আমাদের এই ধরনিতে কত প্রানীর বসবাস, এদের মধ্যে অনেক প্রানিকে আমরা চিনি আবার অনেক প্রানিকে আমরা তেমন একটা বা মোটেও চিনি না। এই সব চেনা অচেনা প্রানীদের মধ্যে অনেক প্রানী আছে যারা দেখতে যেমন অদ্ভুত তেমনি বিস্ময় কর। আজ আপনাদের এরকম কিছু প্রানীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। তাহলে চলুন শুরু করা যাক,
The Shoebill:
জুতার আকৃতির ঠোটের অধিকারি এই পাখির নাম The Shoebill। এই পাখির মূল বসবাস আফ্রিকার পূর্বের সমুদ্রতীরবর্তি অঞ্চলে, এছাড়াও সুদান ও জিম্বাবুয়েতে এই পাখির দেখা মেলা। শুধু যে জুতার মত ঠোট তাই নয় এর পাখার রঙ নীল বর্নও অনেকটা অদ্ভূত, আর আকারেও বেশ বড় হয়। এই পাখির উচ্চতা ১১০ থেকে ১৫২ সেঃমিঃ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
Okapi:
Okapi কে দেখলে মনে হবে এ ঘোড়া আর জেব্রার মধ্যকার কোন সংকর প্রজাতি, কিন্তু মোটেও তা নয় বরং এরা জিরাফের নিকট কোন আত্মীয়। এরা দেখতে সংকর প্রজাতির মত হলেও এরা আসলে একটি মৌলিক প্রজাতি। মধ্য আফ্রিকার কঙ্গো দেশে এদের বসবাস।
The Pacu Fish:
এই মাছের একটু বেশী বিস্ময় কর। প্রথমত, এই মাছের দাঁত গুলি হুবাহু মানুষের মত। আমার মনে হয় না পৃথিবীতে Pacu মাছের মত আর কোন মাছের দাঁত আছে। এদের বসবাস মূলত দক্ষিন আফ্রিকার খালে বিলে। এরা আবার পিরানার নিকটতম আত্মীয়। এই মাছের আরেক নাম আছে "Ball Cutter"। এই নাম কেন দেওয়া হয়েছে সেটা আপনার কল্পনার বাইরে। এই মাছের একটু বেশি আগ্রহ ছেলেদের অন্ডকোষের দিকে। মানে এরা যে পানিতে থাকে সেখানে যদি কোন ছেলে উলঙ্গ হয়ে গোছলে নামে তাহলে এই মাছ নির্ঘাত তার অন্ডকোষে কামড় দিয়ে বসবে। কি আজব অভ্যাস তাই না?
The Panda Ant:
লাল কালো পিপড়াতো অনেক দেখেছেন, আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব পান্ডা পিপড়ার সাথে। যদিও এদের পিপড়া বলে ডাকা হয় কিন্তু এরা মোটেও পিপড়াদের গোত্রের না বরং ভিমরুল গোত্রের প্রানী। পাখা ছাড়া স্ত্রী পান্ডা পিপড়ার গা লোমশ থাকে আর এই কারনেই এর নাম দেওয়া হয়েছে পান্ডা পিপড়া। দেখতে যতই সুন্দর হোক না কেন, কামড় দিলে আপনার খবর আছে।
The Narwhal:
ইউনিকর্নেকে সবাইতো চিনেন, আরে ঐ যে ঘোরার মত দেখতে কিন্তু মাথায় আবার ইয়া লম্বা একটা শিং থাকে! এই Narwhal নামের তিমি মাছেরও মাথেয় শিং আছে। অনেকেই বিশ্বাস করে এই তিমি মাছ ইউনিকর্ন আর তিমি মাছের শংকর প্রজাতি। যদিও আমরা জানি ইউনিকর্নের কোন অস্তিত্ব নেই, তাই এটাকে শুধু গল্প কথা ভেবে উড়িয়ে দিতে পারেন। তবে সমুদ্রের নিচে যে এই শিং ধারি যে তিমি মাছ আছে তাকে আপনি কোন ভাবেই কল্পকথা ভেবে উড়িয়ে দিতে পারবেন না। শিংওয়ালা তিমি মাছ বড়ই অদ্ভুত!
Red Lipped Batfish:
বড়ই অদ্ভুত এই মাছ, এর নামটাও বেশ মজার। যাহোক এই মাছের বসবাস Galapagos Island এর জলাশয়ে, আর এখানেই শুধু মাত্র পাওয়া যায় এই মাছ। তবে আপনি এখানে সাতার কাটার সময় এই মাছের সাক্ষাত কখনই পাবেন না। কেননা এই মাছ তার পেটের দিকের পাখা গুলিকে পায়ের মত ব্যাবহার করে আর জলাশয়ের তলদেশ দিয়ে হেটে বেড়ায় আর এর যে লালটুকটুকে ঠোঁট তা জন্মগত ভাবে এবং তা সারাজীবনের জন্য।
Blind Snake:
বড়ই অদ্ভুত দেখতে এই সাপ। এই সাপের কোন চোখ নেই, এই বর্নময় পৃথিবী তার কাছে অন্ধকারাচ্ছন্ন। এদের কে আরেক নাম "Atretochoana Eiselti"। এদের ইল (Eel) মাছের নিকট আত্মীয় ধরা হয় কেননা এদের পিছনের দিকটা অনেকটাই ইল মাছের মত। মূলত এরা বিলূপ্ত প্রানী হিসেবে ধরা হত, কিন্তু ২০১১ সালে আবার এদের দেখা পাওয়া যায়। বর্তমানে এরা বিলুপ্ত প্রানী থেকে বিলুপ্ত প্রায় প্রানিতে পরিনত হয়েছে। এদের বসবাস আমাজান নদীতে।
The Umbonia Spinosa:
এইটা যে কি ধরনের বা কোন প্রজাতীর প্রানী তা এখন পর্যন্ত আবিস্কার করা সম্ভব হয় নাই, তবে অনেকেই মনে করে এরা ঘুর্ঘুরে পোকার প্রজাতির প্রানী। এদের বেশ লম্বা এক শূর রয়েছে যা দিয়ে গাছের কান্ড ছিদ্র করে রস খেয়ে এরা জীবন ধারন করে। অত্যান্ত সুন্দর এবং বর্নময় এই Umbonia Spinosa।
Lowland Streaked Tenrec:
দেখে নিশ্চই মনে হচ্ছে বাহঃ কত সুন্দর একটা প্রানী, কোলে নিয়ে একটু আদর করি। একটু ভাল করে দেখুন গায়ের মধ্যে একমন বড় বড় কাঁটা। অদ্ভুদ এই প্রানী স্তন্যপায়িদের মধ্যে একমাত্র প্রানী যে তার মুখ দিয়ে শব্দ তৈরি না করে ঘাস ফরিংয়ের মত শরীরের কাঁটা একটার সাথে আরেকটা ঘোষে শব্দ তৈরি করে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে। এর বসবাস ম্যাডাগাস্কার বনাঞ্চলে।
এদের এই যোগাযোগ করার মাধ্যম আসলেই স্তন্যপায়ী প্রানীদের মধ্যে বিস্ময়কর। আসুন এবার দেখে নেই কিভাবে এরা এই শব্দ তৈরি করে,
এবার নিশ্চই বুঝে গেছেন এরা কিভাবে শব্দ তৈরি করে।
The Hummingbird Hawk Moth:
এর নাম পরে নিশ্চই বুঝে গেছেন তিন প্রানীর নাম এক করে এর নাম রাখা হয়েছে। এটি হামিং পাখির ফুলে ফুলে ঘুরেফিরে মধু খায় আবার হামিং পাখির মত শব্দ করে কিন্তু এর পাখা মথের মত! আবার মাথায় আছে এক জোড়া এন্টিনা। এটাকে সাময়িক ভাবে হামিং পাখি মনে হলেও এটি কীটপতঙ্গের অন্তর্গত প্রানী। সত্যি অদ্ভুত এবং বিস্ময়কর এক প্রানী।
The Blue Dragon:
এদের নাম ড্রাগন দেখে নিশ্চই ভাবছেন এরা কল্পকাহিনীর ড্রাগনের কোন নিকট আত্মীয়? না মোটেও না বরং এরা ঝিনুক প্রজাতীর প্রানী। দেখতে অদ্ভুদ এই প্রানীর পেটের ভিতরে বাতাস ধরে রাখার জন্য পকেট আছে, এই কারনে এরা সহজেই পানিতে ভেসে থাকতে পারে। এদের খোঁজ পাওয়া যায় উষ্ণ সমুদ্র অঞ্চলের পানিতে। সত্যি অসাধারন সুন্দর দেখতে এই নীল ড্রাগন।
The Mantis Shrimp:
বাহারি এই প্রানীর আরো কিছু নাম আছে, "Sea Locusts", "Prawn Killers" & "Thumb Splitters"। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা কিন্তু এরা ক্রান্তীয় ও উপ ক্রান্তীয় অঞ্চলের সব থেকে হিংস্র শিকারি। বেশ হিংস্র এই প্রানী দেখতে কিন্তু বেশ তাই না?
The Venezuelan Poodle Moth:
এই মথের অস্তিত্বের কথা মানুষ জেনেছে খুব বেশি দিন হয়নি, এইতো ২০০৯ সালে প্রথম এদের আবিস্কার করা হয়। এদের খুজে পাওয়া যায় শুধু মাত্র ভেনেজুয়েলায়, আর এদের নামের আগে ভেনেজুয়েলার নাম আছে আর Poodle এক ধরনের লোমশ কুকুরের প্রজাতির নাম। আর এই তিন নাম মিলে এর নাম করন করা হয়, Venezuelan Poodle Moth।
The Giant Isopod:
Isopod সাধারনত অনেকটাই ছোট হয় কিন্তু গভীর সমুদ্রের Isopod গুলি অনেক বড় হয়, আর কেন এই বৃহৎ আকৃতি ধারন করে তা কারো জানা নেই।
The Saiga Antelope:
অস্বাভাবিক এবং বড় নাকের জন্য এই প্রানীর বেশ পরিচিতি রয়েছে, সাথে রয়েছে মাথের শিং, বড়ই অদ্ভুত এই প্রানী। এরা প্রায় বিলুপ্ত প্রানী হিসেবে চিহ্নিত। ইতি মধ্যে চায়না এবং দক্ষিন পশ্চিম মঙ্গোলিয়াতে এদের বিলুপ্তি ঘটেছে।
The Bush Viper:
এই সাপ তার জীবনের বেশির ভাগ সময় গাছে পার করে, বলা চলে গাছ থেকে কখনই এরা নামে না। সাপেরা দেখতে এমনিতেই বিদ্ঘুটে তার উপর এর সারা গায়ে পাতা আকৃতির কাঁটা। এদের পাওয়া যায় আফ্রিকার উপকূলিয় বনাঞ্চলে, আর রাতের বেলা শিকারে বের হয়। যতই বিদ্ঘুটের হোক না কেন এরা কিন্তু আকৃতিতে তেমন একটা বড় হয় না, গড়ে ৭৮ সেঃমিঃ পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এই সাপ।
The Blue Parrotfish:
পানির নিচের টিয়া পাখি, তবে টিয়া পাখির মত সবুজ বর্নের না বরং নীল বর্নের এই মাছে। আর এই নামকরন করা হয়েছে এই মাছের মুখের কারনে, কেননা তা দেখতে হুবাহু টিয়া পাখির মত। এরা গড়ে ৩০ থেকে ৭৫ সেঃমিঃ লম্বা হয়, তবে কিছু কিছু মাছ ১.২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। সমুদ্র প্রানী জগতে যত মাছ আবিস্কৃত হয়েছে তাদের মধ্যে এই মাছ একমাত্র যার গায়ের রঙ নীল, এ মাছ বাদের আর কোন মাছ নেই এই একই রঙয়ের। মজার কথা হল এই মাছ তার জীবনের ৮০% সময় ব্যয় করে খাদ্যের খোঁজে।
The Indian Purple Frog:
দেখে মাংসের স্তুপ মনে হলেও এটি আসলে একটি প্রানী যা কিনা ব্যাঙ। এদের খুজে পাওয়া যায় একমাত্র ভারতে। অবাক করার বিষয় হল এরা একমাত্র প্রজাতির ব্যাঙ যারা বছরে মাত্র ২ সপ্তাহ পানি ছেড়ে স্থলে থাকে, আর এসময় এরা বংশ বৃদ্ধির জন্য সংগী খোঁজে। এদের দেহ বড় আর থলথলে হলেও এদের মাথা দেহের তুলনায় অনেক ছোট আকৃতির হয়।
The Thorny Dragon:
এদের খোঁজ পাওয়া যায় অষ্ট্রেলিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে। এদের আরো কয়েকটি নাম আছে "Mountain Devil", "The Thorny Lizard", "The Moloch"। এদের সারা দেহ ধারালো কাঁটা দিয়ে আবৃত যা এদের শিকারি প্রানী থেকে রক্ষা করে। এরা গিরগিট প্রজাতীর প্রানী হলেও এদের জীবনকাল অন্যান্য গিরগিটের তুলনায় অনেক বেশী। এরা প্রায় ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
The Sea Pig:
এদের নামের সাথে শুকরের সাথে মিল থাকলেও এরা শুকরের সাথে সম্পর্কিত কোন প্রজাতি না, তবে অনেকটা সামুদ্রিক শসার মত দেহ আকৃতি। এদের দেখলে যে কেউ বলবে এরা শুকরের মতই দেখতে। টিউব আকৃতির পা রয়েছে এদের। এরা সমুদ্রের ১০০০ মিটার গভিরে বসবাস করে। অনেকটাই অদ্ভুদ দেখতে এই Sea Pig।
The Patagonian Maru |
The Maned Wolf:
এই শিয়াল আবার অন্যান্য শিয়াল থেকে অনেকটাই আলাদা, কেননা এদের মত লম্বা পা সাধারনত অন্যকোন শিয়াল প্রজাতির মধ্যে পাওয়া যায় না। এদের খোঁজ মিলে ব্রাজিলে। এরা উঁচু ঘাস আর ঝোপঝাড়ওয়ালা এলাকায় থাকে। মনে করা হয় এদের লম্বা পা দিয়ে উঁচু ঘাসের মধ্যদিয়ে চলাচলে সুবিধা হয় বিধায় এরা এসব এলাকা বেশি পছন্দ করে। যদিও এদের দেখতে লাল শিয়ালের মত কিন্তু এরা সম্পূর্ন ভিন্ন প্রজাতির শিয়াল। এদের উচ্চতা ২৬ থেকে ৪২ ইঞ্চি হয়ে থাকে আর লম্বায় ৪৯ ইঞ্চি হয়, আর ওজন ২৪ থেকে ৩৪.০৯ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই শিয়াল গুলির মধ্যে পুরুষরা মেয়েদের তুলনায় বেশি বড় হয়ে থাকে।
The Blobfish:
এরা গভীর সমুদ্রের মাছ, এদের খোঁজ মিলে তাসমেনিয়া, অষ্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের গভীর সমুদ্রে। এরা লম্বায় ৩০ সেঃমিঃ থেকে ছোট হয় আর এরা সমুদ্রের ২০০০ থেকে ৩৯০০ ফুট গভীরে বসবাস করে। এদের শরীরের মাংস তুলতুলে এবং আঠালো হয় আর এদের দেহের ঘনত্ব পানির তুলনায় কিছুটা কম হয়। শরীরের ঘনত্ব কম থাকায় এই মাছ পানিতে ভেসে থাকতে পারে, ফলে অযথা সাঁতার কেটে শক্তির অপচয় করতে হয় না। এই Blobfish এর সংখ্যা দিন দিন কমতির দিকে, অচিরেই এটি বিলুপ্ত প্রায় প্রানীর কাতারে নিজের নাম তুলবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারনা।
The Gerenuk:
দেখে মনে হবে যেন জিরাফ আর হরিনের মধ্যকার কোন সংকর প্রজাতি, কিন্তু তা কিন্তু নয়। এদের বসবার পূর্ব আফ্রিকার দেশ গুলিতে। জিরাফের মত কিন্তু এদের একটা অভ্যাস আছে, উঁচু গাছ গুলি থেকে পাতা খেতে এরা কিন্তু এদের এই লম্বা গলার ব্যাবহার অনেকটা জিরাফের মতই করে। এদের উচ্চতা ৮০ থেকে ১০৫ সেঃমিঃ হয়ে থাকে, জার ওজন ৩৫ থেকে ৪৫ কেজি। আফ্রিকার প্রাচীন রূপ কথায় এদের বলা হয় "Queen of Humbleness"।
লেখকঃ জানা অজানার পথিক।