১০টি উদ্ভট অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া (শেষ পর্ব) ।। Bizarre Funeral (Last Part)


প্রকৃতির নিয়মেই মানুষের মৃত্যু হবে আর মৃত্যু হলে তার মৃত্যু দেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা হয়। কিন্তু এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কিন্তু স্থান এবং জাতী ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব ১০টি উদ্ভট অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রথার সাথে। চলুন তাহলে পরিচিত হয়ে নেওয়া যাক ১০টি উদ্ভট অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সাথে,


০৫) শবদাহঃ
মৃত দেহ পোড়ানোর প্রথা বর্তমান আধুনিক যুগেও বহুল প্রচলিত রয়েছে। সনাতন ধর্মালম্বি বাদেও খ্রীষ্ট ধর্মালম্বিদের মাঝে এই প্রথার প্রচল দেখা যায়। এই পদ্ধতিতে কাঠ দিয়ে মঞ্চ তৈরি করে মৃত দেহকে পোড়ানো হয়। আর পোড়ানো মৃত দেহর ছাই একটি পাত্রে করে রেখে দেওয়া হয় মৃত ব্যাক্তির আত্মীয় সজনদের কাছে। অনেক ক্ষেত্রেই মৃত ব্যাক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তার ছাই কোথায় বিসর্জন দেওয়া হবে, সেই ইচ্ছা নিকট আত্মীয়দের কাছে বলে যান। সনাতন ধর্মালম্বিরা সাধারনত মৃত ব্যাক্তির দেহ পোড়ানো ছাই গঙ্গা নদীতে বা অন্য কোন জলাশয়ে বিসর্জন করেন। আর খ্রীষ্টিয় ধর্মালম্বিদের মধ্যে এই ইচ্ছা কিঞ্চিৎ ভিন্ন রকম হয়। যেমনঃ মহাশুন্যে বিসর্জন দেওয়া, পাহাড়ের উপর থেকে বাতাসে উড়িয়ে দেওয়া অথবা ভবিষ্যত প্রজন্মকে তার দেহ পোড়ানো ছাই সংরক্ষনে রাখতে বলা ইত্যাদি ইত্যাদি।


০৪) Strangulation:
Strangulation বা শ্বাস রুদ্ধ করে হত্যা করা, এই পদ্ধতি এক আজব আর অমানবিক পদ্ধতি। সতীদাহ প্রথার মত এই প্রথাও বর্তমান বিশ্বে নিষিদ্ধ ঘোষিত এক পদ্ধতি। এই পদ্ধতি প্রচলিত ছিল ফিজিতে। তারা বিশ্বাস করত কোন ব্যাক্তি মারা গেলে তার আত্মাকে যেন একা রাখা না হয়। তাই তার কাছের এবং সব থেকে প্রিয় ব্যাক্তিকেও তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হত, মানে তাকে শ্বাস রুদ্ধ করে হত্যা করা হত। আর এক্ষেত্রে মৃত ব্যাক্তির সব থেকে প্রিয় এবং নিকট আত্মীয় নির্বাচিত হত। ফলে মৃত্যুর পরে দুজনে সুখে শান্তিতে থাকতে পারবে। শ্বাসরুদ্ধ করে মৃত্যু বরন করাকে সব থেকে কম কষ্টের পদ্ধতি হওয়ায় এই পদ্ধতিকে ব্যাবহার করা হত।


০৩) নর মাংস ভক্ষণ প্রথাঃ
আরেকটি উদ্ভট এবন অমানবিক প্রথা এই নর মাংস ভক্ষণ প্রথা। কোন ব্যাক্তি মারা গেলে তার পরিবারের লোকেরা মৃত ব্যাক্তির মাংস রান্না করে তা দিয়ে উৎসব পালন করত। তারা বিশ্বাস করত এর ফলে মৃত ব্যাক্তির আত্মা আমৃত্যু পর্যন্ত তাদের সাথেই থাকবে। এই পদ্ধতি চালু ছিল গিনি এবং ব্রাজিলের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিশেষজ্ঞদের মতে যে জাতী গোষ্টি বনে জঙ্গলে বসবাস করত আর তাদের খাওয়ার মত শাক সবজি বলতে কিছুই থাকত না তাদের মধ্যে এই প্রথার বহুল প্রচলন ছিল।


০২) আকাশ সমাধিঃ
এই প্রথা নিয়ে এর আগে "তিব্বতিদের আকাশ সমাধি" লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম।


০১) সীতাদাহ প্রথাঃ
এই প্রথার সব থেকে বেশি প্রচলন ছিল সনাতন ধর্মালম্বিদের মধ্যে, এছাড়াও আরো কিছু জাতি গোষ্ঠির মধ্যে এই প্রথার প্রচলন ছিল। এই প্রথায়, কোন ব্যাক্তি যদি মারা যেত তাহলে তার বিধবা স্ত্রীকে বাধ্য করা হত তার মৃত স্বামীর মৃত দেহর সাথে নিজেকে পুড়িয়ে মারতে। যদিও বর্তমানে এই প্রথার প্রচলন আর নেই, আর এই প্রথা কে বন্ধো করেছিলেন জানেন কি? এই প্রথা বন্ধের প্রথম দাবি তোলেন ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর। আর আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে উনি সর্বপ্রথম কোন হিন্দু যিনি তার ছেলেকে বিধবার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। বর্তমানে এই প্রথা নিষিদ্ধ হলেও ভারতের গ্রাম অঞ্চলে মাঝে মধ্যে একটি দুটি সতিদাহর ঘটনার কথা আজও শোনা যায়। বিষেশজ্ঞরা মনে করেন, মূলত এই প্রথা চালু হবার কারন ছিল বিধবাকে দেখার কেউ থাকত না, আর একা একা কোন নারীর অধিকার নেই বেঁচে থাকার এই চিন্তা ধারার জন্য অথবা মৃত ব্যাক্তির সম্পত্তির লোভে নিকট আত্মীয়রা বেশি আগ্রহী ছিল। যা হোক বর্তমানে এই প্রথা আর চালু নেই, তা না হলে ভারতে নারীদের যে কি অবস্থা হত তা একমাত্র আল্লাহই জানেন।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info