২০টি রহস্যময় স্থান (১ম পর্ব)

কত না রহস্যে আবডালে ঘেরা আমাদের এই ধরনি। বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানের অভুতপূর্ব উন্নতি সত্ত্বেও এই সব রহস্যের আসল সত্য এখন পর্যন্ত সম্পূর্ন ভাবে খোলাশা করা সম্ভব হয় নাই। প্রাচীন কালের অনেক রহস্য ছিল যার অস্তিত্ব আমাদের অবাক করেছে। অনেক কিছু আজও টিকে আছে আর যার রহস্য আমাদের পক্ষে এখন পর্যন্ত জানা হয় নাই। এর আগে রহস্যময় ২০টি ঘটনা লেখায় আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছিলাম বর্তমান সময়ের কিছু রহস্যের কথা। আজ জানাবো আরো কয়েকটি রহস্যময় স্থানের কথা। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।


০১) ইষ্টার দ্বীপঃ
ইষ্টার দ্বীপ (Easter Island) যার আরেক নাম "রাপা নুই" (Rapa Nui), এর অবস্থান তাহিতির সমুদ্র তীর হতে ২০০০ মাইল দূরে। এই দ্বীপে আদিবাসীদের নাম "পলিনেশিয়ান" (Polynesian)। যারা এই দ্বীপে আসে ৪০০ থেকে ৬০০ খ্রীষ্টপূর্বে। এই দ্বীপের রহস্য হচ্ছে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা মূর্তি। এই মূর্তি গুলির নাম "মুয়াই" (Moai)। সব থেকে বড় মুয়াইয়ের উচ্চতা ৩৩ ফুট এবং এর ওজন ৮২ টন। এই মূর্তির গুলির আকৃতি কিছুটা অন্য রকম। এদের মাথা গুলি অনেক বড়। ধারনা করা হয় এখানকার লোকেরা অনেক আগেই অন্যগ্রহের লোকদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং তাদের উপসনার জন্য এই গুলি তৈরি করা হয়। সব থেকে অবাক করার বিষয় ৮৮৭ টি মোয়াইয়র কোনটারই চেহারা আরেক্টির সাথে মিলে না। অগ্নিয়গীরি থেকে নির্গত ছাই (Tuff) থেকে ৫৭ টি মুয়াই তৈরি করা হয়েছে, Basalt দিয়ে ১৩টি মোয়াই তৈরি করা হয়েছে, লাল রঙের Scoria ১৭ টি তৈরি করা হয়েছে, Trachyte দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ২২টি মোয়াই। ৮৮৭ টি মোয়াইয়ের মধ্যে ৩৯৪টি মুয়াই সম্পূর্ন ভাবে তৈরি করা হয় নাই। এছাড়াও অনেকের মতে বছরের কোন এক নির্দিষ্ট সময়ে এই মূর্তি গুলি থেকে শব্দের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে জলপনা আর কল্পনার কোন শেষ নেই। এই মুয়াই নিয়ে না হয় আরেক দিন বিস্তারিত আলোচনা করব।

আর এই ইষ্টার দ্বীপ সম্পর্কে আরো জানতে "রহস্যে ঘেরা ইস্টার দ্বীপ" লেখা পড়তে পারেন।


০২) El Dorado এর উতসর্গঃ
El Dorado হচ্ছে "মুইছা" (Muisca) সম্প্রদায়ের নেতার পদবি। এদের বসবাস ছিল ১০০০ থেকে ১৫৩৮ খ্রীষ্টপূর্বে সময়কালে বর্তমান কলম্বিয়ায়। কোন সম্প্রদায়ের নেতা মানে অনেক ক্ষমতা কিন্তু এই মুইছা সম্প্রদায়ের নেতার এই ক্ষমতা কেমন ছিল জানি না তবে নেতাদের নিজেদের উতসর্গ করা লাগত দেবতাদের নামে। উতসর্গের পূর্বে তারা প্রথমে সম্পূর্ন শরীর সোনা দিয়ে পরিপূর্ন করবে (যতটা সম্ভব সোনার অলংকার পরবে), পরে সোনার গুড়া বা বালি দিয়ে সম্পূর্ন শরীর সোনালি রঙ করবে এর পর হৃদের পানিতে ঝাপিয়ে পরে নিজের জীবন উতসর্গ করবে। আর সোনার ওজনের কারনে তার দেহ কোন দিব ভেসে উঠত না।


০৩) বার্মুডা ট্রায়াঙ্গলঃ
এই বার্মুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে যে কত রহস্য লুকিয়ে আছে তার কোন অভাব নেই। আজ আপনাদের তেমনি এক রহস্যের কথা বলি। তবে আপনারা কি জানেন এই বার্মুডা ট্রায়াঙ্গল কোন ঘটনার মধ্যে দিয়ে বিশ্ব বাসিদের নজর কেড়েছিল? আজ আপনাদের সেই ঘটনাই বলব।

সালটা ১৯৪৫, সার্জেন্ট হাওয়েল থমসন (Sgt. Howell Thompson) তার কমান্ডে থাকা ২৭টি যুদ্ধ বিমান নিয়ে এই বার্মুডা ট্রায়াঙ্গল দিয়ে উড়ে যাবার সময় গায়েব হয়ে যান। ২৭টি প্লেনেরই কোন হদীসই পাওয়া যায় নাই। এরপর থেকেই রহস্যের শুরু হয় এই বার্মুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে। অনেকে বলে ঘূর্নিঝড় বা পাইলটদের কোন ত্রুটির কারনে এই ঘটনা ঘটছে। কিন্তু রসহ্য মোদিদের দাবি এক সাথে ২৭ টা প্লেন গায়েব হওয়ার পিছনে ঘূর্নিঝড় বা পাইলটদের দোষের সম্ভাবনা থাকতে পারে না। নিশ্চই লুকিয়ে আছে অন্য কোন রহস্য।

"বার্মুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে যত কথা" লেখাটা পড়লে এই রহস্যে ঘেরা বার্মুডা ট্রায়াঙ্গল সম্পর্কে ভাল একটা ধারনা পাবেন।


০৪) ইনকাদের হারিয়ে যাওয়া শহরঃ
২০১২ সালের সব থেকে বড় আলোচনার বিষয় বস্তু কি ছিল মনে আছে? আচ্ছা আমি একটু মনে করিয়ে দেই। ওই যে মায়া সভ্যতায় ২০১২ এর পরে আর কোন দিন লেখা ছিল না। তাদের ধারনা ছিল ২০১২ এর পরে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এ নিয়ে কত কথা, কত আলোচনা, কত কিছুই না হল। সে সময় যে কত যুক্তি না দেওয়া হয়েছিল তা "২০১২ এবং ইসলাম তথা ১৪৩৩ আরো কিছু অজানা তথ্য" লেখাটি পড়লে বুঝে যাবেন। অবশ্য এই বিষয় গুলিকে খোলাসা করে "সুমেরীয়দের কাল্পনিক গ্রহ নিবিরু, কিয়ামত আর অন্যান্য বিতর্ক" এই লেখার মধ্যে বিস্তারিত বলেছিলাম।

সে যাই হোক, হারিয়ে যাওয়া এই শহর নিয়ে আগেই লেখা দিয়েছি, তাই আর কিছু দিলাম না। আপনারা "ইনকাদের হারিয়ে যাওয়া শহর" লেখাটা পড়লে বিস্তর ধারনা পাবেন আর এই শহরে লোকদের সভ্যতা সম্পর্কে "মায়া সভ্যতা" লেখাটিতে বিস্তর আলোচনা করা আছে।


০৫) মায়ান্দের মন্দিরঃ
যে মায়া সভ্যতা বা মায়ানদের ক্যালেন্ডার নিয়ে এর কথা তাদের এই মন্দির নিয়ে রহস্য থাকবে না তা কি হয় বলুন? মায়ান্দের মন্দিরের মধ্যে সারি সারি মাথার খুলি দিয়ে সাজানো দেওয়া আছে। যা নিয়ে অনেক গবেষনাই হয়েছে কিছু যারা গবেষন করেছেন তার তেমন কোন তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করে নাই। কেন করে নাই আর গবেষনায় তারা কি পেয়েছে তা আজো রহস্যে ঘেরা।


০৬) পেরুর রহস্যময় ন্যাযকা সভ্যতার রহস্যময় ভূ-চিত্রঃ
ন্যাযকা লাইন হলো পেরুর দক্ষিণাঞ্চলের প্যাম্পা কলোরাডো বা লাল সমতলভূমি নামে পরিচিত এলাকার মাটিতে আঁকা কিছু জীব-জন্তু এবং জ্যামিতিক রেখার সমাহার যাদের ইংরেজীতে geoglyph বলা হয়ে থাকে। ১৯২০ এর দশকের শেষভাগে পেরুর রাজধানী লিমা এবং এর দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আরেকিপার মধ্যে বানিজ্যিক ভাবে বিমান চলাচল শুরু হলে ন্যাসকা লাইনগুলি প্রথম ব্যাপকহারে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়। সেই সাথে আর্কিওলজিস্ট, এন্হ্রোপোলজিস্ট সহ প্রাচীণ সভ্যতা সম্পর্কে আগ্রহী সকল মানুষকে এক বিশাল ধাঁধার মধ্যে ফেলে দেয়। ছবিগুলো আন্দিজ পর্বত এবং প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ৩৭ মাইল দূরে সমান্তারালভাবে প্রায় ১৫ মাইল দীর্ঘ ব্যাপী বিস্তৃত। এই লাইনগুলোকে কখনও ইনকাদের রাস্তা, কখনও চাষাবাদের পরিকল্পনা, আবার কখনও পুরনোদিনের 'হট এয়ার' বেলুন থেকে উপভোগ করার জন্য আঁকা ছবি হিসাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন এগুলি হচ্ছে ন্যাযকাদের মহাকাশীয় ক্যালেন্ডার। এদের মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ব্যাখ্যাটি হচ্ছে এরিক ভন দানিকেনের ভিনগ্রহবাসীদের বিমান অবতারনার জন্য বানানো এয়ারস্ট্রীপের ব্যাখ্যাটি।

এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে "পেরুর রহস্যময় ইনকা সভ্যতা" লেখাটি পড়তে পারেন।


০৭) ইজিপ্টের পিরামিডঃ
ইজিপ্টের গিজার পিরামিড। "খাফরি" (Khafre) আর "খুফু" (Khufu) প্রাচীন পিরামিড গুলির মধ্যে দুটি। খুফু সব থেকে বড় আর এটি বানাতে ব্যাবহৃত হয়েছে ২ মিলিয়ন পাথরের টুকরা আর প্রতিটি টুকরার ওজন ৯ টন। পিরামিড গুলি প্রাচীন রাজাদের কবর আর এগুলা তৈরি করা হয় ২৫৫০ খ্রীষ্টপূর্বে।


০৮) স্পিংক্সঃ
ইজিপ্টের আরেক রহস্য স্পিংক্স। এই ভাষ্কর্যের দেহ সিংহের আর মাথা ফেরাউনের (ফেরাউন মিশরের রাজাদের উপাধি)। অনেকে বিশ্বাস করেন এই মাথা রাজা খাফরির (Khafre)। চুনাপাথরের তৈরি এই বিশাল মূর্তি, সময়ের সাথে ধীরে ধীরে ভেঙ্গে পরছে।


০৯) লকনেস দ্বীপের রহস্যঃ
স্কটের লোকমুখের সব থেকে প্রচলিত গল্প। অনেকের মতে লকনেস লেকে দেখতে পাওয়া যায় এই বিশার দেহের প্রানীকে। লোকমুখে শোনা যা এই রহস্যে ঘেরা প্রানী ছোট বাচ্চাদের পিঠে চড়াবার লোভ দেখিয়ে পানির নিচে নিয়ে হারিয়ে যায়। ১৯৩৩ সালে প্রথম দাবি ওঠে এই রহস্যের প্রানী দেখার। এর পরে কেউ একজন ছবি তুলে ফেলে। যদিও অনেকের দাবি এটি ভূয়া ছবি। এরপর এই ছবি হয়ে ওঠে এই লকনেসের রহস্যে ঘেরা প্রানীর একমাত্র প্রমান এবং ততকালীল সময়ের সংবাদ পত্রের প্রধান সংবাদ।


১০) এরিয়া ৫১:
এরিয়া ৫১, দক্ষিন নেভাদার গ্রুম লেকের উপর অবস্থিত। এই এরিয়া ৫১ প্রথম স্থাপিত হয় ১৯৫৫ সালে। এই এরিয়া ৫১ প্রতিষ্ঠিত করে আমেরিকার বিমান বাহিনী। এখানে তারা বিভিন্ন ধরনের উড়োজাহাজ তৈরি করে। যা সম্পূর্ন ভাবে গোপনে বিভিন্ন ধরনের উরোজাহাজ বানায়। এটি বর্তমান সময়ের সব থেকে গোপন জায়গা। এই এলাকার মধ্যে জনসাধরনের ঢোকা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। এখানকার সিকিউরিটি এমন কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রন করা হয় যে কেউ যদি ভুল করে ঢুকেও পরে তাকে গ্রেফতার করা হবে না সরাসরি গুলি।

এই এলাকার যত রহস্য সম্পর্কে জানতে নিয়ে আরো জানতে "এরিয়া ৫১" লেখাটি পড়তে পারেন।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info