পিপড়াদের মহানগরী ।। Ant's Metropolis


আচ্ছা আপনি অতিক্ষুদ্র প্রানী পিপড়াকেতো চেনেন? এই ছোট প্রানীর উপস্থিতি নেই এমন জায়গা খুঁজে বেড় করা এক কথায় প্রায় অসম্ভব। কিন্তু ক্ষুদ্র হলেও এই প্রানীটির কিন্তু কয়েকটি বেশ ভয়ংকর প্রজাতি রয়েছে। এই ভয়ংকর প্রজাতি গুলি নিয়ে পূর্বে "৮টি ভয়ংকর কীটপতঙ্গ" লেখায় আলোচনা করেছিলাম। শুধু যে ভয়ংকর তা নয় এই পিপড়া আমাদের বেশ কয়েকটি উপকারি কাজেও ব্যাবহৃত হয়, আর এ গুলি নিয়ে পূর্বে "উদ্ভট রূপ চর্চা" এবং "অদ্ভুত প্রানী চিকিৎসা" লেখায় আলোচনা করেছিলাম। শুধু যে রূপ চর্চা আর চিকিৎসা কাজে পিপড়ার ব্যাবহার রয়েছে তা নয় খাবার হিসেবেও কিন্তু পিপড়ার প্রচলন আছে এ নিয়ে পূর্বে "অদ্ভুত খাবার" লেখায় আলোচনা করেছিলাম। যা হোক পূর্বের লেখা গুলি পড়া থাকলে খুব সহজেই বুঝে যাবেন আকার আকৃতিতে এরা ছোট হলেও কাজেকর্মে কিন্তু এরা কোন ভাবেই ছোট না।

আচ্ছা আপনাদের মনে কি কখনও প্রশ্ন জাগে না যে এই ছোট কিন্তু মারাত্মক কঠোর পরিশ্রমি এই পিপড়া গুলি নিজেদের ঘরবাড়ি অর্থাৎ বাসস্থান বানাতে কেমন কষ্টো করে বা কেমন আকৃতির হয় এদের বাড়ি গুলি? হয়ত আপনার মনে উঁকি না দিলেও অনেক বিশেষজ্ঞ আছেন যাদের মনে এই প্রশ্ন কিন্তু ঠিকই উঁকি দিয়েছে। আর তাদের মনে উঁকি দিয়েছে কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবে না তাহলে কিসের বিশেষজ্ঞ তারা? আর পিপড়ার এই বাসা খুঁজে বেড় করতে যেতে তারা যা পেয়েছে তা রীতিমত সকলকেই বিস্ময়ের অতল গভীরে ডুবিয়ে দিয়েছে। আজ আপনাদের দেখাবো পিঁপড়াদের সেই মহানগরী যা খুঁজে পেয়েছে বিশেষজ্ঞরা।


প্রথমে তারা ব্রাজিলের বেশ বড় দেখে একটা পিপড়ার বাসা নির্বাচন করল। এরপর তারা এই পিপড়ার বাসার প্রবেশ দ্বার দিয়ে আসলে এটি প্রবেশ দ্বার নয় মূলত বাতাস আসা যাওয়ার জন্য পিঁপড়াদের গড়ে তোলা বাতাস চলাচলের পথ দিয়ে সিমেন্ট ঢালা শুরু করল। সিমেন্ট দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, এই সিমেন্ট পিপড়ার বাসার ভিতরে যেয়ে জমাট বেঁধে গেলে পরে মাটি খুঁড়ে তারা দেখতে পারবে যে আসলে কেমন এই পিপড়ার বাসা। কিন্তু এই সিমেন্ট ঢালার সময় হল বিপদ। যতই সিমেন্ট ঢালেনা কেন এই পিপড়ার বাসার গর্ত কোন ভাবেই পরিপূর্ন হয় না। অবশেষে টানা ৩ দিন ধরে ১০ টন সিমেন্ট ঢালার পরে পূর্ন হল পিপড়ার বাসার গর্ত। এর পরে ১ মাস অবসর নিল বিশেষজ্ঞরা যাতে এই সিমেন্ট পরিপূর্ন ভাবে শক্ত হয়ে যায়। এরপরে তারা শুরু করল মাটি খোঁড়াখুঁড়ি। আর বেড়িয়ে আসতে থাকল পিঁপড়াদের মহানগরী।


পিঁপড়াদের এই বাসা খুঁজে বেড় করার নেতৃত্ব দেন "Professor Luis Forgi", আর তারা যা খুঁজে পেলেন তা দেখে রীতিমত নিজেরাই ভীমরি খেলেন। তাদের নির্বাচিত পিঁপড়ার এই বাসা ৫০ স্কয়ার ফুট এলাকা জুড়ে অবস্থিত আর এটি ভূপৃষ্ট থেকে ২৬ ফুট গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত।

আরেকটি কথা বলতে ভুলে গেছি, পিপড়াদের এই বাসা কিন্তু পিপড়ারাই পরিত্যাগ করে চলে গেছে। তবে কেন পরিত্যাগ করেছে তা কিন্তু কারো জানা নেই। আর একারনে এই বাসাকে বেছে নেন Professor Luis Forgi। পিপড়াদের এই বাসা যে প্রজাতির পিপড়া গড়ে তুলেছিল সেই প্রজাতির পিঁপড়ার নাম "Leafcutter Ant", এরা মূলত গাছের পাতা কেটে নিয়ে যায় বিধায় এদের এই নামকরন।

এবার চলুন দেখে নেই বিশেষজ্ঞদের খুঁজে বের করা পিঁপড়াদের এই মহানগরীর কিছু ছবি,


কি পিঁপড়াদের মহানগরী দেখে কি অবাক হলেন? আরো অবাক হবার বিষয় কিন্তু এখনও বাকি আছে। বিশেষজ্ঞরা যে শুধু এই বাসা খুঁজেই চুপ করে বসে ছিলেন তা কিন্তু না। তারা পিঁপড়াদের তৈরি এই মহানগরীর প্রতিটি অংশের তৈরির উদ্দেশ্য তথা কাজ কিন্তু তারা খুটিয়ে খুটিয়ে বের করেছেন। আর এই মহানগরীতে পিপড়াদের জন্য যে ব্যাবস্থা তারা গড়ে তুলেছিল তা আপনাকে রীতিমত অবাক করে দিবে। এই মহানগরীর বৈশিষ্ট্য গুলি শুনলেই টের পাবেন।

পিপড়াদের মহানগরীর বৈশিষ্ট্যঃ
  • বায়ু প্রবাহের জন্য ছিল আলাদা আলাদা সুড়ঙ্গ। পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যাবস্থা ছিল এই মহানগরীতে।
  • এই মহানগরীতে ছিল একটি মহাসড়ক যা মহানগরীর কেন্দ্রকে আশেপাশের অংশের সাথে সংযুক্ত করে রেখেছিল।
  • এই মহানগরীতে পিপড়ারা গড়ে তুলেছিল ফাঙ্গাসের বাগান। যেখানে তারা ফাঙ্গাসের চাষ করত। এই ফাঙ্গাস লার্ভা পিঁপড়ার মূল খাবার।
  • রাণী পিপড়ার বাস্থান সব থেকে বড় করে গড়ে তোলা আর এর আসে পাশে যত জায়গা আছে সব গুলি সৈনিক পিঁপড়াদের থাকার স্থান।
  • বিশেষজ্ঞদের মতে মানুষের পরেই এই Leafcutter প্রজাতির পিঁপড়ারা সব থেকে জটিল সামাজিক ব্যাবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম। আর এই কারনেই এদের মহানগরী এতটা জটিল ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে।
  • একটি রানী পিঁপড়ার অধীনে ৩০০ মিলিয়ন পিঁপড়া এই মহানগরীতে বসবাস করত।
  • মহানগরীর একটা অংশ শুধু মাত্র আবর্জনা সংরক্ষনের জন্য ছিল।
  • এই মহানগরী তৈরি করতে পিঁপড়াদের মোট ৪০ টনের মত মাটি সড়াতে হয়েছিল।
এবার বুঝলেনতো কেমন জটিল এই আর কতটা দক্ষতার সাথে গড়ে তুলেছিল এই মহানগরী। এবার চলুন এই মহানগরী খুঁজে বের করা নিয়ে বানানো ভিডিও প্রতিবেদনটি দেখে নেই, তাহলে আপনার কাছে এই মহানগরী আরো বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আর বুঝতে পারবেন পিঁপড়া ছোট প্রানী হলেও এর কাজ কিন্তু মোটেও ছোট নয়।


Download

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

৬টি মন্তব্য:

  1. সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না... :o

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. সহমত... কত বছর লেগেছে পিঁপড়া গুলির এই মহানগরী তৈরি করতে... আল্লাই জানেন...

      মুছুন
  2. দেখছি কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছে না............ পিঁপড়া.................. কেমনে কি?????!!!!!!

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ঠিক বলেছেন... আমিও অবাক হয়েছি যখন প্রথম দেখে ছিলাম...

      মুছুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info