প্রকৃতির ১৫টি বিস্ময় ।। 15 Wonder Of Nature

প্রকৃতিতে কত বিস্ময়কর জিনিষ আছে যা আমাদের মুগ্ধ করে প্রতিনিয়ত। কত না সুন্দর ভাবে সাজানো আমাদের এই ছোট গ্রহ পৃথিবী। কিন্তু আমরা কি পৃথিবীর সকল বিস্ময়কর জায়গা সম্পর্কে জানি? মনে হয় না কেউ বলতে পারবে হ্যাঁ জানি পৃথিবীর সব বিস্ময়কর জিনিষ। আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব এরকম কয়েকটি বিস্ময় কর প্রাকৃতিক বিস্ময়ের সাথে যা দেখে আপনি যেমন হতবাক হবেন তেমনি অবাক না হয়ে পারবেন না। তাহলে চলুন জেনে নেই প্রকৃতির বিস্ময় কর কিছু স্থান সম্পর্কে,


১৫) রেনবো ইউক্যালিপ্টাসঃ
এই গাছ জন্মে হাউয়াইয়ের কায়লুয়া অঞ্চলে। বলা যায় এই গাছ পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে বেশী রঙ্গিন গাছ। অন্যান্য গাছের মত পাতায় না বরং গাছের গোড়ার দিকে থাকে এই রঙ। এই গাছের গোড়া হলুদ, সবুজ, কমলা এবং রক্তবেগুনি রঙের হয়ে থাকে।


১৪) কুকুন্ড (Cocooned) গাছঃ
২০১০ সালে পাকিস্তানে বন্যার সময় হাজার হাজার মাকড়শা শত শত গাছ বেয়ে উপরে উঠে যায় পানি থেকে বাঁচার জন্য। এরপরে তারা সবাই মিলে সম্পূর্ন গাছকে নিজেদের জাল দিয়ে ঘিরে ফেলে। যেন সম্পূর্ন গাছটাই পরিনিত হয় মাকরশার আবাস গৃহে। এর আগে কখনই মাকড়শার এরকম অভ্যাস কারো চোখে পরেনি। সবে মাত্র ২০১০ সালে আবির্ভাব ঘটে এই কুকুন্ড গাছের।


১৩) রক্তের জলপ্রপাতঃ
উপরের ছবিটি দেখলে মনে হবে যেন জলপ্রপাত বেয়ে পরছে রক্তিম লাল রক্ত। কিন্তু তা কিন্তু আসলে রক্ত নয়। ১৯১১ সালে ভূতত্ত্ববিদেরা এন্টার্কটিকায় এই রক্ত জলপ্রপাতের সন্ধান পান। জলপ্রপাতের মাঝে এই রক্তিম বর্নের আসল কারন হল বরফের নিচে বসবাসরত অনুজীব। এছাড়াও ২ মিলিয়ন বছর আগে বরফের নিচে আটকে পরা সালফাল এবং লৌহ কনিকার সাথে অক্সিজেন মুক্ত পানির বিক্রিয়ার কারনে এই লাল বর্নের সৃষ্টি হতে পারে বলে অনেকের ধারনা।


১২) হিলার (Hillier) লেকঃ
৬০০ মিটার চওয়া অষ্ট্রেলিয়ার এই লেকের পানির রঙ গোলাপি রঙয়ের। এই লেকের পানি রঙ কেন গোলাপি এই নিয়ে এখন পর্যন্ত গবেষনা চললেও ধারনা করা হয়, এই লেকের মধ্যে কম ঘনত্বের ডানেলিয়া (Dunaliella) স্যালাইন এবং হ্যালিকোব্যাকটেরিয়াম থাকার কারনে এই রঙ হয়। যদিও এখন পর্যন্ত এই গোলাপি রঙয়ের আসল কারন আবিস্কার করা সম্ভব হয় নাই তারপরেও দেখতে কিন্তু অসম্ভব সুন্দর।


১১) নরকের দরজাঃ
নরকের দরজা বা জাহান্নামের দরজা যাই বলি না কেন, নামটা কিন্তু আসলেই ভয়ঙ্কর। আর এই ভয়ঙ্কর জায়গা টি দেখতে হলে যেতে হবে তুর্কমেনিস্তানে।তুর্কমেনিস্তানের কারা-কুম মরুভুমির দারভাযা গ্রামের পাশে অবস্থিত এই ভয়ঙ্কর স্থানটির ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় যে , ১৯৭১ সালের দিকে তৎকালীন সভিয়েত ইউনিনের টি কম্পানি এখানে গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানের জন্য খনন কার্য চালায়। তা যেই ঘটনাটা আমাদের মাগুরছরা বা টেংরাটিলায় ঘটেছিল সেই একই ঘটনাটা এখানে ঘটল। বিশাল বিষ্ফোরন। গ্যাসক্ষেত্রটি বন্ধ হয়ে যায়। আর রেখে যায় বিশাল আগুনে ভরা গর্ত। এই গর্ত থেকে ক্রমাগতভাবে বের হচ্ছে মিথেন গ্যাস আর তার থেকে আগুন। এই আগুনের তাপ এতই যে তার পাশে ২ মিনিটের বেশি দাড়ানো যায় না।সেই থেকে এর নাম নরকের দরজা।


১০) ডুবন্ত জংগলঃ
কাজাকিস্তানের কান্দেইজ লেক ১৩০০ ফিট চওড়া এবং ৩০ ফিট গভির। এই লেক তৈরি হয় ১৯১১ সালের এক ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে। মাটি সরে তৈরি করে প্রাকৃতিক বাঁধের, এর পর পানি জমে তৈরি হয় এই লেকের। আগের থেকে থাকা গাছ গুলি এই পানির নিচে তলিয়ে যায়, কিন্তু পানির নিচে এই গাছ গুলি না মরে তা আরো ফুলে ফেঁপে ওঠে। এই লেকের পানিতে যদি গোছল করতে চান তাহলে একটু ভাবতে হবে আপনাকে কেননা সারা বছর জুড়ে এই পানি মারাত্মক ঠান্ডা থাকে, তবে যদি মাছ ধরতে চান তাহলে বেশ ভাল জায়গা।

বাংলাদেশেও ঠিক এরকম একটি ডুবন্ত বন আছে। ভারতীয় উপমহাদেশ আছে দুইটি। তার একটি শ্রীলংকায় আর আরেকটি আমাদের বাংলাদেশের সিলেটের গোয়াইনঘাটে। স্থানীয় মানুষ জনের কাছে এইটা “সুন্দরবন” নামেই বেশি পরিচিত, আবার অনেকেই বলে "বাংলাদেশের আমাজান"। এই বনের আসল নাম "রাতারগুল জলাভূমির বন"।


০৯) জমাট বাধা বুদবুদঃ
কানাডার আলবার্টার পশ্চিম অঞ্চল ফটোগ্রাফারদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এই লেক তৈরি করা হয় ১৯৭২ সালে। এই লেকের পানির নিচে জমে থাকা উদ্ভিদ গুলি মিথেন গ্যাস উদ্গিরন করে যা পানির নিচ থেকে উপর দিকে আসতে আসতে তা ঠান্ডায় জমে যায় আর তৈরি করা জমাট বাধা বাতাসের বুদবুদের। যা দেখতে কিন্তু বেশ সুন্দর।


০৮) ক্রিষ্টালের গুহাঃ
মেক্সিকোর চিহুয়াহুয়া অঞ্চলে অবস্থিত এই মাইনের মধ্যে আছে এরকম স্তম্ব আকৃতির ক্রিষ্টাল। ধারনা করা হয় এই ক্রিষ্টাল স্তম্ভ গুলি প্রায় ৫০০,০০০ বছর পুরাতন আর এগুলি তৈরি হয়েছে এই মাইনের নিচে থাকা ম্যাগমা থেকে। যতই সুন্দর হোক আপনি চাইলেই কিন্তু এই গুহার মধ্যে প্রবেশ করে এগুলি দেখতে পারবেন না। কেননা, এই গুহার তাপমাত্রা অত্যাধিক বেশি, প্রায় ১৩৬° সেঃ। তাই এই গুহার মধ্যে ঢুকতে গেলে আপনাকে আলাদা ভাবে তাপরোধক কাপড় পরে তারপর ঢুকতে হবে।


০৭) জ্বলজ্বলে সমুদ্র সৈকতঃ
মালদ্বীপের ভাডু (Vaadhoo) সমুদ্র সৈকত সত্যিকার অর্থে যেন এক স্বপ্নের জগত। দেখলে মনে হবে যেন বিশ্বের সব থেকে রোমান্টিক সমুদ্র সৈকত এটি। এই মিটিমিটি জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা প্রতিটা ঢেউ যেন আপনাকে নিয়ে যাবে স্বপ্নের কোন এক দুনিয়ায়। জ্বলজ্বলে জ্বলতে থাকা এই ঢেউ গুলির মধ্যে থাকে অনুজীব যেগুলি বাতাসে অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসা মাত্রই এরকম জলে ওঠে। সে যা হোক সত্যি কিন্তু এক অভুতপূর্ব দৃশ্য এটি।


০৬) আয়নার মত লবনের সমতল ভূমিঃ
দক্ষিন বলিভিয়ার টুনুপা ভলকেনো (Tunupa Volcano) এর উপরে তৈরি হয়েছে ১১,০০০ স্কয়ার কিঃমিঃ বিস্তৃন্য এই সমতল লবন ভূমি। এই সমতল লবন ভূমির উপরে গেলে আপনি বুঝতেই পারবেন যে কোন জায়গায় আকাশ শুরু হয়েছে, মনে হবে যেন আকাশ আর ভূমি এক সাথে মিলে গেছে এই সমতল লবন ভূমির মাঝে। টুরিষ্টদের কাছে এই লবন ভূমি বেশ জনপ্রিয়। এর ভূমি দেখলে মনে হবে যেন সম্পূর্নটাই একটা আয়না দিয়ে ঢাকা, যেখানে আকাশ মাটির সাথে মিলে গেছে।


০৫) আলোর পিলারঃ
প্রকৃতির এ এক আজব খেলা। উপরের ছবি দেখলে মনে হবে যেন সম্পূর্ন শহরকে ঘিরে রেখেছে আলোর কিছু পিলার। নিশ্চই ভাবছেন এই আলোর পিলার গুলি কিভাবে তৈরি হল? মূলত এটি তৈরি হয় সূর্যের রশ্মি যখন বরফের গায়ে প্রতিফলিত হয়ে সোজা উপরের দিকে উঠে যায় তখন সৃষ্টি হয় এই অপূর্ব আলোর পিলার। আর মস্কোর আইডাহোর (Idaho) শহরে এই প্রতিফলন আসলেই অপূর্ব এক দৃশ্য তৈরি করে।


০৪) রেটবা (Retba) লেকঃ
সেনেগালের ডাকার অঞ্চলের পূর্বে অবস্থিত এই রেটবা লেক। এই লেকের পানি গোলাপি রঙয়ের, আর এই গোলাপি রঙয়ের পানির জন্য দায়ি Dunaliella salinaalgae নামে অনুজীব যা সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে শক্তি উতপাদনের সময় লাল রঙয়ের পিগমেন্ট তৈরি করে। এই গোলাপি রঙ বাদেও এই লেকের পানিতে প্রচুর লবন আছে, যার ফলে মানুষ খুব সহজেই সাঁতার না কেটেও এই লেকে ভেসে থাকতে পারে।


০৩) ব্লু ড্রাগন নদীঃ
উপরের এই নদীর ছবি দেখলে মনে হবে যেন ফটোশপের মাধ্যমে তা বানানো হয়েছে। কিন্তু না, সত্যি সত্যি এই নদীর অস্তীত্য রয়েছে, আর এই নদীর আসল নাম "অদেলেইটি" (Odeleite), আর এই নদী পূর্তগালে অবস্থিত। এই নীল রঙয়ের আঁকা বাকা ড্রাগন আকৃতির জন্য এই নদীকে সবাই ব্রু ড্রাহন নদী হিসেবেই চিনে।


০২) ক্রিষ্টাল গুহাঃ
এই গুহাকে দেখলে মনে হবে যেন সম্পূর্নটাই কাজ আর পাথর দিয়ে দিয়ে তৈরি। আইসল্যান্ডের এই ক্রিষ্টাল গুহা মূলত হিমাবাহের মধ্যে তৈরি হয়েছে নিজ থেকেই। আর কাচের জায়গায় বরফ এমন ভাবে আছে যে দেখলে মনে হবে যেন তা কাচ। যারা যারা গুহা ভ্রমন করতে খুব আগ্রহী তারা এই গুহায় না গেলে অনেক বড় এডভেঞ্জার থেকে দূরে থাকবেন।


০১) ঢেউ তোলা পাহাড়ঃ
আমেরিকার এরিজোনার উথা (Utah) বর্ডার অঞ্চলের লাল রঙের বেলে পাথরের এই পাহাড় গুলির গায়ে রয়েছে সারি সারি ঢেউ। ধারনা করা হয় কয়েক মিলিয়ন বছর আগেই এই পাহার গুলির মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহিত হত যার ফলে এই সারি সারি ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আপনি যদি ফটোগ্রাফার হন তাহলে নিশ্চই এরকম জায়গার ছবি না তুলে পারবেন না। দুপুরের সময়ের দিকে এই ঢেউ গুলির কোন ছায়া থাকে না, আর এসময় এই ঢেউ গুলির সব থেকে সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা সম্ভব।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info
জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info