নিগোল্ডকে মাসুলও দিতে হয়েছে। সবার প্রমোশন হয়, ওর হয়েছিল ডিমোশন। তার এ ডিমোশনে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের হাত ছিল কি না জানি না তবে কিছুদিনের মধ্যেই সে দস্যুতা থেকে অবসর নেয়। যাওয়ার সময় সে সঙ্গে তার জাহাজ র্যাঞ্জার আর একটা ছোট জাহাজ নিয়ে যায়। এরপর অবশ্য আর দুই দস্যুর মধ্যে কখনও দেখাও হয় নি। তারপর থেকে ব্ল্যাকবিয়ার্ডই হয় দলের একক নেতা।
মেইনার্ডঃ এরপর তো সে মারগারেট নামের একটা বণিক জাহাজ আটকায়।
মিলঃ ১৭১৭ সালের ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখে, ক্র্যাব দ্বীপের উপকূলে, এটা এঙ্গোলার কাছে।
রোজারঃ এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে মিল!
মেইনার্ডঃ ও ঠিকই বলেছে। এই জাহাজের ক্যাপ্টেন হেনরি বস্টোককে ব্ল্যাকবিয়ার্ড আট ঘন্টা আটকে রাখে। বিধ্বস্ত করে দেয় ওর জাহাজ।
রোজারঃ আর ওই বোকা বনেটের কী অবস্থা বলোতো?
মিলঃ ১৭১৭ সালের শেষ থেকে ১৭১৮ সালের শুরু পর্যন্ত টেচের চলাচল অনেকটাই রহস্যময়।
রোজারঃ আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি স্টেড বনেটের কথা গাধা।
মিলঃ হ্যাঁ এই সময়টুকুতে যেসব ডাকাতি হয়েছে, ধারণা করা হয়, বনেট আর টেচ মিলেই সেগুলো করেছে।
ঘটনা ০৯:
ভার্জিনিয়া। স্পটস উডের দপ্তর। বৈঠক চলছে। ১৭১৮ সাল।
স্পটস উডঃ টেচের উপস্থিতি একটা সমস্যা। সম্প্রতি নগরবাসী তার বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ করছে। আপনারা জানেন এ বছরের মে মাসে টেচ ওরফে ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকবিয়ার্ড ...
একজন সভাসদ (কথার মাঝে বাধা দিয়ে): মাফ করবেন গভর্নর, টেচ বর্তমানে আর ক্যাপ্টেন নয় সে কমোডর।
স্পটসউড- ওকে। কমোডর ব্ল্যাক বিয়ার্ড চার্লসটোন বন্দর অবরোধ করেছিল। সেখানে সে পাঁচ থেকে ছয়দিন বন্দর অবরোধ করেছিল। তারা বেশ কয়েকটি জাহাজ এ সময় আটক করে। তাদের আটককৃত জাহাজের একটির নাম ছিল ক্রাউলি। এ জাহাজে ক্যারোলিনা প্রদেশের কাউন্সিল সদস্য স্যামুয়েল র্যাগ পর্যন্ত ছিলেন। এদেরকে জিম্মি করে সে তার দস্যুদের জন্য চার্লস্টোন সরকারের কাছ থেকে ওষুধ আদায় করে নেয়। এ ধরনের হুমকি এখন ভার্জিনিয়ার জন্যও প্রযোজ্য।
অন্য একজন সভাসদ এর মধ্যে জিজ্ঞেস করে, এখন আপনি কী করতে চাচ্ছেন? আর তাছাড়া আমরা তো জানিও না টেচ কোথায় আছে।
স্পটস উডঃ এ ব্যাপারে আমরা তদন্ত করছি। আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে। আমি ভাবছি টেচকে ধরতে নৌবাহিনীর একটা বিশেষ দল পাঠাবো।
অন্য একজন সভাসদ পরামর্শ দিয়ে বলেনঃ তাহলে টেচের মাথার দামও ধরা হোক।
স্পটসউড জবাব দেয়ঃ আমিও তাই চাইছি, যে টেচকে ধরে আনতে পারবে তাকে চারশ পাউন্ড পুরস্কার দেওয়া হবে।
ওই সভাসদই প্রশ্ন তোলেঃ এই টাকা কী আপনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যয় করতে চাচ্ছেন।
স্পটসউড উত্তরে বলেনঃ আমার মনে হয় টেচ কে গ্রেপ্তার করার পর তার মালামাল জব্দ করেই এ টাকা পাওয়া যাবে।
আমি এই অভিযানের জন্য ডেকে পাঠিয়েছি একজন দক্ষ অফিসারকে। ওর নাম মেইনার্ড।
সভার সবাই আশ্বস্ত হলো। এবার সম্ভবতই টেচকে গ্রেপ্তার করা যাবে। এর আগে পেনসিলভানিয়র গভর্ণর টেচকে ধরতে দুটি জাহাজ পাঠিয়েছিল, তারা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছিল। কিন্তু মেইনার্ডের ওপর সবার ভরসা আছে।
ঘটনা ১০:
মিল আর রোজার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখছিলো। জাহাজের গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে লেফটেন্যান্ট মেইনার্ড। বাতাসে পালগুলো ফুলে ফুলে উঠছে। সমুদ্রের ঢেউও জাহাজের অনুকূলেই। মেইনার্ড ধারণা করছে খুব শিগগিরই তারা ভার্জিনিয়াতে পৌঁছুতে পারবে। পাশ দিয়ে আরেকটি জাহাজ চলে যায় উল্টো দিকে।
রোজারঃ মিল তোমার এ ধরনের অভিযানগুলো কেমন লাগে?
মিল- আমি আসলে ইতিহাসের বড় বড় ঘটনাগুলোর সঙ্গী হতে চাই।
রোজার আড়মোড়া ভাঙে, কিন্তু তুমি যে ভীতু!
মিলঃ সে জন্যই তো তোমাকে সবসময় সঙ্গে রাখি।
রোজার ক্ষেপে যায়, আমি কি তোমার নিরাপত্তাকর্মী?
মিল ব্যাপারটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে, রেগে যাচ্ছ কেন বন্ধু। বিপদের বন্ধুই তো প্রকৃত বন্ধু, সেই ভাল্লুকের গল্পটা পড়োনি?
রগচটা রোজার একটু সামলে নেয় নিজেকে, তোমার জ্ঞান দেওয়া বন্ধ কর ঈশপ। আচ্ছা এই ব্ল্যাকবিয়ার্ড কী রাষ্ট্রীয় ক্ষমা চায় নি কখনও?
মিলঃ আসলে ১৭১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যে সব জলদস্যু আত্মসমর্পণ করবে তাদের জন্য সরকার একটা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলো। কিন্তু এর একটি শর্ত ছিল এ ক্ষমার আওতায় তারাই আসবে যারা ৫ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত অপরাধ করেছে। যেহেতু টেচ আর বনেট চার্লস্টোনে পাঁচ জানুয়ারির পরও হামলা করেছিলো তাই টেচ একটা অবিশ্বাসে ভুগছিলো। যাচাই করার জন্য সে বনেটকে আত্মসমর্পন করতে উদ্বুদ্ধ করে। বনেট বাথ টাউনে গভর্ণর এডেনের কাছে আত্মসমর্পন করে। এডেন তাকে ক্ষমাও করে দেয়।
রোজারঃ দ্যাট সাউন্ডস গুড।
মিলঃ এর পর বনেট তার জাহাজ রিভেঞ্জকে নেওয়ার জন্য আসে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের কাছে।
এর মধ্যে লেফটেন্যান্ট মেইনার্ড ওদের পাশে এসে দাঁড়ায়।
মেইনার্ডঃ কী কথা হচ্ছে দুই বন্ধুতে?
রোজারঃ মিলের সাল তারিখের ক্যাচক্যাচানি শুনছি।
মেইনার্ডঃ কোন ঘটনা বলছো মিল?
মিলঃ ওই তো স্টেড বনেটের ক্ষমা আর তার পরিণতি। বলছিলাম সে তার রিভেঞ্জ জাহাজটা ব্ল্যাকবিয়ার্ডের কাছে ফেরত নিতে আসলে ব্ল্যাকবিয়ার্ড কী করেছিলো।
মেইনার্ডঃ বিশ্বাসঘাতক ব্ল্যাকবিয়ার্ড রিভেঞ্জের সব মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নেয়। আর রিভেঞ্জের নাবিকদের একটা নির্জন দ্বীপে ফেলে দেয়। পরে বনেট ওদেরকে উদ্ধার করে। এতে বনেটের দল আবার ভারি হয়। দুষ্টবুদ্ধি চাপে বনেটের মাথায়। সে আবার ডাকাতি শুরু করে।
মিলঃ ১৭১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৭ তারিখে দলবল সহ কেপ ফেয়ার নদীর মুখে বনেটকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে চার্লস্টোনে বিচারে তাদের সবার ফাঁসি হয়।
রোজারঃ আহারে বেচারা বনেট। কিন্তু টেচের কী হল?
মিলঃ এর মধ্যে টেচও এডেনের কাছে আত্মসমর্পন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমা গ্রহণ করে। সে বাথ টাউনে একটা বাড়ি কিনে বসবাস শুরু করে। নগরবাসী মনে করে সে বোধ হয় দস্যুগিরি ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু গোপনে গোপনে সে চালাতে থাকে তার কাজ।
মেইনার্ডঃ অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বন্দরে পৌঁছে যাব। সেখান থেকে আমরা যাব গভর্ণর স্পটসউডের দপ্তরে। সুতরাং তোমরা তোমাদের যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে নাও।
ঘটনা ১১ (ভার্জিনিয়া। ১৭ নভেম্বর ১৭১৮, স্পটসউডের দপ্তর):
স্পটসউডের সামনে বসে আছে লেফটেন্যান্ট মেইনার্ড।
উড:লেফটেন্যান্ট আমি প্রথমে ঠিক করেছিলাম এ অভিযানে দুটি বড় জাহাজ এইএমএস পার্ল ও এইচএমএস লাইমকে পাঠাবো। কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য আছে ব্ল্যাকবিয়ার্ড ওক্রাকোক দ্বীপে রয়েছে। সে দ্বীপের আশেপাশের পানি এতোই অগভীর যে সেখানে এত বড় জাহাজ যেতে পারবে না। তাই আমি নিজের পয়সায় দুটি ছোট জাহাজ ভাড়া করেছি। আপনি থাকবেন এর দায়িত্বে।
মেইনার্ডঃ আমার সঙ্গে কারা থাকবে?
উডঃ আপনাকে এইচএমএস পার্ল থেকে ৩৩ জন আর এইচএমএস লাইম থেকে ২৪ জন নাবিক দেওয়া হবে।
মেইনার্ডঃ ওকে। আমি জাহাজ দুটির নাম দিতে চাই। একটির নাম দিলাম জেন আর একটির নাম দিলাম র্যাঞ্জার। জেনের দায়িত্বে আমি থাকবো। আর র্যাঞ্জারের দায়িত্বে আমার একজন বিশ্বস্ত অফিসার থাকবে ওর নাম হাইড।
উডঃ ওকে এটা আপনার ব্যাপার। আমি চাই সাফল্য। আর একটা সংবাদ আপনাকে দিতে চাই, ব্ল্যাকবিয়ার্ডের মাথার দাম আমরা ধরেছি চারশ পাউন্ড।
মেইনার্ডঃ ধন্যবাদ। আমি ওর মাথা আপনার সামনে হাজির করবোই।
ঘটনা ১২ (২১ নভেম্বর ১৭১৮, সন্ধ্যা):
লেফটেন্যান্ট মেইনার্ড তার জাহাজ থামায় ওক্রাকোক দ্বীপের কাছে। র্যাঞ্জারকেও থামার নির্দেশ দেয়। লেফটেন্যান্টের পাশে এসে দাঁড়ায় মিল আর রোজার।
মেইনার্ডঃ ব্ল্যাকবিয়ার্ড দ্বীপের ভেতরে আছে। এখানকার চ্যানেলগুলো আমার কাছে অপরিচিত। এখন আক্রমণ করা খুব একটা সুবিধাজনক হবে না। আমার মনে হয় সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করাই ভাল হবে।
রোজারঃ সেটাই ভালো। মিল তোমার সাল তারিখ মুখস্থ করা শুরু করো। আজ ২১ নভেম্বর, ১৭১৮ সাল।
মিলঃ আমার মনে আছে রোজার।
লেফটেন্যান্ট হেসে উঠে। চিৎকার করে নির্দেশ দেয় নিজের নাবিকদের, তোমরা এক কাজ করো, সব জাহাজ আটকে দাও। কোনো জাহাজ যেন দ্বীপের দিকে যেতে না পারে আর কোনো জাহাজ যেন দ্বীপ থেকে বের হতে না পারে।
হাইড র্যাঞ্জার থেকে জবাব দেয়, ইয়েস স্যার।
লেফটেন্যান্টঃ আর সবাই প্রস্তুত থাকো আগামীকাল ভোর হলেই আমরা আক্রমণ করব।
হাইডঃ ইয়েস স্যার।
নাবিকদের মধ্যে একটা বাড়তি গতি সঞ্চার হয়। সবাই নিজের নিজের অস্ত্র যাচাই করে নেয় শেষবারের মতো। বন্দুকগুলো পরিস্কার করে নেয় সৈনিকরা। সবার মধ্যেই একটা উত্তেজনা। সবারই জানা আছে প্রতিপক্ষ ভয়ঙ্কর। এরা যখন প্রস্ততি নিচ্ছিলো তখন দ্বীপের ভেতর থেকে ভেসে আসছে গান বাজনার শব্দ। হয়তো এটুকু সুবিধা লেফটেন্যান্টের দল পাবে যে ব্ল্যাকবিয়ার্ডকে অপ্রস্তুত অবস্থায় আক্রমণ করা যাবে।
মিলঃ রোজার, আমার মনে হচ্ছে কালই হবে আমাদের জীবনের শেষ দিন
রোজারঃ বোকা গাধা, যুদ্ধে সাহস আর আত্মবিশ্বাসই হচ্ছে বড় কথা। আর তুমি যুদ্ধের আগেই হার মেনে বসে আছো! শোনো আমি থাকতে তোমার কোনো চিন্তা নেই।
মিলঃ ব্ল্যাকবিয়ার্ড কিন্তু দুর্ধর্ষ!
রোজারঃ চুপ করো। অমন হাজারটা ব্ল্যাকবিয়ার্ড আমি গিলে খেতে পারি।
মিলঃ তা অবশ্য আমি জানি। আমার একটু চিকেন ফ্রাই খেতে ইচ্ছা করছে।
রোজার-ঃঅপেক্ষা কর। কালকে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের ফ্রাই খাওয়াবো তোমাকে।
ঘটনা ১৩ (২২ নভেম্বর ১৭১৮, ভোর):
মেইনার্ডের দুটি জাহাজ-র্যাঞ্জার আর জেন, ওক্রাকোক দ্বীপের চ্যানেলে ঢোকা শুরু করে। সামনে আরেকটি ছোট নৌকা পাঠিয়েছে মেইনার্ড; যাতে সেই নৌকা তাকে আগাম সঙ্কেত দিতে পারে। নিঃশব্দে চলছে জাহাজ দুটি।
মিলঃ আমার মনে হয় ব্ল্যাক বিয়ার্ড এখনও টের পায় নি।
রোজারঃ শত্রুকে কখনও এতো বোকা ভেবো না মিল। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নাও। ওই যে ব্ল্যাক বিয়ার্ডের জাহাজ।
মিলঃ ওটার নামই সম্ভবত অ্যাডভেঞ্চার।
রোজারঃ অপেক্ষা করো, আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই ওটার কাছাকাছি পৌঁছে যাব।
মেইনার্ড চিৎকার করে নিজের সৈনিকদের নির্দেশ দেয়, সবাই প্রস্তুত থাকো। হাইড, তোমার সৈনিকদের প্রস্তুত হতে বলো।
হাইডও লেফটেন্যান্টের নির্দেশ পেয়ে নিজের সৈনিকদের প্রস্তুত হবার নির্দেশ দেয়। চারদিকে পিন পতন নীরবতা। নীরবতা এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে সৈনিকদের হৃদস্পন্দনের শব্দ পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে! ধীরে ধীরে ব্ল্যাক বিয়ার্ডের জাহাজ আরো পরিস্কার হয়। ইতোমধ্যে লেফটেন্যান্ট মেইনার্ড তার চোখ থেকে দূরবীণ নামিয়ে ফেলেছে।
রোজারঃ মিল তুমি ঠিকই বলেছো, ওটা অ্যাডভেঞ্চারই।
মিলঃ এখন খালি চোখেও নামটা পড়া যাচ্ছে।
সশব্দে একটা গুলি এসে পড়ে মিলের পাশে। সন্ত্রস্ত মিল নিজের বুকে ক্রুশ আঁকলো। রোজার নিজের গাদা বন্দুক সোজা করে ধরে এবার।
মেইনার্ড চিৎকার করে নির্দেশ দেয়, জাহাজে ইউনিয়ন পতাকা টানিয়ে দাও।
এর মধ্যে একের পর এক গুলি এসে পড়তে থাকে। মেইনার্ড আর হাইডের জাহাজের নাবিকদের হাত নিশপিশ করতে থাকে। শুধু অপেক্ষা করছে কমান্ডের। তাহলেই তারা গুলি ছুঁড়তে পারে। কিন্তু হাইডের র্যাঞ্জারে গুলি পড়ার তোড় বাড়তেই থাকে। সে তার জাহাজকে আস্তে আস্তে জেনের পাশে নিরাপদে আনতে থাকে। ততক্ষণে ব্ল্যাকবিয়ার্ড তার অ্যাডভেঞ্চারের নোঙর তুলে ফেলেছে। অ্যাডভেঞ্চার আরও সরু খালের ভিতর ঢুকতে থাকে।
ব্ল্যাক বিয়ার্ডের চিৎকার শোনা যায়, তোমাদেরকে নরকে পাঠিয়ে তারপর আমি ঘরে ফিরব।
মেইনার্ডঃ তোমার মাথা দিয়ে মুড়োঘন্ট খাওয়ার জন্যই আমি লেফটেন্যান্ট মেইনার্ড নিজে এসেছি।
লেফটেন্যান্ট এবার তার সেপাইদেরকে গুলি করার নির্দেশ দেয়, ফায়ার
এক সঙ্গে গর্জে উঠে একরাশ গাদা বন্দুক। র্যাঞ্জার থেকেও ছুটে যায় গুলি।
ব্ল্যাক বিয়ার্ডঃ জাহান্নামের কীট, এবার এটা সামলাও দেখি।
অ্যাডভেঞ্চার থেকে আসতে থাকে একের পর এক গাদা বন্দুকের গোলা। এর মধ্যেই র্যাঞ্জারের একজন সৈনিক মারা গেছে। গুলি এসে তার মাথা এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে। মিল লাশের চেহারা দেখে কপালে ক্রুশ আঁকে। আরেকটি গুলি এসে উড়িয়ে দেয় আরেক নাবিককে। হাইডের জাহাজেও একই অবস্থা। পানিও আস্তে আস্তে অগভীর হচ্ছে। র্যাঞ্জার ও জেনের চলার জন্য যথেষ্ট পানি আর থাকছে না। র্যাঞ্জারের মাস্তুলে একটি বোমা লেগেছে। প্রায় বিধ্বস্ত অবস্থা। তারপরও বীরদর্পে লড়ে যাচ্ছে সৈনিকরা। অ্যাডভেঞ্চার থেকে একের পর এক গালাগাল আর গুলির শব্দ ভেসে আসছে।
রোজারঃ সাবাশ। এবার একেবারে ওর জাহাজের জিব শিটে লেগেছে আমাদের বোমা। এবার নিশ্চিৎ অ্যাডভেঞ্চার নিয়ন্ত্রণ হারাবে।
মিলঃ কোথায় দেখলে জিব শিটে লেগেছে?
রোজারঃ দেখো ও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। আস্তে আস্তে বালুতে ঠেকে যাচ্ছে ওর জাহাজ।
মিলঃ পাশে তাকিয়ে দেখো।
দুজনেই এবারে পাশের র্যাঞ্জারের দিকে তাকায়। সশব্দে ভেঙে পড়ে জাহাজটি। পুরো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
রোজারঃ ওই যে হাইডের লাশ।
রক্ত আর মাংসের দলা পাকিয়ে পড়ে ছোট চ্যানেলে। এর মধ্যে জেন জাহাজটিও শব্দ করে আটকে যায়।
রোজারঃ এই জাহাজটাও আটকে গেছে।
বিকট শব্দে পাশে একটি বোমা বিস্ফোরণ হয়। ইতোমধ্যে জেন জাহাজের তিন ভাগের এক ভাগ নাবিক নিহত হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট মেইনার্ডঃ কিছু নাবিক ডেকের নিচে চলে যাও। আর মুখোমুখি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকো।
নির্দেশ পেয়ে কিছু নাবিক জাহাজের ডেকের নিচে চলে যায়। তাদের সঙ্গে মিল আর রোজারও আছে। মিল বারবার ক্রুশ এঁকে চলেছে। ব্ল্যাক বিয়ার্ডের চিৎকার শোনা যায়- মেইনার্ড নরকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও।
মেইনার্ডঃ আমার তো সৈন্য কম। তারপরও যদি বীরপুরুষ হও সামনে এসে লড়াই করো।
মেইনার্ডের পাশে বোতল বোমা পড়ে। আগেই সরে গেছে লেফটেন্যান্ট। অ্যাডভেঞ্চারের দিকে আরেকটি বোমা ছুটে যায়। তার কিছুক্ষণ পর নীরবতা। হঠাৎ ব্ল্যাক বিয়ার্ড তার দলবল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মেইনার্ডদের জাহাজে। একেবারে অতর্কিত আক্রমণ। কিন্তু ততোক্ষণে ডেকে নিচের সৈনিকরা ওপরে উঠে আসে। ব্ল্যাক বিয়ার্ডের দল চমকে উঠে। আর এটাই চাইছিল মেইনার্ড। পিস্তলের গুলি শুরু হলো এবারই প্রথম। ব্ল্যাক বিয়ার্ডের দলের অনেকেই চমক ভাঙার আগেই প্রাণ হারালো। অনেকে তলোয়ার বের করেও যুদ্ধ শুরু করেছে। ব্ল্যাকবিয়ার্ডের টার্গেট লেফটেন্যান্ট মেইনার্ড। আর মেইনার্ড চায় ব্ল্যাকের মাথা। দুজন দুজনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। একসময় টেচ ওরফে ব্ল্যাক বিয়ার্ড ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে। সে তার তলোয়ার বের করে ঝাঁপিয়ে পড়ে লেফটেন্যান্টের ওপর। মেইনার্ডও তার তলোয়ার বের করে। মিল দেখে ব্ল্যাকবিয়ার্ড আর মেইনার্ডকে এক জায়গায় রেখে দুই দলের সৈনিকরাই অন্য জায়গায় দূরে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করছে। সম্ভবত ওরা চাইছে সর্দারদের মধ্যে যুদ্ধ সর্দাররাই করুক আর সেপাইরা সেপাইদের মধ্যে।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ লেফটেন্যান্ট, তোমার জীবনের কোনো শেষ ইচ্ছা আছে? কিছু খেতে চাও?
লেফটেন্যান্টঃ তোমার বউ বাচ্চাদের কাছ থেকে শেষ বিদায় নিয়েছো টেচ?
দুজন দুজনের ওপর তলোয়ার চালায়। একবার টেচ এগিয়ে যায় তো অন্যবার মেইনার্ড। এভাবে কেটে যায় প্রায় বিশ মিনিট। টেচকে অনেকটা বিধ্বস্ত দেখায়। গায়ে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে।
মেইনার্ডঃ তোমার তো এক পা কবরেই চলে গেছে।
ব্ল্যাক বিয়ার্ডঃ তোমাকে জাহান্নামে পাঠানোর জন্য আমার এক পা যথেষ্ট।
তলোয়ার দিয়ে টেচ জোরে কোপ দেয় মেইনার্ডের তলোয়ারে। মেইনার্ডের তলোয়ার ভেঙ্গে যায়। মেইনার্ড চকিতে কয়েক পা পিছিয়ে যায়।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ এবার চলে যাও তোমার স্বর্গীয় পিতার কাছে মেইনার্ড। হা হা হা।
মেইনার্ডের পেট এফোঁড় ওফোঁড় করে দেবার জন্য তলোয়ার সোজা করে দৌঁড় দেয় ব্ল্যাক বিয়ার্ড। মেইনার্ড চোখ বন্ধ করে ফেলে। এক মনে যীশুর কথা ভাবতে থাকে। এটা যে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত সে বুঝে গেছে। আর মাত্র এক মুহুর্ত সে এ পৃথিবীতে আছে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ হয়ে যায় তারপরও তার গায়ে তলোয়ার লাগে না। ধীরে ধীরে চোখ খুলে লেফটেন্যান্ট। দেখে সামনে পড়ে আছে ব্ল্যাক বিয়ার্ড, কেউ তার গলায় ছুরি চালিয়ে দিয়েছে, গলা থেকে গল গল করে রক্ত পড়ছে। দূরে দাঁড়িয়ে রোজার আর মিল হাসছে। এটা জয়ের হাসি। বিজয়ের হাসি ছড়িয়ে পড়ে মেইনার্ডের মুখেও। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্ল্যাক বিয়ার্ডের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। তার দলের দস্যুরা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। খুব শিগগিরই যুদ্ধ শেষ হয়। ব্ল্যাক বিয়ার্ডের দস্যুরা আত্মসমর্পণ করে।
মেইনার্ডঃ এখানে আমাদের আরও কিছুদিন থাকতে হবে। নিহতদের কবর দিতে হবে। জাহাজগুলো মেরামত করতে হবে।
সব সৈনিক জয়ধ্বনি দেয়। দস্যুরা এখন বন্দী।
মিলঃ লেফটেন্যান্ট তাহলে আমাদের বিদায় দাও।
মেইনার্ডঃ তোমরাও চলো আমাদের সঙ্গে ভার্জিনিয়ায়। পুরস্কার তো তোমাদেরও প্রাপ্য।
রোজারঃ না এটা তোমাদের সাফল্য। তুমি বুদ্ধিমান আর বীরের মতো লড়েছো।
মেইনার্ডঃ কিন্তু তোমরা এখান থেকে যাবে কীভাবে? জাহাজও তো নষ্ট।
মিলঃ আমরা ওই ছোট নৌকায় চলে যাবো। জানো তো, রোজার খুবই ভালো নৌকা চালায়। আর আমার বিশ্বাস কিছুদূর যেতে না যেতেই আমরা জাহাজ পেয়ে যাবো।
মেইনার্ডের মন খারাপ হয়ে যায়। আসলে জাহাজের সব সৈনিকই মন খারাপ করে ওদের চলে যাওয়ার কথা শুনে।
রোজারঃ দেখো, জয়ের আনন্দের সময় তোমরা মন খারাপ করবে না তাহলে আমি কিন্তু রেগে যাবো। আর আমি যে রগচটা সেটা নিশ্চয়ই তোমরা বাচাল মিলের কাছে শুনেছো।
মিলঃ এটা আমার কাছ থেকে ওদের শুনতে হবে কেন? ওরা তোমার ব্যবহার দেখেই বুঝেছে।
সবাই হেসে ওঠে একসঙ্গে।
ঘটনা ১৪:
এক বছর পর। একটা সমুদ্র বন্দরে বসে আছে মিল আর রোজার।
রোজারঃ আচ্ছা মেইনার্ড কী তার পুরস্কার পেয়েছিলো?
মিলঃ ওই চারশত পাউন্ড ভাগ হয়েছিল এইচএমএস লাইম আর এইচএমএস পার্ল জাহাজের ক্যাপ্টেনদের মাধ্যমে। মেইনার্ডকে কোনো প্রমোশনও দেওয়া হয় নি। ওর বিরুদ্ধে ষাট পাউন্ড তহবিল তসরুফের অভিযোগ উঠেছিলো। এরপর আর কেউ মেইনার্ডের খবর জানে না।
রোজারঃ আহারে বেচারা। আর টেচের দস্যুদের ভাগ্যে কী জুটেছিলো?
মিল- বেশির ভাগেরই ফাঁসি হয়েছে।
রোজার- টেচের লুটের মাল বিক্রি করে কতো পাওয়া গিয়েছিলো?
মিল- দুই হাজার দুইশত আটত্রিশ পাউন্ড।
রোজার- ব্ল্যাক বিয়ার্ডের পতাকা সঙ্কেতের কেয়ার টেকার হাওয়ার্ড? ওর ভাগ্যে?
মিল- ওই যে গভর্ণর স্পটস উডের ওখানে বন্দী ছিল? তারও ফাঁসি হয়েছে। এছাড়া আমি ইতিহাসের বই লিখছি সেখানে বাকী সব খবর পাবে।
রোজার- সেখানেও কী শুধু সাল তারিখের ক্যাচক্যাচানি থাকবে?
মিল- হা হা হা ...! ভালো প্রশ্ন করেছো! কিন্তু তোমাকে মনে রাখতে হবে, সাল তারিখই হচ্ছে ইতিহাসের সৌন্দর্য্য!
লেখকঃ ইমরান খান।
সম্পাদকঃ জানা অজানার পথিক।
মিল আর রোজার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখছিলো। জাহাজের গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে লেফটেন্যান্ট মেইনার্ড। বাতাসে পালগুলো ফুলে ফুলে উঠছে। সমুদ্রের ঢেউও জাহাজের অনুকূলেই। মেইনার্ড ধারণা করছে খুব শিগগিরই তারা ভার্জিনিয়াতে পৌঁছুতে পারবে। পাশ দিয়ে আরেকটি জাহাজ চলে যায় উল্টো দিকে।
রোজারঃ মিল তোমার এ ধরনের অভিযানগুলো কেমন লাগে?
মিল- আমি আসলে ইতিহাসের বড় বড় ঘটনাগুলোর সঙ্গী হতে চাই।
রোজার আড়মোড়া ভাঙে, কিন্তু তুমি যে ভীতু!
মিলঃ সে জন্যই তো তোমাকে সবসময় সঙ্গে রাখি।
রোজার ক্ষেপে যায়, আমি কি তোমার নিরাপত্তাকর্মী?
মিল ব্যাপারটা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে, রেগে যাচ্ছ কেন বন্ধু। বিপদের বন্ধুই তো প্রকৃত বন্ধু, সেই ভাল্লুকের গল্পটা পড়োনি?
রগচটা রোজার একটু সামলে নেয় নিজেকে, তোমার জ্ঞান দেওয়া বন্ধ কর ঈশপ। আচ্ছা এই ব্ল্যাকবিয়ার্ড কী রাষ্ট্রীয় ক্ষমা চায় নি কখনও?
মিলঃ আসলে ১৭১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যে সব জলদস্যু আত্মসমর্পণ করবে তাদের জন্য সরকার একটা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলো। কিন্তু এর একটি শর্ত ছিল এ ক্ষমার আওতায় তারাই আসবে যারা ৫ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত অপরাধ করেছে। যেহেতু টেচ আর বনেট চার্লস্টোনে পাঁচ জানুয়ারির পরও হামলা করেছিলো তাই টেচ একটা অবিশ্বাসে ভুগছিলো। যাচাই করার জন্য সে বনেটকে আত্মসমর্পন করতে উদ্বুদ্ধ করে। বনেট বাথ টাউনে গভর্ণর এডেনের কাছে আত্মসমর্পন করে। এডেন তাকে ক্ষমাও করে দেয়।
রোজারঃ দ্যাট সাউন্ডস গুড।
মিলঃ এর পর বনেট তার জাহাজ রিভেঞ্জকে নেওয়ার জন্য আসে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের কাছে।
এর মধ্যে লেফটেন্যান্ট মেইনার্ড ওদের পাশে এসে দাঁড়ায়।
মেইনার্ডঃ কী কথা হচ্ছে দুই বন্ধুতে?
রোজারঃ মিলের সাল তারিখের ক্যাচক্যাচানি শুনছি।
মেইনার্ডঃ কোন ঘটনা বলছো মিল?
মিলঃ ওই তো স্টেড বনেটের ক্ষমা আর তার পরিণতি। বলছিলাম সে তার রিভেঞ্জ জাহাজটা ব্ল্যাকবিয়ার্ডের কাছে ফেরত নিতে আসলে ব্ল্যাকবিয়ার্ড কী করেছিলো।
মেইনার্ডঃ বিশ্বাসঘাতক ব্ল্যাকবিয়ার্ড রিভেঞ্জের সব মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নেয়। আর রিভেঞ্জের নাবিকদের একটা নির্জন দ্বীপে ফেলে দেয়। পরে বনেট ওদেরকে উদ্ধার করে। এতে বনেটের দল আবার ভারি হয়। দুষ্টবুদ্ধি চাপে বনেটের মাথায়। সে আবার ডাকাতি শুরু করে।
মিলঃ ১৭১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৭ তারিখে দলবল সহ কেপ ফেয়ার নদীর মুখে বনেটকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে চার্লস্টোনে বিচারে তাদের সবার ফাঁসি হয়।
রোজারঃ আহারে বেচারা বনেট। কিন্তু টেচের কী হল?
মিলঃ এর মধ্যে টেচও এডেনের কাছে আত্মসমর্পন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমা গ্রহণ করে। সে বাথ টাউনে একটা বাড়ি কিনে বসবাস শুরু করে। নগরবাসী মনে করে সে বোধ হয় দস্যুগিরি ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু গোপনে গোপনে সে চালাতে থাকে তার কাজ।
মেইনার্ডঃ অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বন্দরে পৌঁছে যাব। সেখান থেকে আমরা যাব গভর্ণর স্পটসউডের দপ্তরে। সুতরাং তোমরা তোমাদের যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে নাও।
ঘটনা ১১ (ভার্জিনিয়া। ১৭ নভেম্বর ১৭১৮, স্পটসউডের দপ্তর):
স্পটসউডের সামনে বসে আছে লেফটেন্যান্ট মেইনার্ড।
উড:লেফটেন্যান্ট আমি প্রথমে ঠিক করেছিলাম এ অভিযানে দুটি বড় জাহাজ এইএমএস পার্ল ও এইচএমএস লাইমকে পাঠাবো। কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য আছে ব্ল্যাকবিয়ার্ড ওক্রাকোক দ্বীপে রয়েছে। সে দ্বীপের আশেপাশের পানি এতোই অগভীর যে সেখানে এত বড় জাহাজ যেতে পারবে না। তাই আমি নিজের পয়সায় দুটি ছোট জাহাজ ভাড়া করেছি। আপনি থাকবেন এর দায়িত্বে।
মেইনার্ডঃ আমার সঙ্গে কারা থাকবে?
উডঃ আপনাকে এইচএমএস পার্ল থেকে ৩৩ জন আর এইচএমএস লাইম থেকে ২৪ জন নাবিক দেওয়া হবে।
মেইনার্ডঃ ওকে। আমি জাহাজ দুটির নাম দিতে চাই। একটির নাম দিলাম জেন আর একটির নাম দিলাম র্যাঞ্জার। জেনের দায়িত্বে আমি থাকবো। আর র্যাঞ্জারের দায়িত্বে আমার একজন বিশ্বস্ত অফিসার থাকবে ওর নাম হাইড।
উডঃ ওকে এটা আপনার ব্যাপার। আমি চাই সাফল্য। আর একটা সংবাদ আপনাকে দিতে চাই, ব্ল্যাকবিয়ার্ডের মাথার দাম আমরা ধরেছি চারশ পাউন্ড।
মেইনার্ডঃ ধন্যবাদ। আমি ওর মাথা আপনার সামনে হাজির করবোই।
ঘটনা ১২ (২১ নভেম্বর ১৭১৮, সন্ধ্যা):
লেফটেন্যান্ট মেইনার্ড তার জাহাজ থামায় ওক্রাকোক দ্বীপের কাছে। র্যাঞ্জারকেও থামার নির্দেশ দেয়। লেফটেন্যান্টের পাশে এসে দাঁড়ায় মিল আর রোজার।
মেইনার্ডঃ ব্ল্যাকবিয়ার্ড দ্বীপের ভেতরে আছে। এখানকার চ্যানেলগুলো আমার কাছে অপরিচিত। এখন আক্রমণ করা খুব একটা সুবিধাজনক হবে না। আমার মনে হয় সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করাই ভাল হবে।
রোজারঃ সেটাই ভালো। মিল তোমার সাল তারিখ মুখস্থ করা শুরু করো। আজ ২১ নভেম্বর, ১৭১৮ সাল।
মিলঃ আমার মনে আছে রোজার।
লেফটেন্যান্ট হেসে উঠে। চিৎকার করে নির্দেশ দেয় নিজের নাবিকদের, তোমরা এক কাজ করো, সব জাহাজ আটকে দাও। কোনো জাহাজ যেন দ্বীপের দিকে যেতে না পারে আর কোনো জাহাজ যেন দ্বীপ থেকে বের হতে না পারে।
হাইড র্যাঞ্জার থেকে জবাব দেয়, ইয়েস স্যার।
লেফটেন্যান্টঃ আর সবাই প্রস্তুত থাকো আগামীকাল ভোর হলেই আমরা আক্রমণ করব।
হাইডঃ ইয়েস স্যার।
নাবিকদের মধ্যে একটা বাড়তি গতি সঞ্চার হয়। সবাই নিজের নিজের অস্ত্র যাচাই করে নেয় শেষবারের মতো। বন্দুকগুলো পরিস্কার করে নেয় সৈনিকরা। সবার মধ্যেই একটা উত্তেজনা। সবারই জানা আছে প্রতিপক্ষ ভয়ঙ্কর। এরা যখন প্রস্ততি নিচ্ছিলো তখন দ্বীপের ভেতর থেকে ভেসে আসছে গান বাজনার শব্দ। হয়তো এটুকু সুবিধা লেফটেন্যান্টের দল পাবে যে ব্ল্যাকবিয়ার্ডকে অপ্রস্তুত অবস্থায় আক্রমণ করা যাবে।
মিলঃ রোজার, আমার মনে হচ্ছে কালই হবে আমাদের জীবনের শেষ দিন
রোজারঃ বোকা গাধা, যুদ্ধে সাহস আর আত্মবিশ্বাসই হচ্ছে বড় কথা। আর তুমি যুদ্ধের আগেই হার মেনে বসে আছো! শোনো আমি থাকতে তোমার কোনো চিন্তা নেই।
মিলঃ ব্ল্যাকবিয়ার্ড কিন্তু দুর্ধর্ষ!
রোজারঃ চুপ করো। অমন হাজারটা ব্ল্যাকবিয়ার্ড আমি গিলে খেতে পারি।
মিলঃ তা অবশ্য আমি জানি। আমার একটু চিকেন ফ্রাই খেতে ইচ্ছা করছে।
রোজার-ঃঅপেক্ষা কর। কালকে ব্ল্যাকবিয়ার্ডের ফ্রাই খাওয়াবো তোমাকে।
ঘটনা ১৩ (২২ নভেম্বর ১৭১৮, ভোর):
মেইনার্ডের দুটি জাহাজ-র্যাঞ্জার আর জেন, ওক্রাকোক দ্বীপের চ্যানেলে ঢোকা শুরু করে। সামনে আরেকটি ছোট নৌকা পাঠিয়েছে মেইনার্ড; যাতে সেই নৌকা তাকে আগাম সঙ্কেত দিতে পারে। নিঃশব্দে চলছে জাহাজ দুটি।
মিলঃ আমার মনে হয় ব্ল্যাক বিয়ার্ড এখনও টের পায় নি।
রোজারঃ শত্রুকে কখনও এতো বোকা ভেবো না মিল। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নাও। ওই যে ব্ল্যাক বিয়ার্ডের জাহাজ।
মিলঃ ওটার নামই সম্ভবত অ্যাডভেঞ্চার।
রোজারঃ অপেক্ষা করো, আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই ওটার কাছাকাছি পৌঁছে যাব।
মেইনার্ড চিৎকার করে নিজের সৈনিকদের নির্দেশ দেয়, সবাই প্রস্তুত থাকো। হাইড, তোমার সৈনিকদের প্রস্তুত হতে বলো।
হাইডও লেফটেন্যান্টের নির্দেশ পেয়ে নিজের সৈনিকদের প্রস্তুত হবার নির্দেশ দেয়। চারদিকে পিন পতন নীরবতা। নীরবতা এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে সৈনিকদের হৃদস্পন্দনের শব্দ পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে! ধীরে ধীরে ব্ল্যাক বিয়ার্ডের জাহাজ আরো পরিস্কার হয়। ইতোমধ্যে লেফটেন্যান্ট মেইনার্ড তার চোখ থেকে দূরবীণ নামিয়ে ফেলেছে।
রোজারঃ মিল তুমি ঠিকই বলেছো, ওটা অ্যাডভেঞ্চারই।
মিলঃ এখন খালি চোখেও নামটা পড়া যাচ্ছে।
সশব্দে একটা গুলি এসে পড়ে মিলের পাশে। সন্ত্রস্ত মিল নিজের বুকে ক্রুশ আঁকলো। রোজার নিজের গাদা বন্দুক সোজা করে ধরে এবার।
মেইনার্ড চিৎকার করে নির্দেশ দেয়, জাহাজে ইউনিয়ন পতাকা টানিয়ে দাও।
এর মধ্যে একের পর এক গুলি এসে পড়তে থাকে। মেইনার্ড আর হাইডের জাহাজের নাবিকদের হাত নিশপিশ করতে থাকে। শুধু অপেক্ষা করছে কমান্ডের। তাহলেই তারা গুলি ছুঁড়তে পারে। কিন্তু হাইডের র্যাঞ্জারে গুলি পড়ার তোড় বাড়তেই থাকে। সে তার জাহাজকে আস্তে আস্তে জেনের পাশে নিরাপদে আনতে থাকে। ততক্ষণে ব্ল্যাকবিয়ার্ড তার অ্যাডভেঞ্চারের নোঙর তুলে ফেলেছে। অ্যাডভেঞ্চার আরও সরু খালের ভিতর ঢুকতে থাকে।
ব্ল্যাক বিয়ার্ডের চিৎকার শোনা যায়, তোমাদেরকে নরকে পাঠিয়ে তারপর আমি ঘরে ফিরব।
মেইনার্ডঃ তোমার মাথা দিয়ে মুড়োঘন্ট খাওয়ার জন্যই আমি লেফটেন্যান্ট মেইনার্ড নিজে এসেছি।
লেফটেন্যান্ট এবার তার সেপাইদেরকে গুলি করার নির্দেশ দেয়, ফায়ার
এক সঙ্গে গর্জে উঠে একরাশ গাদা বন্দুক। র্যাঞ্জার থেকেও ছুটে যায় গুলি।
ব্ল্যাক বিয়ার্ডঃ জাহান্নামের কীট, এবার এটা সামলাও দেখি।
অ্যাডভেঞ্চার থেকে আসতে থাকে একের পর এক গাদা বন্দুকের গোলা। এর মধ্যেই র্যাঞ্জারের একজন সৈনিক মারা গেছে। গুলি এসে তার মাথা এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে। মিল লাশের চেহারা দেখে কপালে ক্রুশ আঁকে। আরেকটি গুলি এসে উড়িয়ে দেয় আরেক নাবিককে। হাইডের জাহাজেও একই অবস্থা। পানিও আস্তে আস্তে অগভীর হচ্ছে। র্যাঞ্জার ও জেনের চলার জন্য যথেষ্ট পানি আর থাকছে না। র্যাঞ্জারের মাস্তুলে একটি বোমা লেগেছে। প্রায় বিধ্বস্ত অবস্থা। তারপরও বীরদর্পে লড়ে যাচ্ছে সৈনিকরা। অ্যাডভেঞ্চার থেকে একের পর এক গালাগাল আর গুলির শব্দ ভেসে আসছে।
রোজারঃ সাবাশ। এবার একেবারে ওর জাহাজের জিব শিটে লেগেছে আমাদের বোমা। এবার নিশ্চিৎ অ্যাডভেঞ্চার নিয়ন্ত্রণ হারাবে।
মিলঃ কোথায় দেখলে জিব শিটে লেগেছে?
রোজারঃ দেখো ও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। আস্তে আস্তে বালুতে ঠেকে যাচ্ছে ওর জাহাজ।
মিলঃ পাশে তাকিয়ে দেখো।
দুজনেই এবারে পাশের র্যাঞ্জারের দিকে তাকায়। সশব্দে ভেঙে পড়ে জাহাজটি। পুরো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
রোজারঃ ওই যে হাইডের লাশ।
রক্ত আর মাংসের দলা পাকিয়ে পড়ে ছোট চ্যানেলে। এর মধ্যে জেন জাহাজটিও শব্দ করে আটকে যায়।
রোজারঃ এই জাহাজটাও আটকে গেছে।
বিকট শব্দে পাশে একটি বোমা বিস্ফোরণ হয়। ইতোমধ্যে জেন জাহাজের তিন ভাগের এক ভাগ নাবিক নিহত হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট মেইনার্ডঃ কিছু নাবিক ডেকের নিচে চলে যাও। আর মুখোমুখি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকো।
নির্দেশ পেয়ে কিছু নাবিক জাহাজের ডেকের নিচে চলে যায়। তাদের সঙ্গে মিল আর রোজারও আছে। মিল বারবার ক্রুশ এঁকে চলেছে। ব্ল্যাক বিয়ার্ডের চিৎকার শোনা যায়- মেইনার্ড নরকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও।
মেইনার্ডঃ আমার তো সৈন্য কম। তারপরও যদি বীরপুরুষ হও সামনে এসে লড়াই করো।
মেইনার্ডের পাশে বোতল বোমা পড়ে। আগেই সরে গেছে লেফটেন্যান্ট। অ্যাডভেঞ্চারের দিকে আরেকটি বোমা ছুটে যায়। তার কিছুক্ষণ পর নীরবতা। হঠাৎ ব্ল্যাক বিয়ার্ড তার দলবল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে মেইনার্ডদের জাহাজে। একেবারে অতর্কিত আক্রমণ। কিন্তু ততোক্ষণে ডেকে নিচের সৈনিকরা ওপরে উঠে আসে। ব্ল্যাক বিয়ার্ডের দল চমকে উঠে। আর এটাই চাইছিল মেইনার্ড। পিস্তলের গুলি শুরু হলো এবারই প্রথম। ব্ল্যাক বিয়ার্ডের দলের অনেকেই চমক ভাঙার আগেই প্রাণ হারালো। অনেকে তলোয়ার বের করেও যুদ্ধ শুরু করেছে। ব্ল্যাকবিয়ার্ডের টার্গেট লেফটেন্যান্ট মেইনার্ড। আর মেইনার্ড চায় ব্ল্যাকের মাথা। দুজন দুজনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। একসময় টেচ ওরফে ব্ল্যাক বিয়ার্ড ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে। সে তার তলোয়ার বের করে ঝাঁপিয়ে পড়ে লেফটেন্যান্টের ওপর। মেইনার্ডও তার তলোয়ার বের করে। মিল দেখে ব্ল্যাকবিয়ার্ড আর মেইনার্ডকে এক জায়গায় রেখে দুই দলের সৈনিকরাই অন্য জায়গায় দূরে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করছে। সম্ভবত ওরা চাইছে সর্দারদের মধ্যে যুদ্ধ সর্দাররাই করুক আর সেপাইরা সেপাইদের মধ্যে।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ লেফটেন্যান্ট, তোমার জীবনের কোনো শেষ ইচ্ছা আছে? কিছু খেতে চাও?
লেফটেন্যান্টঃ তোমার বউ বাচ্চাদের কাছ থেকে শেষ বিদায় নিয়েছো টেচ?
দুজন দুজনের ওপর তলোয়ার চালায়। একবার টেচ এগিয়ে যায় তো অন্যবার মেইনার্ড। এভাবে কেটে যায় প্রায় বিশ মিনিট। টেচকে অনেকটা বিধ্বস্ত দেখায়। গায়ে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে।
মেইনার্ডঃ তোমার তো এক পা কবরেই চলে গেছে।
ব্ল্যাক বিয়ার্ডঃ তোমাকে জাহান্নামে পাঠানোর জন্য আমার এক পা যথেষ্ট।
তলোয়ার দিয়ে টেচ জোরে কোপ দেয় মেইনার্ডের তলোয়ারে। মেইনার্ডের তলোয়ার ভেঙ্গে যায়। মেইনার্ড চকিতে কয়েক পা পিছিয়ে যায়।
ব্ল্যাকবিয়ার্ডঃ এবার চলে যাও তোমার স্বর্গীয় পিতার কাছে মেইনার্ড। হা হা হা।
মেইনার্ডের পেট এফোঁড় ওফোঁড় করে দেবার জন্য তলোয়ার সোজা করে দৌঁড় দেয় ব্ল্যাক বিয়ার্ড। মেইনার্ড চোখ বন্ধ করে ফেলে। এক মনে যীশুর কথা ভাবতে থাকে। এটা যে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত সে বুঝে গেছে। আর মাত্র এক মুহুর্ত সে এ পৃথিবীতে আছে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ হয়ে যায় তারপরও তার গায়ে তলোয়ার লাগে না। ধীরে ধীরে চোখ খুলে লেফটেন্যান্ট। দেখে সামনে পড়ে আছে ব্ল্যাক বিয়ার্ড, কেউ তার গলায় ছুরি চালিয়ে দিয়েছে, গলা থেকে গল গল করে রক্ত পড়ছে। দূরে দাঁড়িয়ে রোজার আর মিল হাসছে। এটা জয়ের হাসি। বিজয়ের হাসি ছড়িয়ে পড়ে মেইনার্ডের মুখেও। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্ল্যাক বিয়ার্ডের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। তার দলের দস্যুরা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। খুব শিগগিরই যুদ্ধ শেষ হয়। ব্ল্যাক বিয়ার্ডের দস্যুরা আত্মসমর্পণ করে।
মেইনার্ডঃ এখানে আমাদের আরও কিছুদিন থাকতে হবে। নিহতদের কবর দিতে হবে। জাহাজগুলো মেরামত করতে হবে।
সব সৈনিক জয়ধ্বনি দেয়। দস্যুরা এখন বন্দী।
মিলঃ লেফটেন্যান্ট তাহলে আমাদের বিদায় দাও।
মেইনার্ডঃ তোমরাও চলো আমাদের সঙ্গে ভার্জিনিয়ায়। পুরস্কার তো তোমাদেরও প্রাপ্য।
রোজারঃ না এটা তোমাদের সাফল্য। তুমি বুদ্ধিমান আর বীরের মতো লড়েছো।
মেইনার্ডঃ কিন্তু তোমরা এখান থেকে যাবে কীভাবে? জাহাজও তো নষ্ট।
মিলঃ আমরা ওই ছোট নৌকায় চলে যাবো। জানো তো, রোজার খুবই ভালো নৌকা চালায়। আর আমার বিশ্বাস কিছুদূর যেতে না যেতেই আমরা জাহাজ পেয়ে যাবো।
মেইনার্ডের মন খারাপ হয়ে যায়। আসলে জাহাজের সব সৈনিকই মন খারাপ করে ওদের চলে যাওয়ার কথা শুনে।
রোজারঃ দেখো, জয়ের আনন্দের সময় তোমরা মন খারাপ করবে না তাহলে আমি কিন্তু রেগে যাবো। আর আমি যে রগচটা সেটা নিশ্চয়ই তোমরা বাচাল মিলের কাছে শুনেছো।
মিলঃ এটা আমার কাছ থেকে ওদের শুনতে হবে কেন? ওরা তোমার ব্যবহার দেখেই বুঝেছে।
সবাই হেসে ওঠে একসঙ্গে।
ঘটনা ১৪:
এক বছর পর। একটা সমুদ্র বন্দরে বসে আছে মিল আর রোজার।
রোজারঃ আচ্ছা মেইনার্ড কী তার পুরস্কার পেয়েছিলো?
মিলঃ ওই চারশত পাউন্ড ভাগ হয়েছিল এইচএমএস লাইম আর এইচএমএস পার্ল জাহাজের ক্যাপ্টেনদের মাধ্যমে। মেইনার্ডকে কোনো প্রমোশনও দেওয়া হয় নি। ওর বিরুদ্ধে ষাট পাউন্ড তহবিল তসরুফের অভিযোগ উঠেছিলো। এরপর আর কেউ মেইনার্ডের খবর জানে না।
রোজারঃ আহারে বেচারা। আর টেচের দস্যুদের ভাগ্যে কী জুটেছিলো?
মিল- বেশির ভাগেরই ফাঁসি হয়েছে।
রোজার- টেচের লুটের মাল বিক্রি করে কতো পাওয়া গিয়েছিলো?
মিল- দুই হাজার দুইশত আটত্রিশ পাউন্ড।
রোজার- ব্ল্যাক বিয়ার্ডের পতাকা সঙ্কেতের কেয়ার টেকার হাওয়ার্ড? ওর ভাগ্যে?
মিল- ওই যে গভর্ণর স্পটস উডের ওখানে বন্দী ছিল? তারও ফাঁসি হয়েছে। এছাড়া আমি ইতিহাসের বই লিখছি সেখানে বাকী সব খবর পাবে।
রোজার- সেখানেও কী শুধু সাল তারিখের ক্যাচক্যাচানি থাকবে?
মিল- হা হা হা ...! ভালো প্রশ্ন করেছো! কিন্তু তোমাকে মনে রাখতে হবে, সাল তারিখই হচ্ছে ইতিহাসের সৌন্দর্য্য!
লেখকঃ ইমরান খান।
সম্পাদকঃ জানা অজানার পথিক।
চিনি তবে বলব না।
উত্তরমুছুনকি চেনেন আর কি বলবেন না??!!!!
মুছুনকয়েকজন জলদস্যু
উত্তরমুছুনও...
মুছুন