অদ্ভুদ কিছু স্থাপনা (১ম খন্ড) ।। Some Strange Structures (1st Part)


Cloud Gate-Shape of liquid mercury:
আধুনিক যতগুলো স্থাপনা রয়েছে সেগুলির মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে অবস্থিত AT&T Plaza , Millennium Park এর Cloud Gate। যার অপর নাম The Bean। আবার দেখতে অনেকটা তরল পারদের মত। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে এটি নির্মাণ করেছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক অনিশ কাপুর। ১৬৮ টি স্টিলের প্লেট জুড়ে তৈরি করা হয়েছে এই স্থাপনা এবং এটাকে এতটাই নিখুঁত ভাবে পালিশ করা হয়েছে কোথাও ধরা পড়বেনা এর জোড়ার দাগ। ১১০ মেট্রিক ভর সম্পন্ন এই স্থাপনার আয়তন ৩৩ফুট X৬৬ ফুটX৪২ ফুট। যার নীচে রয়েছে ১২ফুট উচ্চতা সম্পন্ন বাঁকানো প্রবেশপথ। Cloud Gate যাত্রা শুরু করে ২০০৬ সালের ১৫ মে। কি সকাল, কি দুপুর কিংবা রাত, ঘুটঘুটে অন্ধকার এর যেদিকেই তাকাবেন শুধু আশ্চর্য হতে হয় আলোর প্রতিবিম্বে।


Frogner Park Babyfighter, Oslo, Norway:
৯০ সালের দিকে এই পার্কটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯২৪ সাল থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত নরওয়ের অমর স্থাপত্যশিল্পী Gustav Vigeland তৈরি সকল প্রস্তরমূর্তি এই পার্কে স্থানান্তর করা হয়। এই সকল স্থাপনার মধ্যে বেশিরভাগই মানুষের যেগুলি দৌড়, কুস্তি, নৃত্য এবং রতি-ক্রিয়া রত। এই সব মূর্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় Babyfighter Statue। এটি একটি নাঙ্গা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মূর্তি যেটি কিছু যাযাবর বা জিপসি শিশুদের সাথে লড়াই করছে। Frogner Park বা Frognerparke। পৃথিবীব্যাপী যার পরিচয় Vigeland Sculpture Park বা Vigelandsanlegget নামে। সকলের জন্য উন্মুক্ত এই পার্কটি নরওয়ের রাজধানী অসলোর Frogner অঞ্চলে অবস্থিত। ৩২ হেক্টর এলাকা জুড়ে এই পার্কটিতে রয়েছে কয়েকটি সেতু, ঝর্ণা, রয়েছে একটি স্টেডিয়াম এবং প্রস্তর মূর্তি। সূর্যস্নান, খেলাধুলা এবং অবসর যাপনের জন্য এই পার্কটি দারুন এক জায়গা।


The Traffic Light Tree, London, UK:
১৯৯৮ সালে লন্ডনে Public Art Commissions Agency আয়োজিত এক প্রতিযোগিতা উপলক্ষে বানানো হয়েছিলো এই স্থাপত্যটি। অদ্ভুত এই ট্রাফিক লাইটটি লন্ডনের Canary Wharf-এর নিকটে এক রাস্তার মোড়ে অবস্থিত। যেখানে এসে মিশেছে Heron Quay Bank, Marsh Wall এবং Westferry Road। ৮ মিটার উচ্চতার এবং ৭৫ টি বাতির সমন্বয়ে এই স্থাপত্যটি তৈরি করেছেন ফ্রান্সের স্থাপত্যশিল্পী Pierre Vivant। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত এই ট্রাফিক লাইটের নাম Traffic Light tree। একটি গাছের উপর নির্মাণ করা হয়েছিলো Traffic Light tree যেটি দূষণের কারণে আস্তে আস্তে মরতে বসেছিল। এই ট্রাফিক লাইট সম্পর্কে Public Art Commission Agency বলেছিল- The arbitrary cycle of light changes is not supposed to mimic the seasonal rhythm of nature, but the restlessness of Canary Wharf। এই রাস্তার মোড়ে কেউ গাড়ি চালিয়ে আসলে ধন্ধে পড়ে যেত, বুঝে উঠতে অসুবিধে হত কোনটা আসল সিগন্যাল। অল্পদিনের মধ্যেই এই ট্রাফিক লাইট স্থানীয় এবং পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়তা পায় । ২০০৫ সালে Saga Motor Insurance-এর উদ্যোগে the best and worst roundabouts in the country নামে এক জরিপ অনুষ্ঠিত হয় জরিপে প্রথম স্থান অধিকার করে Traffic Light tree। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে এই ট্রাফিক লাইটের মালিক পক্ষ Tower Hamlets Council সংস্কারের জন্য পূর্ব লন্ডনের Isle of Dogs-এ নিয়ে আসেন।


Hand of the Desert:
দক্ষিণ চিলির Atacama মরুভুমির বুক ছিঁড়ে চলে গেছে বিখ্যাত Panamerican Highway। এই সড়ক ধরে Antofagasta শহর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই চোখে পড়বে এই বিশাল ভাস্কর্য। স্থানীয় ভাষায় যার নাম Mano de Desierto বা Hand of the Desert। এই অঞ্চলটি সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ১১০০ মিটার উপরে অবস্থিত। সিমেন্ট ও লোহা দ্বারা তৈরি এই হাতের উচ্চতা ১১ মিটার(৩৬ ফুট)। চিলির Corporación Pro Antofagasta-র অর্থায়নে এই হাতের ভাস্কর্যটি বানিয়েছেন স্থাপত্য শিল্পী Mario Irarrázabal। তিনি হাতটিকে এমন ভাবে বানিয়েছেন যার মাধ্যমে মানুষের অবিচার, একাকিত্ব , দুঃখ ও অত্যাচার ফুটে উঠে। ১৯৯২ সালের ২৮শে মার্চ এই স্থাপত্যটি উদ্বোধন করা হয়।


Man and Skull ,Prague:
চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে অবস্থিত পূর্বের Kings of Bohemia, প্রাক্তন চেকোস্লোভাকিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্টের বাসভবনেরর নাম Prague Castle বা Pražský hrad। চেক প্রজাতন্ত্রের রাজকীয় অলঙ্কারের সব গহনায় সংরক্ষিত আছে এই প্রাসাদে। Prague Castle পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাসাদ যার দৈর্ঘ্য ৫৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৩০ মিটার।এই প্রাসাদের পাশেই অবস্থিত Daliborka Tower। তার একটু পরেই অবস্থিত Golden Lane। এখানে রাস্তার পাশেই অবস্থিত অদ্ভুত ভাস্কর্যটির নাম Parable। একটি হামাগুঁড়ি দেয়া লোকের পিঠের উপর চড়ে বসে আছে একটি নরমুণ্ড। তামার তৈরি এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিলেন স্থাপত্য শিল্পী Jaroslav Rona। এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিখ্যাত চেক সাহিত্যিক ফ্র্যাঙ্ক কাফকার তৈরি চরিত্র Parable-কে।

লেখকঃ মামুনুর রশিদ এবং রাজিব হুমায়ুন তন্ময়।
সম্পাদনায়ঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info