৮টি ভয়ংকর কীটপতঙ্গ

আচ্ছা কীটপতঙ্গ বলতে আমরা কি বুঝি? আসলে কীটপতঙ্গ বলতে আমি যা বুঝি তা হল, দেখতে ছোট খাট হবে আর অনেক গুলা পা থাকতে হবে আর দেখতে যেন অবশ্যই বিদঘুটে ধরনের হতে হবে, এসব কিছু থাকলেই আমার কাছে তা কীটপতংগের পর্যায়ে পরে। যা হোক এর ব্যাখ্যা শুনে আর লাভ নাই। তবে পৃথিবীতে যে কত ধরনের কীটপতঙ্গ আছে তা এখন পর্যন্ত আবিস্কার করা সম্ভব হয় নাই। তবে যে সকল কীটপতঙ্গ সম্পর্কে আমরা জানি আজ তার মধ্যে থেকে ৮টি ভংকর কীটপতঙ্গ সম্পর্কে জানব। তাহলে চলুন শুরু করা যাক,


Pchela Tiger:
দেখতে শুনতে পুরাটাই ভিমরুলের মত আবার প্রজাতিতেও ভিমরুল, কিন্তু পার্থক্য হল আঁকারে। এরা ৭ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। যেমন এদের আকৃতি তেমনি এদের হুলের আঁকার। মজার বিষয় হচ্ছে এরা মৌমাছি প্রজাতির হলে গুনের দিক থেকে কোন ভাবেই তাদের সাথে যায় না। মৌমাছি বা ভিমরুল তাদের হুল একবার ফুটালে তা দেহ থেকে ছিড়ে শিকারের গায়ে লেগে থাকে, কিন্তু এই Pchela Tiger হুল আবার ছিড়ে যায় না দেহ থেকে। তাই কাউকে আক্রমন করলে মনের সুখে বারবার ফুটাতে থাকে আর হুলের মাথার ফুটা দিয়ে বিষ ছড়িয়ে দেয় শিকারের গায়ে, আর সেই বিষে যে কি জ্বালা তা যে না খেয়েছে সে আর কি বুঝবে? এদের আবাস আবার আমাদের এশিয়া মহাদেশে তাও আবার ইন্ডিয়ার সমুদ্র অঞ্চলে এদের বেশি দেখা যায়। সব থেকে ভংকর বিষয় হচ্ছে প্রতিবছর এই দৈত্যাকৃতির ভিমরুলের কামরে শত শত মানুষ যেমন মারা যায় তেমনি এরা সাধারন ভিমরুলের বাসায় আক্রমন করে তাদের মেরে ফেলে। অনেকটা খ্যাপাটে জাতের ভিমরুল।


Mite:
এটি এমন প্রজাতির প্রানী যে পৃথিবীর সব কোনায় এদের খুঁজে পাওয়া যায়। মানে ধরে নিন আপনার বাসাতেও এদের বসবাস। এই ছোট কীট আলোময় স্যাতস্যাতে জায়গা খুব বেশি পছন্দ করে, তবে সেটি যদি পাহাড়ি অঞ্চল হয় তাহলে বলতে পারেন তাদের জন্য স্বর্গ সমতূল্য, এছাড়াও গাছপালার ঝোপঝাড়েও বসবাস করতে এদের তেমন একটা অরুচি নেই বললেই চলে। এরা ঝোপঝাড়ের মধ্যে অপেক্ষা করে কখন কোন প্রানী এই ঝোপেড় পাশ দিয়ে যাবে। আর কোন প্রানী তা মানুষই হোক না কেন তার গায়ে লাপ দিয়ে উঠে পরে আর তারপর তার চামড়া ভেদ করে ভিতরে ঢুকে যায় যেয়ে তার রক্ত খায়। বিপত্তি এখানেই। এই Mite এর মুখের লালায় আবার বেশ ভংকর জীবানু থাকে যা কিনা আমাদের ব্রেনে Encephalitis করতে সক্ষম। এর ফলে আমাদের ব্রেনে সমস্যা দেখা দেয় এমন কি প্যারালাইসিস পর্যন্ত ঘটতে পারে। এখন চিন্তা করে দেখুন এই পিচ্চি কীট কেমন ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে আমাদের।


Fire Ant:
এই লাল পিপড়ার সাথে আপনাদের আর কি পরিচয় করিয়ে দিব? একে কেউ দেখেন নাই এমন কেউ আছেন বলে মনে হয় না। আর আগে "পিঁপড়া সমাচার" লেখাটিতে কিন্তু এই পিপড়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই এখন আর কিছু লিখলাম না শুধু এটুকু বলি এই পিপড়া দেখলে এলাকা ছেড়ে পালান।


Black Widow:
এই মাকড়সান নামের বাংলা মানে শুনলে আমার বেশ হাসি পায়, "কালো বিধবা"। যা হোক নাম মজার হলেও ভুলেও এই মাকড়সার সাথে মশকরা করতে যাবেন না। এই মাকড়সার বসবাস উত্তর আমেরিকায়, এর আরেক নাম "Steppe Spider"। এই মাকর্সার গায়ের রঙ যেমন ভংকর সুন্দর তেমনি এর বিষ, বলতে পারেন পৃথিবীর সব থেকে বিষধর মাকড়সা এটি। এই মাকড়সা যদি কোন দিন কাউকে কামড় দেয় তাহলে ধরে নিবে ১০০% মারা যাবে, বাঁচার কোন সম্ভাবনাই নাই। মজার বিষয় হচ্ছে এই ভয়ংকর প্রজাতির মাকড়সার শুধু মাত্র স্ত্রী প্রজাতি মানুষের জন্য ভংকর কেননা পুরুষ প্রজাতি গুলি আবার মানুষকে কামড়ে চামড়াই ফুটা করতে পারে না।


Lon:
কি সুন্দর আর রংবেরঙ্গে আঁকা শুঁয়ো পোকা তাই না? আচ্ছা আপনাদের সাথে "ভয়ংকর সুন্দরী শুঁয়োপোকা" লেখায় আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম অনেক গুলি শুঁয়ো পোকার সাথে। আজ আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব সব থেকে ভংকর শুয়োপোকাটির সাথে। এর নাম Lon। নামটি ছোট হতে পারে কিন্তু বিষের পরিমান মোটেও কম নয়। বলা হয় পৃথিবীর বুকে অন্যতম বিষধর প্রানী এটি। এর বিষ এতটাই ভয়ংকর যে আপনি ধরার সাথে সাথে মারা যাবেন। অনেকে আবার এদের "Lazy Clown" নামেও চিনে। এই শুঁয়ো পোকা গুলির খোঁজ মিলে উত্তর আমেরিকায়, এছাড়াও আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে আর ব্রাজিলেও এর দেখা মেলে। এদের সবচেয়ে ভংকর দিক হল এরা জনবসতি পূর্ন এলাকায় থাকতে পছন্দ করে আর বাড়ির দেয়ালে লেগে থাকে। এদের গায়ের কাঁটা খুব সহজেই চামড়া ভেদ করে ঢুকে। তবে আশার কথা হচ্ছে এদের বিষের ঔষধ আছে, অর্থাৎ যদি যথা সময়ের মধ্যে আপনাকে ঔষধ দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে বেঁচে যেতে পারেন এই সসম্ভব সুন্দর শুঁয়ো পোকার স্পর্শ নিয়েও।


Bullet Ant:
একে নিয়ে আর বেশি কিছু লিখব না কেননা এর আগেও এই পিপড়াকে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। "পিঁপড়া সমাচার" লেখাটির মধ্যে এই পিপড়া সহ আরো কয়েকটি পিপড়ার বিবিরন দেওয়া আছে।


Africanized Honey Bee:
নাম শুনেই তো বুঝে গেছেন এই মৌমাছির বাপের বাড়ি আফ্রিকা। তবে সুস্বাধু মধু তৈরি করতে পারে বলে এদের চাষ আমেরিকার উত্তর অঞ্চলে চালু হয়। বেশ ব্যাবসা সফল হলেও এই মাছি চাষিদের বেশ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। কেননা এই মৌমাছিরা বেশ বদম্যাজাজি হয়। এদের বাসার পাঁচ মিটারের মধ্যে কেউ আসলেই হল দল বেঁধে আক্রমন চালাবে আর সব থেকে ভংকর বিষয় হচ্ছে এরা যাকে আক্রমন চালায় তার পিছু কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেও ছাড়ে না। এবার বুঝেন ঠেলা। প্রতি বছর শুধু মাত্র আমেরিকাতেই কয়েক হাজার মানুষ এই মৌমাছির আক্রমনে মারা যায়, আর শুধু মানুষ না সহস্রাধিক গৃহপালিত প্রানীও এই মাছির আক্রমনে মারা যায়।


Nomadic ant Eciton Burchelli:
এটা বেশ বড় আকৃতির পিপড়া আর এর বসবাস আমাজান বনের মধ্য অঞ্চলে। এদের বৈশিষ্ট্য গুলি অন্নান্য পিপড়াদের থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন। যেমনঃ এরা কোথাও বেশি দিনের জন্য বসবাস করে না, নিয়ম করেই নিজেদের বাসস্থান পরিবর্তন করে। এরা কয়েক হাজার পিপড়া মিলে একসাথে বসবাস করে, আর খাবারের সন্ধ্যানে ঘুড়ে বেড়ায়। এদের আবার লাল পিপড়ার মত কোন বিষ নেই মানে এরা যদি কামড় দেয় তাহলে আপনার কোন জ্বালা পোড়া করবে না, কিন্তু এদের যে বিশাল বড় বড় কামড় দেওয়ার জন্য চোয়াল আছে তা দিয়ে কামড়ে যে কোন প্রানীর মাংস তুলে নিতে সক্ষম। এই পিপড়া গুলি অন্ধ হয়, তাই হয় বিশাল বড় বড় প্রানীকে না দেখেই আক্রমন করে বসে, আর দলবদ্ধ ভাবে আক্রমন করে যে কোন আকারের প্রানীকেই এরা কুপকাত করতে সক্ষম।

লেখকঃ জানা অজানার পথিক।
hybridknowledge.info

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

জানার কোন অন্ত নাই, জানার ইচ্ছা বৃথা তাই, ভেবে যদি জানার ইচ্ছাকে দমন করে রাখা হয় তবে সে জীবনের কোন অর্থ নাই। কিন্তু সব জানতে হবে এমন কোন কথা নাই, তবে জানার ইচ্ছা থাকা চাই। আমাদের এই জানা জানির ইচ্ছকে সূত্র করে, আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস ❝আমি জানতে চাই❞। আমাদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা পুরনের লক্ষে কখনো জেনেছি মহাকাশ নিয়ে, কখনো জেনেছি সমুদ্র নিয়ে, কখনো ডুব দিয়েছি কৌতুক এর মাঝে, আবার ভয়ে কেঁপেছি ভুতের গল্প পড়ে, কখনোবা শিউরে উঠেছি কিছু মানুষের কার্যকলাপ জেনে। কখনো জেনেছি নতুন আবিষ্কারের কথা, আবার জেনেছি আদি ঐতিহ্যের কথা, এত সব কিছু করেছি শুধু জানতে চাওয়ার ইচ্ছা থেকে।

hybridknowledge.info hybridknowledge.info