সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি উদ্ভট যুদ্ধ যান

সোভিয়েত ইউনিয়ন, এক শক্তির নাম। এই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেংগে গেছে বহুদিন আগে কিন্তু আজও এই সোভিয়েত আমলে তৈরি অনেক কিছুই আছে যা আমাদের আকর্ষন করে বিশেষ করে অবাক করে। যখন সারা বিশ্বের মানুষ যা কল্পনাও করতে পারত না এরা অতিগোপনে তা আবিস্কার পর্যন্ত করে ফেলেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের সব থেকে বড় জয় হচ্ছে মহাশুন্যকে জয় করা। এরা যেমন প্রথম মহাকাশ জয় করেছিল তেমনি প্রথম নারী মহাকাশচারী পাঠিয়েছিল মহাশুন্যে। আজ সে সব কথা না বরং আজ আপনাদের জানাবো এই সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে তৈরি করা কিছু উদ্ভট কিন্তু অত্যান্ত কার্যকর কিছু সামরিক যানের কথা, যে গুলি দেখে আপনি অবাক না হয়ে পারবেন না। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।


Caspian Sea Monster:
যার আরেক নাম "Kaspian Monster"। এটি এমন একটি যান যেটি দেখতে প্লেনের মত কিন্তু আকাশে উড়ে না আবার চলে পানিতে কিন্তু পানিতে ভাসে না!! নিশ্চই ভাবছেন আমি প্রলাপ বকছি। আকাশেও উড়ে না আবার পানিতেও ভাসে না আবার চলে পানির উপর দিয়ে!! অবাক হবার মতই কিন্তু সত্যি। এই যানের ডিজাইনারের নাম "Rostislav Alexeyev" এবং এই যানের ইঞ্জিনিয়ারের নাম "V.Efimov"। এই Caspian Sea Monster তৈরি করা হয় ১৯৬৪-১৯৬৫ সালে, সোভিয়েত আমলে অত্যান্ত গোপনীয় ভাবে। আমেরিকার CIA যখন সর্বপ্রথম তাদের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশাল আকৃতির এক উড়োজাহাজ দেখতে পেল, তখন তারা দেখল যে এর উপরে বড় বড় অক্ষরে লেখা "KM", তখন তারাই এর নাম দিল "Kaspian Monster" কিন্তু বাস্তবে এই KM মানে "Korabl maket"। এই যান ৩৭.৬ মিটার চওড়া এবং লম্বায় ৯২ মিটার। এটি সর্বোচ্চ ৫৪৪ টন ওজন নিয়ে প্রতি ঘন্টায় ৬৫০ কিঃমিঃ গতীতে ছুটতে সক্ষম ছিল। এটি মূলত বানানো হয়েছিল সৈনিক এবুং যুদ্ধ যান যুদ্ধ ক্ষেত্রে দ্রুততার সাথে পৌছে দেবার জন্য। Caspian Sea Monster সর্বোশেষ বারের মত ১৯৮০ সালে যাত্রা করেছিল, আর এই যাত্রার সময় পাইলটের ভুলের কারনে এই Caspian Sea Monster তৈরির ১৫ বছর পরে দূর্ঘটনার কবলে পরে এবং সমুদ্রে ডুবে যায়। এর ওজন অনেক বেশি হবার কারনে একে উদ্ধার করার সকল পরিকল্পনা ব্যার্থ হয়।


Mil V-12:
মানব সভ্যতার ইতিহাসে এপর্যন্ত নির্মিত সব থেকে বড় হেলিকাপ্টার হচ্ছে Mil V-12। এটি কাজে হেলিকাপ্টার হলেও দেখতে কিন্তু একদম উড়োজাহাজের মত। দু'পাশে দুটি বিশাল আকৃতির পাখা জুড়ে দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এই হেলিকাপ্টার। এই হেলিকাপ্টার ২০-২৫ টন পর্যন্ত মালামাল নিয়ে উড়তে পারত। ১৯৬৮ সালে তৈরি করা এই হেলিকাপ্টারে প্রথম থেকেই একটা সমস্যা ছিল আর তা হল এর নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা। বিশাল আকৃতি আর দুটা পাখা থাকার কারনে একে নিয়ন্ত্রনে রাখা ছিল বেশ কষ্টোকর বিষয়। এই হেলিকাপ্টার উড়াতে মোট ছয় জন চালক লাগত। Mil V-12 মোট ১৯৬ লোক নিয়ে উড়তে সক্ষম ছিল, এটি লম্বায় ৩৮ মিটার আর এর পাখার ব্যাস ৬৭ মিটার, এটি সর্বোচ্চ ২৬০ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৩৫০০ মিটার উচ্চতায় উড়তে সক্ষম ছিল।

এবার দেখে নেই এই বিশাল হেলিকাপ্টার নিয়ে বানানো ছোট একটি ভিডিও প্রতিবেদন,


http://vimeo.com/94197327/download?t=1399395431&v=250811364&s=45656e6b0ea5864e572d1e1a69605610


прогрев т:
"прогрев т" এর বাংলা অর্থ "উষ্ণতা টি"। এই ট্যাংক সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জোগাড় করা সম্ভব হয়ে ওঠে নাই কেননা এই ট্যাঙ্ক নিয়ে যত ওয়েব সাইটে যাই সব গুলাই রাশিয়ান ভাষায় লেখা। যেটা পড়া আমার পক্ষে অসম্ভব, আর গুগল ট্রান্সলেট যে কি ট্রান্সলেট করে তা ট্রান্সলেট করতে আরেক ট্রান্সলেটির লাগবে।

যা হোক এই ট্যাংকে কামানের জায়গায় লাগানো হয়েছে জেট বিমানের ইঞ্জিন যা ট্যাংকের সামনের দিকে প্রচুর বায়ু চাপ তৈরি করতে সক্ষম। এটি মূলত ব্যাবহার করা হত মাটিতে পুতে রাখা মাইন বিস্ফরনের জন্য। এই ট্যাংকের তৈরি করা প্রবল বায়ু চাপ মাইন গুলিকে বিস্ফরিত করত ফলে কোন দূর্ঘটনা বা জান মালের ক্ষয়ক্ষতি না করেই গন্তব্যে পৌছানো যেত।


স্ক্রু চালিত ট্যাংকঃ
বেশ অদ্ভুদ দেখতে এই ট্যাংক তাই না? মূলত এটি তৈরি করা হয় বরফ এবং কাঁদা মাটির উপর দিয়ে চলার জন্য। আর যে প্রক্রিয়ার এই ট্যাংকটি বানানো হয় তাতে বলা যায় এটি বেশ সফল কিন্তু সমস্যাও কম ছিল না এই ট্যাংকে। এই ট্যাঙ্ক নিয়ে শক্ত রাস্তার উপর চলা ছিল এক কথায় অসম্ভব আর এতে কোন সাস্পেন্সন না থাকায় এটি নিয়ন্ত্রনে রাখা ছিল বেশ কঠিন কাজ আর খুব বেশি ভারি হবার কারনে এটি দ্রুততার সাথেই চলতে অক্ষম ছিল। এই কারনে এই ট্যাংক পরবর্তিতে বানানো বন্ধো করে দেওয়া হয়।


http://vimeo.com/94173472/download?t=1399395587&v=250746593&s=be54057b7f87ca887ee1e2c496e51963


Kalinin K-7:
১৯৩০ সালে তৈরি করা Kalinin K-7 কে বলা হয় "রাশিয়ার উড়ন্ত কেল্লা"। এটি মূলত বোম ফেলানোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। বিশাল আকৃতির এই প্লেন চালাতে ১১ জন চালক লাগত। এই উড়োজাহাজে ১২০ যাত্রীর বসার জায়গা ছিল। এটি লম্বায় ছিল ২৮ মিটার আর চওড়ায় ছিল ৪৮৮৬.৮ ফুট। এটি সর্বোচ্চ ৩৮০০০ কেজি ওজন নিয়ে উড়তে সক্ষম ছিল, এর সর্বোচ্চ গতি ছিল ২২৫ কিঃমিঃ প্রতি ঘন্টায়। এটি মূলত বোমাবর্ষনের জন্য বানানো হলেও এতে ছিল ৮*২০ মিঃমিঃ স্বনিয়ন্ত্রিত কামান এবং ৮*৭.৬২ মিঃমিঃ মেশিনগান। সব থেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই উড়োজাহাজের মত বড় ল্যান্ডিং গেয়ার আজ পর্যন্ত অন্য কোন উড়োজাহাজে ব্যাবহৃত হয় নাই।


রাশিয়ার মহাকাশ যানঃ
VM-T Atlant মডেলের এই কার্গো বিমানকে রাশিয়ানরা পরিনত করতে চেয়েছিল মহাকাশ যানে, আর সেই লক্ষেই এর উপরে বসানো হয় বিশাল আকৃতির হাড্রোজের সিলিন্ডার। যদিও এই প্রচেষ্টা বেশি দিন করা হয় নাই কেননা এরকম ভাবে হাড্রোজেনের ট্যাংক মাথার উপর বসিয়ে যে এই কার্গো বমানকে মহাকাশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না তা তারা বেশ ভাল মতই বুঝতে পেরেছিলেন। তবে সাটেল ব্যাবস্থার পথ প্রদর্শক ছিল এই বিমান যা পরবর্তিতে ব্যাপক উন্নত হয়েছিল।


Object 279:
১৯৫৯ সালে Object 279 বিশাল শক্তিশালী এই ট্যাংক তৈরি করেছিল রাশিয়া। মূলত এই ট্যাংক এতটাই শক্তিশালী ভাবে তৈরি করা হয়েছিল যে দাবি করা হয় যে এই ট্যাংক নিক্লিয়ার বোমার ধাক্কাও অনায়াসে সামলে নিতে পারবে। একে মূলত তৈরি করা হয়েছিল শেষ শক্তি হিসেবে। কেননা এই ট্যাঙ্ককে ধ্বংস করা তৎকালীন সময়ে ছিল প্রায় অসম্ভব বিষয়। এই ট্যাংকটি তৈরি করেন ইঞ্জিনিয়ার L.Troyanov। অন্যান্য ট্যাংকে দু'টি বেল্ট থাকলেও এই ট্যাংকে আছে চারটি বেল্ট আর এর সাস্পেন্সনের জন্য ব্যাবহার করা হয়েছে hydro pneumatic সাথে জটিল hydrotransformer ব্যবস্থা। এই ট্যাংকে ব্যাবহার করা হয়েছে ১০০০ অর্শ্ব শক্তির 2DG-8M ডিজেল ইঞ্জিন। ট্যাঙ্কের মোট ওজন ৬০ টন এবং এর গতি ঘন্টায় ৫৫ কিঃমিঃ। একবার তেল ভরলে এটি সর্বোচ্চ ৩০০ কিঃমি পথ পারি দিতে সক্ষম। এতে ব্যাবহার করা হয়েছে ২৬৯ মিঃমিঃ পুরু পাত যা এই ট্যাংকে এক কথায় অপ্রতিরোদ্ধ করে তুলেছে। আর যুদ্ধের জন্য এই ট্যাংক ব্যাবহার করা হয়েছে ১৩০ মিঃমিঃ M-65 রাইফেল এবং ১৪.৫*১১৪ মিঃমিঃ KPVT মেশিনগান। আর এই ট্যাংকে সর্বো প্রথম ব্যাবহার করা হয় স্বনিয়ন্ত্রিত নিশানা ব্যাবস্থা। এর কামান প্রতি মিনিটে ৫ থেকে ৭ শেল ছুড়তে সক্ষম। এক কথায় এর নিশানায় পরা মানেই মৃত্যু।


রকেট চালিত ট্রেনঃ
১৯৬৬ সালে ট্রেনকে আরো দ্রুত ছোটাবার জন্য এর সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হয় জেট ইঞ্জিন। যা এই ট্রেনের গতিকে সর্বোচ্চ ঘন্টায় ১৮৩ মাইল গতি দেয়। মূলত সৈনিকদের দ্রুততার সাথে যুদ্ধ এলাকায় পৌছে দেবার জন্য এই ট্রেন তৈরি করা হয়।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info
জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info