আকাশে আলোর নৃত্য দেখেছেন কখনও? অনেকেই হয়ত ভাবছেন কৃত্তিম আতশবাজির কথা। কিন্তু প্রকৃতি যে আকাশে নিজেই আলোর নাচ দেখায় সে কথা আর কজনেরই জানা আছে? মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা (Polar Aurora) পৃথিবীর দুই মেরুর আকাশে ঘটে যাওয়া এক নৈসর্গিক প্রাকৃতিক ঘটনা। দুই মেরুতে দুই নাম ধারন করেছে, উত্তর মেরুতে একে বলা হয় সুমেরুপ্রভা (Northern Lights/Auorora Borealis) আর দক্ষিণ মেরুতে এরই নাম কুমেরুপ্রভা (Southern Lights/Aurora Australis)। অনেকে আবার একে স্বর্গীয় আলো বলে থাকে। Aurora শব্দটি এসেছে রোমান ভোরের দেবীর (Goddesss of Dawn) নামানুসারে । ধারনা করা হয় বিজ্ঞানী গ্যালিলী এ নামকরন করেন।
![]() |
মেরুপ্রভার এক অসাধারন ছবি |
মেরুজ্যোতি দেখতে অতিপ্রাকৃতিক কোন ব্যাপার মনে হয় বলে প্রাচীনকাল থেকেই মেরু অঞ্চলের বাসিন্দারা (এস্কিমো, ইন্ডিয়ান, আথাবান) একে এক রহস্যময় শক্তি হিসেবে মনে করত। অধিকাংশ মানুষ মনে করত এটি স্বর্গীয় আলো যা স্বর্গ থেকে শুরু হয়ে পৃথিবীতে এসে শেষ হয়েছে, এই পথ ধরেই মৃত্যুর পরে আত্মা স্বর্গের সন্ধান লাভ করে। অনেকে আবার একে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ হতে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা মনে করত। সবুজ রঙের প্রভাকে তারা ভাবতো তাদের ভবিষ্যতের সুখের আভাস। আর এর রঙ লাল হলেই তাদের মনে হত ভবিষ্যৎ হবে দুর্যোগময়। লোহিত মেরুপ্রভাকে যুদ্ধের পূর্বাভাস হিসেবেও দেখা হত।
মেরুপ্রভা কি এবং কেন?
বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে উজ্জ্বল আলোর বিকিরন মেরুপ্রভা নামে পরিচিত। মেরুপ্রভা দেখতে বাতাসে দোদুল্যমান উজ্জ্বল রঙের আলোকীয় পর্দা বা ফিতার মত লাগে। অনেকগুলো সমান্তরাল আলোক রশ্মি একটির পর একটি করে ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে তৈরি করে আলোক পর্দা যা প্রতি মুহূর্তে স্থানান্তরিত হতে থাকে। অধিকাংশ সময় স্থানান্তরের দিক হয় অনেকটা পূর্ব থেকে পশ্চিমে। আর এ সময় এর মধ্যে ঢেউ খেলতে থাকে আলোর উজ্জ্বলতার হ্রাসবৃদ্ধির মাধ্যমে ঠিক যেমন পানিতে পানির স্তরের উচ্চতার পরিবরতন দ্বারা ঢেউ তৈরি হয়। আগুনের শিখার ন্যায় অতিউজ্জল আলোকশিখার উজ্জ্বলতা ক্রমে হ্রাস পায় এবং মৃদুউজ্জ্বল আলোক শিখার উজ্জ্বলতা ক্রমে বৃদ্ধি পায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ থেকে ২০০ মাইল উচ্চতায় মেরুপ্রভা সৃষ্টি হয় ।উচ্চতার উপর নির্ভর করে মেরুপ্রভার রঙ হতে পারে লাল, সবুজ,নীল বা বেগুনী।
উচ্চ চার্জ সম্পন্ন ইলেকট্রন যখন বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরের কণার সাথে সংঘর্ষ করে তখন ইলেকট্রন থেকে নির্গত আলো সৃষ্টি করে আলোকপ্রভার। সৌর ঝর থেকে উৎপন্ন এই ইলেকট্রনসমুহ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের সাথে এদের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের হার বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা হ্রাসের সাথে বৃদ্ধি পায় কেননা বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব এর উচ্চতার সাথে সাথে হ্রাস পায়। সুতরাং ইলেকট্রনগুলো বায়ুমণ্ডলের যত গভীরে প্রবেশ করে সংঘর্ষের পরিমাণ তত বৃদ্ধি পায় আর বিকিরিত আলোর পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। বিকিরিত রশ্মির রঙ নির্ভর করে ইলেকট্রনগুলো কত উচ্চতায় কোন পরমাণুর সাথে সংঘর্ষ করে তার উপর।


মেরুপ্রভা কি এবং কেন?
বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে উজ্জ্বল আলোর বিকিরন মেরুপ্রভা নামে পরিচিত। মেরুপ্রভা দেখতে বাতাসে দোদুল্যমান উজ্জ্বল রঙের আলোকীয় পর্দা বা ফিতার মত লাগে। অনেকগুলো সমান্তরাল আলোক রশ্মি একটির পর একটি করে ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে তৈরি করে আলোক পর্দা যা প্রতি মুহূর্তে স্থানান্তরিত হতে থাকে। অধিকাংশ সময় স্থানান্তরের দিক হয় অনেকটা পূর্ব থেকে পশ্চিমে। আর এ সময় এর মধ্যে ঢেউ খেলতে থাকে আলোর উজ্জ্বলতার হ্রাসবৃদ্ধির মাধ্যমে ঠিক যেমন পানিতে পানির স্তরের উচ্চতার পরিবরতন দ্বারা ঢেউ তৈরি হয়। আগুনের শিখার ন্যায় অতিউজ্জল আলোকশিখার উজ্জ্বলতা ক্রমে হ্রাস পায় এবং মৃদুউজ্জ্বল আলোক শিখার উজ্জ্বলতা ক্রমে বৃদ্ধি পায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ থেকে ২০০ মাইল উচ্চতায় মেরুপ্রভা সৃষ্টি হয় ।উচ্চতার উপর নির্ভর করে মেরুপ্রভার রঙ হতে পারে লাল, সবুজ,নীল বা বেগুনী।
উচ্চ চার্জ সম্পন্ন ইলেকট্রন যখন বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরের কণার সাথে সংঘর্ষ করে তখন ইলেকট্রন থেকে নির্গত আলো সৃষ্টি করে আলোকপ্রভার। সৌর ঝর থেকে উৎপন্ন এই ইলেকট্রনসমুহ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের সাথে এদের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের হার বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা হ্রাসের সাথে বৃদ্ধি পায় কেননা বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব এর উচ্চতার সাথে সাথে হ্রাস পায়। সুতরাং ইলেকট্রনগুলো বায়ুমণ্ডলের যত গভীরে প্রবেশ করে সংঘর্ষের পরিমাণ তত বৃদ্ধি পায় আর বিকিরিত আলোর পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। বিকিরিত রশ্মির রঙ নির্ভর করে ইলেকট্রনগুলো কত উচ্চতায় কোন পরমাণুর সাথে সংঘর্ষ করে তার উপর।
- ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬০ মাইল পর্যন্ত উচ্চতায় নাইট্রোজেনের সাথে সংঘর্ষে বেগুনী রঙের ফোটন নির্গত হয়।
- ৬০-৯০ মাইল উচ্চতার মধ্যে নাইট্রোজেনের সাথে সংঘর্ষে নীল রঙের ফোটন বিকিরিত হয়।
- ৯০-১৫০ মাইল পর্যন্ত উচ্চতায় অক্সিজেনের সাথে ইলেকট্রনের সংঘর্ষে বিকিরিত আলোর রঙ হয় সবুজ।
- ১৫০ মাইলের উপরে অক্সিজেনের সাথে সংঘর্ষে লাল রঙের আলো নির্গত হয়।
![]() |
সবুজ রঙের মেরুপ্রভা |
![]() |
লোহিত মেরুপ্রভা |
পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র ও মেরুপ্রভাঃ
মেরুপ্রভা নাম শুনেই বোঝা যায় যে এর সাথে অবশ্যই মেরুর সম্পর্ক রয়েছে । আমরা সবাই জানি পৃথিবী এক বিশাল চৌম্বক হিসেবে ক্রিয়া করে। এই চৌম্বকক্ষেত্রের দুই মেরু (Magnetic Poles) কিন্তু ভৌগলিক মেরুদ্বয়ের (Geographic poles) সাথে সমবিন্দু নয় কিন্তু প্রায় কাছাকাছি অবস্থান করে। ভুচৌম্বকক্ষেত্রের মেরুকে কেন্দ্র করে একটি নির্দিষ্ট ডিম্বাকৃতির অঞ্চল তৈরি হয়েছে যেখানে মেরুপ্রভা সৃষ্টি হয়, এ অঞ্চলকে বলা হয় মেরুপ্রভ অঞ্চল (Auroral Oval)। এই অঞ্চলের পরিধিতে উৎপন্ন হয় মেরুপ্রভা ।
মেরুপ্রভা নাম শুনেই বোঝা যায় যে এর সাথে অবশ্যই মেরুর সম্পর্ক রয়েছে । আমরা সবাই জানি পৃথিবী এক বিশাল চৌম্বক হিসেবে ক্রিয়া করে। এই চৌম্বকক্ষেত্রের দুই মেরু (Magnetic Poles) কিন্তু ভৌগলিক মেরুদ্বয়ের (Geographic poles) সাথে সমবিন্দু নয় কিন্তু প্রায় কাছাকাছি অবস্থান করে। ভুচৌম্বকক্ষেত্রের মেরুকে কেন্দ্র করে একটি নির্দিষ্ট ডিম্বাকৃতির অঞ্চল তৈরি হয়েছে যেখানে মেরুপ্রভা সৃষ্টি হয়, এ অঞ্চলকে বলা হয় মেরুপ্রভ অঞ্চল (Auroral Oval)। এই অঞ্চলের পরিধিতে উৎপন্ন হয় মেরুপ্রভা ।
![]() |
মেরুপ্রভ অঞ্চল-Auroral oval |
![]() |
পৃথিবীর চৌম্বক বলরেখা এবন্দ প্রবাহমান সৌরবায়ু |
সৌর ঝর (Solar Storm) থেকে আগত চার্জিত ইলেকট্রন নিজেই একটি চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি করে। পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র এই চৌম্বকীয় ইলেকট্রন প্রবাহকে বাধাদান করে। তাই সৌরঝর থেকে পৃথিবীর অভিমুখে আগত অধিকাংশ কণা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু চৌম্বকমেরুর কাছাকাছি অবস্থানে প্রবাহিত ইলেকট্রন সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্র যখন ভুচৌম্বকক্ষেত্রের প্রতিসমান্তরাল (Antiparallel) অবস্থায় আসে তখন ইলেকট্রনসমূহ পৃথিবীর বাধা উপেক্ষা করে বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পরে। এই ইলেকট্রন যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে তখন এটি ভূচুম্বকের বলরেখা বরাবর অগ্রসর হতে থাকে এবং বায়ুমণ্ডলের উপাদানের সাথে সংঘর্ষে নির্গত শক্তি বিকিরিত হয়ে তৈরি করে মেরুপ্রভা। এ কারনেই এ ধরনের আলোকপ্রভা কেবলমাত্র মেরুঅঞ্চলের কাছাকাছি দেখা যায় ।
অরোরাল নয়েজঃ
অনেকেই দাবি করেছেন যে যখন মেরুপ্রভা দেখা যায় তখন এর সাথে মৃদু কম্পাঙ্কের শব্দ শোনা যায়। তবে এ পর্যন্ত এর উল্লেখযোগ্য কোন প্রমান পাওয়া যায় নি। তাছাড়া মেরুপ্রভা যেহেতু ভুপ্রিস্থ থেকে অনেক উচ্চতায় সংঘটিত হয় তাই এত উচ্চতায় কোন শব্দ উৎপন্ন হলেও পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে তা শোনার কোন সম্ভাবনা নেই।
অন্যান্য গ্রহে মেরুপ্রভাঃ
মেরুপ্রভা সৃষ্টির জন্য বায়ুমণ্ডল এবং উচ্চশক্তিসম্পন্ন চার্জিত কণা প্রধান শর্ত । তাই বায়ুমণ্ডল বিশিষ্ট যে কোন গ্রহে যদি দ্রুতগতির চার্জিত কণা প্রবেশ করে তবেই মেরুপ্রভা সৃষ্টি হবে। সৌরবায়ু যেহেতু সকল গ্রহেই পৌঁছে তাই সব গ্রহেই অরোরা বা মেরুপ্রভা সৃষ্টি হয় তবে গ্রহভেদে এদের রুপ ভিন্ন। শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র বিশিষ্ট শনি ও বৃহস্পতি গ্রহে পৃথিবীর ন্যায় মেরু অঞ্চলে অরোরা উৎপন্ন হয়। শুক্রের মত গ্রহের ক্ষেত্রে যেখানে উল্লেখযোগ্য চৌম্বকক্ষেত্র নেই, অনিয়মিত প্রভা উৎপন্ন হয়। যেসকল গ্রহের চৌম্বক অক্ষ এবং ঘূর্ণন অক্ষ এক নয় যেমন ইউরেনাস ও নেপচুন, সেখানে বিকৃত (Distorted) মেরুপ্রভ অঞ্চল সৃষ্টি হয়।
অনেকেই দাবি করেছেন যে যখন মেরুপ্রভা দেখা যায় তখন এর সাথে মৃদু কম্পাঙ্কের শব্দ শোনা যায়। তবে এ পর্যন্ত এর উল্লেখযোগ্য কোন প্রমান পাওয়া যায় নি। তাছাড়া মেরুপ্রভা যেহেতু ভুপ্রিস্থ থেকে অনেক উচ্চতায় সংঘটিত হয় তাই এত উচ্চতায় কোন শব্দ উৎপন্ন হলেও পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে তা শোনার কোন সম্ভাবনা নেই।
অন্যান্য গ্রহে মেরুপ্রভাঃ
মেরুপ্রভা সৃষ্টির জন্য বায়ুমণ্ডল এবং উচ্চশক্তিসম্পন্ন চার্জিত কণা প্রধান শর্ত । তাই বায়ুমণ্ডল বিশিষ্ট যে কোন গ্রহে যদি দ্রুতগতির চার্জিত কণা প্রবেশ করে তবেই মেরুপ্রভা সৃষ্টি হবে। সৌরবায়ু যেহেতু সকল গ্রহেই পৌঁছে তাই সব গ্রহেই অরোরা বা মেরুপ্রভা সৃষ্টি হয় তবে গ্রহভেদে এদের রুপ ভিন্ন। শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র বিশিষ্ট শনি ও বৃহস্পতি গ্রহে পৃথিবীর ন্যায় মেরু অঞ্চলে অরোরা উৎপন্ন হয়। শুক্রের মত গ্রহের ক্ষেত্রে যেখানে উল্লেখযোগ্য চৌম্বকক্ষেত্র নেই, অনিয়মিত প্রভা উৎপন্ন হয়। যেসকল গ্রহের চৌম্বক অক্ষ এবং ঘূর্ণন অক্ষ এক নয় যেমন ইউরেনাস ও নেপচুন, সেখানে বিকৃত (Distorted) মেরুপ্রভ অঞ্চল সৃষ্টি হয়।
![]() |
ইউরেনাস এ অরোরা |
![]() |
বৃহস্পতি গ্রহে সৃষ্ট অরোরা |
![]() |
শুক্র গ্রহে মেরুজ্যোতি (অনিয়মিত) |
লেখকঃ মেহেদি হাসান বাপ্পি।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
Really good to know in detail!!!
উত্তরমুছুন:)
মুছুনAwesome.....
উত্তরমুছুন:)
মুছুন